somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মৌমাছি ও একজন পুরুষ মানুষ (পর্ব-৯)

২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। ঘুম মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষ একে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে ঘটে বিপত্তি। ঘুম থেকে ওঠবার আশা নিয়ে এই নীল গ্রহের মানব-মানবীগণ ঘুমিয়ে পড়ে। হয়তো নতুন একটি সকালের আশায় এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয় না অনেকেরই। তারা সারা রত্রি জাগরণে কাটায়, তারপর এক সময় ঘুমের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে। এসব অতিরিক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন জীবগণ সারারাত্রি অহেতুক জেগে থেকে সকালে ঘুমাতে যায়। আমি একদা সেই দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমি তখন রাত জাগা তারা হয়ে সুদূর আকাশে জ্বলজ্বল করতে চেয়েছি। এই জ্বলুনি কোন কিছু অধিকার করবার জন্য নয়, বরং অধিকার ছেড়ে দেবার জন্য। তখন শুধু বুক ফাটিয়ে চিৎকার করতাম। মন শুধু বলতো, " আমি এখানে আছি, তুমি এসে ডাকলেই আমি তোমায় ধরা দেব...!"
কিন্তু এই নীল গ্রহে তখন এমন কারো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না, যে একজন নির্ঘুম মানুষের বেদনাকে ভাগ করে নিতে পারে।

অনেকের ভাতঘুমের অভ্যাস থাকে। দুপুরে খাবার পর ১০/১৫ মিনিটের জন্য এই ঘুম ঘুমাতে হয়। এখন আমি ভাতঘুমে স্বপ্নে দেখি রোজ। আমার স্বপ্নটিতে আমি পুরুষ মৌমাছি হয়ে যাই। উড়ন্ত চুম্বনে সময় সিন্ধুতে ভাসি, সুগভীর মিলনে লিপ্ত হই। এ মিলন একটি গ্রহকে বাঁচাবার জন্য। টোমেগা গ্রহে বিলিয়ন বিলিয়ন নারী মৌমাছি আছে এবং গ্রহটি বিলুপ্তপ্রায়। সেখানে একটি মানবিক বিবেকসম্পন্ন পুরুষ মৌমাছি প্রয়োজন। সে কারণেই আমাকে এখন বেঁচে থাকতে হয় একটি মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে। ঘুমের আগে সে কারণেই হৃদয়ের সাথে কোন বোঝাপড়া করতে হয় না, কারণ আমি জানি যে মানুষের হৃদয় চিরকালই পাগলামী করেছে, করছে এবং করবে। প্রতিটি মানুষের বুকের খাঁচা হচ্ছে এক একটি পাগলা গারদ।

আর অল্প সময়ই আছে আমার কাছে। তাপর লক্ষ্য পূরণ। তারপর আমার প্রস্থান। মৌমাছটি মাথার উপর ভন ভন করছে। সে আমার সমস্ত চিন্তার মাঝে অংশ গ্রহণ করতে শুরু করেছে। হুট করে আমার মাথায় এতদিনের চেয়ে ব্যতিক্রম চিন্তা ভাবনা দুলে দুলে উঠছে। আজ লায়লী বিষয়ক অসংলগ্ন ও নেতিবাচক চিন্তা মাথার ভেতর ঝাঁক বেঁধে আসছে। কি করলে, আমি লাইলীর সবটুকু বুঝতে পারতাম; লায়লীকে আপন করে পেতে পারতাম? যদিও লায়লীর একজন ভালবাসার মানুষ সব সময়ই থেকে যায়, আমার স্পর্শ পাবার আগে তার স্পর্শ লাইলীকে মোহিত করে। তার জীবন উডন্ত রাজ হংসীর মতো কাঁপতে থাকে, তার হৃদয় পতাকার মতো পত পত করে উড়তে থাকে। আত্মার মাঝে কড়মড় শব্দ হতে থাকে; যেমন শব্দ হয় সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে গহীন বনের পাশে মাথা উঁচু করে থাকা বাঁশ ঝাড়ে!

হয়তো কোন বিশেষ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গেলে আমি লায়লীর জীবনকে আমার জীবিনের সাথে বেঁধে ফেলতে পারতাম। হয়তো সেটা এখনো পারি। কিন্তু এতকাল ধরে আমার চিন্তা-ভাবনাকে তীক্ষ্ম করা হলো, হরমোনের সাগরে হাবুডুবু খেতে হলো, সবকিছুকে ভালবাসার যে শিক্ষা দেয়া হলো এবং সে তালিকায় যৌক্তিকভাবেই লায়লীর নাম সর্বাগ্রে রাখা হলো- সেসব কি মিছেমিছিই?

আমার প্রাণ এখন একটি মৌমাছির কাছে জিম্মি এবং তার দেখানো পথে আমি দ্রুতই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। তারপর এভাবেই লায়লীর মন থেকে আমার মন এবং আমার মন থেকে লায়লীর মন চিরদিনের মত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। অনন্ত কালের জন্য হারিয়ে ফেলবো সুর্যোদয়ের শোভা। হারিয়ে ফেলব ভোরের শিশির। কাঁটায় ভরা বড়ই গাছের ডাল ধরে ঝাকিয়ে দিতে পারবো না। জলপাই গাছের মৃত পাতায় লায়লীর নাম লিখে বইয়ের ভেতর জমাতে পারবো না। পুঁটি মাছের লাফালাফি দাপাদাপি দেখে মন চঞ্চল হয়ে উঠবে না। অতিরিক্ত মরিচ দিয়ে মাখানো ঝালমুড়ি খেতে পারবো না। বট গাছের মাথায় বসে ঘুড়ি ওড়াতে পারবো না। কখনো কোন প্রেয়সীর মুখ আঁকতে পারবো না। আমার দায়িত্ব হবে শুধুই প্রজনন কাজে অংশ নেয়া এবং যতটা সম্ভব পুরুষ মৌমাছির জন্ম দেয়া। কারণ মৌমাছিটি আমায় খবর দিয়েছে, আমি আজ মৌমাছি হবো। এক দিনের জন্য নয়, চিরদিনের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৯:০৫
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×