সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠিয়া দেখিতে পাইলাম 7 missed call - faria । ( সরল বাংলায় মামু তুমি শ্যাষ । ) বোনাস হিসেবে ২ টা মেসেজও পাইয়াছি । মেসেজ ২ টার সারমর্ম হইল "আর আধ ঘন্টার মধ্যে ভারসিটি ক্যাম্পাস এ না পৌঁছালে তোমারে আমি কাচ্চা চিবায় খাবো ।" এই মেয়ে যে জিনিস শুধু কাচা চিবানো কি , আমারে চাক্কু দিয়া কুচি কুচি করিয়া কাটিয়া সস দিয়া খাওয়াও তাহার কাছে জলবত তরলং । ক্যালেন্ডার এ তাকাইয়া দেখিতে পাইলাম আজ পয়লা বৈশাখ । হায় আল্লাহ এই দিন এর কথা ক্যাম্নে ভুলিয়া গেলাম । ( ধুর !!ছাতার মাতা কিছুই মনে থাহে না , বাল ।)
তাড়াতাড়ি করিয়া ব্রাশ করিয়া পাঞ্জাবি খুজিতে লাগিলাম । আজিব , অন্য সময় পাঞ্জাবি চোখের সম্মুখে ভূতের মত নৃত্য করিয়া বেড়ায় । অথচ এখন সার্চ লাইট দিয়াও পাঞ্জাবি খুজিয়া পাইতেছি না । একটু পর মাতা কহিলেন , 'তেলাপোকার মত সারা বাড়ি লাফায় বেরাইতেছিস ক্যান ? '
'না মানে পাঞ্জাবি টা কই ? খুজে পাই না তো । '
' ওয়ারড্রব টা চেক করে দেখছিস ? নিজে তো কিছুই কোনোদিন গুছায় রাখিস না । '
' অ !!! না মানে আসলে ঐ টাই খোঁজা বাদ ছিল । '
' তোকে দিয়ে কিছুই হবে না । তুই আকাইম্মা ছিলি , আকাইম্মাই থাকবি । ' ( ইশ !! আমার এহেন প্রশংসা বাক্য শুনিয়া আমার কর্ণ জুড়াইয়া গেল )
জামাকাপড় পর্ব সমাপ্ত হইলো । এইবার টাকা পয়সা পর্ব । ( মোস্ট ইম্পরটেন্ট পর্ব ) এই পর্ব তে ফেইল খাইলে সারা দিন টাই ফেইল । বছরে এই পয়লা বৈশাখ আসে এক বার । আর এই দিনের সম্মান রক্ষারথে আমাদের এই দিনটা সূচারু ভাবে দিনটা পালন করিতে হইবে । তাই টাকা ইজ বেরি ইম্পোরটেন । ( ব্যাক সিন কাহিনি হইলো ঃ টাকা না থাকলে গার্ল ফিরেন্ড পচাইবো । দুনিয়াডাই খ্রাপ
পিতার কক্ষে গিয়ে দেখিতে পাইলাম তিনি ফুল ভলিউমে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনিতেছেন । চোখ মুখের ভাব দেখিয়া মনে হইলো যেন স্বয়ং কবিগুরু আসিয়া তাকে গান শুনাইতেছেন । ভাবটা যেন , দুনিয়ার সুখ অনলি অন রবীন্দ্র সঙ্গীত । তাহা কোন বিষয় নহে আমার কর্ম টাকা নেওয়া । আমি আমার টোন মধুর থেকে মধুরতর করিয়া কহিলাম, ' আব্বু , টাকা লাগবে '
' কেন বাবা ?' ( রবীন্দ্র সঙ্গীত ইফেক্ট । অন্য দিন হলে আব্বু অলরেডি আমাকে ২৩৩ টা ঝাড়ি দিয়ে ফেলত )
' না মানে আসলে অই আজ পয়লা বৈশাখ তো তাই সব বন্ধুরা মিলে বাদাম খাবো '
' ড্রয়ার এর কোণায় দেখ ২ টাকা আছে । নিয়ে যাও । '
------আমি আমার পিতার এহেন উত্তর শুনিয়া কিয়তক্ষণ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হইয়া দাঁড়াইয়া থাকিলাম ----
' দু- দু- দুই টাকা !!!! '
' আর লাগবে ?'
আমি ঝরের বেগে মাথা উপর নিচে ঝাকাইলাম ।
' অ , মানি ব্যাগ থেকে নিয়ে যাও । '
আমি বাবার মানি থেকে ৩০ টাকা বাহির করিয়া বাকি যাহা আছে তাহার পুরোটাই পকেটস্থ করিলাম । আহ শান্তি ! টাকা পকেটে ঢোকার সাথে সাথে নিজেকে সম্রাট শাহজাহান মনে হইতে লাগিল । ব্যাফুক মজা । টাকা পয়সা হল পুরা স্বর্গীয় জিনিস ।
রিকশা তে উঠিতে না উঠিতেই ফোন বাজিয়া উঠিলো ।
' তুমি কোথায় ? '
' আমি তো পৌঁছে গেছি । ভাড়াটা দিয়ে নেই । আসছি । '
' মানে তুমি এখন বাসা থেকে বের হওনি । উফ এই ছেলেকে নিয়ে আমি কি করব !! তোমার কি কোনদিন এক ফোটা টাইম সেন্স হবে ? '
' এইত সোনা আর মাত্র ২ মিনিট । চলে আসছি প্রায় '
ফারিয়া অভিমানে ফোন কাটিয়া দিল । আমার বুক দুরু দুরু করিতে লাগিলো । কপালে খারাপি আছে ।গিয়ে দেখিতে পাইলাম সে রাগে ফুসিতেছে ।
' তোমাকে দেখতে আজ অসাধারণ লাগছে ' ( আমি আমার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচেষ্টা করিলাম )
'তুমি অফ যাও , বুঝছ । তোমার মত কেয়ারলেস ছেলে আমি কখন দেখিনি । আরে আমি কিনা একা একা বসে আছি । আর জনাবের কোন পরোয়া নাই । তোমার কি আদৌ রিলেশান রাখার ইচ্ছা আছে না নাই ? '
' আমি তো কাজ করতেছিলাম । আম্মু বাজারে পাঠাইছিল আমারে ... '
' আমারে তুমি কচি খুকি পাইছো না ? যা বলবা তাই অন্ধের মত মানবো না ? কয়েক দিন ধরেই তো দেখতেছি অই স্নেহা না ফেহা তার সাথে তো ভালই লটরপটর করতেছো ফেসবুক এ '
' কি বললা তুমি ? আমারে নিয়া তোমার এই ধারনা ?? ...
- - - - - - ১৫ মিনিটের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ফারিয়া কে শান্ত করিতে সক্ষম হইলাম - - - -
ফারিয়া হঠাত বলিল , ' চল ক্ষিদা লাগছে । পান্তা খাবো '
' তুমি খাবা পান্তা ?? আমি তো জানতাম তুমি ফাস্ট ফুড আর চায়নিজ ছাড়া কিছু খাইতেই পারনা । '
' হায়রে কপাল । পয়লা বৈশাখ এ পান্তা না খাইলে প্রেস্টিজ কিছু থাকবে ? '
' অ '
খাওয়া দাওয়া পর্ব সমাপ্ত করিয়া আমরা ঘুরিতে বের হইলাম । হঠাত ফারিয়া এক মধ্যবয়স্ক মানুষ কে দেখিয়া আঁতকাইয়া উঠিল । লোকটাও আমাদিগের দিকে ' পাইছি তোমারে ' টাইপ লুক দিলেন । ফারিয়া এবার আমাকে সম্পূর্ণ হকচকিত করিয়া সেই লোককে লম্বা সালাম ঠুকিয়া বলিল , ' স্লামালেকুম মামা '
' কিরে ঘুরতে বের হইছিস ?' ( সত্য কাহিনি বুঝিয়া তিনিও মিটিমিটি হাসিতে লাগিলেন )ফারিয়া আমার দিকে নির্দেশ করিয়া বলিল ,' মামা এ হল হাসিব ভাইয়া । ছোট ফুপুর ছেলে । ' ( হায় খোদা !! কয় কি !!শেষ পর্যন্ত ভাই বানায় ফেলাইল । এই দিন দেখার আগে আমি সুইসাইড খাইলাম না ক্যান )
মামা বলিলেন , ' তাই নাকি ? ওহ । "
' ভাইয়া সুইডেন এ থাকে । পয়লা বৈশাখ দেখাতে নিএ আসলাম তাই ।'
' ভাল করছিস । চল আমার বাসায় ওকে নিয়ে । '
' না - না । মা-মানে , ভাইয়ার নাকি কাজ আছে । বাসায় যাবে । '
' আচ্ছা থাক তাহলে । আমি গেলাম ।'
' বাই মামা ।'
ফারিয়া এবার আমার দিকে তাকাইয়া অগ্নিদৃষ্টি দিয়া পুড়াইয়া দিল , ' তোমার মাথায় কি কিছু আছে ? একটা স্টুপিড মানুষও এখানে একটা ভাল এক্টিং দেখাতে পারতো । এই ছেলেকে নিয়ে আমি কি করবো ? '
' ছরি , মিশঠেক হয়া গ্যাছে । '
' আমি আরেকটু হলে দাবড়ানি খাইতাম আর তুমি ফান করতেছো ? '
' সরি , আর হবে না । হেইল হিটলার । ' আমি নাৎসি বাহিনি স্টাইলে একটা স্যালুট দিলাম
' চল আমারে ফুল কিনে দিবা । '
' ফুল কই পাবো ? '
' চুরি করতে হবে না আপনার । অনেক ফুলের দোকান আছে । নাকি কিনে দেওয়ারও টাকা নাই ? '
' না না তা থাকবে না কেন ? চল '
আমি ফারিয়াকে ফুল কিনে দিয়ে বাড়ির দিকে আগাইতে থাকিলাম । বাড়ি গিয়েই মাতা আমাকে বলিল যে তোমার পিতা তোমার সাথে দেখা করিতে আগ্রহ বোধ করিয়াছে । বাবাকে দেখিলাম যে তিনি থমথমে মুখ লইয়া আরাম কেদারায় বসিয়া আছেন । আমি কহিলাম , ' বাবা তুমি নাকি আমারে ডাকছ ? '
' কই ছিলা তুমি সারাদিন ? '
' এইত রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছিলাম আর রাশিয়ান কবি ভল্ভতিয়ার এর সাহিত্যে বাংলা ভাষার প্রভাব নিয়ে বন্ধুরা আলোচনা করছিলাম । '
' হুম অনেক জ্ঞানগর্ভ মূলক আলোচনা করছিলা তো । তা এই আলোচনার কোন অংশে কি একটা মেয়েকে ফুল উপহার দেওয়া ছিল ? '
' মানে ? '
' কয়টা বাজে ? '
' ৭টা '
' চ্যানেল আই এর খবর হবে । টিভিটা ছাড়ো ।'
খবরের প্রথম প্রতিবেদনেই দেখিতে পাইলাম পয়লা বৈশাখ শীর্ষক প্রতিবেদনে আমাকে আর ফারিয়াকে ফোকাস করিয়া দেখাইতেছে । আমি হতভম্ভ হয়ে বসিয়া পড়িলাম । ( সুজা বাংলাত কইতে গ্যালে , আমার মাথাত ঠাডা পড়লো ) । রিপোর্টার এদিকে পাঠ করিয়া যাইতে লাগিলো , ' আজ পহেলা বৈশাখ এ কপোত-কপোতিরা প্রাণের সুখে বাঙালি সাজে বের হয় । হৃদয়ের কথা প্রকাশ করতে অনেকেই ... ... ...
মুঠোফোনটিও হঠাত তারস্বরে চিৎকার করিয়া উঠিল । ফোনটি রিসিভ করিতেই অপর পক্ষ হইতে কেহ যেন প্রফুল্ল চিত্তে কহিয়া উঠিল , ' দুস্তো তুমারে তো টিভিতে দেখাইছে । তুমি তো মামা ফেমাস হয়া গ্যালা । কাইলকে খাওন চা ... ... '
আমি আমার গলাতে যথাসম্ভব বাঙ্গালিত্ত আনিয়া কহিলাম , ' হারামজাদা , অফ যা । '

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



