যতটুকু জানি তা থেকে বলছি, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান নিয়েই এই পরিস্থিতির শুরু। এই ''জাতিগত শুদ্ধি''- শব্দটি একবিংশ শতাব্দির এই সময়ে যখন গনতন্ত্রের মানস কন্যা অং সান সুচি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার গ্রহন করলেন ঠিক সেই সময়ে কতটা হাস্যকর তা কল্পনার বাইরে। রাখাইন রাজ্যের মংডু ও আকিয়াব এলাকায় গণহত্যা ও বেপরোয়া লুটতরাজের মহোৎসব চলছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গারা। সরকারি হিসেবে ৮০ জন ও বেসকারী হিসেবে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত ও অসংখ্য আহতের খবর এসেছে। যেখানে মুসলিম রোহিঙ্গাদেরকে পাচ্ছে সেখানেই আক্রমন চালাচ্ছে রাখাইন বৌদ্ধরা। তরুনীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, নির্বিচারে মানুষ খুন করছে, লুটতরাজ, হামলা- সব মিলিয়ে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও বিশ্বমোড়লরা এ ব্যাপারে কোন কথা বলছে না অদ্ভূত কোন কারনে!
এইরকম এক অসহায় পরিস্থিতিতে আক্রান্ত রাখাইন রাজ্যের শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান জীবন বাচাঁতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালালে বিশ্বনেতৃবৃন্দের অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকারের কঠোর অবস্থানের জন্য বিজিবি রোহিঙ্গাদেরকে পুশব্যাক করে দেয়। এবং এই পুশব্যাক মানে বাঘের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আবার বাঘের মুখে ঠেলে দেয়া। যাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে তারা ফিরে গিয়ে আবার আক্রমনে মারা পড়ছে অথবা বঙ্গপোসাগরে নৌকা বা ট্রলার নিয়ে ভাসতে ভাসতে ঝড়ের কবলে পড়ে বা খাবারের অভাবে মারা পড়ছে।
নিজেকে মানুষ মনে হলে অন্তত একটিবার চিন্তা করুন আপনি এই পরিস্থিতিতে পড়লে কি করতেন!!!
এই হল বর্তমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি....চলুনএখন একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করি....
বাংলাদেশ স্বীকৃতভাবে অসাম্প্রদায়িক দেশ। রোহিঙ্গারা যদি মুসলমান বাদে অন্য সম্প্রদায়ের হতো তখন পরিস্থিতি কেমন হতো একটু ভেবে দেখুন। নৌকায়, ট্রলারে করে শত শত ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসছে...বাংলাদেশ সরকারের কঠোর মনোভাবের কারনে বিজিবি সিমান্তে তাদেরকে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ হওয়ায় তারা অন্য ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গাদেরকে অনুপ্রবেশে বাধা দিচ্ছে বলে বিশ্বমোড়লরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বাংলাদেশ সরকার সাংবিধানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক দেশ হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে বাধা ও সীমান্তে শরনার্থী শিবির না খোলায় সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ করছে যা সংবিধানকে অবমাননা করার শামিল। বাংলাদেশে বসবাসরত ভিন্ন ধর্মালম্বীরা রোহিঙ্গাদেরকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও শরনার্থী শিবিরে জায়গা দেয়ার দাবীতে মানববন্ধন ও পরে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বাংলাদেশে সরকারের সাথে বৈঠক করেছে। অবশেষে সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে সাময়িকভাবে প্রবেশের অনুমতি, সীমান্তে নির্দিষ্ট এলাকায় বিচরন, শরনার্থী শিবির স্থাপন করেছে এবং তাদের পিছনের ব্যয় মিটাতে বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছে। রোহিঙ্গারা নতুন জীবন ফিরে পেয়ে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। আর এই সময়ের মধ্যে মিয়ানমার সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতৃবৃন্দ আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌছার চেষ্টা করছে।
হয়তোবা এমনটিই ঘটত...
আর বর্তমান পরিস্থিতি:
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, আপামর জনসাধারন, বিশ্বের বেশকিছু দেশের অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্তে এখনও অনড়। হয়তোবা কারন হিসেবে বলতে পারি জনসংখ্যার বিচারে আমরা প্রচণ্ড ধরনের একটা জনবহুল দেশ এবং আমাদের যে ছোট, ক্ষুদ্র অর্থনীতি, সেই অর্থনীতির জন্য এত লোকজনকে ঠাঁই করে দেওয়া সম্ভব নয় অথবা রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে। কিন্তু সবার আগে মনুষ্যত্ব, মানবিকতা। তাদেরকে সীমান্তে নির্দিষ্ট এলাকায় সাময়িকভাবে ঠাই দেয়া যেতে পারে যা কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হবে যাতে করে সেখান থেকে কেউ বের হতে না পারে। এই শিবিরের ব্যায় মেটাতে আন্তর্জাতিক মহল অবশ্যই সহযোগিতার হাত বাড়াত যার উদাহরন আমরা বতূমান বিশ্বের অনেক শরনার্থী শিবিরে বা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহে দেখতে পাই। আমি বাংলাদেশ সরকারের একজন সুস্থ মস্তিষ্কের নাগরিক হিসেবে নিজ দেশের মানবতার উদার দৃষ্টান্ত দেখতে চাই যেমনটি ১৯৭১ সালে আমরা ভারতের কাছে শরনার্থী হিসেবে পেয়েছিলাম।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




