সৈয়দপুরে মধ্যযুগীয় শাসন কায়েমের এই বর্বরোচিত তা-ব চালাচ্ছে ‘তাহরিকুল উলামা’ নামের সংগঠন। প্রায় সতের বছর ধরে ধীরে ধীরে এই তৎপরতা বাড়তে বাড়তে এখন প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারি পর্যায়ে তদšø শুরু হয়েছে। জানা গেছে, সুদহৃর যুক্তরাজ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্ট’া সতর্ক নজর রেখেছে সে দেশে তাহরিকুল উলামা সমর্থকদের ওপর। সেদেশে সিলেট অঞ্চল থেকে যাওয়া প্রবাসী বাঙালির সংখ্যা অনেক। প্রবাসীরাও সুনামগঞ্জের গ্রামের ঘটনাবলিতে উ™ি^¹ু।
তাহরিকুল উলামার কয়েকজন শীর্ষস্ট’ানীয় নেতা সংগঠনের কর্মকা- তুলে ধরতে গিয়ে অগোচরে তাদের উগ্র মৌলবাদী কর্মকা-েরই বর্ণনা দিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘তাহরিকুল’ অর্থ নড়েচড়ে বসা এবং ‘উলামা’ অর্থ আলেমগণ। অর্থাৎ ‘তাহরিকুল উলামা’র অর্থ আলেমদের নড়েচড়ে বসা বা আন্দেলন। শীর্ষস্ট’ানীয় নেতা মাওলানা রশীদ তাদের প্রধান ঘাঁটি সৈয়দপুর সৈয়দীয়া শামছিয়া মাদ্রাসার বারান্দায় বসে সমকাল প্রতিনিধিকে জানান, আলেমদের নড়েচড়ে বসার অর্থ ইসলামী শরিয়া মতে রা®দ্ব্র পরিচালনার জন্য সংগঠনের নিজস্ট^ আইন প্রণয়ন ও তা বাস্টøবায়নে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা। তিনি বলেন, এর জন্য প্রয়োজন হলে ইসলাম হত্যাকেও বৈধ বলে স্ট^ীকৃতি দিয়েছে।
সংগঠনের মহৃল ব্যক্তি সৈয়দপুর সৈয়দীয়া শামছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ এক সাক্ষাৎকারে সমকালকে বলেন, ‘এর ব্যত্যয় হলে সমস্টø ফয়সালা এই পৃথিবীতেই হবে।’
অনুসল্পব্দানে জানা গেছে, এই সংগঠনের অনুসারীরা সৈয়দপুর গ্রামে প্রথমে তাবলিগ জামাতের নামে কাজ শুরু করেন। ব্যাপক জনগণের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তাবলিগ জামাতের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। এ কারণেই হয়তো তাহরিক সদস্যরা এই কৌশল নিয়েছে। এখন তারা শক্তি ও ভীতি প্রয়োগে গ্রামে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের চে®দ্বা করছে। এই সংগঠনের সঙ্গে দেশে নিষি™ব্দ জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’ (জেএমবি) ও আšøর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক ‘আল কায়দা’র স¤ক্সর্ক থাকার বিভিল্পু তথ্য পাওয়া গেছে।
তাহরিকুল উলামার সদস্য পরিচয় দানকারী মাওলানা রেজওয়ান সমকালের কাছে গ্রামের মুরব্বিদের সমন্বয়ে গঠিত একজন আমির ও কয়েকজন সদস্য ছাড়া সংগঠনের আর কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি বা গঠনতšú, এমনকি সংগঠনের কোনো প্যাড পর্যšø নেই বলে জানান। কিন্তু সংগঠনের গোপন কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, ১০১ সদস্যের একটি কমিটি ছাড়াও একটি ‘আহলে শহৃরা’ রয়েছে তাদের। সর্বোচ্চ কমিটি এই শহৃরার দায়িÍ^ ফতোয়া জারি ও আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্টøবায়নে চূড়াšø অনুমোদন দেওয়া।
সংগঠনের আমির হচ্ছেন মাওলানা রেজওয়ানের বড় ভাই সৈয়দপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বর্তমান শিক্ষক মুফতি মাওলানা সৈয়দ নুমান আহমেদ। আর নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা সৈয়দ ফুজায়েল আহমেদ। আহলে শহৃরার সদস্যরা হলেন হাফেজ মাওলানা সৈয়দ শাহজাহান, মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল হক, মাওলানা সৈয়দ মুস্টøাকীন আলী, মাওলানা সৈয়দ আবুল, মাওলানা সৈয়দ আবদুল আলী, মাওলানা সৈয়দ আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা সৈয়দ মসরুর আহমেদ, মাওলানা সৈয়দ আমীরুল ইসলাম, মাওলানা সৈয়দ সানাওর আলী ও মাওলানা সৈয়দ মুন্সেফ আলী। মাওলানা রেজওয়ানই অলিখিতভাবে সংগঠনের প্রধান কমান্ডার। সহৃত্র জানিয়েছে, আহলে শহৃরার দেওয়া সি™ব্দাšø বাস্টøবায়নের প্রধান দায়িÍ^ তার।
যেভাবে উত্থান তাহরিকুলের : মুফতি মাওলানা সৈয়দ নুমান আহমেদ পাকিস্টøান থেকে পড়ালেখা শেষে দেশে ফেরার পরই সৈয়দপুরে উত্থান ঘটে তাহরিকুল উলামার। মহৃল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ প্রধান ব্যক্তি, গোপালগঞ্জে ৭৬ কেজি বোমা ও রাজধানীর ২১ আগ¯েদ্বর গ্রেনেড হামলাসহ বহু মামলার আসামি বর্তমানে কারাবন্দি মুফতি মাওলানা আবদুল হাল্পুান। হরকাতুল জিহাদ নিষি™ব্দ হলে তারাই ‘জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’ নামে কাজ করেছে। এটাও এখন নিষি™ব্দ।
সহৃত্র জানিয়েছে, আশির দশকের শেষের দিকে টুঙ্গীপাড়া গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা, স্ট^রূপকাঠির ছারছীনা মাদ্রাসা ও ভারতের বিহার রাজ্যের দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়ালেখা শেষ করে পাকিস্টøানে যান মুফতি হাল্পুান। সেখানেই পরিচয় হয় মাওলানা রেজওয়ানের বড় ভাই মুফতি নুমানের সঙ্গে। সেখানে অধ্যয়নরত অবস্ট’ায় দু’জনই অংশ নেন আফগানিস্টøান যু™েব্দ। নব্বই দশকের শুরুতে দেশে ফিরে তালেবানি শাসন প্রতিষ্ঠায় খুবই গোপনে মুফতি হাল্পুান ফরিদপুরে গড়ে তোলেন ‘হরকাতুল জিহাদ’ ও মুফতি নোমান সৈয়দপুরে ‘তাহরিকুল উলামা’।
তাহরিকুল উলামার প্রধান দুই ব্যক্তি দুই ভাই মুফতি নুমান ও মাওলানা রেজওয়ানের সঙ্গে পারিবারিক স¤ক্সর্ক রয়েছে সিলেট কাজির বাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমানের। মাওলানা হাবিবুরের ভাতিজিকে বিয়ে করেন মাওলানা রেজওয়ান। সেই সুবাদে মাওলানা হাবিবুরের স্টেুহভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। আবার মাওলানা হাবিবুরের সঙ্গে নিবিড় সখ্য ছিল মুফতি হাল্পুানেরও। সহৃত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২১ মে সিলেট শাহজালাল মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার আগের দিনও মুফতি হাল্পুানকে মাওলানা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ওই মাজারসহ পুরো সিলেট শহর চষে বেড়াতে দেখা গেছে।
সহৃত্র আরো জানিয়েছে, মুফতি নুমান পাকিস্টøান থেকে ফিরে গ্রামের ধর্মপ্রিয় লোকজনদের ইসলামের দাওয়াতের কথা বলে গড়ে তোলেন একটি তাবলিগ দল। তার ছোট ভাই রেজওয়ান তখন সৈয়দপুর মাদ্রাসার ছাত্র এবং বর্তমান আমির মুফতি নুমান ছিলেন তখন তাবলিগ জামাতের সুনামগঞ্জ শাখার আমির। তখন দু’ভাই ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছেন।
জঙ্গি নেটওয়ার্ক : তাহরিকুল উলামার সঙ্গে জেএমবির শক্তিশালী নেটওয়ার্কের সল্পব্দান মিলেছে। অনুসল্পব্দানে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৩ সেপ্টেল্টল্ফ^র রাতে সিলেটে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া চার জঙ্গি নেতার একজন ছিলেন সৈয়দপুর গ্রামের সৈয়দ নাইম আহমেদ আরিফ। নাইমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল মুফতি হাল্পুানের। ২০০৪ সালে কয়েকবার মুফতি হাল্পুানকে সৈয়দপুর গ্রামে আসতে দেখেছে গ্রামবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষক সমকালকে বলেন, ‘আমি নিজে মুফতি হাল্পুানকে গ্রামের রাস্টøা দিয়ে মুফতি নুমান ও নাইমের সঙ্গে হেঁটে যেতে দেখেছি। দু’জনই তাকে মুফতি হাল্পুান বলে পরিচয় করে দিয়েছেন।’ কয়েকজন গ্রামবাসী জানিয়েছেন, তারা মুফতি হাল্পুানকে রেজওয়ানের আগুনকুনার বাড়িতে রাতযাপন করতেও দেখেছেন।
সহৃত্র জানিয়েছে, নাইম গ্রেপ্টøার হওয়ার পর থেকেই তাহরিকুল উলামার কর্মকা- নিয়ে সন্দেহের সৃ®িদ্ব হয়। সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্টø হত্যাচে®দ্বা মামলায় তাকে গ্রেপ্টøার করে পুলিশ। নাইম এখন সিলেট কারাগারে। সে স্ট^ীকারোক্তিমহৃলক জবানবন্দিতে হত্যাচে®দ্বার কথা স্ট^ীকার করে। তখন নাইমের মুক্তির দাবিতে সৈয়দপুর গ্রামে মাওলানা রেজওয়ানের নেতৃÍে^ মিছিল-সমাবেশ হয়েছিল। গ্রামের মানুষকে জোর করে সেসব মিছিল ও সমাবেশে যোগ দিতে বাধ্য করে তাহরিকুলের ক্যাডাররা।
সহৃত্র জানায়, ২০০৩ সালে টাঙ্গাইলে জেএমবির অস্টú প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষ করে সৈয়দপুর গ্রামে ফিরে চার জঙ্গি কমান্ডার তাহরিকুল উলামার সত্রিক্রয় সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তারা নিজেরাই প্রকাশ্যে গ্রামবাসীকে সে তথ্য জানিয়েছিলেন। চারদলীয় জোটের শাসনামলে তখনো জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে দেশে হৈচৈ শুরু হয়নি। চার কমান্ডার হলেন গ্রেপ্টøারকৃত জঙ্গি নেতা মাওলানা নাইমের ভাই সৈয়দপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র মারুফ আহমেদ, নোয়াপাড়ার আবদুল হামিদের ছেলে একই মাদ্রাসার ছাত্র কিবরিয়া, আগুনকুনার ছিদ্দিক আহমেদের ছেলে ফরহাদ আহমেদ ও সৈয়দপুর মাদ্রাসার ছাত্র নোয়াপাড়ার মনোহর আলীর ছেলে কাউসার আহমদ।
কারাবন্দি জঙ্গি নেতা মাওলানা নাইমের ঘনিষ্ঠ আরো সাত জেএমবি সদস্য আছেন সৈয়দপুর গ্রামে। এরা হলেন পশ্চিমপাড়ার মাওলানা রিয়াজ, নোয়াপাড়ার মাওলানা মনোয়ার, হাফিজ নাদী ও রকিব মিয়ার ছেলে সুমন, আগুনকুনার মাওলানা জয়নুল ইসলাম, আবদুর রশিদ ও ঈশানকোনার মাওলানা আসফাক। সহৃত্র জানায়, মাওলানা নাইম পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে এদের নাম স্ট^ীকার করেছেন। নাইম গ্রেপ্টøার হলে সুমনসহ কয়েকজন প্রায় এক বছর আͧগোপনে ছিলেন। এদের সঙ্গে এখন তাহরিকুল উলামার যোগাযোগ রয়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে তদšø : যুক্তরাজ্যে তাহরিকুল উলামার কর্মকা- সন্দেহের চোখে দেখছে স্ট‹টল্যান্ড ইয়ার্ডসহ সেদেশের বিভিল্পু গোয়েন্দা সংস্ট’া। লন্ডন থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্টøাহিক পত্রিকা ও প্রবাসী সহৃত্র বলছে, যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম প্রবাসী সৈয়দপুরের আগুনকুনা পাড়ার মনির আলীর সঙ্গে আšøর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ‘আল কায়দা’র সল্ফক্সর্ক অনুসল্পব্দান করছে গোয়েন্দা সংস্ট’াগুলো। মনির আলী তাহরিকুল উলামার প্রধান কমান্ডার মাওলানা রেজওয়ানের ঘনিষ্ঠ আͧীয়। প্রায় চার বছর আগে বার্মিংহাম থেকে মনির আলী আল কায়দা গ্র“পের কিছু সদস্যের সঙ্গে আফগানিস্টøান যু™েব্দ গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তার সঙ্গের কয়েকজন কিছুকাল কিউবার গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দি থাকার পর বছরখানেক আগে ব্রিটিশ পুলিশের সহায়তায় লন্ডনে ফিরে আসেন। গোয়েন্দা সংস্ট’াটি মনে করছে, মনির আলীর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে তাহরিকুল উলামার নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ব্রিটিশ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্ট’া যুক্তরাজ্য তাহরিকুল উলামা সমর্থকদের গত এক মাসে কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কড়া নজরদারিতে রয়েছে তাদের তৎপরতা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



