somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বগা ভাইয়ের প্রেম নিবেদন ;) ;) ( পার্ট ১ )

২২ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

' মামা , ডাবল পাত্তি , চিনি ছাড়া ২কাপ লেবু চা , তাড়াতাড়ি । ' জয়নাল মামা এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন । তিনি খুব ভালোমতই জানেন যে এই জনমে তার চায়ের দাম পাওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই । কারণ অর্ডারদাতা হলেন আর কেউ নন আমাদের বগা ভাই । এই মহান ব্যাক্তিত্তের প্রধান কাজ হল দৈনিক জয়নাল চা স্টোর থেকে ১৫ কাপ চা খাওয়া আর রাজ্যের যাবতীয় বিষয় নিয়ে ফাউল গ্যাজানো । তার গ্যাজানো শুনে মনে হয় ' গ্যাজাও বাংলাদেশ , গ্যাজাও ' প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ।
জয়নাল মামা চা নিয়ে বিরস নয়নে বগা ভাইয়ের সামনে হাজির হলেন । মনে আশা যদি ভুল করে বগা ভাই দামটা দিয়ে দেন ।
' মামা দামডা দিবেন ? '
' কি যে কন মামা ? আমি কি কোনোদিন দাম চায়ের দাম না দিয়া বাড়ি গেসি ? কন ? '
' হ । ( বিরাট দীর্ঘশ্বাস ) ... সেই পরথম যেদিন আমার দুকান থেইকা চা খাইছিলেন অই দিন শুদু দাম দিছিলেন । তাও আবার আরধেক । '
' দিমু মামা দিমু । এত উতলা হন ক্যা ? ' বলে বগা ভাই এক খান ক্যাবলা মার্কা হাসি দিলেন । ভাবটা যেন ক্যাবলা হাসি দিলে মামার চায়ের দাম দেওয়া হয়ে যাবে ।
আমাকে আর রায়হানকে আসতে দেখে তিনি অনেকটা 'পাইছি তরে' টাইপ লুক দিলেন । আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন , ' ওই তো মামা আপনার বিল । ' আমরা দুজন হতভম্ভের মত ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলাম । ' ওই কাতলা মাছের মত চাইয়া চাইয়া কি দ্যাখস ? '
' নাহ , কিছু না । '
'দামডা দিয়া চল , কাম আছে । '
' কি কাজ ? '
' মোল্লাপাড়ার কিছু পুলারে দাবড়ানি দেওন লাগবো । '
আমরা দুজন পুরোপুরি হকচকিয়ে গেলাম । একটা ঢোক গিলে বললাম , ' দা-দা-দাবড়ানি মানে ? '
'দাবড়ানি বুঝনা ? কচি খোকা তুমি ? নাক টিপলে দুধ বের হয় , তাইনা ? '
রায়হান গলা দিয়ে চি চি শব্দ বের করে কোনমতে বলল , ' আমার তো ভাইয়া পরীক্ষা আছে । আমি যাই । কালকে আবার ... ' । বগা ভাই সাথে সাথে রায়হান এর কলার ধরে এমন এক ঝাকানি দিলো যে মনে হল ওর ২-৩ টা হাড্ডি ওখানেই খুলে গেছে । আমি তাই আর কথা বাড়ালাম না । মনে মনে চিন্তা করলাম , ' আল্লাহ গো রহম কর । আমি একখান ভালা পুলা আল্লাহ । একটু আকাইম্মা আর মাঝে মাঝে ফারিয়ার দিকে নজর দেই কিন্তুক মনটা এক্কেরে ফকফকা আল্লাহ । পিলিজ আল্লাহ পিলিজ । '
কিন্তু হায় । আমার মত পুলার কথা কি তিনি আর শুনেন । বগা ভাই এই পর্যায়ে আমাদের দুজনের কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলেন ।
হঠাত বগা ভাই আমাদের জিজ্ঞাস করলেন , ' ওই হারামি রাহাত টা কইরে ? '
' ভাই ওরা ত বাড়ি বদলাইছে । '
' অহ , তাইলে রাহাতদের বাড়ির জানালা খোলা কেন ? '
ওদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি জানালা খোলা । ' মনে হয় নতুন কোন ভাড়াটিয়া আসছে । '
'অ'
কিছু একটা বলতে গিয়ে বগা ভাই থেমে গেলেন । তার চেহারা দেখে মনে হল যে তার মাথার উপর ঠাডা পরছে । দেখি আমাদের একদম ১৩৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে একটা মেয়ে । ভয়ঙ্কর সুন্দর । হা করে তাকিয়ে থাকার মত চেহারা । দেখে আমিও ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলাম । কিছুখন পর দুম করে নাকের উপর একটা ঘুসি খেলাম । দেখি বগা ভাই মোষের মত ফুসছেন আমার দিকে তাকিয়ে । ' হারামজাদা কি দ্যাখোস ? ' আমি দ্রুত ডানে বামে মাথা ঝাকালাম ।
' না না । কিছু না । এমনি । আমি দেখছিলাম যে ওই ন-নতুন ভাড়াটিয়াদের ফার্নিচার গুলা খু-খুব সুন্দর । '
' মশকরা কর না , আমার লগে ফাজলামি মারো ? এক থাপ্পর দিয়া দাত খুইলা ফালামু । '
আমি ভয়ে মাথা উপর নিচে ঝাকালাম ।
' মাথা ঝাকাইস ক্যা ? '
' না না , এমনি । আর হবে না । '
'চল তাড়াতাড়ি ' বলে বগা ভাই উলটা দিকে হাটা দিলেন ।
' ভাই মোল্লাপাড়া তো ওই দিকে । এই দিকে কই যান ? '
' আমারে কি উল্লুক পাইছোস ? মোল্লাপাড়া কোন্দিকে আমি জানি না ? তর বাপের আগে থেকে এই এলাকাতে থাকি । বাড়ি যা । পরে কথা কমু ।'
আমি আর রায়হান কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে থাকলাম । তারপর দুজন একসাথে বাড়ির দিকে এগোতে থাকলাম । যেতে যেতে রায়হানকে বললাম , ' মাইয়াডা ভাল ছিল । '
' কোন মাইয়া ? '
' আররে রাহাত দের বাড়িতে যে নতুন মেয়ে আইছে , অইডা । '
' কোনটা ? '
' আরে গাধা , যে মেয়েরে দেখার লাইগা নাকের উপর দাবড়ানি খাইলাম । '
' কিন্তু তুই ত ফার্নিচার দেখতেছিলি । '
' হায়রে খাম্বা রে । অবশ্য তোর কথা আলাদা । তর কাছে ত দুনিয়ার সবচেয়ে সেক্সি জিনিস হইলো পাই এর মান । বিরাট আফসুস !! পুলাডারে মানুষ করতে পারলাম না ।'
আমার কাছ থেকে অপমান খেয়ে রায়হান ভুরু কুচকে বলল ,' হইছে হইছে । আর পচাইতে হবে না । '


রাত ২ টা
আমি ঘুমে বেঘোর । একবার ঘুমাইলে দুনিয়ার আর কিছু মাথায় থাকে না । ফোনটা হঠাত ভাইব্রেট করে উঠলো । আমি রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরলাম । ( বলা যায় না । কখন কোন মেয়ে ফোন করে ;) ) । দেখি যে বগা ভাই এর ফোন ।
' হ্যালো '
' হ্যালো । কে হাসিব ? ভালো আছিস ? ' ( গলার টোন শুইনা আমি টাস্কি খাইলাম )
' হ্যা ভালো আছি । আপনি ? এত রাইতে ? কিছু হইসে নাকি ? '
' না মানে এমনি , একটু গল্প করতাম । '
' ভাই আপ্নেরে নরমাল ঠেকতেসে না । আপনি ঠিক আসেন তো ? '
' আচ্ছা পয়েন্টে আসি । একটা পুলা মনে কর একটা মাইয়ার প্রেমে পড়ছে । এখন পুলাডা ওই মেয়েকে কেম্নে প্রেম এর প্রস্তাব পাঠাবে ? '
' আমি কেমতে কমু ? '
' তুই কইবি কেম্নে মানে ? তুই না ফারিয়ার লগে টাঙ্কি মারতি ? '
' অইডার কতা আর মনে করায়ে দিয়েন না । দুই দিন রিক্সার পিছ পিছ গেছিলাম । তিন নাম্বার দিনে কোচিং থেকে মারা কাগজে একটা লাভ লেটার দিছিলাম । লেটার লইয়া থেঙ্কু দেওন ত দুরের কথা আমার দিক তাকায়ে শয়তানি হাসি দিয়া কইলো যে ভাইয়া আপনার লেখাটা ভালোই কিন্তু ব্যাকারনে অনেক ভুল আছে । আরি আজিব তো । আমি কি পরীক্ষা দিতেছি নাকি যে ব্যাকরণ ঠিক করন লাগবো । '
' হইছে হইছে । আর প্যাচাল পাইরা কাম নাইক্কা । কাইল ১১ টার দিকে জয়নাল মামার দোকানের সামনে দাঁড়াবি । '
' দেহি '
' দেহি মানে ? দাঁড়াবি মানে দাঁড়াবি । '
' ঠিক আছে দাড়ামু । '
' রাখলাম '

পরদিন ১১ টার দিকে জয়নাল মামার দোকানে গিয়ে দেখি এক আজব বস্তু । দেখি হুবুহু বগা ভাইয়ের চেহারার মত এক ছেলে দোকানে বসে আছে । হাতে লাল গোলাপ । পরনে টকটকে গোলাপি একটা সিল্কের শার্ট । হাতের বোতাম লাগানো । ঢিলে ঢালা একটা বানানো প্যান্ট । সাদা রঙ এর কেডস । আমি বজ্রাহতের মত কিছুখন তাকিয়ে থেকে মাথা চুল্কাতে লাগ্লাম । মাথায় একটা জিনিসই ঘুরছে , ' এইডা কি ? '
' আররে হাসিব , চল । একটু ঘুরে আসি । ' অম্মা এর ভয়েসও দেখি বগা ভাই এর মত ।
' ব-ব-বগা ভাই ??? '
' হ্যা । তো আবার কে ? '
' অহ , চিনতে পারিনি । '
' কথা বাড়াস না চল '
' আচ্ছা চল । আজকেও চায়ের বিল দিব ? '
' নাহ আমি দিয়ে দিসি । মোট ২ হাজার ৫ শ ৯০ টাকা । '
দ্বিধা হও ধরণী । এই দিনও দেখতে হল আমাকে । কেয়ামত সত্যি আগায়ে আসছে ।
' ওই কি হল ? চল যাই । '
' চলেন '
দেখি বগা ভাই ওই মেয়ের বাড়ির দিকে এগচ্ছেন । আমি বুঝে গেলাম কাহিনি কি । বাড়ির ১০০ হাত দুরেই আমাকে রেখে বগা ভাই একা একা গেলেন । আমার উপর হয়ত বিশ্বাস নেই । হাতে গোলাপ নিয়ে আমদের বগা ভাই এগিয়ে যেতে থাক্লেন ।
... ... ... ... ... ... ... ... প্রায় আধা ঘন্টা পার হয়ে গেল । হঠাত দেখি বগা ভাই সর্বশক্তি নিয়ে দউরাচ্ছেন । আমার দিকে চিৎকার করে বললেন , ' হাসিব , দৌড়া । '

--------------------- চলবে --------------------
পরের কাহিনি বগা ভাইয়ের প্রেম নিবেদন পার্ট ২ তে
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×