somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনটু দ্যা ওয়াইল্ড (Into The Wild 2007) - বুনো জীবনের আদিম হাতছানির গল্প

১২ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রতিটি তরুন-তরুনী স্বপ্ন দেখে জীবন নিয়ে; আর প্রায় অনেকাংশেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপটি থাকে একটি ডিগ্রী; আর তা যদি হয় ভালো রেজাল্ট নিয়ে তাহলে তো কথাই নাই। ধরুন আপনি প্রথম শ্রেণীর রেজাল্ট নিয়ে গ্রাজুয়েট হলেন এবং উচ্চতর শিক্ষার জন্য 'হাভার্ড ইউনিভার্সিটি'তে আইন বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান; তাহলে সোনায় সোহাগা। কিন্তু প্রতিটি মানুষই তো আর একই ধাঁচে গড়া না। আর এই কারনেই মনে হয় মানুষ সৃষ্টির সেরা। তো যা বলছিলাম, এরকম একটা চমৎকার ক্যারিয়ার (প্রচলিত আমাদের সিভিলাইজড সোসাইটিতে) যখন কারো ভালো লাগে না, মন চায় সবছেড়ে ছুড়ে দূরের কোন বরফে ঢাকা পর্বতের কোলের বন্য জীবনে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে, সে কি আসলে স্বাভাবিক মানুষ? না সে স্বাভাবিক না, তবে অস্বাভাবিক বলাটা কি শোভনীয়? হতে পারে সে ব্যতিক্রম, আমাদের আমজনতার ভাবনার জগত থেকে তার ভাবনার জগতটা ব্যতিক্রম। যুগে যুগে এরকম ব্যতিক্রম মানুষেরা এসেছে এই মানব সভ্যতায়; আর তাদের এই ব্যতিক্রমী চিন্তাধারাই কিন্তু তাদের স্মরণীয় করে রেখেছে ইতিহাসের পাতায়।

আজকের এই মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্র এমনই এক ছেলে, আমেরিকার ইস্ট কোস্টের সম্ভ্রান্ত এক পরিবারের ছেলে, ক্রিস্টোফার জনসন ম্যাক্যান্ডেলস। ভালো রেজাল্ট করে যার যাবার কথা হাভার্ড, বাবা যাকে পুরাতন গাড়ীর বদলে নতুন একটি গাড়ী কিনে দিতে চাচ্ছেন; সেই ছেলে সকল সার্টিফিকেট নষ্ট করে দিয়ে, জমানো চব্বিশ হাজার পাঁচশত ডলার আটষট্টি সেন্ট চ্যারিটি ফান্ডে দাণ করে দিয়ে একদিন বের হয়ে পড়েন ঘর থেকে; নিজের পুরাতন গাড়ী আর কিছু হাত খরচের টাকা নিয়ে রওনা দেন উত্তর আমেরিকার পথ ধরে; উদ্দেশ্য আলাস্কার বরফে ঢাকা বনে জীবন কাটানো। কিন্তু কিভাবে যাবেন, কিভাবে থাকবেন, পথই বা কি? সব অজানা, আর এই আজানাতে ভর করেই একদিন বাড়ীর কাউকে না জানিয়ে, সকল ধরণের পরিচয়পত্র নষ্ট করে দিয়ে বেড়িয়ে পড়েন ক্রিস্টোফার।

চলার পথে একসময় গাড়ীটিও ত্যাগ করেন, পুড়িয়ে নষ্ট করে দেন সাথে থাকা টাকাগুলোকেও। এরপর একে একে পাড়ি দিতে থাকেন নানান জনপদ, বিস্তৃন চারণভূমি, নদী পথ, কখনো মরুভুমি'র রুক্ষ্ম প্রান্তর। আর এই চলার পথে তারমত আরও অনেক পর্যটকের দেখা হয়; কিন্তু তাদের লক্ষ বা গন্তব্য কোনটাই তো ক্রিস্টোফার এর মত নয়। তরুন ক্রিস্টোফার সকল সকল সম্পর্কের মায়া পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন আলাস্কার পথে।

ছোটবেলা থেকেই বাবা মা'র দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপোড়ন, কলহ এবং মায়ের উপর বাবার শারীরিক নির্যাতন কিশোর ক্রিস্টোফার এর মনোজগতে বিরুপ প্রভাব ফেলে। সংসারের প্রতি, সংসার জীবনের মায়ার প্রতি, এই সমাজের প্রচলিত জীবন যাপন পদ্ধতির উপর অদ্ভুত এক বিতৃষ্ণা বাসা বাঁধতে থাকে ক্রিস্টোফার মনের ভেতর। আর সেই তিলে তিলে গড়ে ওঠা বিতৃষ্ণা একদিন বিশাল জলরাশির মত ঢেউ তুলে তাকে করে গৃহছাড়া।

আমরা এই মুভির শুরুতে দেখতে পাই ক্রিস্টোফার আলাস্কার বরফে ঢাকা পথে নেমে পড়ে একটা গাড়ী হতে। এরপর সে হেঁটে হেঁটে খুঁজে পায় বরফে ঢাকা পাহাড়ের উপর একটি পরিত্যক্ত বাস, যাকে সে Magic Bus নামে অভিহিত করে। এখানেই সে কাটায় তার স্বপ্নের বুনো জীবনের সময়টুকু। তার দীর্ঘ দুই বছরের যাত্রাপথে সে নানান মানুষের সংস্পর্শে আসে; এদের মধ্যে যে বৃদ্ধ লোকটি তাকে আলাস্কার প্রান্তে নামিয়ে দিয়ে যায়; ক্রিস্টোফার তাকে বলে তার কোন পরিবার নেই। বৃদ্ধ লোকটি ক্রিস্টোফারকে আপন নাতি করে নিতে চাইলে তরুন ক্রিস্টোফার কথা দেয় আলাস্কার জীবন কাটিয়ে ফিরে আসবে সে; তখন এই বিষয়ে ভেবে দেখবে। এরকম হাজারো স্বপ্ন নিয়ে আলাস্কার জীবনে কি হয়েছিলো ক্রিস্টোফার এর সাথে জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটি।

এই সিনেমাটি মূলত Jon Krakauer এর উপন্যাস Into the Wild অবলম্বনে ২০০৭ সালে নির্মিত হয়। ছবিটি পরিচালনা এবং প্রযোজনা করেন Sean Penn। অসাধারণ নির্মানশৈলী'র জন্য ছবিটি সর্বকালের অন্যতম সেরা 250 ছবির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র অনবদ্য অভিনয় করেছেন Emile Hirsch। ছবিটিতে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন এরিক গ্যাটিয়ার আর সম্পাদনায় ছিলেন জে ক্যাসিডি; তাদের কাজ আসলেই দেখার মত। ছবিটি পরিবেশনায় ছিল প্যারামাউন্ট ভ্যান্টেজ। ১৪৮ মিনিট এর এই মুভিটি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায় ২১ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালে এবং ১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই ছবিটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

ক্রিস্টোফার এর স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছিলো? কেমন ছিলো তার আলাস্কার বুনো জীবনের দিনগুলো? কি পরিণতি হয়েছিলো ক্রিস্টোফারের? সে কি ফিরে এসেছিলো তার পরিবারের কাছে? নাকি সেই বৃদ্ধ'র নাতি হিসেবে বাকী জীবন কাটিয়ে দিয়েছিল? নাকি ক্রিস্টোফার এর পুরো অস্তিত্বই মিশে গিয়েছিলো আলাস্কার সেই বুনো জগতে... জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে ছবিটি। অন্তর্জালে নানান সোর্স এ ছবিটি রয়েছে; খুঁজে নিয়ে দেখবেন আশা করি।

ট্রাভেল মুভি রিভিউ সিরিজের আগের পোস্টঃ
মুভি রিভিউ The Perfect Wave (2014) (Adventure & Travel Movie Review - পর্ব ০১)
মুভি রিভিউ Touching The Void (2003) (Adventure & Travel Movie Review - পর্ব ০২)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×