somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিথ্যার ফুলঝুরি! ~মাতৃত্ব।

০২ রা জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজানের সময় হয়ে গেছে, এখন তুই কই যাস?

(বাসায় বাচ্চা থাকলে লেখাটা পড়তে পারেন।)

কথার জবাব না দিয়ে ইফতার সামনে রেখে উঠে গেলাম। মেজাজ খুব গরম হয়ে যাচ্ছে। এক বাটি চিনি ফ্লোরে ফেলে দিয়ে দৌড়ে ঘরে চলে গেলো জান্নাত। ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছি আম্মুর কণ্ঠস্বর আবারো কানে বাজলো, ওরে মারিস না কিন্তু...


~ছোটখাটো ভুলের জন্য বাচ্চাদের মারাটাকে আমি কখনো সাপোর্ট করি না। এটা ওদের শিখার বয়স। আমরা এখন ওদেরকে যেভাবে ট্রীট করবো ওরা সেই মনস্তাত্ত্বিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে। আমাদের শেষ বয়সে ওরা আমাদের সাথে ঠিক তেমন ব্যবহারটাই করবে যেমনটা আমরা এখন ওদের সাথে করছি, ওদেরকে শিক্ষাচ্ছি। আমাদের উচিৎ হবে বরং প্রতিটি ভুল সুন্দর করে ওদেরকে ধরিয়ে দেওয়া, কিভাবে কাজটা করলে ভুল হতোনা সেটা শিখিয়ে দেওয়া। তবে একেবারেই যে শাসন করা যাবে না সেটা বলছি না, তবে উপযুক্ততা বুঝতে হবে। আমি কাকার ঘরে ওকে মারতে যাচ্ছি না, আমি যাচ্ছি অন্য একটা ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটাতে, একটা বিষয় ধারণা করছি হয়তো তেমনটাই ঘটে থাকতে পারে-

কেউ কিছু বলার আগেই আমি জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে বললাম, 'তুই যে এক বাটি চিনি ফ্লোরে ফেলে দিয়ে দৌড় দিলি এটা কি ঠিক করলি? বাটিতে আম্মু চিনি দিছে, তুই তো বাটিটা আগে শক্ত করে ধরবি। তা না করে দৌড় দিলি আর হাত থেকে বাটিটা পরে গেলো। আম্মু যে তোরে ডাক দিছিলো, তোরে তো বকা দেওয়ার জন্য ডাক দেয় নাই, আবার চিনি দেওয়ার জন্য ডাক দিছিলো। আর তুই সেটা না শুনে চলে আসলি।'


জান্নাতের বড় বোন বললো, অয় চিনি ফালাইয়া দিয়া আসছে আর ঘরে এসে বলতেছে জেঠী নাকি এতোটুকু চিনি দিছে (বাটিতে অবশিষ্টাংশ যা ছিলো সেগুলো দেখিয়ে)। কথাটা বলেই ওকে মারতে গেলো, কেন ও মিথ্যা কথা বলছে। আমি নিষেধ করায় অবশ্য শেষ পর্যন্ত মারে নি।


সারাদিন রোজা থাকার পর শরবত বানানোর জন্য কারোর কাছে চিনি চাইলে সে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না দেয় তাহলে এটা খুব খারাপ বিষয়, যে কারোরই রাগ হবে। এক টানা তিনমাস বাড়িতে অবস্থান করায় গ্রামের মানুষের চিন্তাধারা কেমন হতে পারে সেটা আঁচ করে ফেলেছি। কোনো কারণে ঝগড়ার সূত্রপাত হলে এই ক্ষুদ্র বিষয়টা অনেক বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। তাই ভুল বুঝাবুঝি যাতে না হয় সেজন্য বিষয়টা ধরিয়ে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিলো। যাই হোক সে অন্য প্রসঙ্গ, ঘরে ফিরছি আর ভাবতেছি বাচ্চারা মিথ্যা বলে কেন-

~শারীরিক কষ্টকে সবাই ভয়। অনেক মানবাধিকার সংস্থা রিমান্ডের বিরোধিতা করছে। তাদের যুক্তি হলো, শারীরিক কষ্ট লাঘব করানোর জন্য কেউ অপরাধ না করেও অপরাধ স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। অপরাধের স্বীকারোক্তির জন্য পরবর্তীতে তাকে কি কষ্ট ভোগ করতে হতে পারে সেটা বিবেচ্য নয়, ঠিক ঐ মুহূর্তে ব্যাথার তীব্রতা থেকে বাঁচতে সে সেটা স্বীকার করে ফেলে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে থাকে-


আমাদের আচরণে শিশুদের অচেতন মনেই এটা সেট হয়ে যায় যে, আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি তাহলে আমাকে শারীরিক কষ্ট ভোগ করতে হবে, হোক সেই ভুলটা ইচ্ছাকৃতভাবে করি কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে। একটা দু'টো অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তারা এটা বুঝতে পারে, যদি সত্যকে আড়াল করে মিথ্যা বলতে পারি তাহলে আমাকে কষ্ট পেতে হবে না। ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করতে হবে না। এভাবে ধিরে ধিরে তারা মিথ্যার সংস্কৃতি নিয়ে বড় হয়। মিথ্যার চর্চা শুরু করে। এই মিথ্যার চর্চাটা খুবই খারাপ। নীতি নৈতিকতা বিরোধী, জীবন বিধ্বংসী।


আসলে, আমাদের আচরণেই বাচ্চারা আমাদেরকে ভরসা করতে পারে না। সঠিক কাজ করুক কিংবা ভুল, সত্যকে অকপটে স্বীকার করে নেওয়ার মতো পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিতে পারি না। স্নেহের সুরে আমরা তাদেরকে কাছে টেনে সুন্দর করে সঠিকটা বুঝিয়ে দেই না। এর ফল অবশ্যই আমাদেরকে ভোগ করতে হবে-


~নিউটন তো বলে গিয়েছিলেন, প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এটা শুধুমাত্র পদার্থবিদ্যার জন্য না, মানবজীবনের প্রতিটি মুহুর্তেই এটা কার্যকরী। এই যেমন-

স্বাস্থ্য মন্ত্রী নাসিমের তৈরিকৃত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আজ উনাকে করোনার চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, সিঙ্গাপুর যেতে না পারার বেদনায় দেশের আইসিইউতে ছটফট করতে হচ্ছে!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×