"If anything can go wrong, it will." - কথাটি মারফি'স 'ল' এর মধ্যে অন্যতম এবং আমার অতি প্রিয় একটি লাইন।
প্রিয় হবার পিছনে অবশ্য আমার বাস্তব জীবনে এই 'নিয়ম' এর ব্যাপক প্রতিফলন দায়ী।
শুধু আমিই না, আমার মত 'এয়ারক্রাফট মেইন্টেনেন্স' বা বিমানের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তির মাথায় এটা সব সময় ঘুরপাক খেতে বাধ্য।
বিষয় টা এমন- আজ বৃষ্টি হতে পারে, তবে না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এবং আপনি ছাতা ছাড়াই বাইরে বের হলেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে একটু পরেই বৃষ্টি আপনাকে ভিজিয়ে দিয়ে গেল!
১৯৯১ সালের ইংল্যান্ডের ন্যশনাল ক্যারিয়ারের এয়ারবাস এ-৩১০ এর ১৭ বছরের অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার 'সোবারস' ভদ্রলোক ককপিটের বাইরের ডান পাশে তাড়াহুড়ার কারনে একটি পুরানো 'টেপ' না উঠিয়ে এটার এর উপর দিয়েই আরেকটি 'টেপ' লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এই টেপ 'স্কচ টেপ' এর মতই তবে একটু পুরু আর সাইজে বড়। যাইহোক, বিমান টি আকাশে ওঠার পরে, যখন তিনি কাজ থেকে ফ্রি হলে, তার মনে ক্ষীণ আশঙ্কা জেগেছিলো, বাতাসের তীব্রতায় পুরানো টেপ টি নরম হয়ে নতুন টেপ সহ উঠে যেতে পারে। তবে সামন্য একটি টেপ উঠে গেলেও তেমন কোন ক্ষতির কারন হবে না ভেবে ডিউটি শেষ করে এয়ারপোর্ট এ তার কেবিনে বিয়ারের বোতল খুলে বসেছিলেন।
এবং একটু পরেই কন্টোল টাওয়ার থেকে 'রেসকিউ টিম' কে আকাশে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছিল কারন ৩৫ মিনিট আগে টেক অফ করা এ-৩১০ বিমানটি একটি ঘন জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। ইঞ্জিনিয়ার সোবারস বিয়ারের বোতল ফেলে ছুটলেন কন্ট্রোল টাওয়ারের দিকে। 'রেসকিউ টিম' ওই বিমানটির ১৯৩ জন যাত্রী এবং ১৯ জন ফ্লাইট ক্রু এর কাউকেই জীবিত উদ্ধার করতে পারে নি!!
পরবর্তীতে ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট এসেছিলো- ককপিটের বাইরে ডান পাশে লাগানো টেপ টি ছুটে গিয়ে, ডান পাশের ইঞ্জিনের এয়ার-ইনটেক/প্রোপেল এ আঘাত করে ইঞ্জিনের ভিতরে কম্বাস্টন চেম্বারে অতিরিক্ত আগুন ধরে যায় এবং পুরো ইঞ্জিনেই আগুন ধরিয়ে ফেলে!! ফলাফল- ভুউউউউমমমম!!!
ইঞ্জিনিয়ার সোবারস তার বিগত ১৭ বছরের কর্ম জীবনের বিচক্ষন সুনামের জন্য এই মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আর তার কর্ম-জীবনে ফিরে যাননি!!!
মারফি'স ল এর এমন উদাহরন দেয়া যাবে কয়েক হাজার!
ফাইনাল এক্সাম এর একটি একটি করে সাবজেক্ট শেষ হচ্ছে, ততই ঘনিয়ে আসছে প্রফেশনাল দায়িত্ব গ্রহনের দিন। পুরো পুরি দায়িত্ব না থাকলেও, বিমানের অধিকাংশ মেইন্ট্যানান্সের কাজ আমাদের মত 'ট্রেইনি' রাই করে থাকে!
মাথার মধ্যে 'সোবারসের' ঘটনার মত আরো অনেক ঘটনা মাথায় মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে! শত চেষ্টা করেও বিদায় করা যাচ্ছে না এ গুলো!!
সত্যি বলতে আমি ভয় পাচ্ছি!!!
ছোট বেলায় গ্রামের অন্ধকার রাস্তায় ভূতের ভয় না পেয়ে হেটে বেড়ানো, ৫ বছরে গোখরা সাপের কামড় খেয়ে বেঁচে যাওয়া ছেলেটি আজ বিমানবন্দর এর "৮ নাম্বার" গেট দিয়ে ঢুকে ৩,২০০ মিটারের স্বপ্নের রানওয়ে তে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছে!!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


