দক্ষিণ ভারতেরও সর্বদক্ষিণের রাজ্য কেরালা। ভাষা, বর্ণ, পোষাক থেকে শুরু করে খানাখাদ্য; সবকিছুতেই ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি রাজ্য। দক্ষিণ ভারত মূলত পাঁচটি রাজ্য নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে সর্ব দক্ষিণের রাজ্য এই কেরালা। কেরালার ভাষা (মালায়াম) আর খাদ্য’র জন্য ভারত পেড়িয়ে সারা বিশ্বেই হয়ে উঠেছে আগ্রহের বিষয়। কেরালা ভ্রমণ করেছেন, অথবা ভ্রমণ পরিকল্পনা করেছেন, অথবা কেরালা নিয়ে একটু আগ্রহী যে কেউই কেরালার যে বিষয় সম্পর্কে সবার আগে অবগত হন, তা হল কেরালার আবহাওয়া (উষ্ণতা বিষয়ক) আর খাদ্য (নারিকেল, নারিকেল তেল আর অতিরিক্ত মসলার ব্যবহার) বিষয়ে। তো আমার কেরালা ভ্রমণের সময়ও আমি এই দুটো বিষয়ে বেশী কথা শুনেছি। অথচ সবচেয়ে কম শুনেছি মুন্নার এবং এর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকা অপরূপ সব চা-বাগানের মনোমুগ্ধকর রূপের কথা (দ্রষ্টব্যঃ)।
তো আমি কেরালা পৌঁছেই আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড, মিঃ বিনয় পি জোশ কে বলেদিয়েছিলাম, “তুমি প্রতিবেলা যে খাবার অর্ডার করবে, আমিও সেই খাবারই খাব”। এতে আমার লাভ হয়েছিল, কলাপাতা পেতে পিওর কেরালা’র ভেজ থালি, নন-ভেজ থালি চেখে দেখার; সাথে কেরালার অষ্টব্যঞ্জন... ইয়াম্মি! সেই স্বাদ...
আসুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক, আজকের ছবি ব্লগ। ছবি দেখবেন, কিন্তু খেতে চাইবেন না। কেরালার খাবার এক্কেবারে পচা...
সকালের নাস্তাঃ হোটেলের নাস্তায় পেয়েছি ব্রেড-বাটার-ওমলেট এগুলোর সাথে দোসা, ইটলি, সাম্বার, পুরি-ভাজি এসব। তবে, দু'তিন দিন রাস্তার পাশের খাবার হোটেলে নাস্তা করেছি, ভোররাতে চেকআউট করার কারনে। কেরালায় দেখেছি, একেবারে খুপরি টাইপ খাবার দোকানে ঈষৎ উষ্ণ জলের ব্যবস্থা রয়েছে, সেই সাথে জলের রঙ কেমন হালকা পিঙ্ক। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আসলে অত্যাধিক গরমের এলাকা কেরালা, তাই গরম থেকে সর্দি-কাশি-জ্বর যেন না হয়, সেই জন্য তারা ঠান্ডা পানি পান করে না, তার বদলে ভেষজ দেয়া হালকা গরম পানি পান করার চলে সেখানে। উনুনে গরম হতে থাকা জলের ডেচকি দেখা যায় কমবেশী সব খাবার হোটেলেই। সেইসব দোকানের ছবি খুব বেশী তোলা হয় নাই, তার উপর অনেক ছবি হারিয়ে ফেলেছি। যা আছে তাই দিলামঃ নাস্তার সব ছবিই আবাসিক হোটেলে বুফে ব্রেকফাস্টের।
দুপুর এবং রাতের খানাপিনাঃ প্রতিবেলাই দুপুরের খাবার খেয়েছি যে কোন রোড সাইড রেস্টুরেন্টে। সেটা কোনদিন ছিল স্ট্যান্ডার্ড রেস্টুরেন্ট, কোনদিন রাস্তার পাশের ইতালিয়ান খাবার হোটেল টাইপ; আবার কোনদিন কেরালা মহিলা পরিচালিত খাবারের ভ্যান। কেরালা সিরিজের কোন এক পোষ্টে বলেছিলাম সেটার কথা, নাম ছিল "আম্মা'স কিচেন"।
প্রতি বেলার খাবারেই থাকবে সাম্বার, রায়তা, আচার আর সুইট পিঙ্ক কালারের রাউন্ড শেপের সুদর্শন পেঁয়াজ।
হায়রে নুডলস! চাইনিজ এই খাবারটির যতরকম ভার্সন সারা পৃথিবীতে মিলবে, অন্য কোন খাবারের এত ভার্সন আছে কি না, কে জানে? কেরালার চাউমিন তথা নুডলস।
কেরালার চেইন ফুড শপ "চিকিং" (কেএফসি টাইপ) হতে কেনা খাবার দাবার, প্রথম দিন রাতে কোচিন পৌঁছে হোটেলে চেকইন করেছিলাম অনেক রাতে, তাই খাবার কিনতে হয়েছিল বাহির হতে, কিন্তু ততক্ষণে প্রায় সকল খাবার দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ড্রাইভারের বুদ্ধিতে এই খানা দিয়েই উদর পূর্তি করতে হয়েছে কেরালার প্রথম রাতে।
কেরালার বিরিয়ানি, হোটেল এর রেস্টুরেন্টে খাওয়া। এভারেজ স্বাদ।
ইহা কোচিনে খাওয়া সেই বিখ্যাত মোরগ পোলাও, যা আমার খাওয়া সেরা দশটি বিরিয়ানি/পোলাও'র মধ্যে একটি। আহারে... আবার কবে যে যাব!
নারিকেল দিয়ে তৈরি ডাল জাতীয় খাবার, বলা যায় কেরালার ডাল।
নানান দিনে খাওয়া দুপুর এবং রাতের খাবারের একাংশ।
প্রায় প্রতিবেলাতেই ছিল এরকম মরিচ-পেঁয়াজ এর বাটি; ভাঁজা কি কাঁচা, সবুজ কি লাল, লম্বা কি গোল, মরিচের ঝাল সেইরকম; সাথে সুইট পিংক কালারের গোলটু গোলটু পেঁয়াজের দল।
খাবার হোটেলে দুপুরের আগে প্লেট সাজানো চলছিল, প্রথমেই পাতে পড়েছে নানান ভর্তা আর চাটনি।
ইহা সেই "আম্মা'স কিচেন" এর বিখ্যাত থালি। মোটা চালের ভাত, মুরগী-গরু'র তরকারী, নানান সবজি, চাটনি, খাওয়া শেষে মিষ্টান্ন-পিঠা। আহ... সেই লেভেলের খাওয়া-দাওয়া; শেষে বিল এল জনপ্রতি একশত বিশ রুপী'র মত। আই লাভ আম্মা'স কিচেন।
দুবেলায় খাওয়া দুটি ভেজ থালি।
রোড সাইড হালকা খাবার-দাবারঃ
ক্যাপসিকাম জাতীয় কোন সবজি দিয়ে তৈরী হচ্ছে বেগুনী জাতীয় ভাঁজাপোড়া আইটেম।
কেরালায় খাওয়া বিখ্যাত "বেনানা ফ্রাই"। ইহা খাইয়া মজা পাই নাই। পাকা কলা ডিপ ফ্রাই করে। কেম্নে যে কি, কিছুই বুঝি নাই।
লালরঙ্গা কেরালার বিখ্যাত আয়ুর্বেদিক কলা। ইহার গুণগান জানি না, তবে কিছু ভ্রমণসঙ্গীকে দেখেছি ইহা ভক্ষণ এর জন্য উদগ্রীব হতে।
রোড সাইড টঙ্গের দোকানে রাতের বেলা কাঁচা মাছ পছন্দ করে কিনে দেয়ার পর মসাল মেখে ভাঁজা হচ্ছে।
চিক্কু.... ... ... .. .. . . . চিক্কু, চিক্কু, চিক্কু! ইহা সেই চিক্কু। সফেদা ফলের মিল্ক শেক। আমার খাওয়া জীবনের সেরা পাঁচটি পানীয়'র একটি। আই মিস ইউ চিক্কু।
আজ এখানেই শেষ, আগামী পর্বে থাকবে কেরালা'র বিখ্যাত বেশকিছু খাবারের রেসিপি নিয়ে পোস্ট। সেই পর্যন্ত সাথেই থাকুন। শুভরাত্রি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩৩