somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মা"কে নিয়ে রচিত ভিন্ন রকমের দুটি প্রিয় কবিতা

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ব্লগার সপ্নবাজ অভি'র "মা" নিয়ে লিখা সুন্দর আর্টিকেল (নোংরা পেজগুলোকে পেছনে ফেলে ) গুগলের প্রথম পাতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ। ’র ডাকে সারা দিয়ে গত মাস দেড়েক জুড়ে অসংখ্য লেখা এসেছে। খুব ইচ্ছা ছিল আমার খুব প্রিয় দুটি ভিন্ন রকমের কবিতা দিয়ে একটি লেখা লিখবার। প্রথম কবিতাটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এই কবিতাটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় প্রায় ১৫ বছর আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কেন্দ্রিক এক সংগঠন আয়োজিত ছয় মাস ব্যাপী “আবৃত্তি ও উপস্থাপনা” কর্মশালায়। আমি কোন মহা রবীন্দ্রভক্ত নই, কর্মশালার শেষে মূল্যায়ন পরীক্ষায় একটা অংশ ছিল দর্শকদের সম্মুখে আবৃত্তি করা, আর এতে আমার ভাগ্যে পরেছিল এই কবিতাটি। খুবই ভালো লেগেছিল কবিতাটি সেই সময়ে, যা আজও হৃদয় মাঝে বাজে, কবিতাটির নাম “অন্য মা”। আর ২য়টি আমার খুবই পছন্দের স্বরচিত একটি কবিতা। সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি রবীন্দ্রনাথের কবিতার সাথে নিজের কবিতা দেয়ার ঔদ্ধতের জন্য।/:) আসলে আমার নিজের পছন্দের “মা’কে নিয়ে লেখা দুটি কবিতা” হল আমার লেখার বিষয়, আর তাই......

অন্য মা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার মা না হয়ে তুমি আর কারো মা হলে–
ভাবছ তোমায় চিনতেম না, যেতেম না ঐ কোলে?
মজা আরো হত ভারি–
দুই জায়গায় থাকত বাড়ি,
আমি থাকতেম এই গাঁয়েতে, তুমি পারের গাঁয়ে।
এইখানেতে দিনের বেলা
যা-কিছু সব হত খেলা,
দিন ফুরোলেই তোমার কাছে পেরিয়ে যেতেম নায়ে।
হঠাৎ এসে পিছন দিকে
আমি বলতেম, "বল্‌ দেখি কে?"
তুমি ভাবতে চেনার মতো চিনি নে তো তবু।
তখন কোলে ঝাঁপিয়ে প’ড়ে
আমি বলতেম গলা ধরে,
"আমায় তোমার চিনতে হবেই, আমি তোমার অবু!"

ওই পারেতে যখন তুমি আনতে যেতে জল
এই পারেতে তখন ঘাটে বল্‌ দেখি কে বল্‌?
কাগজ-গড়া নৌকোটিকে
ভাসিয়ে দিতেম তোমার দিকে,
যদি গিয়ে পৌঁছত সে বুঝতে কি, সে কার?
সাঁতার আমি শিখিনি যে,
নইলে আমি যেতেম নিজে–
আমার পারের থেকে আমি যেতেম তোমার পার।
মায়ের পারে অবুর পারে
থাকত তফাত, কেউ তো কারে
ধরতে গিয়ে পেত নাকো, রইত না একসাথে।
দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে
দেখা-দেখি দূরে দূরে,
সন্ধ্যেবেলায় মিলে যেত অবুতে আর মা-তে।

কিন্তু হঠাৎ কোনোদিনে যদি বিপিন মাঝি
পার করতে তোমার পারে নাই হত মা রাজি?
ঘরে তোমার প্রদীপ জ্বেলে
ছাতের 'পরে মাদুর মেলে
বসতে তুমি, পায়ের কাছে বসত খ্যান্ত বুড়ী–
উঠত তারা সাত ভায়েতে,
ডাকত শেয়াল ধানের খেতে,
উড়ো ছায়ার মতো বাদুড় কোথায় যেত উড়ি।
তখন কি, মা, দেরি দেখে,
ভয় পেতে না থেকে থেকে–
পার হয়ে মা আসতে হতই অবু যেথায় আছে।
তখন কি আর ছাড়া পেতে,
দিতেম কি আর ফিরে যেতে–
ধরা পড়ত মায়ের ওপার অবুর পারের কাছে।

======================================

কেমন ছিল মা আমার?
- বোকা মানুষ বলতে চায়

কেমন ছিল মা আমার?
ভাবতেই যেন দ্বিধায় পরি,
মনে পড়েনা কোন স্মৃতি
হেথা হতে হেথায় খুঁজি।

কেমন করে ডাকতো মোরে
“আয়রে সোনা কোলে আয়”,
নাকি “খোকা” বলে জড়িয়ে
ভরে তুলতে চুমোয় চুমোয়।

কিছু মনে পড়েনা আজ
কিছু নেই স্মৃতিতে,
কেমন করে ডেকে তুলত
কাঁক ডাকা প্রভাতে।

কেমন করে সাজিয়ে দিতো
ইশকুলেতে যেতে,
কেমন করে পড়াতো মোরে
উঠোনে মাদুর পেতে।

কেমন করে করতো শাসন
দুষ্টুমিতে করতো বারণ,
কেমনে আগলে রাখত মোরে
খুঁজে ফেরে আজ মন।

কখন, কোথায়, কেমনে?
সবটুকু স্মৃতি নিয়ে,
মা আমার হঠাৎ করে
কোথা গেল হারিয়ে।

হাজার দিবস রজনী পরে
দুঃখিনী এই রাতে,
খুঁজে ফিরি মাকে আমার
ধুলো পড়া স্মৃতিতে।

হাসিকান্না আর ভালোবাসায়
কেমন ছিল মা আমার?
সুখে-দুঃখে, মায়া-মমতায়
কেমন ছিল মা আমার?

আমায় নিয়ে স্বপ্নদেখা
আমায় নিয়ে ছবি আঁকা,
আমায় নিয়ে জাল বোনা
আমায় নিয়ে গল্প লেখা।

সেই আমার প্রিয় মা
কোথায় গেল হারিয়ে,
সেই আমার ভালবাসা
দিগন্তকে ছাড়িয়ে।

হেথা হতে হেথায় খুঁজি
মনে কেন পড়েনা স্মৃতি,
কেমন ছিল মা আমার?
ভাবতেই কেন জলে ভেজে আঁখি।

(কবিতাটির রচনাকালঃ ১৭ই আগস্ট, ২০০০ সাল; মধ্য দুপুর)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×