somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউলিপ ফুল, গদাখালী এবং একটি সম্ভাব্য পর্যটন সম্ভাবনা (পর্যটন ভাবনায় বৈচিত্র এবং সম্ভাবনা - পর্ব ০৩)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সম্প্রতি যশোরের ঝিকরগাছার ফুলের রাজ্য গদাখালী সংবাদ শিরোনাম হয়েছে ‘টিউলিপ ফুল’ এর জন্য। সারাবিশ্বে টিউলিপ ফুলের রয়েছে আলাদা একটা আবেদন, ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে টিউলিপ বাগানে বেড়ানোর রয়েছে আলাদা চাহিদা। পাশের দেশ ভারতের কাশ্মীরে রয়েছে টিউলিপ গার্ডেন যা বছরের মাত্র তিন-চার সপ্তাহের জন্য খোলা হয় টিউলিপ এর মৌসুমে। সেই সময় শুধু এই টিউলিপ গার্ডেনে ভ্রমণের জন্য হাজারো দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে কাশ্মীরে। “ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন” নামের এই টিউলিপ গার্ডেন এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। এশিয়ার ভারতের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তুরস্ক, চায়না, তাইওয়ান এ রয়েছে টিউলিপ বাগান। আর সেইসব বাগানকে ঘিরে জমে উঠেছে সেখানকার অন্যতম পর্যটন।

যশোরের গদাখালীর ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন। ফুল চাষ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন, করেন নানান জাতের ফুলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদও। এবার পরীক্ষামূলকভাবে তিনি চাষ করার চেষ্টা করেন টিউলিপ ফুলের। ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে নেদারল্যান্ডস থেকে গাজীপুরের দেলোয়ার হোসেনের মাধ্যমে সরকারি খরচে সাত প্রকারের পাঁচ হাজার বাল্ব (টিউলিপ ফুলের চারা) আমদানি করা হয় এবং ওই বাল্ব গদখালীর ইসমাইল হোসেনের ৫ শতক জমিতে গত ৬ জানুয়ারি বপন করা হয়। ২২ জানুয়ারি থেকে টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সানরাইজ, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), লা বেলা রেড (লাল), মিল্কশেক রেড (লাল) প্রজাতির টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এবারের শীত মৌসুম কিছুটা দীর্ঘায়িত হওয়ায় গদাখালীতে ইসমাইল হোসেন এর নিবিড় পরিচর্যায় টিউলিপ ফুল ফুটেছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া টিউলিপ ফুলের জন্য অনুকূল নয় তেমন, তা সত্ত্বেও সেখানে এই ফুলের চাষ আসলেই সাহস এবং ধৈর্য্যের বিষয়।

জানুয়ারির শেষ দিকে এসে ফোটা এই টিউলিপ ফুল দেখতে এর মধ্যেই দেশের নানান স্থান থেকে পর্যটকের আগমন দেখা গেছে গদাখালীতে। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়র সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়েছে এই খবর। দর্শনার্থীরা আগ্রহ নিয়ে গদাখালীতে যাচ্ছেন এই ফুল দেখতে। এই ফুলকে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। তবে ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, টিউলিপ ফুল দেশের মাটিতে ফুটাতে সক্ষম হলেও এর বাল্ব তথা চারা সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা দেশে নেই; কেননা এর জন্য প্রয়োজন একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় চারাগুলোকে সংরক্ষণ করা পরবর্তী রোপনের জন্য। অপর দিকে বিদেশ থেকে টিউলিপ এর বাল্ব আনতে অতিরিক্ত শুল্কও দিতে হয়। তাই বানিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুলের চাষ এর জন্য দরকার সরকারী উদ্যোগ। গদাখালীর অনেক ফুল চাষিই ইসমাইল হোসেন এর এই সাফল্যে আগ্রহী টিউলিপ ফুলের চাষ করতে। এখন দরকার সরকারী বাস্তবসম্মত উদ্যোগ।

আমার পর্যটন ভাবনায় বৈচিত্র এবং সম্ভাবনা সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে “পুষ্পময় পুষ্পরাজ্যে পর্যটন” এ গদাখালীর কথা বলেছিলাম। এখন টিউলিপ ফুলের এই সংযোজনে সেই সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে। সেই পোস্টে বলা কিছু কথা না হয় আবার রিপিট করা যাকঃ

বোকা মানুষের পর্যটন ভাবনাঃ আসলে এরকম ফুলের বাগানগুলো নিয়ে আমাদের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত। এক বোটানিক্যাল গার্ডেন ছিল ভরসা, তাও এখন অতীত। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে রয়েছে নানান ফুলের বাগান কেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র। ভারতের কাশ্মীরের টিউলিপ গার্ডেন মাত্র একমাস খোলা থাকে, মার্চ এর শেষ হতে এপ্রিল পর্যন্ত। আর সেই সময়কে ঘিরেই প্রচুর পর্যটক ভীড় জমায় সেখানে। এরকম ভারতের নানান জায়গাতেই রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের লাল শাপলার সাতলা বিল অথবা গদখালী’র ফুলের বাগান বা সাদুল্লাপুরের গোলাপ বাগানগুলো একটু পরিকল্পনা আর সহযোগিতা পেলে ফুল চাষের পাশাপাশি অবদান রাখতে পারে পর্যটন শিল্প’র দিকেও। কিন্তু এসব দিকে নজর দেয়ার কি কেউ আছে? জানি না, জানা নেই। এখন পর্যটন হয়ে গেছে শুধু প্রচারণার অংশ। যে কোন পণ্যের প্রসারে প্রচারণা অবশ্যই দরকার; কিন্তু তার আগে দরকার কোয়ালিটি প্রোডাক্ট। তাই পর্যটন শিল্প বিকাশে আগে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পিত পর্যটন কেন্দ্র, আনতে হবে নতুনত্ব, ভাবতে হবে ভিন্নভাবে। এক মালদ্বীপ তার দ্বীপসমূহ আর জলরাশি’কে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলেছে বিশাল পর্যটন শিল্প; যা তাদের জাতীয় আয়ে বিশাল ভুমিকা রাখছে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত সভা-সেমিনার-র‍্যালী আর মেলা কেন্দ্রিক প্রচারণায় মনোনিবেশ কম করে সঠিক পর্যটন পরিকল্পনা এবং এগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন এ কাজ করা। তাহলেই হয়ত এগিয়ে যাবে এদেশের পর্যটন শিল্প। এক কক্সবাজার আর সুন্দরবন দিয়ে পর্যটন শিল্প কতদূর আগাবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। স্বপ্ন দেখি সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের।

গদাখালীতে সরকারীভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে পর্যাপ্ত কৃষি জমি কৃষকদের সাথে PPP (Public Private Partnership) Project এর আওতায় সরকারী ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ এর পাশাপাশি সেখানে একটা টিউলিপ গার্ডেন প্রতিষ্ঠা দেশীয় পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসবে। আশা করি সরকারী সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখবেন।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ টিউলিপ ফুল - রাতুল মন্ডল

"পর্যটন ভাবনায় বৈচিত্র এবং সম্ভাবনা" সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
ফলের হাট (পর্যটন ভাবনায় বৈচিত্র এবং সম্ভাবনা - পর্ব ০১)
পুষ্পময় পুষ্পরাজ্যে পর্যটন (পর্যটন ভাবনায় বৈচিত্র এবং সম্ভাবনা - পর্ব ০২)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৪৩
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতার আসনে বেশী দিন থাকা শাসকদের মাঝে খালেদা জিয়া সর্বসেরা

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৩



আমার এক ছাত্র চাকুরীর পরীক্ষায় ৫২ নম্বর পেয়ে ৩ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। দ্বিতীয় জন পেয়েছিল ৪৯ নম্বর এবং তৃতীয় জন পেয়েছিল ৪৭ নম্বর। সে হিসাবে খালেদা জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপসহীনতার নাম খালেদা জিয়া: যন্ত্রণার বিনিময়ে গণতন্ত্রের প্রাচীর

লিখেছেন জুয়েল তাজিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৭



ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে একাত্তরের বিভীষিকায় বন্দিত্ব, অল্প বয়সেই বিধবা হওয়া—বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের শুরুটাই ছিল যন্ত্রণার অধ্যায়। এরপর ইতিহাস যেন তাঁকে একের পর এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×