কাবুলের রাস্তায় এই সেদিনও ঘুরে ঘুরে মানচিত্র বিক্রি করত। সেই ছেলে যাবে যুক্তরাষ্ট্রে, অস্কার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। ফাওয়াদ মোহাম্মদি জীবনে এমন পরিবর্তন কখনও স্বপ্নেও দেখেনি অথচ তা-ই হতে চলেছে। ফাওয়াদের বয়স মাত্র ১৪। আফগানিস্তানের খুব গরিব ঘরের ছেলে।
বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ফাওয়াদি পরিবারের সবার সঙ্গে একটু খেয়ে-পরে বাঁচতে নেমে পড়ে কাবুলের চিকেন স্ট্রিটে। শুরুতে বিক্রি করত চুইংগাম। তারপর একটা সময় শুরু করে মানচিত্র আর অভিধান। ভারি মিষ্টি ছেলে। মুখে সবসময় লেগে থাকে দুষ্টুমির হাসি। চিকেন স্ট্রিটে সবসময় বিদেশিদের আনাগোনা। তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ইংরেজিটাও বেশ শিখে নিয়েছে। এখন তাই ফাওয়াদ শুধু খুদে ফেরিওয়ালা নয়, চিকেন স্ট্রিটে আসা বিদেশিদের বন্ধু, কখনও কখনও দেহরক্ষীও।
হঠাত্ একদিন ওর সঙ্গে দেখা যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র পরিচালক স্যাম ফ্রেঞ্চের। একটু কথাবার্তা, তাতেই ফাওয়াদকে ভালো লেগে যায় ফ্রেঞ্চের। ‘বাজকাসি বয়েজ’ নামে যে ছবিটি করতে চান, সেটার জন্য তো এমন একটি ছেলেই খুঁজছিলেন! তা বিনাকষ্টে পেয়ে গেলে ছাড়বেন কেন? ছবিতে অভিনয়ের জন্য ফাওয়াদকে নিয়ে নেন ফ্রেঞ্চ। ফাওয়াদের জীবনটা স্বপ্ন হয়ে যায় তখন থেকেই।
এবার অস্কারে বেস্ট অ্যাকশন শর্ট ফিল্ম ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছে ‘বাজকাসি বয়েজ’। ছবিতে ফাওয়াদ অভিনয় করেছে কাবুলের হতদরিদ্র পরিবারের এমন এক কিশোরের চরিত্রে, যে কিনা স্বপ্ন দেখে বাজকাসি হওয়ার। বাজকাসির কাজ হলো, ঘোড়ার পিঠে চড়ে একটা খেলায় অংশ নেয়া। খেলাটা পোলো’র আফগান সংস্করণ। পোলোয় বল থাকে আর এখানে বলের জায়গায় থাকে মাথাকাটা ছাগল। কারও কারও কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমন একটা খেলা আফগানিস্তানে হয় সত্যিই।
ছবিতে ফাওয়াদ বাজকাসি হলেও বাস্তব জীবনে তার স্বপ্ন বৈমানিক হওয়া। অস্কারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে জীবনে এই প্রথমবারের মতো ফাওয়াদও বিমানে উঠবে। অচিন্ত্যনীয় এ স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি চলছে এখন। জামাকাপড় কেনা শেষ। তাই বার্তা সংস্থা এএফপির ক্যামেরার সামনে আফগান এ কিশোর বসেছিল চামড়ার জ্যাকেট আর জিন্স পরে। দেখে বোঝার উপায় নেই এ ছেলে ক’দিন আগেও ময়লা কাপড়ে কোনোরকমে লজ্জা নিবারণ করে কাবুলের রাস্তায় মানচিত্র বিক্রি করেছে।
ফাওয়াদ এখন আর মানচিত্র বিক্রি করার কথা ভাবছেই না। ওর চোখে এখন এতদিন যে দেশটাকে শুধু মানচিত্রেই দেখেছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার স্বপ্ন। বুধবারই স্বপ্ন পূরণ হবে তার। নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পর থেকে শুরু হবে অস্কার অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


