যে মানুষটিকে সব সময়ই হাতের কাছে পাওয়া যেত। ৬৪ বছর বয়সে নিরবেই চলে গেলেন তিনি। যার মূল্য তার জীবদ্দশায় তেমনটা বুঝিনি আমরা, যখন নাগালের বাইরে পরলোকে চলে গেলেন তখন তার অজান্তেই অনেক কিছু জানান দিয়ে গেলেন। গত ২৪ নভেম্বর ভোর পাচঁ টায় লোকান্তরীত হলেন মুক্তিযোদ্ধা রনজিৎ কুমার ধর।
তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সৈনিক, রাজনিতীক ও সমাজসেবক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কন্ঠে ছিল বজ্র, বুকে ছিল আফসোস। ‘‘এখন যৌবন যার, যুদ্বে যাবার শ্রেষ্ট সময় তার’’ আর শ্রেষ্ট সময়েই ২৮ বছর বয়সে যুদ্বে গিয়েছিলেন রনজিৎ। বঙ্গবন্ধু ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে পাক বাহীনির হাত থেকে মুক্ত করতে দেশের তরে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। পাক সেনাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্থানীয় রাজাকাররা যখন মুক্তিকামী বাঙ্গালী ঘরবাড়ী পুড়িয়ে নির্যাতন শুরু করে তখন প্রাণ রক্ষার্থে ৭১ সালের আগষ্ট মাসে ভারতের কল্যানপুর শরানার্থী ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন রনজিৎ। সেখান থেকে যোগদেন মুক্তিযুদ্বে।
কমান্ডার এনামের অধীনে যুদ্ব করেন সীমান্তবর্ত্তী চাম্পারায়, কুরমা ও রাজঘাট চা বাগান এলাকায়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ব করে স্বাধীন করেন দেশ। যুদ্ব পরবর্তী নিজেকে নিয়োজিত করেন যে আদর্শ ও উদ্বেশ নিয়ে যুদ্ব করেছিলেন তা বাস্তবায়নের কাজে। যুদ্ববিধস্ত দেশের ভঙ্গর অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের সংকরসেনা গ্রামের পৃত্রিক জমিতে কৃষি কাজে মনোনিবেস করেন। নিজেকে সমাজের প্রগতিশীল কর্মকান্ডে নিয়োজিত করতে বেছে নিয়েছিলেন আওয়ামী রাজনীতি। মৃত্যু আগ প্রর্যন্ত আওয়ামীলীগ নেতা হিসাবে দেশে ও জনগনের জন্য কাজ করে গেছেন। নিজের শরীরের প্রতি নিয়মকৈানুনের বালাই বোধহীন এই মানুষটি আজীবন অবিবাহীত ছিলেন। পরিদেয় জামাকৈাপরের কোন প্রদর্শন প্রবনতা ছিলনা তার। সস্তা স্যান্ডেল পরেই শহরময় ঘুরে বেরাতেন সাড়ান। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্পূর্ন উদাসিন মুক্তিযোদ্বা রনজিৎ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ চিন্তায় নিজেকে সমাজের জন্য তিল তিল করে ক্ষয় করে গেছেন। মুক্তিযোদ্বা সম্মানী ভাতা ৫০০ টাকাতেই মানবেতর জীবন যাপন কাটিয়ে গেছের তিনি।
অগোছালো জীবনে জীবদশায় মুক্তিযোদ্বা রনজিৎ কুমার ধর (মুক্তি বার্তা নং-১৮৩৭) স্বাধীন দেশে তার প্রাপ্ত সম্মান না পেলেও, মৃত্যুর পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন, রাষ্ট্রিয় সম্মান গার্ড অফ ওনার প্রধান করে তাকে। অনুষ্টানে জেলা মুক্তিযোদ্বা কমান্ডার শফিকুর রহমান, উপজেলা মুক্তিযোদ্বা কমান্ডার এম এ মন্নান সহ মুক্তিযোদ্বা, সুশিল সমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই বীর মুক্তিযোদ্বার মৃত্যুতে তার প্রতি আমার শ্রাদ্বাঞ্জলী।
মুক্তিযোদ্ধা রনজিত্ত কুমার ধর নিরবেই চলে গেলেন....
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।