somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাথায় আঘাত হতে পারে প্রাণঘাতী

০৭ ই মে, ২০১১ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় ও উত্তেজনাময় ঘটনা হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের লড়াই, যা বাংলাদেশের মাটিতেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে যেমন রয়েছে অনেক আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ঘটনা, তেমনি আছে কিছু বেদনাময় স্মৃতি।
২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮। ক্রিকেট লীগে আবাহনী-মোহামেডানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। খেলোয়াড় ও দর্শকদের মধ্যে শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা। মোহামেডানের ব্যাটসম্যান মেহরাব হোসেন অপি ১৪তম ওভারের মাথায় আবাহনীর বোলার জেমসের বলে পুল করতে গেলেন। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডিং করছিলেন সাবেক ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার রমণ লাম্বা। বিপজ্জনক এ পজিশনটিই ছিল তাঁর প্রিয়। কিন্তু লাম্বার কোনো হেলমেট না থাকায় বলটি সজোরে তাঁর মাথায় আঘাত হেনে উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ পাইলটের গ্লাভসবন্দি হলো।
এভাবেই অপির ছোট ইনিংসটির মৃত্যু হলো। কিন্তু ওই একই বলে যে আরো একটি মর্মান্তিক
মৃত্যুসংবাদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, তা হয়তো কেউই ধারণা করতে পারেননি। বলা যায়, ক্রিকেটার লাম্বা শুধু অসাবধানতার কারণেই ক্রিকেটের একটি বিষ বলে বিদ্ধ হলেন। ২৩ তারিখ রাতেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
যাঁরা ক্রিকেট অনুরাগী, তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ক্রিকেটার ফিল সিমন্সও ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম শ্রেণীর একটি ম্যাচে মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। স্টেডিয়ামের কাছে জরুরি ও তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচারে সে যাত্রায় সিমন্স পার পেয়ে গিয়েছিলেন। এ সব কিছুই দুর্ঘটনা, কিন্তু পরিণতি ভয়াবহ। বিশেষ করে তা যদি হয় হেড ইনজুরি বা মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্তের ঘটনা। শুধু খেলাধুলাই নয়, রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনা, হঠাৎ পড়ে যাওয়া এ সব কিছুর পরিণতিতেও একজন শিশু থেকে পূর্ণবয়স্ক লোক মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারেন।
তাই এ ধরনের হেড ইনজুরি বা মস্তিষ্কের আঘাত সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।

হেড ইনজুরি শনাক্তকরণ
হার্টের অসুখ (যেমন ইসকেমিয়া- হার্টের অঙ্েিজনের ঘাটতি), ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ এবং কিছু মদ্যপায়ীর বেলায় হেড ইনজুরি হয়েছে কি না, তা প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকদের পক্ষে নিরূপণ করা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। কেননা সেসব রোগীর ক্ষেত্রে আগেও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস থাকে। সুতরাং হেড ইনজুরির কারণে রোগী অচেতন হয়েছেন, নাকি অন্য রোগের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা নির্ণয় করা খুবই জরুরি। অচেতন রোগীকে হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছেন রোগীর যেসব আত্মীয় বা উপস্থিত ব্যক্তিটি, তাকে এসব তথ্য দিয়ে চিকিৎসককে সহায়তা করতে হবে।
এ ছাড়া আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিটির স্মৃতিশক্তির অবস্থা বিশ্লেষণ করে চিকিৎসক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যেমন আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি যদি ২৪ ঘণ্টার বেশি অচেতন থাকার পর চেতনা ফিরে পেয়ে আগের কোনো স্মৃতি বর্ণনা করতে না পারেন, তাহলে চিকিৎসক তাঁর অবস্থা সংকটজনক ধরে নেন। রোগী যদি বলেন, তাঁর মাথার একপাশে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে, তা থেকে চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে ধরে নেন, মস্তিষ্কের ভেতরের অংশে প্রচণ্ড চাপ (রক্তের জমাটবদ্ধতা বা ইডিমা) এ ক্ষেত্রে কাজ করছে। তাই আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিটির বর্ণনা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিকভাবে সংকটাপন্ন হেড ইনজুরির রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণত গাসগোকোমা স্কেল (রোগীর চোখের ও হাত-পায়ের প্রতিক্রিয়া এবং কথা বলার অবস্থা সাপেক্ষে একটি লিপিবদ্ধ চার্টের মাধ্যমে রোগীর অবস্থার উন্নতি-অবনতির মাত্রা নির্দেশিত হয়) ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া হেড ইনজুরির রোগীদের অবস্থা নিরূপণে প্রাথমিকভাবে এঙ্-রে, সিটিস্ক্যান অথবা এমআরআই যন্ত্রসহকারে আঘাতের তীব্রতা নিরূপণ করা অত্যন্ত জরুরি। হেড ইনজুরির রোগীর আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে আঘাত নিরূপণে রোগীকে এঙ্-রে বা রেডিওলজি বিভাগে স্থানান্তরে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। কিন্তু ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে চলবে না। মাথা ফেটেছে কি না, তা নিরূপণ করবে এঙ্-রে। এ ছাড়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ইডিমা কিংবা ব্রেন টিস্যুর ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিরূপণ করবে সিটিস্ক্যান বা এমআরআই পরীক্ষা। এরপর শল্যবিদরা এগোবেন সঠিক পথ ধরে। এ ছাড়া বিদেশে সেরিব্রাল এনজিওগ্রাফি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যদিও এগুলোর ব্যবহার সীমিত।

ইনজুরি পরবর্তী সমস্যা
হেড ইনজুরির প্রাথমিক ধাক্কায় রোগীর মস্তিষ্কের ভেতরকার চাপ বৃদ্ধির ফলে বমি বমি ভাব, চোখের তারা বড় হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ডভাবে ঘাম হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিলেও যদি সঠিক সময়ে আয়ত্তাধীন সমস্যাগুলো নিরূপণ তথা চিকিৎসা করা যায়, তাহলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু আঘাত বিপজ্জনক হলে বা চিকিৎসা বিলম্বিত হলে রোগীর সমস্যা থেকে যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সুস্থতার পর্যায়ে রোগী ঘ্রাণের অসুবিধা, মাথা ধরা, শারীরিক দুর্বলতা, মনোযোগহীনতা ইত্যাদির কথা বললেও চিকিৎসকের পরিপূর্ণ আশ্বাস এবং ওষুধ প্রয়োগে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া এসব রোগীর পরবর্তীতে খিঁচুনি রোগ দেখা দিতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খিঁচুনিরোধক ওষুধ ব্যবহারে এটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ওষুধের ব্যবহার বন্ধ রাখলে তা আবার দেখা দিতে পারে।

পরীক্ষা
- চোখের পিউপিলারি প্রতিক্রিয়া।
- চোখের কর্নিয়ার প্রতিক্রিয়া।
- মস্তিষ্কের পঞ্চম নার্ভের (ট্রাইজেমিনাল নার্ভ) ব্যথা সংবহন মাত্রা।
- অকুলো সেফালিক প্রতিক্রিয়া।
- গলার গ্যাগ প্রতিক্রিয়া বা গ্যাগ রিফ্লেঙ্।

মাথায় আঘাত পেলে
- রোগীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।
- রোগী অচেতন থাকলে বা বমি হলে মুখে খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
- স্নায়ুরোগ বিভাগ রয়েছে এমন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগীকে স্থানান্তর করতে হবে। এঙ্-রে, সিটিস্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদির ব্যবস্থাসংবলিত হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করানোর চেষ্টা করতে হবে।
- আইসিইউ বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট আছে এমন চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
- তাৎক্ষণিক বার হোল অপারেশন বা অন্যান্য সূক্ষ্মতর শল্যচিকিৎসা প্রদানে সক্ষম এমন ধরনের হাসপাতালে রোগীকে নিতে হবে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×