' মামা , ডাবল পাত্তি , চিনি ছাড়া ২কাপ লেবু চা , তাড়াতাড়ি । ' জয়নাল মামা এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন । তিনি খুব ভালোমতই জানেন যে এই জনমে তার চায়ের দাম পাওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই । কারণ অর্ডারদাতা হলেন আর কেউ নন আমাদের বগা ভাই । এই মহান ব্যাক্তিত্তের প্রধান কাজ হল দৈনিক জয়নাল চা স্টোর থেকে ১৫ কাপ চা খাওয়া আর রাজ্যের যাবতীয় বিষয় নিয়ে ফাউল গ্যাজানো । তার গ্যাজানো শুনে মনে হয় ' গ্যাজাও বাংলাদেশ , গ্যাজাও ' প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ।
জয়নাল মামা চা নিয়ে বিরস নয়নে বগা ভাইয়ের সামনে হাজির হলেন । মনে আশা যদি ভুল করে বগা ভাই দামটা দিয়ে দেন ।
' মামা দামডা দিবেন ? '
' কি যে কন মামা ? আমি কি কোনোদিন দাম চায়ের দাম না দিয়া বাড়ি গেসি ? কন ? '
' হ । ( বিরাট দীর্ঘশ্বাস ) ... সেই পরথম যেদিন আমার দুকান থেইকা চা খাইছিলেন অই দিন শুদু দাম দিছিলেন । তাও আবার আরধেক । '
' দিমু মামা দিমু । এত উতলা হন ক্যা ? ' বলে বগা ভাই এক খান ক্যাবলা মার্কা হাসি দিলেন । ভাবটা যেন ক্যাবলা হাসি দিলে মামার চায়ের দাম দেওয়া হয়ে যাবে ।
আমাকে আর রায়হানকে আসতে দেখে তিনি অনেকটা 'পাইছি তরে' টাইপ লুক দিলেন । আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন , ' ওই তো মামা আপনার বিল । ' আমরা দুজন হতভম্ভের মত ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলাম । ' ওই কাতলা মাছের মত চাইয়া চাইয়া কি দ্যাখস ? '
' নাহ , কিছু না । '
'দামডা দিয়া চল , কাম আছে । '
' কি কাজ ? '
' মোল্লাপাড়ার কিছু পুলারে দাবড়ানি দেওন লাগবো । '
আমরা দুজন পুরোপুরি হকচকিয়ে গেলাম । একটা ঢোক গিলে বললাম , ' দা-দা-দাবড়ানি মানে ? '
'দাবড়ানি বুঝনা ? কচি খোকা তুমি ? নাক টিপলে দুধ বের হয় , তাইনা ? '
রায়হান গলা দিয়ে চি চি শব্দ বের করে কোনমতে বলল , ' আমার তো ভাইয়া পরীক্ষা আছে । আমি যাই । কালকে আবার ... ' । বগা ভাই সাথে সাথে রায়হান এর কলার ধরে এমন এক ঝাকানি দিলো যে মনে হল ওর ২-৩ টা হাড্ডি ওখানেই খুলে গেছে । আমি তাই আর কথা বাড়ালাম না । মনে মনে চিন্তা করলাম , ' আল্লাহ গো রহম কর । আমি একখান ভালা পুলা আল্লাহ । একটু আকাইম্মা আর মাঝে মাঝে ফারিয়ার দিকে নজর দেই কিন্তুক মনটা এক্কেরে ফকফকা আল্লাহ । পিলিজ আল্লাহ পিলিজ । '
কিন্তু হায় । আমার মত পুলার কথা কি তিনি আর শুনেন । বগা ভাই এই পর্যায়ে আমাদের দুজনের কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলেন ।
হঠাত বগা ভাই আমাদের জিজ্ঞাস করলেন , ' ওই হারামি রাহাত টা কইরে ? '
' ভাই ওরা ত বাড়ি বদলাইছে । '
' অহ , তাইলে রাহাতদের বাড়ির জানালা খোলা কেন ? '
ওদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি জানালা খোলা । ' মনে হয় নতুন কোন ভাড়াটিয়া আসছে । '
'অ'
কিছু একটা বলতে গিয়ে বগা ভাই থেমে গেলেন । তার চেহারা দেখে মনে হল যে তার মাথার উপর ঠাডা পরছে । দেখি আমাদের একদম ১৩৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে একটা মেয়ে । ভয়ঙ্কর সুন্দর । হা করে তাকিয়ে থাকার মত চেহারা । দেখে আমিও ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলাম । কিছুখন পর দুম করে নাকের উপর একটা ঘুসি খেলাম । দেখি বগা ভাই মোষের মত ফুসছেন আমার দিকে তাকিয়ে । ' হারামজাদা কি দ্যাখোস ? ' আমি দ্রুত ডানে বামে মাথা ঝাকালাম ।
' না না । কিছু না । এমনি । আমি দেখছিলাম যে ওই ন-নতুন ভাড়াটিয়াদের ফার্নিচার গুলা খু-খুব সুন্দর । '
' মশকরা কর না , আমার লগে ফাজলামি মারো ? এক থাপ্পর দিয়া দাত খুইলা ফালামু । '
আমি ভয়ে মাথা উপর নিচে ঝাকালাম ।
' মাথা ঝাকাইস ক্যা ? '
' না না , এমনি । আর হবে না । '
'চল তাড়াতাড়ি ' বলে বগা ভাই উলটা দিকে হাটা দিলেন ।
' ভাই মোল্লাপাড়া তো ওই দিকে । এই দিকে কই যান ? '
' আমারে কি উল্লুক পাইছোস ? মোল্লাপাড়া কোন্দিকে আমি জানি না ? তর বাপের আগে থেকে এই এলাকাতে থাকি । বাড়ি যা । পরে কথা কমু ।'
আমি আর রায়হান কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে থাকলাম । তারপর দুজন একসাথে বাড়ির দিকে এগোতে থাকলাম । যেতে যেতে রায়হানকে বললাম , ' মাইয়াডা ভাল ছিল । '
' কোন মাইয়া ? '
' আররে রাহাত দের বাড়িতে যে নতুন মেয়ে আইছে , অইডা । '
' কোনটা ? '
' আরে গাধা , যে মেয়েরে দেখার লাইগা নাকের উপর দাবড়ানি খাইলাম । '
' কিন্তু তুই ত ফার্নিচার দেখতেছিলি । '
' হায়রে খাম্বা রে । অবশ্য তোর কথা আলাদা । তর কাছে ত দুনিয়ার সবচেয়ে সেক্সি জিনিস হইলো পাই এর মান । বিরাট আফসুস !! পুলাডারে মানুষ করতে পারলাম না ।'
আমার কাছ থেকে অপমান খেয়ে রায়হান ভুরু কুচকে বলল ,' হইছে হইছে । আর পচাইতে হবে না । '
রাত ২ টা
আমি ঘুমে বেঘোর । একবার ঘুমাইলে দুনিয়ার আর কিছু মাথায় থাকে না । ফোনটা হঠাত ভাইব্রেট করে উঠলো । আমি রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরলাম । ( বলা যায় না । কখন কোন মেয়ে ফোন করে
' হ্যালো '
' হ্যালো । কে হাসিব ? ভালো আছিস ? ' ( গলার টোন শুইনা আমি টাস্কি খাইলাম )
' হ্যা ভালো আছি । আপনি ? এত রাইতে ? কিছু হইসে নাকি ? '
' না মানে এমনি , একটু গল্প করতাম । '
' ভাই আপ্নেরে নরমাল ঠেকতেসে না । আপনি ঠিক আসেন তো ? '
' আচ্ছা পয়েন্টে আসি । একটা পুলা মনে কর একটা মাইয়ার প্রেমে পড়ছে । এখন পুলাডা ওই মেয়েকে কেম্নে প্রেম এর প্রস্তাব পাঠাবে ? '
' আমি কেমতে কমু ? '
' তুই কইবি কেম্নে মানে ? তুই না ফারিয়ার লগে টাঙ্কি মারতি ? '
' অইডার কতা আর মনে করায়ে দিয়েন না । দুই দিন রিক্সার পিছ পিছ গেছিলাম । তিন নাম্বার দিনে কোচিং থেকে মারা কাগজে একটা লাভ লেটার দিছিলাম । লেটার লইয়া থেঙ্কু দেওন ত দুরের কথা আমার দিক তাকায়ে শয়তানি হাসি দিয়া কইলো যে ভাইয়া আপনার লেখাটা ভালোই কিন্তু ব্যাকারনে অনেক ভুল আছে । আরি আজিব তো । আমি কি পরীক্ষা দিতেছি নাকি যে ব্যাকরণ ঠিক করন লাগবো । '
' হইছে হইছে । আর প্যাচাল পাইরা কাম নাইক্কা । কাইল ১১ টার দিকে জয়নাল মামার দোকানের সামনে দাঁড়াবি । '
' দেহি '
' দেহি মানে ? দাঁড়াবি মানে দাঁড়াবি । '
' ঠিক আছে দাড়ামু । '
' রাখলাম '
পরদিন ১১ টার দিকে জয়নাল মামার দোকানে গিয়ে দেখি এক আজব বস্তু । দেখি হুবুহু বগা ভাইয়ের চেহারার মত এক ছেলে দোকানে বসে আছে । হাতে লাল গোলাপ । পরনে টকটকে গোলাপি একটা সিল্কের শার্ট । হাতের বোতাম লাগানো । ঢিলে ঢালা একটা বানানো প্যান্ট । সাদা রঙ এর কেডস । আমি বজ্রাহতের মত কিছুখন তাকিয়ে থেকে মাথা চুল্কাতে লাগ্লাম । মাথায় একটা জিনিসই ঘুরছে , ' এইডা কি ? '
' আররে হাসিব , চল । একটু ঘুরে আসি । ' অম্মা এর ভয়েসও দেখি বগা ভাই এর মত ।
' ব-ব-বগা ভাই ??? '
' হ্যা । তো আবার কে ? '
' অহ , চিনতে পারিনি । '
' কথা বাড়াস না চল '
' আচ্ছা চল । আজকেও চায়ের বিল দিব ? '
' নাহ আমি দিয়ে দিসি । মোট ২ হাজার ৫ শ ৯০ টাকা । '
দ্বিধা হও ধরণী । এই দিনও দেখতে হল আমাকে । কেয়ামত সত্যি আগায়ে আসছে ।
' ওই কি হল ? চল যাই । '
' চলেন '
দেখি বগা ভাই ওই মেয়ের বাড়ির দিকে এগচ্ছেন । আমি বুঝে গেলাম কাহিনি কি । বাড়ির ১০০ হাত দুরেই আমাকে রেখে বগা ভাই একা একা গেলেন । আমার উপর হয়ত বিশ্বাস নেই । হাতে গোলাপ নিয়ে আমদের বগা ভাই এগিয়ে যেতে থাক্লেন ।
... ... ... ... ... ... ... ... প্রায় আধা ঘন্টা পার হয়ে গেল । হঠাত দেখি বগা ভাই সর্বশক্তি নিয়ে দউরাচ্ছেন । আমার দিকে চিৎকার করে বললেন , ' হাসিব , দৌড়া । '
--------------------- চলবে --------------------
পরের কাহিনি বগা ভাইয়ের প্রেম নিবেদন পার্ট ২ তে

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



