somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত গল্প…

০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-‘নিজের খেয়াল রাখিস, মা। আর মনে রাখবি নিজেকে কক্ষনও পরাজিত ভাববি না। আমি অনেক মানুষ দেখেছি, তোর মত এত মনবল সম্পন্ন মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। তুই আমার মেয়ে বলে না,সত্যিই দেখিনি। মনে জোর রাখবি আর আল্লাহ্র উপর ভরশা রেখে সব কাজ করবি। মন শান্ত থাকবে, ঠিক আছে?’

-‘ঠিক আছে,আম্মু। তুমি দোয়া করো আমার জন্যে। এখন রাখি? অফিসে যেতে হবে। খোদা হাফেয।

চোখ ভরা পানি নিয়ে ফোন রাখলাম। মায়ের সাথে কথা শেষ করে বড় একটা নিঃশাস ফেলে খেয়াল করলাম বুকের ভেতরটা অল্প অল্প ব্যথা করছে। মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর পরই প্রতিবার এ অনুভূতি জানান দেয় কেন জানি! ভাবছি জীবনটা তো এমন হবার কথা ছিল না! আজ অনেক দিন পর পুরনো কথা ভেবে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে, গাল বেয়ে এক ফোঁটা জল পড়েও যায় -তবে ইচ্ছেটাকে দমন করে উঠে দাঁড়াই। চোখ মুছে জানালার বাইরে আকাশ দেখি…

আজ আকাশের মন ভাল নেই।
এখানে প্রায়ই তার গোমড়া মুখ দেখে দিন শুরু করতে হয়। বাংলাদেশের এই জিনিসটা খুব বেশি মিস করি আমি। দেশে সবার ঘুম ভাঙ্গে আলোকিত এক ভোর দিয়ে-যা পরে রুপ নেয় এক ঝলমলে দিনে! দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। আর এখানে মন খারাপের শুরু দিনের শুরু থেকে। মানুষের আর দোষ কি!

প্রতিদিনের মত অফিসে যাবার জন্যে তৈরি । অর্থনৈতিক মন্দার এ ক্ষণে অনেক কষ্টে পাওয়া চাকুরি দেরি করার কারনে হারাতে চাই না , তাই আজও দেড় ঘন্টা আগেই যাত্রা শুরু করে দেই। বাসা থেকে বাস স্টপে যেতে ১০ মিনিটের রাস্তাটা বেশ খালি থাকে সকালে। মানুষের কোলাহল থেকে আর একটু সময় দূরে থাকতে আর নিজেকে জেগে থাকা এক মাত্র মানুষ ভাবতে খুব ভাল লাগে আমার। একাকিত্তের অভ্যাস ভালই রপ্ত করেছি। এক সময়ের খুব বেশি কোলাহল প্রিয় এ মানুষটির এখন আর ওসবে কোন আগ্রহ নেই।

৯টা বাজার ২০ মিনিট আগে অফিসে পৌছেই কফি বানাতে চলে যাই। চোখ থেকে ঘুম তাড়ানোর জন্যে সবচেয়ে ভাল এই উপায় বের করেছি। কলিগদের সঙ্গে কুশল বিনিময় আর মুখে রুটিন মাফিক হাসি লাগিয়ে যথারিতি কাজে লেগে যাই। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনায় ক্যাম্পাস মুখরিত হতে থাকে। লন্ডনের একটা কমিউনিটি কলেজে দোভাষি হিসেবে চাকুরি পেয়েছি আজ প্রায় এক বছর হতে চললো। অনেক দেরি করে হলেও জীবনের এই এক্ টি সপ্ন অন্তত: পুরন করতে পেরে একটু হলেও সার্থক লাগে নিজেকে। সম্পূর্ন নিজের কষ্টে অর্জিত এই সাফল্যের জন্যে কার ও কাছে ঋণি নই - ভাবলেই গর্ব হয়!

-‘সায়বা, তুমি কি একটু আসবে এদিকে? একটা স্টুডেন্ট এর তোমার হেল্প দরকার।তোমার নাম ধরে খুঁজছে।’ কলিগের ডাক শুনে রিসেপ্সন এর দিকে এগিয়ে যাই।
-‘কোথায় সে?’
-‘পাশের রুমে বসিয়ে রেখেছি। তুমি যেতে পার। মেয়েটিকে বেশ ডিস্টার্বড মনে হলো।’
-‘নতুন নাকি পুরোন কেউ?’
-‘মনে হল তো নতুন।’
-‘ঠিক আছে, ধন্যবাদ কার্স্টি।’
-‘শুধু তোমার জন্যে! নো প্রব্লেম হানি!’


কন্সাল্টিং রুমে মেয়েটি বসে আছে। আমি ঢোকা মাত্র সে আমাকে উদ্দেশ্য করে ইংরেজিতে বললো,
-‘তুমি কি বাংলাদেশি?’
আমি’ হ্যাঁ’ বলার সাথে সাথে মেয়েটি অঝরে কাঁদতে শুরু করলো।

আমার চাকুরির মেইন কাজ হল বিদেশি স্টুডেন্টদের ভাষাগত সমস্যার সমাধান করা। বেশির ভাগ সময়ই তা হয় কলেজ কেন্দ্রিক। তবে আজকের মেয়েটিকে দেখে মনে হল ওর সমস্যা হয়তোবা ব্যক্তিগত। ওর চোখ দেখে মনে হলো অনেক রাত ঘুমায়নি ঠিকমত। চেহারায় দিশেহারা ভাব। বড় মায়া হল আমার! তার মুখোমুখি বসে ভাবতে থাকলাম মেয়েটাকে শান্ত করি কি বলে?

-‘তুমি কান্না থামাও। আমাকে বল তোমার কি প্রব্লেম? আমি আমার সাধ্যমত চেস্টা করবো তোমাকে হেল্প করতে। তুমি শান্ত হও’।
-‘আমার কিছু কথা আপনাকে শুন্ তে হবে, প্লীজ!। পারছি না। ামা বান্ধবি আপ্নার কথা বললো, আপ্নি নাকি তাকে খুব ভাল পরামর্শ দিয়েছেন। প্লীজ! আমাকে হেল্প করতেই হবে! আমি নিঃশাস নিতে পারছি না!

মেয়েটি খুব বড় বড় করে শাস নিতে শুরু করলো। বুঝলাম কিছু শোনার আগে ওকে শান্ত করাটা খুব জরুরি। আমি ওর নাম জিজ্ঞেস করলাম।

-‘আমার নাম নায়লা।’
-‘বাহ!অনেক সুন্দর নাম তো! আমি এখন যা বলবো খুব মন দিয়ে শুনবে, কেমন?’ তারপর ওর হাত ধরে বললাম,
-‘তোমার চোখ বন্ধ কর…এইতো। এখন মনে কর তো, এমন এক্ টা জায়গার কথা যেখানে তুমি ছাড়া কেউ নেই! কেউ তোমাকে দেখছে না। তুমি খুব শান্ত ভাবে চোখ বন্ধ করে বাতাসের শব্দ শুন্তে পাচ্ছ আর তোমার নাকে নতুন ঘাসের ঘ্রাণ। দেখতে পাচ্ছ?’
খেয়াল করলাম আস্তে আস্তে মেয়েটি স্থির হচ্ছে।
-‘জি। বাংলাদেশে থাকতে এমন একটি জায়গায় প্রায় যেতাম। খুব ভাল লাগতো।
কয়েক মিনিট কেটে গেল। নায়লা এখন চুপ করে বসে আছে। আমি বললাম,
-‘আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছুই হয়, যার জন্যে আমাদের অনেক কষ্ট পেতে হয়! তারপরও আমরা ঠিকই বেঁচে থাকি,তাই না? কিভাবে জানো? কারন ,সৃষ্টিকর্তা আমাদের কে ঠিক সে পরিমান বেদনাই দেন-যতটুকুর ভার আমরা বইতে পারি। যদি না-ই পারতাম তাহলে কষ্টের ভারেই আমাদের মরণ হত!

নায়লার কান্না থেমে গেল। চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল।
-‘আমি কি ভুল বলেছি?’ মাথা নেড়ে সে বললো,
-‘না’।
-‘তাহলে ভাবতে হবে যে,যাই ঘটছে তোমার জীবনে, যদি সম্পূর্ন সমাধান নাও করা যায়- আশা আর চেস্টা দুটোই করতে পারি? কারন, আমরা আশায় বেঁচে থাকি!’ দেখলাম সে মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছে।
-এবার তবে তোমার সমস্যা কি,আমাকে খুলে বলো।
-আপনাকেই বলবো।তবে কথা দিতে হবে কেউ কানবে না।কতৃপক্ষ না,আমার পরিবার না-আমি আর আপনি ছাড়া আর কেউ জানবে না! কথা দিন, প্লীজ!

আমাদের কলেজে স্টুডেন্টদের এই অনূরোধটি রাখার ব্যাপারে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে।এটা স্টুডেন্ত দের নিরাপত্তার জন্যে। কিন্তু নায়লার কন্ঠের আকুতি আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না। আমার কেন যেন মনে হলো মেয়েটি কোন বিপদের ভেতরে আছে। সাহায্যের জন্যে আমার কাছে এসেছে কোন উপায় না পেয়ে। আপনদের মাঝে কাউকে না পেয়ে অচেনা একটা মানুষকে বলতে চাইছে তার সবচেয়ে গোপন কথাগুলো। নিজেকে কত অসহায় মনে হলে আমরা এমন করি?! আমি ঠিক করলাম যা হবার হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, আমার সহায়তা নায়লার প্রয়োজন। আর এ জন্যে যদি একটা দুটো নিয়ম ভাংতে হয়-তবে তাই হোক!

-ঠিক আছে,কথা দিলাম।


এ সিন্ধান্ত নেয়ার কারণে আমার জীবনে যে ঘটনার সূত্রপাত হতে যাচ্ছিল, সে সম্পর্কে যদি আমার বিন্দুমাত্র ধারনা থাকতো- তবে নায়লাকে আমি কখনই কথা দিতাম না …
(অসমাপ্ত)

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×