২য় পর্ব:
১ম পর্বে আমরা দেখেছি- সাম্প্রদায়িকতা শব্দটি নিয়ে প্রতিনিয়ত কিভাবে আমাদের বিভ্রান্ত করা হয় অথবা আমরা বিভ্রান্ত হই। তাই 'সাম্প্রদায়িকতা' বিষয়টা মূলত কী তা আমাদের জানা প্রয়োজন।
আমরা এখানে সাম্প্রদায়িকতার সম্ভাব্য সকল অর্থ একে একে উল্লেখ করব এবং প্রত্যেকটির বাস্তবতাটাও একটু পরখ করে নেবো।
+ সাম্প্রদায়িকতার প্রথম অর্থ: মানুষ ও মনুষ্যত্বের উপর পশুত্বের মহড়া দেওয়া।
পৃথিবীর সবচে’ বড় সত্য হল আমরা সকলেই মানুষ। মত-পথের হাজারো বিভেদের পরও এই একটি সত্যে আমরা সকলেই এক। আর পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই ‘মানুষ’ হিসেবে কমবেশি কিছু মানবিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, ন্যায়-নীতি, ইনসাফ ও মহানুভবতার মত মানবিক গুণগুলো কমবেশি সকলেই ধারণ করে। এবার কখনো সম্প্রদায়গত বিভেদ যখন মানুষের এই মনুষ্যত্বকেও ছাপিয়ে ওঠে তখনই তা হয় ‘সাম্প্রদায়িকতা’। তখন মানুষ আর মানুষ থাকে না, মানুষের কাতার থেকে বেড়িয়ে যায়।
পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িকতার অতীত সকল রেকর্ড একত্রিত করলে এই একটি সত্য বের হয় যে, যে সম্প্রদায়ের নৈতিক বাধ্যবাধকতা যত দুর্বল, এ অর্থে (মনুষ্যত্ব ও মানবতাকে দলন) সে-সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক আচরণ তত বেশি এবং ভয়াবহ। কথাটিকে আরো সুস্পষ্ট করতে নিম্নোক্ত শ্রেণীভেদে আমরা বিষয়টাকে বিন্যাস করতে পারি।
এক. যে সাম্প্রদায়ের ধর্মীয় কোন বাধ্যবাধকতাই নেই। যেমন- প্রকৃত সেক্যুলারিজমে যারা বিশ্বাসী। অর্থাৎ কোন ধর্মেই যাদের আস্থা নেই; নিজেদের খেয়াল-খুশীই যাদের ধর্ম। কমিউনিজম যাদের প্রধান আশ্রয়। এ সম্প্রদায়টি বয়সে সবচে’ নবীন হলেও এদের সাম্প্রদায়িক ভয়াবহতার রেকর্ড অতীতের যেকোন ভয়াবহতাকেই চ্যালেঞ্জ করতে পারে। ভীন্ন মতাদর্শীদের নির্মম উপায়ে নির্মূল করতে কোন নীতিবোধই যাদের বাধা দিতে পারে না। প্রমাণ আমরা সামনে দিচ্ছি।
দুই. ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা আছে কিন্তু তা না-মেনে চলার সংস্কৃতিটাই যাদের জন্য স্বাভাবিক। যেমন- ইহুদী ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়। অবশ্য তাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা না-মানার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। যেমন- ধর্ম তার আসল স্বরূপ হারিয়ে ফেলা। নানা বিকৃতি-বিবর্তনের ফলে এমন অযৌক্তিক বিষয়-ব্যাকরণ ধর্মে স্থান পেয়ে যাওয়া, যার ফলে এই আধুনিক যুগে ধর্মকে গির্জাবদ্ধ করে রাখাই জীবন স্বাচ্ছন্দে চালানো ও আধুনিক উৎকর্ষকে এগিয়ে নেওয়ার একমাত্র পন্থা। এ শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক ভয়াবহতাও পূর্বোক্ত শ্রেণীর কাছাকাছি। কেননা বাধ্যবাধকতা না থাকা আর থাকলেও তা না-মানা প্রায় একই কথা। এ কারণেই মুসলমানরা বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করলেও তারা খ্রীষ্টান অধিবাসীদের মধ্য থেকে যাদের ইচ্ছা নিরাপত্তা নিয়ে থাকার, আর যাদের ইচ্ছা নিরাপদে চলে যাওয়ার পূর্ণ সুযোগ দিয়েছিল; কিন্তু পরবর্তীকালে খ্রীষ্টানরা আবারো তা দখল করলে ৭০ হাজার মুসলমানকে নির্মমভাবে শহীদ করে। অবশ্যই তাদের ধর্ম তাদেরকে এমন কোন নির্দেশনা দেয় না। অনুরূপভাবে স্পেনে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ শান্তি-সমৃদ্ধি আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের পয়গাম নিয়ে হাযির হলেও খ্রীষ্টানরা ৭ লক্ষ মুসলমানকে পুড়িয়ে,পানিতে ডুবিয়ে, দেশান্তর ও হত্যা করে সেখান থেকে মুসলমানদের বিদায় দেয়। আমার বিশ্বাস এমন নির্দেশনাও তাদের কিতাবে নেই। নিকট অতীতে এমন আরো অনেক বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত আছে। আর ইহুদী রাষ্ট্র ‘ইসরাইল’ তো বর্তমান পৃথিবীর এক বিভীষিকার নাম।
তিন. ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা আছে, তবে তা ন্যায়-নীতির নয়, বৈষম্যের। সেই সাথে না-মানার সংস্কৃতিতো আছেই। যেমন- হিন্দুধর্মের অনুসারীদের শ্রেণী-বিভেদ, বৈষম্য-বিন্যাস। মনু শাস্ত্রে মানব-বৈষম্যের যে ভয়াবহ চিত্র আছে তার কিয়দাংশ এখানে তুলে ধরছি। উল্লেখ্য, মনুশাস্ত্র অনুযায়ী হিন্দু ধর্মের শ্রেণীভেদটা হল এরকম ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী হল ব্রাহ্মণ, যারা ভগবানের শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি আর সর্বনিম্নশ্রেণী হল শূদ্র যাদের আপাদমস্তক ব্রাহ্মণদের পদসেবার জন্যই তৈরি।
মনুশাস্ত্রে ব্রাহ্মণ ও শূদ্রদের মাঝে যে আচরণবিধি উল্লেখ আছে তা নিম্নরূপ :
“ব্রাহ্মণ ইচ্ছা করলে শূদ্র থেকে জোরপূর্বক মাল নিতে পারে এবং তাতে কোন পাপ হবে না’।
‘শূদ্ররা সম্পদ জমা করার যোগ্য নয়। কেননা তারা তা জমা করলে ব্রাহ্মণ কষ্ট পায়’।
‘কোন শূদ্র যদি কোন ব্রাহ্মণের দিকে লাঠি বা শুধু হস্ত স¤প্রসারিত করে তাহলে হাত কেটে দেওয়া হবে। অনুরূপভাবে পা দ্বারা যদি লাথি মারে তাহলে পা কেটে দেওয়া হবে’।
‘কোন শূদ্র যদি কোন ব্রাহ্মণের সাথে একই জায়গায় বসতে চায় তাহলে শাসকদের কর্তব্য যে, সে শুদ্রের নিতম্বে গরম ছ্যাক দিবে। অথবা তার নিতম্বে মেরে আহত করার পর দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে’।
‘যদি কোন শূদ্র কোন ব্রাহ্মণকে স্পর্শ করে বা গালি দেয় তাহলে তার জিহ্বা গোড়া থেকে টেনে ছিড়ে ফেলতে হবে। আর যদি দাবি করে আমি তার শিক্ষক হওয়ার যোগ্য তাহলে তাকে উত্তপ্ত তৈল পান করাতে হবে।’
‘কুকুর, বিড়াল, ব্যাঙ, টিকটিকি, কাক, পেঁচা ইত্যাদির রক্তপণ ও একজন শূদ্রের রক্তপণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।”
এভাবেই এখানে পদদলিত হয়েছে মানুষ ও মানবতার ধর্ম। আর ধর্মে ভাল যেসব নির্দেশনা আছে তা না-মানার দৃষ্টান্ত হিসেবে গুজরাটের দাঙ্গা, বাবরী মসজিদ ধ্বংস এবং বিশেষভাবে ভারত বিভাগকালীন সময়ের ভয়াবহ দাঙ্গাসমূহ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। প্রতিপক্ষদের দাঙ্গা দিয়ে নির্মমভাবে শেষ করার নির্দেশ হিন্দু ধর্ম-ও মনে হয় দেয় না। কিন্তু পূর্বেই বলেছি, মানুষ না মানলে তার সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা সবকিছুকেই ছাপিয়ে যেতে পারে। আর হিন্দু ধর্ম এমন কিছু অদ্ভুত বিশ্বাস ও নির্দেশনার নাম যে, এখানে না-মানার সংস্কৃতি গড়ে উঠতে বাধ্য। ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের থেকেও অনেক প্রবলভাবে।
চার. ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা আছে। এ বাধ্যবাধকতা নীতি-নৈতিকতায় সমৃদ্ধ এবং তা মানার সংস্কৃতিও চালু আছে। তথাপি সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা। হ্যাঁ, এমনও হতে পারে যখন এ ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা বিরাজ করে কিংবা এ ধর্ম সম্পর্কে যাদের জানাশোনা কম থাকে। যেমন- ইসলাম ধর্ম। বহু অমুসলমানও একথা স্বীকার করেছেন এবং করেন- নীতি- নৈতিকতার এতটা সমৃদ্ধ নির্দেশনা অন্য কোন ধর্মে নেই। আবার এসব নির্দেশনা এতটাই যৌক্তিক, সুস্পষ্ট, সুসংহত ও জীবনোপযোগী যে, এধর্ম সম্পর্কে জানাশোনা রাখলে না-মানার সংস্কৃতি গড়ে উঠার সুযোগ নিতান্তই কম। এ কারণেই সাদা-কালো, ধনী-নির্ধন অঞ্চল বা শ্রেণীগত বিভেদ-বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস মুসলিম সমাজে নিতান্তই গৌণ। ভারত বিভাগকালে হিন্দুদের সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে এমন কিছু সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলেও কখনোই তা জোড়ালো হয়ে উঠতে পারেনি।
+সাম্প্রদায়িকতার দ্বিতীয় অর্থ: পরমত সহিষ্ণু না-হওয়া।
এখানে দু’টি বিষয় বিশেষভাবে শুরুতে বলা প্রয়োজন-
এক. একজনের নিকট যে মত ও পথটাকে সবচেয়ে যৌক্তিক, ভাল, কল্যাণকর ও পালনীয় মনে হবে, অন্য একজনের নিকট সে মতাদর্শটি এমন মনে নাও হতে পারে।
দুই. প্রত্যেকেই নিজের মতটিকে মানুষ ও মানবতার জন্য উপকারী, সবচেয়ে শুদ্ধ ও শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করে। আর শুদ্ধ ও শ্রেষ্ঠ মনে না করলেও তা ‘আপন-আদর্শ’ হিসেবে ধরে রাখার নানা যৌক্তিকতা খুঁজে পায়। যেমন- বাপ-দাদার ধর্ম, অথবা কোন ধর্মই সত্য নয়, অথবা সকল ধর্মই আংশিক সত্য ইত্যাদি।
এজন্য সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে-শ্রেণীর লোকদের প্রাবল্য হবে, তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ীই একটি আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে, এটাই স্বাভাবিক। আরেকটু সহজভাবে বললে- প্রতিটি মানুষ তার প্রভাবাধীন বলয়ে নিজস্ব চিন্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে এটাই পৃথিবীর নিয়ম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কেউ যখন অপরের কাঁধে ‘আপন-সত্য’ জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, অন্যথায় নির্মম নিধন উৎসবে মেতে ওঠে, তখনই তা জঘন্য সাম্প্রদায়িকতায় রূপ নেয়। এ জন্যই ইসলামের নীতি হল- ‘ইসলাম’ নিজেকে স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত একমাত্র সত্য-ধর্ম, মনুষ্যত্ব ও মানবতা নির্মাণের শ্রেষ্ঠতম পন্থা সাব্যস্ত করলেও- বলে ‘দ্বীন গ্রহণে কারো উপর জবরদস্তি নেই।’ হ্যাঁ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় মুসলমানরা অধিষ্ঠিত হলে নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ীই মানব-কল্যাণে আদর্শ রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা করবে; তবে ভীন্ন মতাদর্শীরাও সে রাষ্ট্রে নিজ নিজ মতাদর্শ নিয়ে পাবে বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার।
এই ক্ষেত্রটিতে এসে কমিউনিজমের অনুসারীরা সবচেয়ে বেশি অসহিষ্ণুতার পরিচয় দেয়। তারা মনে করে- তারা যে থিওরিতে মানুষ ও মানবতার মুক্তি বলে ভাবে সে থিওরিতেই অন্যদেরকেও ভাবতে হবে, নয়তো হারাতে হবে বেঁচে থাকার অধিকার। ভিন্ন মতাবলম্বীদের সমূলে নির্মূলের মত জঘন্য মনোবৃত্তি ও সাম্প্রদায়িকতা কমিউনিজমের অনুসারীদের মত পৃথিবীর আর কোন স¤প্রদায়ের লোকেরা হয়ত দেখাতে পারেনি। শুধু অভিযোগ না করে পরিসংখ্যানে আসি। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখলের কিছু দিনের মধ্যেই ২৬ হাজার মসজিদে আজান বন্ধ করে দেয়। সেই সাথে বন্ধ করে ২৪ হাজার মাদরাসা, আর এর সাথে সংশ্লিষ্ট লক্ষ লক্ষ আলেমকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের অপরাধ-কমিউনিস্টরা যে থিওরিতে মানব-মুক্তির কথা ভাবত, তারা সেভাবে ভাবতে পারেনি। কমিউনিস্ট বিপ্লবের ছয়-সাত বছরের মধ্যেই ক্ষমতায় আসেন জোসেফ স্টালিন। যিনি একটানা ২৭ বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন শাসন করেছেন। তিনি তার শাসনামলে লাখ রাখ মানুষকে কনসেনস্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি করে করে রাখতেন শুধুমাত্র মতভীন্নতার অপরাধে। বলা হয় তার দীর্ঘ ২৭ বছরের শাসনামলে তার বিরোধিতা করতে পারে এ ধরণের কাণ্ডজ্ঞানহীন সন্দেহে তিনি তিন কোটি বা তারও দ্বিগুণ পরিমাণ সোভিয়েতবাসীকে গুলি করে মেরেছেন, ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন, বুভুক্ষু অবস্থায় মেরেছেন, প্রহার করেছেন কিংবা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। অথচ এই কমিউনিস্টদের দাবি হল-তারা অসাম্প্রদায়িক, ধর্ম নিরপেক্ষ, পরমত সহিষ্ণু?!
এই কমিউনিস্টরা তথাকথিত সাম্যবাদের নামে নিজেদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীর যে পরিমাণ মানুষ হত্যা করেছে পৃথিবীর আর সকল আদর্শ মিলিয়েও মনে হয় এত মানুষ হত্যার রেকর্ড নেই।
সমাজতন্ত্রের এ দেশীয় অনুসারীরাও একইরকম অসহিষ্ণু। পরমত বিশেষকরে ইসলামের ক্ষেত্রে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে ব্যক্তি জীবনের সাথে সাথে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনাচার সম্পর্কেও নির্দেশনা দেয় বলে ইসলামের নাম-ধাম, স্বাভাবিক আচার-অনুষ্ঠানও তাদের সহ্য হয় না। অন্যান্য ধর্মের মত ইসলামের ঘাড়েও তাদের তথাকথিত সাম্যবাদ চাপিয়ে দিতে না পারার আক্রোশে ইসলামে সবকিছুকেই সাম্প্রদায়িকতা বলে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে। বামদের দখলে থাকা বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে এ কারণেই ফররুখের মত প্রতিভা, ইসলামের প্রতি অনুরাগী হওয়ার অপরাধে, যথার্থ মূল্যায়ন পাননি। আল মাহমুদও একই পথের পথিক।