“ধ্যাতেরিকা” বলে নিপা শাহবাগের আজিজ মার্কেটের দোতলা থেকে সদ্য কেনা ফতুয়ার ছেড়া রশিদ নীচে ছুঁেড় মারল। মাসতিনেকের মধ্যে বৃষ্টির সাথে এভাবে আবার দেখা হতে পারে নিপা ভাবতেই পারে নাই। নিপা অনেকটা ইচ্ছে করে মার্কেটের দোতলা থেকে রাস্তার মানুষ জনের ব্যস্ততা দেখছিল আর হাত দিয়ে ফতুয়ার রশিদ ছিড়ছিল। নিপার পিছনে কিসের যেন একটা হৈচৈ হওয়াতে নিপা কয়েক মূহুর্তের জন্য পিছনের দিকে তাকিয়েছিল। হৈচৈ’র কারন নিপা খুজে না পেয়ে ,যেই সামনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল,নিপা বৃষ্টিকে দেখতে পেল। নিপা কোন এক অজানা কারনে প্রচন্ড অবাক হল। বৃষ্টিকে দেখে তার মনে হল বয়স শুধু যেন নিপার বেড়েছে, সেই চটপটে,মিষ্টি এলাকা কাপানো বৃষ্টি আগের মতনই আছে ।
নিপা তার অতিপরিচিতি ছেলেবেলার কথা মনে করতে চেষ্টা করল।ছেলেবেলায় নিপাদের সিলেটের বাগান বাড়িতে বৃষ্টির আসা যাওয়ায় নিপাদের বাড়ি সরগরম থাকত। সারাদিন হৈচৈ আনন্দে কেটে যেত। নিপার ভাইবোন বৃষ্টির সাথে কী যে মজা করত। নিপার রাগী স্কুল শিক্ষক হুমায়ূন ফরিদী টাইপের বাবা অবশ্য মাঝে মাঝে রাগ দেখানোর ভান করত, কিন্তু বৃষ্টির সাথে নিপার বাবা কেমন একটা অদ্ভুত আচরন করত। যা নিপা অবশ্য কোনকালেই বোঝার চেষ্টা করত না।
সামনের রাস্তার যানযটে আটকে পড়া গাড়ির তীক্ষè হর্নে নিপার বাস্তবে ফিরে আসতে হয়। বৃষ্টির সাথে সামনা সামনি দেখা না হওয়ার জন্য নিপা তাড়াতাড়ি আজিজ মার্কেটের দোতলার ভীড়ে হেটে মিশে যাওয়ার আপরান চেষ্টা করতে লাগল আর আনমনে বৃষ্টিকে ভাবতে শুরু করল।
মাস তিনেক আগে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সুইডেন যাবার জন্য গাড়ি নিয়ে পৌছাতেই নিপার সাথে বৃষ্টির দেখা হয়। নিপা ইচ্ছে করেই বৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিল। সে কারনে আজ নিপার অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। নিপার মনে হল যেদিন রেহান ভাইয়ের কাছ থেকে নিপা ভালবাসার প্রথম ডাক শুনেছিল সেদিন দুপুরে বৃষ্টিকে নিপা প্রথম রেহান ভাইয়ের কথা বলেছিল। সেই থেকে নিপা একা হলেই আর বৃষ্টিকে সামনে পেলেই রেহান ভাই ছাড়া আর কোন কথা হত না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ধীরে ধীরে নিপার সাথে বৃষ্টির দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে কারন নিপার একাকীত্বে রেহান ভাইয়ের আগমন ঘটে। কিন্তু নিপার সাথে বৃষ্টির প্রথম ও সর্বশেষ গভীর জটিলতা হয় সেদিন,যেদিন বিকেলে রেহান ভাইয়ের সাথে মৃদু অভিমান করে বৃষ্টির সাথে কথা বলতে গিয়ে নিপা রেহান ভাইকে বৃষ্টির সাথে দেখে।
এরপর নিপা রেহান ভাইয়ের সাথে আর কখনও কোন যোগাযোগ করে নাই। আর সব বন্ধুর কাছে বৃষ্টিকে সর্বদা অশুভ বন্ধু বলে পরিহাস করত। কিন্তু আজ এতদিন পর নিপা আবার কেন বৃষ্টিকে নিয়ে ভাবছে? পুরোনো সখার কাছে গিয়ে কী বলবে,“সখী ! তুই কী আমায় মনে রেখেছিস?” বৃষ্টিও কী তাকে আলিঙ্গনে চেচিয়ে বলবে,“নিপ্ পা!!তুই!”।
“আপু!ভাল ফতুয়া আছে।”স্বপ্নবাজ দোকানের পরিচিত পলাশ নামের ছেলেটার ডাকে ভাবনার আকাশ থেকে পাতালে নেমে পড়ল। নিপা তার ট্রেডর্মাক মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,“আজ না ভাইয়া।” নিপা আস্তে আস্তে সামনে হেটে চলল। আর তার ভাবনার জালে জড়িয়ে পড়ার তীব্র চেষ্টা করল।
অজানা ভয়ে নিপা কেপে উঠল। বৃষ্টির সাথে নিপার আজ দেখা হওয়াতে নিপা তীব্র অস্বস্তি বোধ করতে লাগল।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নিপার চারপাশ কালো অন্ধকারে ঘিরে আসত লাগল। নিপা কী করবে বুঝে উঠতে চেষ্টা করল। সে কোন আশার আলো খুজে পেল না। নিজে সে দোষারোপ করতে লাগল, আজ কেন সে আজিজ মার্কেটে আসল। নিপা মনে করার চেষ্টা করল সকালে কার মুখ দেখে সে বাসা থেকে বের হয়ে ছিল। অনেক চেষ্টার পর নিপা মনে করতে পারল, সকালে সে উজ্জ্বল শ্যামলা,মিষ্টি গোলাকার নিজের মূখটি আয়নায় দেখে বাসা থেকে বের হয়ে ছিল। প্রতিবারের মত নিপা আবার নিজেকে বকতে লাগলো এবং আবার প্রতিজ্ঞা করল-এরপর ঘর থেকে বের হবার সময় কালো ছাতাটি নিয়ে বের হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



