শ্রীমঙ্গলের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার রাস্তার দুরবস্থা ও মানুষের দুর্ভোগঃ শ্রীমঙ্গলের অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসাবে পরিচিত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এটা নতুন কোনো খবর কিংবা আকস্মিক ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন হতেই এই প্রক্রিয়াটি চালু আছে। শ্রীমঙ্গল স্বাধীন দেশের চায়ের রাজধানী হয়ে উঠবার পূর্বে বিকাশমান এই নগরীতে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার ওপর দৃষ্টি দেয় নাই কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ। ফলে বসুন্ধরায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় নি কর্তৃপক্ষ ও সরকার। অবশ্য বিগত ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একবার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন রাজনৈতিক সফরে শ্রীমঙ্গলে আসলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ঢাকায় ফিরে গিয়েই দৈনিক ভোরের কাগজে এ নিয়ে বিশাল নিব্ন্ধ লিখেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ড্রেইনিং ব্যবস্থা না থাকা, রাস্তার দুরবস্থাসহ নানা সমস্যার কথা জানার পর সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তড়িত গতিতে ব্যবস্থা নিয়ে শুধু রাস্তায় ইট সলিংয়ের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। ঢিলেঢালাভাবে রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলেও সমস্যা তো থেকেই গেল। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাটু পানি।
দেশ স্বাধীন ও শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানীর মর্যাদা পাবার পর আবাসিক এলাকাগুলি বিকশিত হয়ে এলাকাকে আরো সৌন্দর্য ও মর্যাদামণ্ডিত করবে, ইহাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ঘটতেছে সম্পূর্ণ উল্টোটা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার রাস্তার মোড়েই শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ, দি বাডস রেসিডেনসিয়্যাল মডেল কলেজ, দরবারে রহমানপুরী, গাউছিয়া নোমানিয়া আজমিয়া মাদ্রাসা, জামে মসজিদ, শপিংমল, নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যের অফিস, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা, ড্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা ও যানজট এখন এই আবাসিক এলাকার স্বাভাবিক চিত্র। এর ওপর সামান্যবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্কুল-কলেজের সময় ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম, ছিনতাই ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তো আছেই। এই আবাসিক এলাকার বৈশিষ্ট্য ও রূপ ধ্বংস হচ্ছে। এর দায়দায়িত্ব আসলে কার?
বসুন্ধরাকে ২০ বছর মেয়াদের মহাপরিকল্পনায় একটি আদর্শ আবাসিক এলাকার মর্যাদায় গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হোক। এই আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদা ও সুবিধা পূরণ করা হোক। পরিবেশ ধ্বংসসহ বাসিন্দাদের জন্য নানা অসুবিধা, সমস্যা, দুর্ভোগ সৃষ্টি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার রূপ-বৈশিষ্ট্য ধ্বংস করবার দায় কাঁধে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই।
নগর পরিকল্পনার সঙ্গে সর্ব প্রকার নাগরিক সুবিধা, নগরবাসীর স্বাস্থ্য পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষার বিষয়টি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। শুধু আজকের প্রয়োজন নয়, আগামী দিনের প্রয়োজনকে হিসেবে রেখেই নগর পরিকল্পনা করতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুরদর্শিতার নিদারূণ অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবাসিক এলাকার রূপ-বৈশিষ্ট্য ধরে রাখবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব হলে ভয়াবহ পরিণতি রোধ করা কঠিন হবে। কাজেই সামগ্রিক ও সমন্বিত নগরায়ন পরিকল্পিনার অংশ হিসেবেই বসুন্ধরাসহ শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য আবাসিক এলাকার রূপ-বৈশিষ্ট্য বিকাশে পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরি হয়ে পড়ছে মনে করি। কাজটা অসম্ভব নয়। আমি মনে করি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং সরকার দৃঢ় ও অটল মনোভাব গ্রহণ করলে একটু দীর্ঘ মেয়াদে হলেও অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আর যাহাই হউক স্থায়ী ড্রেইনিং ব্যবস্থা ও রাস্তা সংস্কার করা অসম্ভব নয়। অন্তত শ্রীমঙ্গলের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাতে আবাসিক এলাকার ন্যূনতম রূপ-বৈশিষ্ট গড়ে তোলা যায়, সেই ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করা অবশ্যই জরুরি বলে আমি মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



