somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ৫ (দুবলহাটি জমিদার বাড়ি)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ নওগাঁর জনপদে অবস্থিত রাজপ্রাসাদগুলো ধ্বংসের মুখে পতিত হওয়া সত্ত্বেও আজো এগুলো আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি, নওগাঁ শহর হতে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে দুইশত বছরের পুরাতন স্থাপনা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুবলহাটি জমিদার বাড়ী। অনেকে একে দুবলহাটি রাজবাড়ী নামেও অভিহিত করে থাকেন। যদিও “রাজবাড়ী” শব্দটি ব্যাবহারের কোন ইতিহাস জানা যায় নাই। ধারণা করা হয়, আগেকার লোকেরা জমিদার তথা ধনীশ্রেণীর লোকদের রাজা-বাদশা বলে অভিহিত করে থাকত; আর সেখান হতেই হয়ত রাজবাড়ী হিসেবে এই জমিদার বাড়ী চিহ্নিত হয়েছে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে যে সকল জমিদার বাড়ীগুলো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর তুলনায় দুবলহাটি জমিদার বাড়ী ব্যাতিক্রম। বিশাল অঞ্চলজুড়ে এর ব্যাপ্তি যা কিনা ভাওয়াল রাজবাড়ী’র কথা মনে করিয়ে দেয়।

জমিদার বাড়ি নিয়ে ধারাবাহিক লেখা শুরু করার পর এই বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। উন্নতবিশ্বে যে সকল স্থাপনা হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষিত হয়, আমাদের দেশে সেইসকল স্থাপনা পড়ে থাকে অবহেলায়, ক্ষয়ে যায় অস্থি-মজ্জা সকল, ঘুণে ধরে বিচূর্ণ হয় ইতিহাসের পাতা। অপূর্ব সকল স্থাপনা আর নির্মাণশৈলী নিয়ে আমাদের বাংলাদেশের আনাচে কানাচেতে পড়ে আছে অসংখ্য জমিদার বাড়ি, রাজবাড়ীসহ আরও কত স্থাপনা। আর এই সব স্থাপনার কিছু কথা এই বোকা মানুষটার ছেঁড়া খাতায় লিখে রাখার প্রয়াস হল এই “বাংলার জমিদার বাড়ী” সিরিজ।

জমিদার বাড়ী সিরিজের সব লেখাঃ "বাংলার জমিদার বাড়ী"



১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিসের কাছ থেকে ১৪ লক্ষ ৪ শত ৯৫ টাকা দিয়ে দুবলাহাটি এলাকার পত্তন নিয়ে জমিদারী পরিচালনা শুরু করেন জমিদার কৃষ্ণনাথ। কৃষ্ণনাথ এর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তার কন্যার পুত্র (নাতি) হরনাথ রায় ১৮৫৩ সালের জমিদারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই হরনাথ রায়ের সময়েই দুবলাহাটি রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। এসময় তিনি দুবলহাটি রাজ প্রাসাদের সৈৗন্দর্য বৃদ্ধি, নাট্যশালা নির্মাণ ও প্রজা সাধারণের সুপেয় পানীয় জলের কষ্ট দূর করার জন্য রাজ প্রাসাদের পাশে অনেক পুকুর খনন করেন। হরনাথ রায় চৌধুরী ও তার পুত্র কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরীর সময় এর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। প্রাসাদের বাইরে ছিল দীঘি, মন্দির, স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৬ চাকার রথসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রাসাদের ভেতরে ও বাইরে ছিল নাটক এবং যাত্রামঞ্চ। সেখানে নিয়মিত নাটক ও যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হতো।



জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার পর হরনাথ রায় স্বপরিবারে চলে যান ভারতে। এই জমিদার বংশের স্মৃতি স্বরূপ থেকে যায় বিশাল সুরম্য অট্টালিকা যার নাম হয় দুবলাহাটি জমিদার বাড়ী তথা রাজবাড়ি। ইট-সুরকিতে নির্মিত এ বাড়িতে আছে সুরম্য প্রাসাদ, দুর্গা মন্দির, রঙ্গমঞ্চ। বাড়ির মূল ভবনটিতে কমপক্ষে একশটি কক্ষ আছে। এছাড়া কারুকাজময় বারান্দা, রঙিন কাচের অলংকরণ, নানা ধরনের ভাস্কর্য এ জমিদার বাড়ির প্রধান আকর্ষণ। পরর্তীতে এটি সরকারী সম্পদ হিসাবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দেখভালের দায়িত্ব নেয় এবং বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনেই রয়েছে।



কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে যে কোন পরিবহনে করে আপনি নওগাঁ চলে আসেন। ঢাকার বাইরের হলে সেখান থেকে যে যানে করে নওগাঁ পৌঁছানো সহজ তাতে করে নওগাঁ এসে আপনি নওগাঁ সদর থেকে রিকশা ভ্যান, অথবা ব্যাটারিচালিত রিকশা করে আপনি সরাসরি চলে আসতে পারেন এই দুবলহাটি জমিদার বাড়ীতে। এই যাত্রাটুকুতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা আর সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মত।



এই দুবলহাটি জমিদার বাড়ী নিয়ে ব্লগার আরিয়ানার একটি লেখা আছে দুবল হাটি রাজবাড়ি; পড়ে দেখতে পারেন।

ফটো কার্টেসিঃ Click This Link
ইনফো কার্টেসিঃ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×