somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহটাং পাস টু সোলাং ভ্যালী টু মানালি মল (সিমলা-মানালি-রোহটাং পাস ভ্রমণ ২০১৫)

৩০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বঃ স্বপ্নের রোহটাং পাস (সিমলা-মানালি-রোহটাং পাস ভ্রমণ ২০১৫)

আমার জ্যাকেটের চেইন ছিড়ে গেছে। গাড়ী খুলে দিলে আমি ভেতরে গিয়ে সামনের সিটে বসলাম, বিপিন পুরো সিট এলিয়ে দিল, বলল চুপচাপ শুয়ে থাক কিছুক্ষণ, ঠিক হয়ে যাবে। ঐ সময় ঠাণ্ডার সাথে সাথে কিছুটা শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। প্রায় আধঘণ্টা শুয়ে রইলাম, মৃদু ভলিউমে গান চলছে, আর গাড়ীর জানালার কাঁচ ভেদ করে রোদে ঝলমল করা পাহাড়ের সারি পুরো ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলেই। দূরের পাহাড়ের চুড়োয় সাদা বরফের দলা। অদ্ভুত সুন্দর কিছু মুহূর্ত... মনে থাকবে আজীবন।





আধঘণ্টা পর আমার সাঙ্গোপাঙ্গ সব ফিরে এলে আমরা ফিরতি যাত্রা শুরু করলাম। তারা ফিরতেই বিপিন ভোল পালটে আমাকে পচাতে শুরু করল। সবাইকে অভিনয় করে দেখাল আমি নাকি ইয়া লম্বা জিহবা বের করে প্রায় যাই যাই অবস্থায় এসেছি, এসেই ফিট... এমন ফাজিল আর মজার ক্যারেক্টার মেলা ভার। কিছুক্ষণ এই খুনসুটি চলল, সেই সর্পিল পথে আমরা নেমে যাচ্ছি আবার মানালির দিকে। অক্টোবর মাসের সেই সময়ে রোহটাং পাস হয়ে লেহ যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লাদাখ যাওয়া হল না।





হুট করে সাত হাজার ফিট (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে) থেকে তের হাজার ফিট উচু হয়ে ফের নীচে নেমে আসা মাত্র ৫/৬ ঘণ্টার ব্যবধানে... তাই শুধু আমার না, সকলেরই মাথা ব্যাথা করতে লাগল। এক কাপ কফি খেতে পারলে ভাল লাগত, কিন্তু প্রায় ঘণ্টা খানেক গাড়ী চালিয়ে নেমে আসার পর পাওয়া গেল একটা ছোটখাট খাবার দোকান। ততক্ষণে দুপুর প্রায় হয়ে এসেছে। তাই সেখানেই লাঞ্চ সেরে নেয়ার সিদ্ধান্ত হল। মেনু কিছুই পছন্দ না হওয়ায় শেষে ফ্রাইড রাইস আর খাওয়া শেষে কফি। কিন্তু ফ্রাইড রাইস দেয়ার পর দেখি তেলে একাকার, আর নামে মাত্র কিছু পেয়াজ পাতা জাতীয় কিছু দিয়ে জাস্ট রাইসটাকে তেলে ভেজে নিয়ে এসেছে। কোন মতে সেই উদ্ভট জিনিষ পেটে চালান করা হল। কফি খেয়ে কিছুটা আরাম পেলাম সবাই। এবার যাত্রা আমাদের মানালির বিখ্যাত “সোলাং ভ্যালী”।





স্থানীয় নাম “সোলাং নালাহ”, আমরা যাকে চিনি সোলাং ভ্যালী নামে। এই নামের তাৎপর্য হল সোলাং শব্দের অর্থ নিকটবর্তী গ্রাম; আর নালাহ মানে প্রবাহমান পানি। এক কথায় দাঁড়ায়, প্রবাহমান পানির নিকটবর্তী গ্রাম। হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলার কুলু উপত্যকার একেবারে প্রান্তবর্তী এলাকা এই সোলাং ভ্যালী। মানালি হতে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত সোলাং ভ্যালী মানালি থেকে রোহটাং পাস যাওয়ার পথেই পড়বে। আমরা ফেরার সময় এলাম এখানে। এই জায়গাটা নানান উইন্টার স্পোর্টস (প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং, জরবিং প্রভৃতি) এর জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে এখানকার বিশাল বিশাল ঢাল এর কারনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় করে স্কিয়িং এর জন্য। এছাড়া এখানে রয়েছে রোপওয়ে, হর্স রাইডিং সহ আরও নানান আয়োজন। কিন্তু এর বেশীরভাগই শীতের সময় বরফে ঢাকা পাহাড় আর উপত্যকাকে ঘিরে। আমরা যখন এখানে এলাম, আমার তেমন আহামরি কিছু মনে হল না। এর অবশ্য একটা কারণও রয়েছে। গত বারো দিনে কাশ্মীর-সিমলা-মানালি’র নানান ভ্যালী আর পাহাড়ের রূপের বাহার দেখে সোলাং ভ্যালী তেমন কিছু আহামরি মনে হল না।





গুলমার্গে যেহেতু গণ্ডোলা রাইডে চড়ার সুযোগ হয় নাই, ভেবেছিলাম এখানকার ক্যাবলকারে ঘুরে আসি। কিন্তু অত্যাধিক ভাড়া (সাড়ে পাঁচশত রুপি) মাত্র পনের মিনিটের আপ-ডাউন এর জন্য, আর বরফশুন্য পাহাড়ে তেমন আহামরি কিছু হবে বলে মনে হল না। তাই সেই চিন্তা বাদ দিলাম। আমরা আশেপাশে কিছু ছবি তুলে যখন গাড়ীর দিকে ফিরছি্‌, একটা কলকাতার ফ্যামিলি গ্রুপ আমাদের ক্রস করছিল। আমি সেই যে জ্যাকেট খুলেছি, কিন্তু পায়ের গামবুট খুলি নাই। কারন, আমার জুতো গাড়ীর পেছনের ডিকিতে। তো, সেই ফ্যামিলির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক বছর ত্রিশের মহিলা আরেক ভদ্রলোককে আমায় ইশারা করে বলল, “মানিক দা, বুঝেছ, পয়সা উসুল করতে হবে না... পায়ে জুতো পরেই না হয়”। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে, আমি একটু পেছনে ফিরে আমার সঙ্গী সাথীদের সাথে আবার তাদের ক্রস করার সময় একটু জোরে আওয়াজ করেই বললাম, “বুঝলেনা মিতা দি, কোলকাতার ঘটিগুলো তো আর রোহটাং পাস এর নাম শুনে নি। তাই পায়ে কেন বুট সেগুলো কিভাবে বুঝবে। আর ভদ্রতা জ্ঞান থাকলে তো তারা এতদিনে...” বলতে বলতে পার হয়ে এলাম। একফাঁকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ওরা সবকয়টা মুখ চিমসে করে অবাক নয়নে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবলাম ঐ মহিলাকে একটু চোখ মেরে দেয়া যাক, কিন্তু ভাবনার বাস্তবায়ন না করেই এগিয়ে এলাম গাড়ীর দিকে। আমরা যখন ফিরছি, তখন আরও দুটো গ্রুপ রোহটাং থেকে সোলাং এসে পৌঁছেছে, কয়েকজনের পায়েই এখনো বুট জুতো, একজনের গায়ে তো এখনো সেই বরফের জন্য ভাড়া নেয়া জ্যাকেট রয়েছে। আমি মনে মনে বললাম, “লে হালুয়া, এবার দিদিমনি হজম করবে কীভাবে?” ;)





এই প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য, প্রায় মানুষের এই বদস্বভাব আছে আশেপাশের মানুষ নিয়ে কমেন্ট পাস করা, হাসাহাসি করা। আরে বাবা, আমার মন চাইলে আমি ন্যাংটো হয়ে ঘুরব, তোমার তাতে কি? তুমি তোমার চরকায় তেল দাও না... ভদ্রতা একটি বিশেষ গুণ, যা ভেতর থেকে জন্মায়, আসতে হয়, মেকি নয়...





যাই হোক সোলাং থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এল আমাদের। বিপিন আমাদের মানালি মলে নামিয়ে দিয়ে বিদায় নিল। আমরা মলে ঘোরাঘুরি, স্ট্রীট ফুড খাওয়া, টুকটাক কেনাকাটা করে সময় কাটালাম। আমার চুলের যে অবস্থা, আর আগে থেকেই ইচ্ছে ছিল, ভারত এসে চুল কাটাব, তাই মানালি মলে খুঁজে বের করলাম একটা সেলুন। ফাঁকা সেলুনে লোকাল আটদশজন আড্ডা দিচ্ছিল, আমাদের দেশের মতই। ঢুকে জিজ্ঞাসা করলাম চুল কাটা যাবে কি? উত্তর এল হ্যাঁ, কত চার্জ করবে? “আশি রুপিয়া”। ঠিক আছে, কাট চুল। চুল কাটা শেষে জিজ্ঞাসা করল একটু মাথাটা ম্যাসেজ করবে কি না? উচ্চতাজনিত কারনে খুব মাথা ধরে ছিল, বললাম দাও দুটা বাড়ি... ওমা সে মাথা ম্যাসেজ করেই চলেছে। আমি যতই বলি, হয়েছে, আর লাগবে না, সে বলে ‘রুখো’। এরপর ঘাড় ম্যাসেজ করে আমার হাত তুলে ধরল, আমি বললাম ছাড় ব্যাটা, তোরে কি ফুল বডি ম্যাসেজ করতে বলছি নাকি। আমাদের দেশে চুল কাটার পর এমনিতেই নাপিতেরা দুচারটা বাড়ি দিয়ে মাথা ম্যাসেজ করে দেয়। এবার বিল দিতে গিয়ে শুনি “একশাও আশি রুপিয়া”!!! ও মমিন, ক্যাম্নে কি? উত্তরে বলল, চুল কাটার আশি রুপি, আর ম্যাসেজের আশি রুপি... :( এখন বুঝলাম জোর করে ম্যাসেজ করার রহস্য। অজ্ঞতা অতিরিক্ত আশি রুপি দিয়ে প্রস্থান করলাম সেখান থেকে। পনের দিনের ট্যুর এর শেষে এসে এই আশি রুপি অনেক মূল্যবান মনে হয়েছে আমার কাছে। কি আর করা... এবার দলবল নিয়ে হোটেলের দিকে যাত্রা করলাম, আগামীকাল মানালি শহরে ঘুরে দেখা, তারপর দিল্লীর পথে ফিরতি যাত্রা।

আমার কাছে সোলাং ভ্যালী'র তেমন কোন ছবি নাই যা দেখিয়ে আপনাকে প্রলুব্ধ করতে পারব সেখানে একবারের জন্য হলেও বেড়াতে যেতে। তাই নেট থেকে ধার করা কিছু ছবি দিলাম, লোভ দেখানোর জন্য ;)





















সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:২৩
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×