somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশী ফলের সাতকাহন

১৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান প্রজন্মের আমাদের অনেকেরই জন্ম ও বেড়ে ওঠা শহুরে পরিবেশে। তাই হয়ত অনেকেই জানিনা আমাদের গ্রাম বাংলার প্রচলিত অনেক কিছুই, এর একটি উদাহরণ হল দেশীয় প্রচলিত ফলমূল। আজকের শহুরে যে কোন শিশুকে দশটি ফলের নাম বলতে বললে তাদের মুখে থাকবে আপেল-কমলা- আঙ্গুর, আম-জাম- লিচু-কাঁঠালের নাম। কিন্তু কয়জনা বলবে সফেদা, ডেউয়া, গাব বা অরবড়ই এর নাম? আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র পুরোনো ঢাকায়। খুব ছোট বেলায় বাসার কাছে বুড়ো মত এক লোক ছোট ছোট কাঠের খোপে বিভিন্ন ফল বিক্রি করত; যেখানে থাকত করমচা, আমড়া, আমলকী, অড়বড়ই, পানিফল, চালতার আচার, টিপাফল, পাঙ্কিচুঙ্কি (এই ফলটার আসল নাম জানি না, অনেক সার্চ করেও পাই নাই)। আজকের প্রজন্মের কাছে এই ফলমূলগুলো যেন অচেনা না থেকে যায় এই জন্যই আজকের এই লেখা। আসুন দেখে নেই কয়েকটি প্রচলিত দেশজ ও লোকজ ফলঃ

আমলকীঃ আমলকী গাছ ৮ থেকে ১৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হতে পারে, পাতা ঝরা প্রকৃতির। হালকা সবুজ পাতা, যৌগিক পত্রের পত্রক ছোট, ১/২ ইঞ্চি লম্বা হয়। হালকা সবুজ স্ত্রী ও পুরুষফুল একই গাছে ধরে। ফল হালকা সবুজ বা হলুদ ও গোলাকৃতি ব্যাস ১/২ ইঞ্চির কম বেশি হয়। কাঠ অনুজ্জল লাল বা বাদামি লাল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে ই দেখা যায়। গাছ ৪/৫ বছর বয়সে ফল দেয়। আগষ্ট - নভেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বীজ দিয়ে আমলকির বংশবিস্তার হয়। বর্ষাকালে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আমলকির ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে। স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকি ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী। লিভার ও জন্ডিস রোগে উপকারী বলে আমলকি ফলটি বিবেচিত। আমলকি, হরিতকী ও বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। এ তিনটি কনো ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ছেঁকে খালি পেটে শরবত হিসেবে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়। বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকি ব্যবহার হয়। কাঁচা বা শুকনো আমলকি বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। কাঁচা আমলকি বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুতিন ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে।



আমড়াঃ বৃক্ষগুলি ২০-৩০ ফুট উঁচু হয়, প্রতিটি যৌগিক পাতায় ৮-৯ জোড়া পত্রক থাকে পত্রদন্ড ৮-১২ ইঞ্চি লম্বা এবং পত্রকগুলো ২-৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। কাঁচা ফল টক বা টক মিষ্টি হয়, তবে পাকলে টকভাব কমে আসে এবং মিষ্টি হয়ে যায়। ফলের বীজ কাঁটাযুক্ত। ৫-৭ বছরেই গাছ ফল দেয়। এই ফল কাচা ও পাকা রান্না করে বা আচার বানিয়ে খাওয়া যায়। ফল, আগস্ট মাসে বাজারে আসে আর থাকে অক্টোবর পর্যন্ত। আমড়া কষ ও অম্ল স্বাদযুক্ত ফল। এতে প্রায় ৯০%-ই পানি, ৪-৫% কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য প্রোটিন থাকে। ১০০ গ্রাম আমড়ায় ভিটামিন-সি পাওয়া যায় ২০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, সামান্য ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪ মিলিগ্রাম। আমড়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পেকটিনজাতীয় ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টজাতীয় উপাদান থাকে। আমড়া একটি ভিটামিন-সি-সমৃদ্ধ ফল (প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২০ মিলি গ্রাম পাওয়া যায়)। ইহা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ওজন কমাতে সহায়তা করে, রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টজাতীয় উপাদান থাকায় আমড়া বার্ধক্যকে প্রতিহত করে।



বিলম্বুঃ দেখতে লম্বা লম্বা ছোট সাইজের টমেটোর মত এই ফল লোকজ একটি ফল। টক স্বাদের এই ফলটি তরকারীতে বিশেষ করে ডাল রান্নায় ব্যাপক ব্যাবহার করা হয়।



বেতফলঃ বেতের ফল আঙুরের মতো থোকায় ধরে। একটি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। ফুল আসে কার্তিক মাসে আর ফল পাকে চৈত্র মাসে। বেতফল দেখতে গোলাকার, লম্বায় হয়। বেতফল একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং উপাদেয় জাতীয় ফল। বেত গাছে এই ফল ধরে বলে তাকে বেতফল বলে। একটি পূর্ণবয়স্ক বেতগাছ ৪৫ থেকে ৫৫ ফুটেরও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। দেশে ছয় প্রজাতির বেতফল পাওয়া যায়। একটি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। ফলের খোসা পাতলা ডিমের খোসার মতো। পাকা ফলের শাঁস নরম, খেতে টক-মিষ্টি।



চালতাঃ চালতা ফল দিয়ে চাটনি ও আচার তৈরি হয়। এটি স্থানবিশেষে চালিতা, চাইলতে ইত্যাদি নামেও অভিহিত। গাছটি দেখতে সুন্দর বলে শোভাবর্ধক তরু হিসাবেও কখনো কখনো উদ্যানে লাগানো হয়ে থাকে। চালতা গাছ মাঝির আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ উচ্চতায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। গাছের গায়ে লালচে রঙের চকচকে বাকল থাকে। পাতার কিনারা খাঁজ কাটা, শিরা উঁচু সমান্তরাল। চালতার সাদা রঙের ফুল দেখতে সুন্দর ; এটি সুগন্ধযুক্ত। ফুলের ব্যাস ১৫-১৮ সেন্টিমিটার। ফুলে পাঁচটি মোটা পাঁপড়ি থাকে ; বৃতিগুলো সেসব পাঁপড়িকে আঁকড়ে ঘিরে রাখে। বছরের মে-জুন মাসে ফুল ফোটার মৌসুম। ফল টক বলে চালতার আচার, চাটনি, টক ডাল অনেকের প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল পিষে নিয়ে নুন-লংকা দিয়ে মাখালে তা বেশ লোভনীয় হয়। গ্রাম এলাকায় সাধারণত জঙ্গলে এ গাছ জন্মে ; কখনো কখনো দু’একটি গাছ বাড়ির উঠানে দেখা যায়। চালতা ফলের যে অংশ খাওয়া হয় তা আসলে ফুলের বৃতি। প্রকৃত ফল বৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে। ফল বাঁকানো নলের মত ; ভিতরে চটচটে আঠার মধ্যে বীজ প্রোথিত থাকে। চালতা অপ্রকৃত ফল; মাংসল বৃতিই ভক্ষণযোগ্য।



ডেউয়াঃ ডেউয়া এক ধরনের অপ্রচলিত টক-মিষ্টি ফল। বর্ষাকালের মাঝামাঝির দিকে হলুদরঙা, এবড়োথেবড়ো আকারের কিছু ফল বিক্রি করতে দেখা যায় রাস্তার ধারে বসা ফল বিক্রেতাদের। বুনো বলে ভদ্রস্থ ফলের দোকানে স্থান পায় না এই ফলটি। পথ চলতে থাকা পথচারী এই ফল দেখে হঠাত্‍ই থমকে দাঁড়ান, কৌতূহলের বশে কেউ কেউ কিনেও ফেলেন। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটির নাম ডেউয়া। ডেউয়া গাছ বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট, বড় আকারের বৃক্ষ। প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়, এর ছাল ধূসর-বাদামী রঙের। ফল কাঁঠালের ন্যায় যৌগিক বা গুচ্ছফল। বহিরাবরন অসমান। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে বহিরা বরণ হলুদ। ভিতরের শাঁস লালচে হলুদ। ফলের ভেতরে থাকে কাঁঠালের ছোট কোয়ার (কোষের) মত কোয়া এবং তার প্রতিটির মধ্যে একটি করে বীজ থাকে। গ্রাম বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ফলডেউয়া । ফুল গুলো অতি ক্ষুদ্র, হলুদাভ, একসাথে জড়িয়ে একটি গোলাকৃতির হয়। ফল অনেকটা অনিয়মিত গোলাকৃতির, ২-৫ ইঞ্চি চ্ওড়া হয়, পাকলে হলুদ রঙ ধারন করে। প্রতিটি ফলের মধ্যে ২০-৩০টি বীজ থাকে।



ডুমুরঃ ডুমুর কয়েক প্রজাতির হয়। বাংলাদেশে সচরাচর যে ডুমুর পাওয়া যায় তার ফল ছোট এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত। এর আরেক নাম 'কাকডুমুর'। এই গাছ অযত্নে-অবহেলায় এখানে সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় গজিয়ে ওঠে। গাছ তুলনামূলকভাবে ছোট। এটি এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। পাখিরাই প্রধানতঃ এই ডুমুর খেয়ে থাকে এবং পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে বীজের বিস্তার হয়ে থাকে। অনেক এলাকায় এই ডুমুর দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। এই ডুমুরের পাতা শিরিশ কাগজের মত খসখসে। এর ফল কান্ডের গায়ে থোকায় থোকায় জন্মে।



ফলসাঃ ফলসা বাংলাদেশের একটি অপ্রচলিত ফল। এটি প্রধানতঃ দক্ষিণ এশিয়ার ফল। পাকিস্তান থেকে কম্বোডিয়া পর্যন্ত এর দেখা মেলে। অন্যান্য ক্রান্তীয় অঞ্চলেও এর ব্যাপক চাষ হয়। ফলসা গাছ 'গুল্ম' বা ছোট 'বৃক্ষ', যা আট মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর ফুল হলুদ, গুচ্ছাকারে থাকে। ফলসা ফল ড্রুপ জাতীয়, ৫-১২ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট, পাকলে কালো বা গাঢ় বেগুনি রঙের হয়।



গাবঃ বাংলাদেশে দুই ধরনের গাব বেশি দেখা যায়। একটি সুস্বাদু ও মিষ্টি, একে বিলাতি গাব বলা হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় Mabolo, Korean mango বা Velvet-apple (Diospyros discolor বা Diospyros blancoi)। পাকলে এর রঙ হয় গাঢ় লাল। খোসার উপরটা মখমলের মত। ফলের ভেতরটা সাদা। এটি বহুল পরিমাণে বাজারজাত করা হয় এবং জনপ্রিয় একটি ফল। অন্যটিকে দেশি গাব বলা হয়। এর ইংরেজি নাম Indian Persimmon (Diospyros peregrina)। এটি খেতে হালকা মিষ্টি ও কষযুক্ত। কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকলে হলুদ হয়ে যায়। পাকা ফলের ভেতরটা আঠালো ও চটচটে। বাংলাদেশ ও উপকূলীয় পশ্চিম বঙ্গে এটি প্রচুর জন্মে। এটি সাধারণতঃ খাওয়া হয়না, ভেষজ চিকিৎসায় এর কিছু ব্যবহার আছে। এই গাব হতে আঠা প্রস্তুত করা হয় যা বাংলাদেশের মৎসজীবিরা তাদের জালে ব্যবহার করেন। ফলে জাল টেকসই হয়, পানিতে সহজে নষ্ট হয়না। দেশি গাবের প্রধান ব্যবহার এটাই।



কামরাঙাঃ কামরাঙা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এর স্বাদ টক-মিষ্টি। কামরাঙা ও এর ঘনিষ্ট বিলিম্বি (Averrhoa bilimbi) সম্ভবত দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ায় ( মালয় উপদ্বীপ হতে ইন্দোনেশিয়া উৎপন্ন ) দেখা যায়। টক মিষ্টি এই ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। আমাদের দেশে প্রচুর জন্মায় এই ফলটি। গ্রামাঞ্চলে কামরাঙ্গার ভর্তা একটি জিভে জল আনা খাদ্য।



করমচাঃ করমচা হল টক স্বাদের ছোট আকৃতির একটি ফল। ইংরেজিতে একে natal plum বলা হয়। Carissa গণভুক্ত কাঁটাময় গুল্মজাতীয় করমচা উদ্ভিদটি এশিয়া, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পাওয়া যায়। কাঁচা ফল সবুজ, পরিণত অবস্থায় যা ম্যাজেন্টা লাল-রং ধারন করে। অত্যন্ত টক স্বাদের এই ফলটি খাওয়া যায়, যদিও এর গাছ বিষাক্ত। করমচার ঝোপ দেখতে সুন্দর।



লটকনঃ লটকন (বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana) এক প্রকার টক মিষ্টি ফল। গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বানিজ্যিক চাষ হয়। লটকন বৃক্ষ ৯-১২ মিটার লম্বা হয়, এর কান্ড বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো। পুং এবং স্ত্রী গাছ আলাদা; যাতে আলাদা ধরণের হলুদ ফুল হয়, উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি। ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেমি হয়, যা থোকায় থোকায় ধরে। ফলের রঙ হলুদ। ফলে ২-৫ টি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসালো ভক্ষ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। এই ফল সরাসরি খাওয়া হয় বা জ্যাম তৈরি করা হয়। এর ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহৃত হয়। এর কাঠ নিম্নমানের। ছায়াযুক্ত স্থানেই এটি ভাল জন্মে। লটকনের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে; যেমন- হাড়ফাটা, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, কিছুয়ান ইত্যাদি। বাংলাদেশে একসময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিল লটকন। অধুনা এর বানিজ্যিক উৎপাদন ব্যাপক আকারে হচ্ছে। উন্নত জাতের সুমিষ্ট লটকনের চাষ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর জনপ্রিয়তাও বেশ বেড়েছে। এদেশের নরসিংদীতেই লটকনের ফলন বেশি। এ ছাড়া সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাজীপুর—এসব জেলায়ও ইদানীং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লটকনের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে লটকন বিদেশেও রফতানি করা হয়।



অড়বড়ইঃ অড়বড়ই', 'অরবরই' বা 'অরবড়ই' একটি ছোট অপ্রচলিত টক ফল। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একে নলতা, লেবইর, ফরফরি, নইল, নোয়েল, রয়েল, আলবরই, অরবরি ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। ফলটির ব্যাস ০.৫ থেকে ১ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। দেখতে হাল্কা হলুদ রং এর এই ফল এর ত্বক খাঁজ কাটা থাকে। পৃথীবির অনেক স্থানে অরবড়ই গাছ লাগানো হয় সৌন্দর্য-বৃক্ষ হিসেবে। অরবড়ই গাছ গুল্ম এবং বৃক্ষের মাঝামাঝি আকারের হয়, যা দুই থেকে নয় মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।



পাইন্নাগুলাঃ পাইন্নাগুলা বা টিপা ফল দেখতে বড়ই আকৃতির পারপেল কালারের এই ফলটি অত্যন্ত সুস্বাদু। দুই হাতের তালুতে চাপ দিয়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে নরম করে এই ফল খেয়ে থাকে বলে এই ফলের আরেক নাম টিপা ফল। নরম শাঁসের এই ফলটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন।



পানিফলঃ বাংলায় এটিকে বলে পানিফল বা শিংড়া। বৈজ্ঞানিক নামঃ Trapa natans এটি Trapaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এটি ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নীচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপর পাতা গুলি ভাসতে থাকে। এটি বাংলা একটি পরিচিত গাছ। ফলগুলিতে শিং এর মতে কাটা থাকে বলে এর শিংড়া নামকরণ হয়েছে বলে মনে করা হয়। পানিফল কাঁচা, সিদ্ধ দুভাবেই খাওয়া যায়। এই ফল গুলো ১২ বছর পর্যন্ত অংকুরোদগম সক্ষম থাকে। অবশ্য ২ বছরের মধ্যে অংকুরোদগম হয়ে যায়। ইতাহাস ঘাটলে দেখা যায় ৩০০০ বছরে পূর্বেও চীনে এর চাষ হতো। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ওয়াশিংটনে পানিফল উদ্ভিদকে অনেক সময় জলজ আগাছা হিসবে গণ্য করা হয়।



সাতকরাঃ সাতকরা লেবু জাতীয় এক প্রকার টক ফল এবঙ ঘ্রানযুক্ত, যা রান্নায় ব্যবহৃৎ হয় সব্জির আনুষাঙ্গিক হিসেবে। সাতকরা একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল এবঙ এর পুষ্টিমান অনেক উন্নত। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এটি ঔষধী হিসেবেও ব্যবহৃৎ হয়ে থাকে।



জামরুলঃ জামরুল আমাদের দেশের গ্রীষ্মকালীন ফল। দেখতে সুন্দর ও লোভনীয় হলেও খেতে তত সুস্বাদু নয়। জামরুল সাদা ও মেরুন বর্ণের হয়। এই ফল ডায়াবেটিক রোগীর জন্য খুব উপকারী। ফলটি রসাল ও হালকা মিষ্টি। পুষ্টিগুণ অন্য ফলের মতো স্বাভাবিক। এতে মোট খনিজ পদার্থের পরিমাণ কমলার তিন গুণ ও আম, আনারস ও তরমুজের সমান।



সফেদাঃ সফেদা ফল বড় উপবৃত্তাকার 'বেরি' জাতীয়। এর ব্যাস ৪-৮ সেমি হয়। দেখতে অনেকটা মসৃণ আলুর মত। এর ভেতরে ২-৫ টি বীজ থাকে। ভেতরের শাস হালকা হলুদ থেকে মেটে বাদামি রঙের হয়। বীজ কালো। সফেদা ফলে খুব বেশি কষ থাকে। এটি গাছ থেকে না পাড়লে সহজে পাকে না। পেড়ে ঘরে রেখে দিলে পেকে নরম ও খাবার উপযোগী হয়। সফেদা ফল বেশ মিষ্টি। কাঁচা ফল শক্ত এবং 'স্যাপোনিন' (saponin) সমৃদ্ধ। সফেদা গাছ উষ্ণ ও ক্রান্তীয় অঞ্চল ছাড়া বাঁচে না। শীতল আবহাওয়ায় সহজেই মরে যায়। সফেদা গাছে ফল আসতে ৫-৮ বছর লাগে। এতে বছরে দুইবার ফল আসতে পারে যদিও গাছে সারা বছর কিছু কিছু ফুল থাকে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৩০
১৭টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×