এইখানে আকাশ নীল। ছোট বড় নানা আকৃতির সাদা মেঘের পাহাড় ভেসে ভেসে বেড়ায়। আর এইখানেই জমা থাকে রাসবিহারীর গোপন কিছু কষ্ট। ভালবেসে যে কিছুই পাওয়া যায় না সে তা বিশ্বাস করে না। ভালবেসে হয়ত বস্তুগত কিছু পাওয়া যায় না। কিন্তু যা পাওয়া যায় তা খুব সহজেই আকাশের ভাসমান পাহাড়ে লুকিয়ে রাখা যায়। ভালবাসা তার কাছে এক গোপন লুকোচুরি খেলা।
বয়সের আরেক নাম শরীরের প্রতারণা। তার বয়স ছাপান্নর কাছাকাছি হবে। পরিবারে বয়সের হিসেব রাখবার বাড়াবাড়ি আয়োজন ছিল না। প্রতিবেশীরা যা বলত তা থেকে সে নিজেই একটা হিসেব দাঁড় করিয়েছে। এই দীর্ঘ জীবন যাপনে তার কোন সঙী নেই। বন্ধুরা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। আসলে সে হারিয়ে ফেলেছিল। একখানি প্রেম করেছে বটে, ধরে রাখবার সাহস করে উঠতে পারেনি। পালিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটা নাম ছিল ফাতেমা। ভালবাসত সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। সেই ঢেউ সামলাবার মতো শক্তি রাসবিহারীর ছিল না। শক্তিতে সে ঘোড়ার মতো ছিল। মন তার হিমালয়ের মতোই অটল। বৈষয়িক দুর্বলতা ছিল কিন্তু সেটাই মূল কারণ নয়। সাম্প্রদায়িকতার বাঁধা অতিক্রম করবার মতো অসীম শক্তি তার ছিল না। ফাতেমা পালিয়ে যাবার সব আয়োজন করে রেখেছিল। রাসবিহারী পালিয়েছিলও। তবে একা একা। চোরের মতো। রাতের অন্ধকারে তিন মাইল পথ হেঁটে বৃটিশদের ট্রেনে করে পালিয়ে গিয়েছিল দূরের শহরে। ফাতেমার কি হয়েছিল, কি হতে পারে তার কোন খবর আর সে রাখেনি। দীর্ঘ বছর পরে একদিন খবর পেয়েছিল- পরের সন্ধ্যেয় তার বিয়ে হয়ে যায়। কষ্ট কতটা যন্ত্রণার হতে পারে রাসবিহারী তা জেনেছে বহু পথ ঘুরে ঘুরে। জীবন স্থায়িত্ব না পেলে সুখ পাওয়া যায় না। পালিয়ে কদিন আর বাঁচা যায়! একাকিত্ব কতই বা আর পোষ মানে!
রাসবিহারী তার সব দুঃখ একদিন জমা দেয় নীল আকাশের সাদা মেঘের বড় একটা পাহাড়ে। মেঘও বড় অদ্ভুত। সবসময় দানীল আকাশের দেখা পাওয়া যায় না। জমা রাখা কষ্টগুলো তাই অনেকটা ইন্সিওরেন্সে টাকা জমাবার মতো।
আজ রাসবিহারী তার পাহাড়ের দেখা পেয়েছে। ফেরত নিয়েছে লুকোন স্মৃতি। ভাবছে এবার অন্য কোথাও রাখবে। আচ্ছা কষ্ট কি কেউ নেয় না! কেন নেয় না? রাসবিহারী নিতে না চাইলেও ফাতেমাকেতো অন্য কেউ ঠিকই নিয়ে নেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



