তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া। একপর্যায়ে তা মারধরে পৌঁছায়। এরপর স্বামী রেগে গিয়ে স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তালাক দিলেন। পরে স্বামী ভুল বুঝতে পেরে স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। সেদিনই ঝগড়ার মীমাংসা হয়ে যায়। কিন্তু ঘটনাটি গ্রামে ছড়িয়ে যায় দ্রুত।
এ ঘটনা জানতে পেরে এলাকার মাতবররা ওই স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে শরিয়তবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে বিচারের জন্য কয়েক দফা সালিস করেন। সালিসে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় তাঁরা দিনাজপুরের এক মুফতির শরণাপন্ন হন। সেই মুফতির ফতোয়া অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চূড়ান্ত তালাক হয়ে গেছে। অতএব স্বামী-স্ত্রীর একত্রে বসবাস করা শরিয়তবিরোধী—এই সিদ্ধান্ত সালিসে জানিয়ে দেওয়া হয়। এই ফতোয়া অমান্য করে স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করার ঘোষণা দিলে তাঁদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কচুবাড়ি মোলানি গ্রামে। গ্রামের ভ্যানচালক আবদুল কাদের জিলানী ও তাঁর স্ত্রী হাসনা বানুকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। গোটা গ্রামে জানিয়ে দেওয়া হয়, আবদুল কাদেরের পরিবারের সঙ্গে কেউ কথা বলতে পারবে না। তাঁরা কারও বাড়িতে যেতে পারবেন না। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় কাদেরের ছোট ভাই আবদুল খালেকের দোকানের বিদ্যুৎ-সংযোগ। রাখা হয়েছে বাড়ির প্রতি নজরদারি।
গত বুধবার সকালে কচুবাড়ি মোলানি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একঘরে হওয়া বাড়ির প্রতি নজর রাখতে বাড়ির বাইরে বসে আছেন নুরুল হক, আবদুল মজিদ, ইমান আলীসহ আট-নয়জন। তাঁদের কাছে আবদুল কাদেরের বাড়ি কোথায়, জানতে চাইলে তাঁরা অন্যদিকে দেখিয়ে দেন। পরে এলাকার একজন কাদেরের বাড়ি চিনিয়ে দিলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে মাদুর পেতে দুই মেয়ে জুলেখা (৫) ও রহিমাকে (৩) কোলে নিয়ে বসে আছেন আবদুল কাদেরের স্ত্রী হাসনা বানু, মা আছাতুন বেওয়া ও ছোট ভাই আবদুল খালেক। হাসনা বানু বলেন, তাঁদের বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। কাদেরের ছোট ভাই আবদুল খালেক বাড়ির পাশে মুদি দোকানের ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, ফতোয়া অমান্য করায় এলাকার মাতবররা তাঁর দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন দোকানের বিদ্যুৎ-সংযোগ।
কচুবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী নূরবাগ জামে মসজিদের ইমাম আবদুস সালাম বলেন, ‘আল্লাহর আইন সবার ওপরে। বর্তমানে যে ফতোয়াবিরোধী আইন হয়েছে, তা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের কাদের তাঁর স্ত্রীকে মৌখিক তালাক দেওয়ায় শরিয়ত মোতাবেক তালাক হয়ে গেছে। শরিয়ত রক্ষা করতেই গ্রামবাসী এ রায় দিয়েছেন। সালিস অমান্য করায় তাঁদের একঘরে করা হয়েছে।’
এ সম্পর্কে আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, ঘটনাটি আবদুল কাদেরের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন। তাঁকে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে মৌখিকভাবে তালাক দিলে তালাক হয় না। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোপাল চক্রবর্তী জানান, এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি এখনো কিছু জানেন না।
সূত্র:
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



