somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলুন সাম্প্রদায়িকতার মূল খুঁজি

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব :
‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’-ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের অতি চর্বিত একটি শ্লোগান। প্রথম শ্রবণেই মন আকৃষ্ট হয়। মতভীন্নতার মাঝেও সবাই মিলে জুড়ে থাকার একটা যুৎসই পন্থা বলে মনে হয়। কিন্তু একটু গভীরে ডুব দিলেই বুঝে আসে, কথাটি নানা জটিলায়তনে বাঁধা। সুক্ষ্ম একটা কুটচাল কথাটিতে বিছিয়ে দেওয়া আছে। যা দিয়ে টার্গেটকে সহজেই বধ করা যায়। নৈতিকতার শ্লোগানে অনৈতিকতার হরিলুট সেরে ফেলা যায়। নিছক কল্পনার দাবি নয়, বাস্তবতার নিরিখেই বিষয়টি প্রমাণসিদ্ধ। সামনে বাড়ানোর আগে আমরা প্রমাণটা একটু ঘেঁটে নিতে চাই।
শুরুতেই আসা যাক-ধর্ম কাকে বলে? মত, পথ, নীতি, পন্থা, পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি অর্থে ‘ধর্ম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যে কোন মত, পথ পদ্ধতি ও বৈশিষ্ট্যকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর ধর্ম হিসেবে অভিহিত করা হয়। ‘আলোর ধর্ম’ ‘বস্তুর ধর্ম’ ‘প্রাণের ধর্ম’ ‘চুম্বকের ধর্ম’ ইত্যাদি ব্যবহারগুলো এ অর্থেই আমাদের নিকট পরিচিত। এ হিসেবে বলা যায়- পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি প্রাণী, এমনকি প্রতিটি বস্তুরও একটি করে ধর্ম আছে। এখন যদি বলা হয় ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’- এ কথার অর্থ আদৌ এটা নয়- প্রতিটি মানুষের নিজস্ব পালনীয় ধর্ম থাকলেও রাষ্ট্রের কোন ধর্ম নেই। রাষ্ট্রের কোন নীতিপথ নেই। নিয়ম-নীতি, পথ-পদ্ধতি ছাড়াই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। বরং রাষ্ট্রেরও একটি ধর্ম আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রই একটি ধর্ম মেনে চলে। নির্দিষ্ট ধর্ম, নির্দিষ্ট নীতিপথ, ও নিয়ম-পদ্ধতি মেনেই প্রতিটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এমন কি যারা শ্লোগানটির প্রবক্তা তাদের রাষ্ট্রও।
এবার আসা যাক রাষ্ট্রের ধর্ম ও নীতিপথ কোনটি হয় তা একটু তলিয়ে দেখি। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রের ধর্ম হল- ঐ রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, বিশেষকরে রাষ্ট্রটি যারা পরিচালনা করেন, তাদের বোধ-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী একটি আদর্শ ও কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র যেভাবে পরিচালিত হওয়া উচিৎ বলে মনে হয়, সেটিই হয় ঐ রাষ্ট্রের ধর্ম। তাহলে ঐ বহুল চর্বিত শ্লোগন ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ বাক্যটি ব্যবহৃত হয় ঐ ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র-ভাবনাকে নিধনের জন্য (কিংবা জনসংখ্যায় তারা বৃহৎ হলেও) রাষ্ট্র-ব্যবস্থা পরিচালনার ভার যাদের হাতে নেই। আরেকটু স্পষ্টভাবে বললে- পৃথিবীতে যত ধরণের ধর্ম বা মতবাদের উদ্ভব ঘটেছে, তা দু’প্রকার :
এক. ঐসব ধর্ম বা মতবাদ যা মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে পালনীয় কিছু আচার-অনুষ্ঠানের নির্দেশনা দেয়। আর কিছু ভাল ভাল উপদেশও প্রদান করে। মানুষের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন সম্পর্কে এসব ধর্ম বা মতবাদ থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায় না।
দুই. ঐসব ধর্ম বা মতবাদ যা মানুষের সামাজিক জীবন, বিশেষকরে রাষ্ট্রীয় জীবন কেমন হবে এসব বিষয়ে পথ নির্দেশ করে। মানুষের ব্যক্তিগত জীবন পদ্ধতি নিয়ে এসব ধর্ম বা মতবাদে ‘সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা’ ছাড়া তেমন কোন পথনির্দেশনা থাকে না।
প্রথম প্রকারের ধর্ম বা মতবাদের অন্তর্ভুক্ত হল- ইহুদী ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় প্রকার ধর্মের অন্তর্ভুক্ত- পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, এই উভয় প্রকারের ধর্ম বা মতবাদ আপন আপন ক্ষেত্রেও পূর্ণাঙ্গ নয় অসম্পূর্ণ। ফলে সবগুলোতেই নানা সংযোজন-বিয়োজন করা হয় বা করতে হয়। কিন্তু ঘটনাক্রমে ইসলাম ধর্ম এই উভয়ক্ষেত্রেই নিজের শক্তিশালী অবস্থানের যেমন দাবি করে, তেমনি উভয়ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গতারও দাবিদার। ইসলাম মানুষকে তার ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে যেমন পথ-নির্দেশ দেয়, তেমনি মানুষকে তার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও কিছু নীতিমালার আওতায় সমাজ ও রাষ্ট্র চালাতে বলে। এই অর্থেই প্রথম দিন থেকেই ইসলামের বাণী হল “ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থার নাম”।
এখন দ্বিতীয় প্রকার ধর্মের মতাবলম্বীরা ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ বলে প্রথম প্রকারের ধর্মমত উদ্দেশ্য নেয়। কিন্তু প্রথম প্রকারের কোন ধর্মমতই যখন রাষ্ট্রচিন্তায় সরব কিংবা শক্ত কোন অবস্থানে নেই, তখন শ্লোগানটি দ্বারা প্রকারান্তরে ইসলাম ধর্মের রাষ্ট্রচিন্তাকেই নির্মূল করা উদ্দেশ্য হয়। ইসলাম যদি সত্যিই মানুষকে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার জন্য কিছু নীতিমালা দিয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার জন্য অন্যান্য মতাদর্শের ন্যায় এটিও একটি মতাদর্শ। হ্যাঁ, পার্থক্য এতটুকু অন্যগুলো পূর্ণাঙ্গ নয়, এটি পূর্ণাঙ্গ। অন্যগুলো মনুষ্যত্ব ও মানবতার শ্লোগান দেয়, আর এটি মনুষ্যত্ব ও মানবতা প্রতিষ্ঠা করে। অন্যগুলোয় শুভঙ্করের ফাঁকি আছে, এখানে কোন ফাঁকি নেই। অন্য মতবাদগুলো বিভেদ-বৈষম্যহীন শান্তি ও সমৃদ্ধির একটি রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠা করে, মতবাদগুলোর যথার্থতা আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি; আর ‘ইসলামই যে বিভেদ-বৈষম্যের সকল দেওয়াল ভেঙে দিতে সক্ষম, সক্ষম শান্তি ও সমৃদ্ধি দিতে’- একথা ইসলাম ইতিহাসে একাধিকবার প্রমাণ করেছে।
ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারণাকে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার অন্যসব মতাদর্শের মত সাধারণ একটি মতাদর্শও যদি ধরা হয় তবুও তো তা পৃথিবীতে টিকে থাকার এবং মানুষ চাইলে তা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু সাধারণ একটি মতাদর্শ হিসেবেও এটিকে মূল্যায়ন না-করে, কেউ এটিকে ভালবাসলে তার প্রতি অতিমাত্রায় বিরূপ ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠা কি সাম্প্রদায়িকতা নয়?
ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা রাষ্ট্রে মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সুষম বণ্টনে যখন চরম বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা দেখে, এমনকি রাষ্ট্রকে প্রাণের নিরাপত্তাটুকুও দিতে ব্যর্থ হতে দেখে; তখন যদি তারা দাবি করে- রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামের কালজয়ী নীতিমালাগুলো চালু করা হোক, তখনই আওয়াজ ওঠে ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’। অথচ চলমান রাষ্ট্রব্যবস্থা পদ্ধতিও যে একটি ধর্ম- একথা আওয়াজধারীরা বুঝতে চান না, কিংবা বুঝেও না বুঝার ভান করেন। শুধু তাই নয় নিজেদের এই সাম্প্রদায়িক আচরণকে উল্টো প্রতিপক্ষের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার নসীহত করেন। এভাবেই চলে সা¤প্রদায়িক শব্দটির বহুল অথচ ভুল ব্যবহার।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×