somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামাজিক পরিবর্তনের স্বরুপ সন্ধানেঃ রুপান্তর পর্বের সূচনা-০১

১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের চারপাশে চলমান ঘটনাপ্রবাহের দিকে, খুব গভীরভাবে না হোক, অন্ততপক্ষে যদি যৌক্তিকভাবে অনুধাবনের চেস্টা করি তাহলে ব্যক্তিগত দায় এড়িয়ে সমাজের/ সিস্টেমের কাধে সকল দোষ চাপিয়ে দেয়াটা খুব সহজ হয়ে দাঁড়ায় না। চলমান প্রত্যেকটা ঘটনা সেটা যতই সংবেদনশীল হোক না কেন তাতে আমাদের (দায়িত্বশীলদের) অসংবেদনশীলতা প্রচলিত সমাজব্যবস্থার সাথে অনেকটাই অসঙ্গতিপূর্ণ। তবে কি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এমন কোন ধরনের গুণগত পরিবর্তন অথবা ভাংগন ধরেছে যা আমরা সঠিক সময়ে অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছি? এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানেই অনেক বছর পরে ব্লগ লেখার ব্যর্থ প্রয়াস এই প্রথম লেখাটি।

বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় প্রাথমিক পরিবর্তন অর্থাৎ শিল্প বিপ্লবের আচ আমরা পাই ব্রিটিশদের হাত ধরেই কিন্তু সেটাও ঔপনিবেশিক কায়েমী স্বার্থের উপজাত হিসেবেই। যেমন যন্ত্রভিত্তিক বস্ত্র উৎপাদন জায়গা করে নেয় কৃষিভিত্তিক ট্র্যাডিশনাল অর্থ ব্যবস্থার। শহর-কেন্দ্রিক অর্থব্যবস্থা পল্লী অঞ্চলের আধিপত্যকে খর্ব করতে শুরু করে শিল্পায়নের শুরুতেই। শহুরে মানুষের হাতে পুজির নিয়ন্ত্রণ, শিল্পায়নের প্রধান চাবিকাঠি শিক্ষা সেটাও তাদেরই হাতে। শুরু হয় এক ভাংগনের মহাকাব্য যার লিগ্যাসি আমাদের ধমনীতে আজও প্রবহমান। আর এই ইতিহাসের সুচনাতেই একটু ভালো অথবা চাকচিক্যময় জীবনের প্রলোভনে মাটির মায়া ছেড়ে যন্ত্রের দাসত্বের জীবন মেনে নিতে একটা অংশের শহরে আগমন। আর এই অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত মানুষগুলোর আশ্রয়ের দায়ে শহুরে বস্তির সুচনা। কৃষকের যন্ত্রের দাসত্ব যেইদিন থেকে শুরু ঠিক সেইদিন থেকেই আমাদের এই সামাজিক ভাংগনের সূত্রপাত আর তার সাথে পল্লী অঞ্চলের ক্রমাগত পিছিয়ে যাওয়ার ইতিহাস আর ক্রমববর্ধনশীল বৈষম্য।

ড. আলী শরিয়তির ভাষ্যে বলতে হয় “এক সময় আমি ও আমার সমগোত্রীয়রা একত্রে বাস করতাম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মধ্যে। শিকার করতাম পশু ও মৎস্য। তখন সমাজ ছিল স্তরবিহীন, একীভুত। তারপর সে হল মালিক, আর আমি বঞ্চিতদের একজন, সে শাসক আমি শাসিত। বস্তুতে পরিবর্তন আসলো, পরিবর্তন আসলো উৎপাদন যন্ত্রে এবং পদ্ধতিতে। কিন্তু সে মালিকই থাকলো, কাজ সে করতো না । আর আমি থাকলাম বঞ্চিতদেরই ভিতর, কাজও করতাম আমি। একদা আমি হলাম দাস, সে প্রভু। তারপর আমি ভূমিদাস, সে ভু-স্বামী। এরপর আমি কৃষক, সে সামন্তপ্রভু। শেষে আমি যখন আমার কোদাল ছাড়লাম সে ছাড়লো তার ঘোড়া এবং আমরা উভয়েই শহরে এলাম, জমির উদ্বৃত্ত আয় দিয়ে সে কিছু টেক্সি কিনলো আমি হলাম তার ড্রাইভার। এখন তার কারখানা হয়েছে আমি নিঃস্বদের একজন তার ভিতর কাজ করছি”- আমার একজন শ্রদ্ধেয় গুরুর কাছ থেকে ধার করা এই অংশটুকু

নতুন এই ব্যবস্থা প্রথমেই প্রভাব ফেলে অনেকগুলো চলমান কিন্তু স্থিতিশীল সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর। আন্ত:সম্পর্ক ও অন্ত:সম্পর্কের মাত্রাতে আসে বড় ধরনের পরিবর্তন। তবে এই পরিবর্তনগুলো এসেছে অনেক সময় নিয়ে সেটা আমরা অনুধাবনে সক্ষম হই নি সঠিক সময়ে, প্রতিরোধের বা প্রতিকারের দেয়াল তুলে ফেলা তো অনেক পরের বিষয়। এই সামাজিক রুপান্তরের যূপকাষ্ঠে বলী হয় সর্বপ্রথম আমাদের চিরায়ত কর্তৃপক্ষ (সোশ্যাল অথরিটি : সমাজ, ধর্ম, সালিশ ব্যবস্থা, মুরব্বীদের প্রভাব)। ম্যাক্স ওয়েবারের ভাষায় বলতে গেলে ট্র্যাতডিশনাল অথরিটি ধীরে ধীরে তার প্রভাব ও গুরুত্ব হারাতে শুরু করে। তার জায়গা দখল করে নিতে শুরু করে আমাদের র্যা শনাল লিগ্যাল অথরিটি অর্থাৎ লিখিত আইন, আদালত, থানা পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবস্থা।

সামাজিক ও জাতিগতভাবে এই অবস্থানের জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করতে রাজী নই, কিন্তু ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পরে ইংরেজদের এই মর্মে বোধোদয় হয় যে ভারতীয় উপমহাদেশের চিরায়ত সামাজিক, রাজনৈতিক মেরুদন্ড দুর্বল না করতে পারলে খুব বেশীদিন তাদের পক্ষে শাষণের নামে প্রবঞ্চণার এই রাজত্ব চালানো সম্ভবপর হবে না। তাই তাদের প্রথম উপায়ই ছিলো আমাদের ট্রাডিশনাল অথরিটিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মোড়কে র্যা শনাল লিগ্যাল অথরিটির মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত করা। সন্দেহাতীত ভাবে এতে তারা সফল হয়েছে আর আমরা দ্বান্দিকতায় পরিপূর্ণ অসংখ্য জাতি রাস্ট্রে ভাগ হয়ে তাদের পরিকল্পনার চূড়ান্ত সাফল্য এনে দিয়েছি। কলোনিয়াল শাসকদের এই সাফল্যের দায় আমরা আজও বয়ে চলেছি নিজেদের আত্মনুসন্ধানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আর যার প্রতিফলন ঘটছে প্রতিনিয়ত আমাদের আন্ত:সম্পর্ক ও অন্ত:সম্পর্কের ক্ষয়সাধনের মধ্যে।

হয়তো এ কারনেই বৃটিশরা চেয়েছিলো আমরা জাতিতে হয়তো বাংলাদেশী, ভারতীয় বা পাকিস্থানী হবো, কিন্তু চিন্তায়, মেধায় আর মননশীলতায় তাদের অনুগত থাকবো। বৃটিশরাজের এই কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েই স্বাধীন ভারতীয় উপমহাদেশ ভেঙ্গে পাকিস্তান আর ভারতের জন্মগ্রহন আর তার সাথে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে থাকা পারষ্পরিক অবিশ্বাস, সন্দেহ আর সামন্ততান্ত্রিকতার যুগ থেকে শিল্পায়নের যুগে প্রবেশ। যেই যুগে কৃষক রুপান্তরিত হয় শ্রমিকে আর যৌথ পরিবার ব্যবস্থা থেকে একক পরিবারে। অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা যৌথ পরিবার ব্যবস্থার একেবারে মূলে গিয়ে আঘাত হানে।
পরবর্তী পর্বে আমরা দেখবো কিভাবে এই আর্থ-সামাজিক রুপান্তর পারিবারিক ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলেছিলো।

বি.দ্র. এই বিষয়ে অনেক দিন ধরেই লিখবো লিখবো বলে লেখা হচ্ছে না প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত কাজের চাপের মুখে। ব্লগের প্রথম পোস্ট হিসেবেও হয়তো খুব মানানসই নয়, তবুও সকল সম্মানিত পাঠকের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কোন ভূল ধারনা/ তথ্য/ শব্দগত বিভ্রাটের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×