somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মেংগো পিপোল
আজ কাল নিজেকে আমার অচেনা লাগে। চেনার জন্য নিজের চেহারায় হাত বোলাই। বোয়সের ছাপ পরা চেহারা জানান দেয়- সময় হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে দিন দিন, একটু একটু করে।

দাম্পত্য বা সপ্নের শহর।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :














আমার মাথার ভেতর নাচে হাজার খানেক কষ্ট। ছোটবেলার সেই এইট নাইনের যুগের প্রেম হীন, এক সাধারন জীবন যাপন বা পথ হাটা সব কিছুই মিস করি। নদীর পার বা ধান খেত। উড়ে যাওয়া বুন হাস-বুন বক অথবা এক ঝাক চিরো সবুজ টিয়ের লাল ঠোট আমাকে পিছনে ডাকে আয়-আয় বলে। কিন্তু যাওয়া যায় না, নগরের বিষাক্ত বাতাসে নিঃস্বাস নেবার জন্য আমাকে থেকে যেতে হয়, সংসার আছে। আছে জীবন। শহুরে নাগরীকতা কি আর গ্রামে মেলে? সেই বাসনায় ঢাকা থাকি, কোটি মানুষর স্বপ্নের শহর-প্রানের শহর ঢাকা। মনে আছে আমার, মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা এসেছিলাম টিনের সুটকেস নিয়ে, চাচার বাসায় ইমিগ্রেশন নিয়ে। সেই থেকে আমি বেড়ে উঠেছি। বেড়ে উঠতে-উঠতে পাঁচফিট পাঁচইন্চী হবার পর আমার বাড়া থেমে গেছে, থামেনি ঢাকা- বেড়েই চলছে অবিরাম, দৈর্ঘে-প্রস্হে-উচ্চতায়। অসচ্ছল জীবনের-স্বচ্ছলতার জীবন জীবিকায় এই শহরের নেশা ছাড়ে না আমায়। কেবল গ্রামের নির্মলতা আমাকে পিছু ডাকে আয়-আয় বলে। নিরবে বুকের ভেতর হু-হু করে, মাথার ভেতর হূদয়ের দরজায় কড়া নাড়ে, আমি নিথের হয়ে থাকি। ঝিমমেরে পরে থাকি চিরো চেনা এই স্বপ্নের বা দুঃস্বপ্ন গজিয়ে ওঠা কোটি মানুষের শহরে।সন্ধ্যা দীঘির জ্বলের সোদা গন্ধ আর-ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ আজকাল গুলিয়ে যায় আমার।

সারা দিনের ফুটপাথ হীন এই শহরে এখন ফুট পাথে কোন দোকান নেই। পড়ে আছে সারি সারি মানুষের শরীর, ঘুমন্ত অর্ধ ঘুমের মানুষেরা বা ছিন্নমূল। আমার ও মাঝে মাঝে মনে হয় মূল ছিড়ে হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলে খুব একটা খারাপ হতো না। বুম বলে উধাও হয়ে যাওয়া। উপরে নিচে বা একদম গভীরে যতটা গভীরে আর কোথাও খুজে পাওয়া গেলো না আমাকে। আমি হেটে বেড়াই সোডিয়ামের অস্বচ্ছ ভৌতিক আলোয়, রাস্তা গুলোকে মনে হয় আমার ফেলে আসা গ্রামের ছোট নদী। আমি সেই পথে হেটে বেড়াই, ভেসে চলা কচুরীপানার মতন। মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি জীবনের রিপিটেশন করা যেতো! আবার সেই থপ-থপ করে হাটা আমি, আবার বেরে ওঠা, আবার বড় হওয়া, নাকের নিচে মোচ গজানো- প্রথম সেইভ। পাশের বাড়ীর "আফসানাকে" বলতে পারতাম তুই আমাকে বিয়েকর- নাহলে বড় হয়ে তোর যার সাথে বিয়ে হবে, তার আরো একটা বৌ থাকবে। সুখ খোজার জন্য আমার কাছে তোর ফিরে আসতে হবেই। তার চেয়ে, এই এখনই বিয়ে করে ফেল আমাকে। তোর জামাই তোকে বিয়ে করবে টাকার লোভে।

এসব ভাবনা সাথে নিয়ে আমি হেটে বেড়াই "মুট" হয়ে যাওয়া বা নিরব নগরের পথে-পাথে। এমন সময় কেউ একজন কাতর স্বরে আমাকে বলে "এই ফোনটা একটু ধরো না," আমি পকেটে হাত দেই, অদ্ভুত এক "রিংটোন" আমার কলিগ দিয়ে দিয়েছে। খুব না কি চলছে রিংটোন হিসেবে এই নারীর কন্ঠ। আফসানা ফোন করেছে। ওপাশ থেকে একটা অনুনয়ের সুর। তুমি ব্যাস্ত নাকি?
-না।
কি করো?
-তোমার সাথে কথা বলি।
কথা বলা ছাড়া আর কি করো?
-বেদুঈন হয়েছি। শহরের পথের বেদুঈন, একা হাটছি পথে পথে।
ভয় করেনা তোমার, একা হাটতে। কত বিপদ হতে পারে!
-বেদুঈনের আবার ভয় কি?
হেয়ালী করো কেনো?
-হেয়ালী না, যা সত্যি তাই বলেছি।
জীবনে যে কি সত্য- কি মিথ্যা, আমরা কেউ জানিনা। যা হোক তোমাকে যে ঢোরা সাপটার ব্যাপারে খবর নিতে বলে ছিলাম তার কি করেছে?
- এখন আর খবর নিয়ে লাভ কি? বিয়ের আগেতো খবর নাওনি।
এখন আর খবর- মানে কি? আমার জীবন কি শেষ হয়ে গেছে, নাকি? মানুষ এখন আর এক জামাইর অপেক্ষায় বসে থাকেনা। প্রয়োজনে এরে আমি আজকে ডিভোর্স দিবো, কোন উল্ট-পাল্টা ব্যাপার থাকলে। তুমি খালি বলো কোন খবর পেয়েছো কি না?
- তোমার জামাইর আর একটা বিয়ে আছে। তার সেই বৌর কাছে সে মোটেও ঢোরা সাপ না। পুরা কোবরা। একটা ছেলেও আছে, তোমার স্বামির মতন কালো না, প্রিন্সের মতন চেহারা।
তুমি আমাকে বিয়ে করবা রাতুল?
-ময়না, এমন তো হয় না, আকাশ কান্দে বৃষ্টি নামে, পাহার তারে সয়না।
আবার হেয়ালী করছ? আমি সিরিয়াস।
- তুমি আমাকে ভালোবাসোনি? প্রেম করতে চাওনি আমার সাথে?
হাজার মানের কাছে প্রশ্ন রেখে একটি কথাই শুধু জেনেছি আমি, পৃথীবিতে প্রেম বলে কিছু নেই।
- তুমি কি মদ-গাজা কিছু খেয়েছো নাকি?!
আমরা সবাই কেউ না কেউ কিছু না কিছুর নেশায় আছি, আমি আছি টাকার নেশায়। টাকার মাদকতার সামনে আমার কাছে আর কিছু নেই।
- আমি তোমাকে বিয়ে করব। কত টাকা নেবে, বলো?
আমার বৌকে খাওয়াবে কে? তোমার বাবা!
- বাবাকে এর মধ্যে টেনে আনছো কেন?
তোমার বাবাই তো আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দিলোনা, আমি বেকার।
-প্রত্যেক বাবা তাই চায়। তুমি এখন কৈ?
নীলক্ষেত।
-একটা রিক্সা নিয়ে সোজা "সোবাহান বাগের" আমার ফ্লাটে চলে আসো।
তোমার স্বামী বাসায় নেই, তুমি থাকো এক্লা ফ্লাটে আমি সেখানে এসে কি করব?
- তোমার কিছু করা লাগবে না, যা করার আমিই করব।
আমার জন্য তোমার কিচ্ছু করা লাগবেনা। আমি আমার বৌকে অনেক ভালোবাসি।
- আমাকে বাসো না?
এক সময় হয়তো বাসতাম, এখন আর তোমার জন্য ভালোবাসা নেই। তোমার জন্য এখন আমার কাছে যা আছে তা মায়া। "মায়ার বাধনে বেধেছো সখা আমার হস্ত তোমার মনে।"
এটা কার কবিতার লাইন বলো তো?
-জানিনা।
দাড়াও বৌকে ফোন করি ও বলতে পারবে ভীষন মেরিটরিয়াস মেয়ে। ওকে না পেলে আমার জীবন অর্ধেক থেকে যেত।
- যদি তখন বাবা তোমার সাথে আমার বিয়ে দিতো, তাহলেও কি তুমি এই একই কথা আমাকে বলতে?
নাহ, অবস্হা দৃষ্টে যা মনে হচ্ছে, তোমাকে বিয়ে করলে আমার জীবন পুরটাই শেষ হয়ে যেত। রাখি বৌকে ফোন করব, লাইনটা মাথার ভেতরে ঘুরছে। এটা কি রবিন্দ্রনাথের কবিতার লাইন নাকি নজরুলের।



হ্যালো। ঝুমা "মায়ার বাধনে বেধেছো সখা আমার হস্ত তোমার মনে।" এটা কার লেখা কবিতর লাইন?
-তুমি কখন আসবা?
আসবো আগে বলো এই কবিতা কে লিখেছে। এটা যতখনে না মনে করতে পারছি ততখনে কিছুই করতে পারছিনা।
-তুমি কি ফুটপাথে বসে আছো?
হ্যা।
- এটা তোমার লেখা কবিতার লাইন। তুমি তাড়া-তাড়ি বাসায় আসো। বাবুর খুব জ্বর, বাবা- বাবা বলে ডাকছে। ওরতো জ্বরটা কমছেই না। কালকে তো ব্লাড টেষ্টের রিপোর্ট দিবে। কি জানি কি হয়?
তুমি আসো তো তাড়া তাড়ি।
আমার আসতে ইচ্ছে করছেনা। জ্বর কমে যাবে কালেকে। আমি একটু ঘুরে আসি।
-রাত ১২টা বাজে, রাতুল।
একটু ঘুরে আসিনা, এমন করছ কেন?
-তোমাকে আমি বিশ্বাস করেছি রাতুল, সব সময়। নিজের চেয়েও বেশি। তুমি কোথায় যাও কি করো আমি জানিনা। তবে ইদানিং আমার একটা ব্যাপার ভালো লাগছেনা। তোমাকে আজকাল কেমন জেনো দুরের মনে হয়। আমি জানিনা কেনো? তবে আমার ধারনা তুমি এর উত্তরটা জানো।
আচ্ছা রাখি, বলে ফোনটা কেটে দেয় রাতুল। ছেলের রক্তের রিপোর্ট সে আজকেই পেয়েছে। তার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা, প্রচুর টাকা দরকার, ছেলেটাকে বাঁচাতে।
পাশ দিয়ে একটা খালি রিকশা চলে যেতে থাকে, রাতুল রিক্সাটাকে ডাকেই এই খালি যাবে?
-কৈ যাইবেন?
সোবাহান বাগ।
রাতুলের সাথে ঝুমার প্রথম দেখা হয়েছিলো ডাচের সামনে। একটা লাল রংয়ের জামা পড়ে চা খাচ্ছিলো। মাথায় তেল দিয়ে পাটি পাটি করে চুল আচড়ে ছিলো ও

"মুনিয়া" ঝুমার বান্ধবী বলে ছিলো- ঐ লাল জামা পড়া ছেলেটাকে দেখ ও এবার অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হয়েছে। ঝুমা বলে ছিলো তাতে কি? না তেমন কিছু না এমনিতেই বললাম। দেখতো পুরা জোকারের মতন লাগছে। এযুগের ছেলে পরেছে লাল জামা, যেখানে অন্যরা স্পাইক করে এ তেল দিয়ে কি ভাবে চুল আচড়েছে, দেখ। সেই ছেলে হুট করে সাহসি হয়ে গেলে। হঠাৎ ঝুমার সামনে দাড়িয়ে বলল-

"তোমার মনের ভেতর আমায় সাতার কাটতে দাও,
আমি তোমায় যন্ত্রনাহীন প্রেম দেবো, বাতাসে দিবো শুঘ্রান।"

ঝুমা তো রেগে আগুন। আপনি তো মহাফাজিল এভাবে মেদের টিজ করেন।
রাতুল বলে ওঠে মাফ করবেন, কবিতা টা কার লেখা মনে করতে পারছিলাম না। আপনি কি একটু বলে দিবেন।
-আমি জানিনা। তবে এ ধরেন কোন লেখাই কোন পরিচিত কবির বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় কবিতাটা আপনিই লিখেছেন, লিখে আমাকে শুনিয়ে নিজের ইমেজ বানানোর চেষ্টা করছেন।
রাতুল কিছু বলে ওঠার আগেই ঝুমা জানতে চেয়ে ছিলো আপনার কি এয়ারফ্রেশনারের ব্যাবসা আছে নাকি?
রাতুল বললো কেন?
ঐ যে বললেন বাতাছে ছড়িয়ে দেবেন সুঘ্রান।

কি যেনো হয়েছিল সেদিন ঝুমার। সারা রাত ঘুম হয়নি, এই ডিজের যুগে কেউ কবিতা নিয়ে ভাবে ভাবতেই অবাক লাগে। ছেলেটা আর কিছু না হোক স্পষ্টভাষি। সরাসরি এসে বলেছে তোমার মনে আমায় সাতার কাটতে দাও। ঝুমা মনে মনে বলল আমি তোমার মনে সাতার কাটব না রাতুল ডুব দেব।

হুট করেই বিয়ে হয়ে গেলো ঝুমা-রাতুলের, একটা ছেলে হয়েছে, ছেলের নাম "টংকু" অদ্ভুত নাম। নাম রেখেছে রাতুল। ঝুমা খুব চাপা চাপি করেছিলো, কি নাম রাখো এগুলা? রাতুল বলেছিল আমার ছেলে বিজ্ঞানী হবে। তাই প্রফেসার শংকুর সাথে মিলিয়ে রাখলাম টংকু।

(জানি কাহীনিটা এখানে বাংলা সিনেমা হয়ে গেলো। সিনেমাও তো জীবন থেকে নেয়া, অনেকেই ধারনা করে ফেলেছেন কি হবে গল্পে। নায়ক এখন যাবে তার পুরানো প্রেমীকার কাছে, তার কাছ থেকে বিয়েকরার বদলে টাকা নিবে হবে টান পোড়ন। সেই টাকায় চিকিৎসা হবে নায়কের পুত্রের। যারা গল্পের প্লটটা এভাবে ভাবছেন, তাদের কে বলছি- আর একটু পড়ুন। এই অস্হির সময়ের সব যোগ-বিয়োগ এতো সহজে মিলে যায়না।)

ঝুমা বসে আছে হাসপাতালেরর ওয়েটিং চেয়ারে, রাতুল গেছে ডাক্তারে সাথে কথা বলতে। ডাক্তার রাতুলকে ডেকে নিয়েছে। কে জানে বাবুর কি হলো? সামন্য জ্বর হলো ছেলেটার, তার পরেই এক গাঁদা টেষ্ট করালো, ডাক্তার! বিপদেরর সময় মাথা গরম করতে নেই। মা বলেছেন বিপদে পরলে আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফু দিতে, তাতে বিপদ চলে যায়। ঝুমা ঠান্ডা মাথার মেয়ে। তবুও সে ভেতরে ভেতরে একটা কাপন অনুভব করেছে। কি হলো বাবুর। রাতুলটাও ডাক্তার চেম্বার থেকে বের হচ্ছেনা। গত কালকে ও রিপোর্ট দেখিয়েছে ডাক্তার কে। আজ আবার ডাক্তার ডেকেছে বাবুকে সহ। রাতুল কিছুই বলছেনা। ও রিপোর্ট দেখতে চেয়েছিলো। বলেছে ডাক্তার নাকি রিপোর্ট রেখে দিয়েছে। রাতুল ওর সাথে কখোন মিথ্যে বলেনা। তবে এই ব্যাপারটায় বলছে।

ঝুমা টংকুর পাশে বসে আছে। টংকুকে এডমিশন দিয়ে দিয়েছে ডাক্তার, আরো কিছু পরীক্ষা করতে বলছে। রাতুল টংকুর পাশে দাড়িয়ে আছে। ওর চোখে জ্বল। বুকের ভেতর এক ধরনের কষ্টের অনুভুতি। ঝুমা রাতুলের হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসে। স্পষ্ট চোখে তাকায় রাতুলের চোখে। টংকুর কি হয়েছে রাতুল?
-ওর লিউকে মিয়া।
তাহলেতো প্রচুট টাকা লাগবে।
-হুম।
আমরা কি করবো এখন?
- আমি কালকে সোবাহান বাগে গিয়েছিলাম, ওখানে বড় চাচা থাকেন। গ্রামে বাবার নামে কিছু জমি আছে, সেগুলো বিক্রি করার জন্য।
তুমি কি কাল রাতেই রিপোর্ট গুলো জানতে পেরে ছিলে?
-হ্যা।
কেনো সব কিছু একা-একা সহ্য করো? কষ্টের ভাগ কিছুটা আমাকে দিলেওতো পারো?
আমি তোমাকে কষ্ট দিতে পারবোনা ঝুমা। আমি তোমাকে আর টংকু কে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।

রাতুলের ফোনটা আবার কাতর স্বরে বলে ওঠে -এই ফোনটা একটু ধরো না, আফসানা ফোন করছে, রাতুল নাম্বারটা দেখে ঝুমার কাছ থেকে কিছুটা দুরে গিয়ে বলে,
হ্যালো
-হ্যা, হেলেইতো আছি। তোমার কাল রাতে আসার কথা, তুমি এলেনা কেন?
আফসানা আমার খুব বিপদ।
-হেয়ালি করবেনা, রাতুল।
আফসানা আমার ছেলেটার ব্লাড ক্যন্সার।
-আবার হেয়ালি করছো।
পিতা কখোনো পুত্রের জীবন নিয়ে হেয়ালি করেনা।
-তুমি কি সিরিয়াস?
হ্যা।
- বলো কি? আহারে। কি জেনো নাম রেখেছো ওর?
টংকু।
- অনেক টাকা লাগবেতো, তাহলে।
হুম।
- কি করবে এখন? দেখি গ্রামে বাবার কিছু জমি আছে সেগুলো বেচে দেবে।
ভালো তো তাহলে আমার কাছে বিক্রি করে দাও। টাকা যেটা লাগবে তুমি কালকে এসে নিয়ে যেও। তোমাকে একটা খবর দেয়ার কথা ভাবছিলাম থাক অন্য সময় বলবো। তোমার মন ভালো নেই। রাখি।

ঝুমার ব্যাপারটা ভালো লাগেনা, রাতুল তার কাছে কিছু লুকাচ্ছে, সে তাকে ঠাকাচ্ছে নাতো। এই মানুষটাকে কোন কিছু দিক- বিদিক চিন্তা নাকরে ধুম করে বিয়ে করে ফেলেছিলো ঝুমা, সেই মানুষটা তাকে ঠাকালে সে বাচতে পারবেনা। সে নিজে স্পষ্টবাদি এবং সব কিছু ধুম করে করে ফেলতেই পছন্দ করে সে। সব কিছু।

আফসানা বসে আছে রেজিষ্ট্রি অফিসে, অনেকটা অস্হিরতার মধ্যেরাতুল দলিলে সিগ্নে চারটা করেদিলো। ওর মনটা খারাপ যে জমিটুকু আফসানা কিনে নিলো সেটা আফসানার বাবা নেবার জন্য বহু আগে রাতুলের বাবাকে চাপ দিয়েছিলো। এই মেয়েটা তার বিপদের সুযোগ নিয়ে জমিটা কিনে নিলো, ভাবতে রাতুলের খারাপ লাগে খুব। নাহ ওর সাথে আর যাইহোক কথা বলা যায়না।
টংকুর আজকে "বোনম্যারো" নামে একটা টেষ্ট করানো হবে, ডাক্তার বললো এটাতে নাকি বোঝাযাবে কোন টাইপের ক্যান্সার? রাতুল টাকা গুলো নিয়ে হাসপাতালে ছুটলো।

দুই মাসা পরঃ
পিয়ন রাটুলের টেবিলের উপর একটা খাম রেখে গেলো। উপরে লেখা "মায়ার বাধনে বেধেছো সখা আমার হস্ত তোমার মনে।"

রাতুল খামটা খুলোল, একটা চিঠি আর কিছু কাগজ

রাতুল,
ভালা বাসা নিও, নাহ থাক শুভেচ্ছা নিও। এখনকার সময়ে কেউ আর কাউকে চিঠি লেখেনা, কিন্তু সেই সতেরো আঠারোর যুগে তোমার কাছ থাকে একটা চিঠি পাওয়ার জন্য মন কেমন করতো। তুমি কেবল এসে দাড়িয়ে থাকতে আমার বাড়ীর সামনে, ভালো বাসার এক অদ্ভুত বন্ধনে আটকা পরে গিয়েছিলাম আমি। বাবা গোল বাধালো, বললো তোমাকে বিয়ে করতে চাইলে উনি নাকি তোমাকে চোর বানিয়ে পিটিয়ে মারবে, পারতেনও। গ্রামের চেয়ারম্যানরা সব পারে। বাদ দেও সংসারতো আমার করা হলো না, তুমি ভালোই আছো। একটা ফুট ফুটে ছেলে তোমার। ওর এখন ফুরিয়ে যাবার সময় না, খামটার মধ্যে কিছু কাগজ, আর দলিল আছে, তোমার কাছ থেকে জমিটা কিনে আমি টংকুর নামে দিয়ে দিয়েছি। আর আমার বাবার রেখে যাওয়া সব টাকা পয়সাও আমি ওকে দিয়ে দিয়েছি। ভাবছো আমি খাবো কি? আমি চলে যাচ্ছি ইউরোপের কোন দেশে। জায়গার নাম বলবোনা, আমি তোমার সংসারে ভাংয়ন চাইনা। ভালো থেকো। চিরো জীবন যাকে খারাপ জেনেছো সেই মানুষটা হঠাৎ করে একটু বেশি ভালো হয়ে গেলো, না! তোমার মধ্যে যেমন একজন কবি থাকে, আমার মধ্যে তোমার মতন একজন ভালো মানুষ থাকে। ভালো থেকো
আফসানা।

রাতুল জেল খানার গারদে বসে আছে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আফসানা কে খুন করার অপরাধে। আফসানা তার সোবাহান বাগের ফ্লাটে খুন হয়েছে। মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। পুলিশ প্রথমে তার স্বামীকে ধরে ছিলো, সম্পত্যি হাত ছাড়া হওয়ার ক্ষোভে হয়তো খুন করা হয়েছিলো আফসানা কে। পরে ছেরে দিয়েছে, কারন পুলিশের কাছে আফসানার স্বামী বলেছে আফসানার সব সম্পত্যি রাতুল তার ছেলের নামে লিখিয়ে নিয়ে তাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে, আর তাছাড়া সে খুনের সময় ব্যাবসার প্রয়োজনে ভারতে ছিলো। তার কাছে প্নেনের টিকিট আছে, এছাড়া রাতুলের সাথে নাকি আফসানার অবৈধ সম্পর্কও ছিলো, পুলিশ রাতুলের মোবাইলের ফোনকলের লিষ্টে আফসানার নাম্বার পেয়েছে, এ ছাড়া আফসানার ফোনে সর্ব শেষ কলটি রাতুলেরই করা এবং ঘটনার দিন রাতুলের মোবাইলের অবস্হানও সোবাহান বাগ এরিয়াতেই ছিলো, এটাও নিস্চিত করতে পেরেছে।

শেষ কথাঃ আফসানার লিখে যাওয়া চিঠির কল্যানে মুক্তি পেয়েগেছে রাতুল।পুলিশ ঝুমা কে ধরে নিয়ে গেছে। রাতুলের ধারনা খুনটা ঝুমাই করেছে, ঝুমার একটা খুব বাজে অভ্যাস আছে, যেকোন জিনিস হুট করে করে ফেলা। রাতুল চেয়েছিলো আফসানার ব্যাপারটা ঝুমার কাছে স্পষ্ট করতে, কিন্তু টংকুটা অসুস্হ থাকায় সুযোগ হয়নি, ঝুমাকে সব বলার। ঝুমাটা মনে হয় তার মোবাইলের কথা বলার সন্দেহ থেকেই অঘটনটা ঘটিয়েছে। কারন ঘটনার দিন রাতুল তার মোবাইলটা খুজে পাচ্ছিলোনা, অনেক খোঁজার পর মোবাইলটা ঝুমার ভ্যানিটি ব্যাগে পেয়ে ছিলো সে। আর পুলিশও ঘটনার দিন তার মোবাইলের অবস্হান পেয়েছিলো সোবাহান বাগে। সব হারিয়েও রাতুল কে ডাক্তার একটা ভালো খবর দিয়েছে, টংকুর অসুখটা কিউরএবল, কারন অল্প বয়সে রোগটা ধরা পরায় সে সেরে উঠবে।


মুখবন্ধঃ গল্পটা একপ্রকারের ধাক্কার মতন দিয়েছি আমি সেটা জানি, অনেকে আমার উপরবিরক্তও হবেন সব তো ঠিক ছিলো আফসানা চলে যাচ্ছিলো, তাহলে ঝুমা কেনো খুন করবে আফসানাকে। প্রিয় পাঠক সন্দেহ, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে আর যাই হোক সন্দেহর বিষ ঢুকে গেলে মৃত্যু তো অতি তুচ্ছ ঘটনা আরো বড় কিছু হয়ে যেতে পারে। লেখার স্হান পাত্র এবং কাল সবই কাল্পনিক। তবে সন্দেহ নামের বিষাক্ত শব্দটি বাস্তব।

ছবিঃ গুগোল।


ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ

View this link

আমার রিসেন্ট একটি লেখাঃ
"সি ইউ হানি" বা সবুজ আলোর লাল ট্যাবলেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৮
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×