বগা ভাইয়ের প্রেম নিবেদন
আম গাছের ছায়ার নিচে বসে মোবাইলে ফেসবুক গুতাচ্ছিলাম । মেজাজ ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে । 'ধুর এই বগা ভাই আসবে কখন ? কি এক ছেমড়িরে দেইখা কেউ এতো পাগলা হয় নাকি ? ' মনে মনে বগা ভাইয়ের চৌদ্দ গুস্টি কে গালাইলাম ।
হঠাত ডান দিক থেকে ফাটা বাশের মত গলায় বগা ভাইয়ের চিৎকার শুনতে পেলাম , ' হাসিব , দৌড়া । ' আররে আজিব তোহ আমি দৌড়াবো ক্যান ? আমার কি দোষ ? এই সময় রাস্তার ওই মাথায় মোল্লাপাড়ার কাদের কে দেখতে পেলাম । দেখেই আমার জান শুকিয়ে গেল । যতবার এই কাদের কে দেখি ততবার আমার চোখের সামনে বাংলার ছুপার হিরু থুক্কু ভিলেন ডিপজল এর চেহারা ঘুরাঘুরি করে ।তো সেই কাদের একটা গাছের ডাল নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসছে । এরপর কি হল ঠিক মনে নেই । শুধু মনে আছে যে আমি দৌড়াচ্ছি ।
প্রায় ১৫ মিনিট এই গলি ওই গলি , এর বাড়ির ছাদ ওর বাড়ির বারান্দা , বেডরুম ( ছরি মিশঠেক
' আর কইস না । গেলাম রাহার বাড়ির সামনে ... '
' মানে ওই মাইয়ার নাম রাহা '
'কাহিনীর মধ্যে ডিশটাব খাটাইলে থাবড়া দিমু । '
' অহ ছরি । আর হইবো না । '
' হুম যেইডা কইতেছিলাম , রাহার বাড়ির সামনে গেলাম । সেখানে দেখি আশে পাশের পাড়ার বেবাক পুলাপাইন দাঁড়ায়ে আছে । আমি ভাবলাম যে হয়ত কোন স্যার এর বাড়ি আশে পাশে তাই হয়ত এত পুলাপাইন । তারপর দেহি না , কাহিনী তে ঝামেলা আছে । সবাই হাতে কার্ড না হইলে ফুল নিয়া খারায় আছে । একডা কার্ড এর উপর নাম দেখালাম রাহা । দিয়া আমি তো নাম জাইনা গেলাম ।এই সময় রাহা বাড়ি থেকে বাইর হইলো । আমি ভাবলাম পুলাপাইন রে দেহাই যে আসল খেলোয়ার মাঠে নামসে । আমি রাহার দিকে আগায় গেলাম । হঠাত দেহি কেডা জানি আমার শার্ট এর কলার টাইনা ধরসে । পিছে ঘুইরা তাকাইতেই , " দুম " । দেহি কাদের আমার দিকে দাত কেলায়া হাসতেছে । '
আমি মিচকা একটা হাসি দিয়ে বললাম , ' তাইতো কই , তোমার নাকডা দেইখা মনে হইতেসে কেউ একডা ব্যাঙ চিপকায় দিসে । ' সাথে সাথে বগা ভাই আমার পেটে একটা মোক্ষম ঘুসি মারলেন ।
' রাহার ব্যাপারে হেল্প চাওয়ার পর থেকেই দেখতেসি তোমার পাখা বাড়সে । হিসাব কইরা কথা কইবা । '
আমি কোঁ কোঁ শব্দ করে তাকে সম্মতি দিলাম ।
------------------------ পরদিন -------------------------
'এখন আমাদের কাজ হইবো কিভাবে রাহা আপুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় । ' আইন্সটাইন মার্কা ভাব নিয়ে আমি বললাম বগা ভাইকে ।
' হুম '
' কিন্তু সমস্যা হইলো কাদের । '
' হুম '
' আমাদের একটা প্ল্যান লাগবে '
' হুম '
' আর একবার হুম হুম বললে আমি নাই । '
' হুম । কি ?? !! আররে নাহ । আমি তো প্ল্যান বানাইতেছিলাম । '
' কিছু প্ল্যান পাইলা ?? '
' হুম ।
' কাদেররে ফাসাইতে হইবো । আর তাও আবার রাহার কাছে । '
' মাগার ক্যামনে ? '
' শুনছি যে রাহার একডা বড় ভাই আছে । আমরা রাইতের বেলা ওর ভাইয়ের শার্ট আর প্যান্ট চুরি করুম । তারপর ওই শার্ট প্যান্ট কাদেররে দিমু আর ওই কাপড় পইড়া রাহার সামনে গেলেই কেল্লা ফতে ।
' তোমার কথা শুইনা মনে হইতেসে যে তোমার আর কাদেরের গলায় গলায় পিরিত । তুমি ওরে আদর কইরা কাপড় দিবা আর ওই ব্যাডা তোমারে চুম্মা দিয়া কাপড় পিন্দা রাহা আপুর সামনে যাইব । '
' অইডাও চিন্তা করছি । কাদের এর পাড়ার মতি আছে না ?? ওই ব্যাডা সেইরাম কামের জিনিস । পকেটে ৫০ টাকা ধরায় দিলে ওই ব্যাডা কাদেররে জামা কাপড় পড়াইয়া ঠোঁটে লিপিশটিক লাগায়ে রাহার সামনে হাজির করব । '
' তারমানে তোমার লাইগা চুরি করন লাগবো ? '
বগা ভাই আমার দিকে চোখ পাকালেন । আমি চি চি করে বললাম , ' তোমার জন্য শুধু চুরি করবো ?? খুন টুন করতে বললে তাও করতে রাজি আছি । '
' গুড বয় ।
' রাত ১০ টায় বাইর হমু কাম্নে ?? '
' কিছু একটা বইলা বাইর হইবি । কইবি যে ফুন এ ফ্লেক্সি দিতে যাবি । '
আমি আর কথা বাড়ালাম না । কিছু একটা বলে বের হতে হবে । কোন উপায় নাই । :'(
---------------- রাত ১০ ঃ ০২ --------------
আমি কোন রকমে একটা কাহিনি বলে বাড়ি থেকে বের হলাম । বাড়ির নিচে দেখি বগা ভাই দাড়িয়ে আছে । আমি তাগাদা দিয়ে বললাম , তাড়াতাড়ি কর । আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়িতে ঢুকতে হবে ।
' ভয় পাইস না । পুরা প্ল্যানিং হয়ে গ্যাসে । রাহাদের বাড়ির পিছে একটা বারান্দা আছে । নিচতলা বাড়ি । কোন লাঠি কিংবা বাঁশ দিয়ে টান দিলেই চুরি কমপ্লিট ।
' প্ল্যান তো ভালই । '
' দেখতে হবে না কে বানাইছে ? '
আমরা ঝরের বেগে দৌড় দিয়ে রাহা আপুদের বাড়ির পিছনে আসলাম । দেখি বারান্দায় কোন লাইট নাই । মানে আমাদের কাজ একটু সহজ হয়ে গেল ।
' মনে রাখিস , চুরি করার পর আওয়াজ করতে হবে যেন মনে হয় যে চোর আইছিল বারিতে । '
' কাজডা একটু বেশি রিস্কি না ? '
' হুম '
' ওকে , ব্যাপার না । '
' আমি চুরি করবো আর তুই পাহারা দিবি । ঠিক হ্যায় ? '
' ইয়েস ক্যাপ্টেন ।
আমি পাহারা দিতে থাকলাম । আর বগা ভাই চুরি করতে লাগলেন । তার কর্ম নৈপুণ্য আমি মুগ্ধ । প্রফেশনাল চোররাও মনে হয় এত তাড়াতাড়ি চুরি করতে পারে না ।
' একটা চেক শার্ট আর জিন্স এর প্যান্ট চুরি করছি । '
'দেখি । '
' ধুর মিয়া এইডা কি ? এইডা তো শার্ট এর বদলে চেক চেক লুঙ্গি চুরি করস । '
' কস কি ? '
' এই দ্যাহো '
' হুম । ব্যাপার না । আরেকবার ট্রাই মারি । '
' সাবধানে । কেউ যেন টের না পায় । '
' হুম '
কিছুখন চেষ্টা সাধনের পর বগা ভাই চুরিতে সাকসেস খাইলেন । আমরা ঝাইরা দৌড় ।
বাড়ি ফিরে বগা ভাই বললেন , ' আজ রাইতে শান্তি মত ঘুমা । কাইল দেখবি " মেরা হি জালওয়া " ।
---------------- পরদিন সকাল ১১ টা ----------------
আমি আর বগা ভাই রাহা আপুদের বাড়ির সামনে জারুল গাছের পিছে লুকিয়ে আছি । কিছুখন পর দেখলাম কাদের রাহা আপুদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল । পরনে ওই সেই কাপড় যেটা আমরা চুরি করেছিলাম । আর কিছুখন পর রাহা আপু বাড়ি থেকে বের হল । কাদেরের পোশাক দেখে তিনি মনে বিরাট শক খেলেন । হতভম্ভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাক্লেন কাদেরের দিকে । কাদের এগিয়ে গেল । হাতে গোলাপ ফুল । মুখে একটা গদ গদ ভাব এনে কি জানি একটা বলছে । মুহুরতের মধ্যে রাহা আপুর চেহারাতে বিরক্তির ছাপ দেখা দিল ।
' এইটাই চান্স । ৩ , ২ , ১ বলার সাথে সাথে " চোর চোর " বলে চিৎকার দিবি '
আমি কাহিনী বুঝে গেলাম ।
৩
২
১
আমি গলার ভলিউম ফুল করে চিৎকার দিলাম , চোর ।চোর ।
রাস্তায় যত মানুষ ছিল সবাই ঘুরে তাকাল । কিছু বুঝে উঠার আগেই কাদের দৌড় দিল । আমরাও কাদেরের পিছে দৌড় , সাথে পাব্লিক ।
এবার পরের দিনের কাহিনীতে আসি । পরের দিন বগা ভাই এর প্ল্যান হল রাহা আপুকে প্রোপোজ করবেন । আমরা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে রাহা আপুর বাড়ির সামনে যেতেই দেখি রাহা আপু কার সাথে যেন রিক্সায় করে কোথায় গেল । বগা ভাইএর তো মাথায় হাত ।
প্রায় ১ সপ্তাহ পর জানতে পারলাম যে ওই বান্দা হল রাহা আপুর বয়ফ্রেন্ড । বুয়েটে পরে ।
এর পর আমাদের বিখ্যাত বগা ভাই আর কোন মেয়ের দিকে তাকাননি ।
বেচারা বগা ভাই ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১১ রাত ১১:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



