সূত্র: ১৪-০৫-১১ এ প্রকাশিত প্রথম আলো।
পাকিস্তানের আধা সামরিক বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কনস্টেব্যুলারির (এফসি) একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত ও ১৪০ জন আহত হয়েছে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের চরসদ্দা জেলার শাবকদার শহরে অবস্থিত এক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গতকাল শুক্রবার সকালে এ হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানের তালেবান বলেছে, আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন হত্যার বদলা হিসেবে তারা এ হামলা চালিয়েছে। খুব শিগগির তারা আরও ভয়াবহ হামলা চালাবে।
নিরাপত্তা ও চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ৬৯ জন এফসির প্রশিক্ষণার্থী সদস্য। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, মূলত সীমান্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এফসি-সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। চরসদ্দার ওই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে নতুন নিয়োগ পাওয়া এফসি-সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, একটি কোর্স শেষে নতুন এফসি ক্যাডেটদের ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। নিজ নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য সকালে তাঁরা প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ফটকে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা যখন মিনিবাসে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন পর পর দুটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
চরসদ্দা জেলার পুলিশের প্রধান নিসার খান মারওয়াত এএফপিকে বলেছেন, প্রথমে একজন আত্মঘাতী মোটরসাইকেলে চড়ে এফসি-সদস্যদের মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং সঙ্গে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। সহকর্মীদের উদ্ধার করতে সেখানে অন্যরা ছুটে যান। এ সময় প্রথম জনের মতো দ্বিতীয় হামলাকারী তীব্র বেগে মোটরসাইকেল চালিয়ে তাঁদের মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং একই কায়দায় নিজেকে উড়িয়ে দেন। পুলিশপ্রধান জানান, আহত ব্যক্তিদের পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতাল ও স্থানীয় বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বশির আহমেদ বিলৌড় বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ৬৯ জন এফসি-সদস্য এবং বাকি ১১ জন বেসামরিক লোক।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহমেদ আলী নামের একজন আহত এফসি ক্যাডেট বলেন, ‘আমি গাড়িতে উঠে সহকর্মীদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। খাকি পোশাক ছেড়ে সবাই সাদা পোশাকে ছিলাম। অনেক দিন পর বাড়ি ফিরব, এ আনন্দে খোশমেজাজে ছিলাম।’ আহমেদ বলেন, ‘হঠাৎ শুনতে পেলাম, কেউ একজন”“আল্লাহু আকবার””বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। পরমুহূর্তেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। আমি ঘাড়ে কোনো কিছুর আঘাত অনুভব করলাম। কয়েক মুহূর্ত পর অপর একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আমি গাড়ি থেকে লাফিয়ে বাইরে পড়লাম। তখন টের পেলাম, আহত হয়েছি এবং আমার গা রক্তে ভেসে যাচ্ছে।’
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি বলেছে, হামলার কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি তাদের টেলিফোন করে নিজেকে এহসানুল্লাহ এহসান ও পাকিস্তান তালেবানের মুখপাত্র দাবি করে হামলার দায় স্বীকার করেছেন। এহসান বলেন, ‘এটি ওসামার শাহাদাতের প্রথম প্রতিশোধ। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আরও ভয়াবহ হামলা আসছে। অপেক্ষা করুন।’ এহসান আরও বলেন, ‘ওসামা শুধু আল-কায়েদার নেতা নন, তিনি সমগ্র মুসলিম জাতির নেতা। তাই তাঁর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়াকে আমরা ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে মনে করছি।’
উল্লেখ্য, এর আগে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সেনা অভিযানে বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর তালেবানসহ বেশকিছু জঙ্গিগোষ্ঠী প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিল। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি অনলাইন।
এ জতীয় প্রতিশোধের প্রেরণা হিসেবে কি কাজ করে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



