somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজতন্ত্রী

০১ লা মে, ২০১০ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মমিনুল ইসলাম তার পরিস্কার সাদা শার্টটা ইস্ত্রি করে পরে প্রত্যেকদিনের মতো। তার পর সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। প্রত্যেকদিনের মতো সে হেঁটে হেঁটে পার্টি অফিসে যায়। প্রত্যেকদিন সে সমাজতান্ত্রিকদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনে । তাদের উল্লসিত মন্তব্য আর চিৎকারের অধিকাংশই সে বুঝতে পারে না। তবে তাদের দিকে তাকিয়ে সে একধরণের উত্তেজনা অনুভব করে। সেসব শ্লোগানের মাঝের কথাগুলোর মধ্যে যে কি নেশা জমে আছে সে কিছুতেই ধরতে পারে না; তবে অনুভব করে কিছু একটা অবশ্যই আছে।
সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্যদের কাউকেই তার স্বাভাবিক মানুষ বলে মনে হয় না। তাদের প্রত্যেককেই তার কাছে ঘোর লাগা মনে হয়। তারা প্রথম তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতো যে সমাজের সবাই একইরকম তবুও সবার সম্পদ একরকম নেই কেন? যারা পরিশ্রম করে তাদের ধনসম্পদ না থেকে কেন যারা পরিশ্রম করায় তাদের সম্পদ থাকে? এসব কথার উত্তর তার কাছে তেমন পরিস্কার না। তার কাছে এগুলো কঠিন মনে হয়। সে প্রথম প্রথম বুঝতে চেষ্টা করতো, তখন সে না বুঝলে অনেক প্রশ্ন করতো; সে সত্যিকার অর্থেই বুঝতে চাইতো। তবে সে যখন এই ঘোরলাগা মানুষগুলোকে দেখতো, তখন তাদের দেখে সে অসম্ভব যন্ত্রণা অনুভব করতো। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতো তখন যখন দেখতো সে না বোঝার ফলে তাদের চোখমুখে নেমে আসতো সীমাহীন হতাশা আর না পারার যন্ত্রণা। সে পড়ে কলেজে, তাই সে যখন বুঝতে পারে না তখন এটা তার কাছে কিছুটা অপমানজনক বলে মনে হয়। তাই একসময় সে জোর করেই বুঝতে শুরু করে। মমিনুল ইসলাম একসময় ধীরে ধীরে সমাজতন্ত্রী হতে শুরু করে, মার্ক্স-লেনিন-কমিউনিজম-মাও সেতুং-লাল ফৌজ-বলশেভিক এই শব্দগুলো তার মুখস্থ হতে থাকে। তার সমাজতন্ত্রী হওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
তার ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছেলে রতন তাকে প্রথম সমাজতন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার মন্ত্রগুলো শেখাতে শুরু করে। সে বসতো রতনের পাশে, কারণ রতন ছিল তার একমাত্র বন্ধু আর তার পাশে বসলে পড়া নিয়ে তেমন কোন চিন্তা না করলেও হতো। রতন তাকে আস্তে আস্তে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বোঝাতে শুরু করে, যদিও সে বুঝতে পারে না, রতন তাকে শ্রেণীহীন সমাজের রং অনুভব করানোর চেষ্টা করে, তবে সে রং সে অনুভব করতে পারে না, তার কাছে সাদাকালো লাগে। তার দুর্বোধ্য লাগে। এর চেয়ে ইতিহাসের ক্লাসে বাবরের জীবনবৃত্তান্ত সহজতর। তবুও সে শুনতে থাকে এবং রতনের ঘ্যানঘ্যানানিতে সে একদিন পার্টি অফিসেও যায়। এই দিনটা ছিল তার একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ সেদিন সে বুঝতে পারে যে তার আর ফেরার কোন পথ নেই। তার খুব ভয় ভয় লাগছিল। তার মনে হচ্ছিল সে অন্যান্যদের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না। তবে সেখানে তাকে সবাই সাদরে গ্রহণ করে। তার ব্যপারটা অন্যরকম লাগে। তার দিকে সবাই হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে। তার মনে হয় সে অন্য কোন জগতে ঢুকছে। এরকম মেয়ে তো সে আর কোথাও দেখেনি, সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সেখানকার মেয়েদের তার ভালো লাগতে থাকে। তার চারপাশের মেয়েদের কারো এরকম স্বাস্থ্য নেই, তার চারপাশের মেয়েদের কারো অন্তর্বাস দেখা যায় না, তার চারপাশের মেয়েদের কারো চোখ এরকম ঝকঝকে না, তার চারপাশের মেয়েরা কেউ সিগারেট ধরিয়ে সাবলীলভাবে ধোঁয়া ছাড়ে না, সে বুঝতে পারে না এরা এগুলো কীভাবে পারে।
সে অবাক হয়ে যখন তার চারপাশের পরিবেশ দেখছিল, সেখানকার লাল ঝাণ্ডা, কাস্তে হাতুড়ির প্রতীক আর মার্ক্সের, এঙ্গেলসের ও লেনিনের এবং আরো অনেক বিপ্লবীর ছবি; সে সময় তার কাছে এসে কণিকা দিদি বলে যে ‘তুমি কি এখানে নতুন?’ সেই দিদিটিকে তার ভালো লাগে। তার কাছে সে বলে ‘আমাকে রতন নিয়ে এসেছে।’ আজ সম্ভবত তার অবাক হবার দিন। সে অবাক হয় এবং এই কথাটির বেশি কিছু বলতে পারে না। সে দিদি তাকে বলে ‘আজ আমাদের একটা মানববন্ধন আছে তুমি থেকো।’ মমিনুল ইসলাম কিছু বলতে পারে না, তবে সে তার অনুরোধ ফেলতেও পারে না। সে সকাল বেলা মানব বন্ধনে অংশ নিতে যায়। তার পাশাপাশি দাঁড়ায় কণিকা দিদি, মমিনুল ইসলামের হাত ধরে অবলীলায়, তার শারীরিক ভঙ্গিতে কোন আড়ষ্টতা নেই, তার চোখমুখে কোন লজ্জা নেই। কিন্তু মমিনুল ইসলাম এটা খুব বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না। তার মাথা এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে। এরকম একজন নারীর পাশে দাঁড়ানোর পর তার সারা অস্তিত্বে কাঁপন লাগে।
সে বাসায় ফিরে আসে একটা ঘোরের মধ্যে। সেদিন ছুটির দিন থাকায় তাকে বাসায় কোন জবাবদিহি করতে হয়নি। তার মাথায় মার্ক্স-এঙ্গেলস যতটা না ঢোকে তার চেয়ে অনেক বেশি ঢোকে কণিকাদিদি-মলিদিদি-তন্বী আপু এরা। এই অন্য জগতের নারীরা তার মাথায় অনবরত ঘুরপাক খায়।
মমিনুল ইসলাম প্রতিদিন অনন্ত পিপাসা নিয়ে পার্টি অফিসে যায় এবং ঢের ঢের বেশি পিপাসা নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। সে হয়ে ওঠে পার্টি অফিসের সবচেয়ে নিয়মিত মেম্বার। তবে এখনো সমাজতন্ত্র তার মাথায় ঢোকে না, সে সমাজ পরিবর্তনের কোন দায় অনুভব করে না। দুনিয়ার মজদুর এক কীভাবে হবে সে বুঝে উঠতে পারে না। আর নিজেকে প্রশ্ন করে এর কোন সদুত্তরও সে পায় না। পার্টি মেম্বাররাও তাকে বুঝে উঠতে পারে না। তবে অফিসের এক কোণে সে বসে থাকে বলে তাকে নিয়ে কারো কোন মাথাব্যাথাও নেই। মাঝে মাঝে সে বরং কিছুটা কাজেরই বটে। সে খুব বেশি নিয়মিত বলে যেকোন মিছিল আর মনববন্ধনে সে তাদের নিয়মিত সদস্য হয়ে গেছে। লোকজন ভাবে লোকবল বৃদ্ধিও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মাঝে মাঝে সে চা-সিঙ্গারার ভাগ পায়। মিছিলে সে স্লোগান ধরতে পারে না, তার মনে থাকে না। স্লোগানের কথাগুলো তার কাছে বিচ্ছিরিরকম দুর্বোধ্য মনে হয়, যেমন দুর্বোধ্য মনে হয় এখানকার মেয়েদের। এই মেয়েরা কিসের আশায় এইসব কাজ করে? সে বুঝতে পারে না। তার সাথে ভালো ব্যাবহার করে কেন সে বুঝতে পারে না। ছেলেদের হাত ধরতে এইসব মেয়েদের কোন অনুভূতি হয় না কেন সে বুঝতে পারে না। এরা কি সমাজতন্ত্র ছাড়া আর সবকিছুতেই অনুভূতিহীন? মমিনুল ইসলাম মনে মনে ভাবতে থাকে।
এখানকার ছেলেদের তার কাছে ক্ষয়াটে যক্ষারোগীর মতো মনে হয়, এই পৃথিবীর কেবল মেয়েরাই সুন্দর। সে নিয়মিত অফিসে আসে, চুপচাপ বসে থাকে। তার মাঝে মাঝে মনে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা সে কণিকাদিদি আর তন্বী আপুর অন্তর্বাসের আভাসের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবে। সে নিয়মিত মিছিলে যায়, সবার সাথে হাতে হাত ধরে সে থাকে সামনের সারিতে। তবে সে পুরুষদের হাত ধরতে চায় না। তাদের হাত তার কাছে শিরিষ কাগজের মতোই খসখসে মনে হয়, তাদের হাতে কোন মমতা নেই, কোন আকর্ষণ নেই। তার কেবল মেয়েদেরই ভালো লাগে। তাদের হাতের স্পর্শ তাকে অন্য কোন জগতের সন্ধান দেয়।
দিন যায়, সে সবার সাথে আরো বেশি পরিচিত হতে থাকে। মার্ক্সের বাঁধা কথাগুলো সে এখন আওড়াতে পারে, মিছিলে সে আগের চেয়ে ভালোভাবে স্লোগান ধরতে পারে; কিন্তু সে যখন ভাবে যে সে আসলে কি চায়, কোন উত্তর সে খুঁজে পায় না। সে এখন অন্যদের সমাজবদলের কথা বলতে পারে, অধিকার সম্পর্কে কিছু কথা তার এখন মুখস্থ হয়ে গেছে, কিন্তু সমাজবদল নিয়ে তার কোন চিন্তা নেই। সে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলে, সবার অধিকার নিয়ে সে কথা বলে, সবার রঙিন সমাজবদলের স্বপ্নের পাশাপাশি তার কোন উদ্দেশ্য নেই, কোন লক্ষ্য নেই। সে প্রথম কিছুদিন সমাজতন্ত্র বুঝতে চেয়েছিল কেবল এইসব মেয়েদের কারণে কিন্তু এখন তার বরং এখানকার অদ্ভুত মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেই ভালো লাগে, তাদের ছোট করে ছাঁটা চুল বা তাদের অন্তর্বাসের নিখুঁত পর্যবেক্ষণই তার অনেক বেশি ভালো লাগে, তার আর কিছুই ভালো লাগে না। ধুর সমাজতন্ত্র, মমিনুল ইসলাম সমাজতন্ত্র বোঝে না।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×