somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius)- The Golden Ass(ধারাবাহিক) অনুবাদ

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লুসিয়াসের রূপান্তর
আনুমানিক ১৫৬৬ সালে প্রকাশ,লাতিন ভাষায় লেখা
লেখক,গল্প কথক আপুলুয়াস
‘মাদুরার আপুলুয়াসের রুপান্তর’,যাকে হিপ্পোর অগাষ্টিনের নাম দেয়া, ‘The Golden Ass’


প্রথম অংশ



এরিষ্টোনোমাসের কথা



কাজের ফাঁকে আমার আসা থিসালীতে-থিসালী আমার মায়ের জন্মস্থান।না বললেই হয়তো বা বেশ বেমানানই হবে,আমার মায়ের বাবার বাবা,প্রখ্যাত প্লুর্টাক।আর প্লুর্টাকের নাম কারই বা না জানা-ঐতিহাসিক,লেখক-তার নামের সাথে যোগাযোগ এটা আমার অহংকারের কথা অবশ্যই।।

আমি লুসিয়াস এপোলোসিয়াস,জন্ম উত্তর আফ্রিকার মাদুরায়-যদিও আমার পূর্ব পুরুষরা আসা সভ্যতার আঁতুড় ঘর গ্রীস থেকে,তবে পূর্বপুরুষের সেই দর্শন,সাহিত্যের ছোঁয়া তেমন একটা পৌছায় নি আমার কাছে।ছোটখাট ব্যাবসা নিয়ে আমার জীবন,এ গ্রাম-সে গ্রামে ঘোরা আর আমার থিসালীর পঙ্খীরাজে মালপত্র নিয়ে বিক্রি করা।

আমার ঘোড়াটা থেসেলিয়ান-থেসেলিয়ান ঘোড়াদের বরাবরই বেশ খ্যাতি,সৌন্দর্য,চলার ধরন –দ্রুততায় দোসর নেই তাদের।আজও ঘোড়ার পিঠে মালপত্র নিয়ে সারাদিন ঘোরাফেরা-ক্লান্ত ঘোড়ার ক্লান্তি ছড়ানো আমার শরীরেও।ভাবলাম নেমে কিছুটা রক্ষা দেওয়া যাক- নিজেকে আর ঘোড়াকেও,হেঁটে হেঁটে চলা আরম্ভ করলাম দুজনে,চলার ফাঁকে ফাঁকে মাঠের ঘাসে ঘোড়া চিবিয়ে চিবিয়ে পেটটা ভঁরে নিচ্ছিল,সেরে নিচ্ছিল প্রাতরাশের পর্ব।

ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ি রাস্তায় চলায় বেশ কষ্ট,সেটায় সন্দেহ নেই-তবে হেঁটে চলার কষ্টটা আরও বেশী।শিশিরের সকাল ছাড়িয়ে আমরা ভঁরা দুপুরের খরায়,ঘোড়ার ঝকঝকে সাদা কাশবনের কেশরগুলোও যেন প্রচন্ড খরায় সুর হারানো তার নাচনের।

০০০০০০


যেতে যতে রাস্তায় দেখা হলো দুই বন্ধুর সাথে-বেশ মগ্ন তারা তখন নিজেদের কথা বার্তায়।কৌতূহল আমাকে কিছুটা কাছাকাছি এগিয়ে নিয়ে গেল,দেখি একজন বলছে ‘আর বলো না,কেন অযথা এই আজগুবি গল্পের ফানুস বানাচ্ছো।মিথ্যায় ভঁরা তোমার কথাগুলো,না হেসে আর পারছি না।গল্প বানানোর একটা সীমা আছে-বিশ্বাস যোগ্য তো না,এগুলোতো একাবারে আকাশ ছাড়ানো’।

অযাচিত ভাবেই বলে ফেললাম,শুনি না গল্পটা-যদি আপত্তি না থাকে,আমি গল্প শোনার খুবই ভক্ত।অনেক নতুনই তো শেখা যায় গল্পে গল্পে।অসুবিধা না হলে,বলুন প্রথম থেকেই-গল্পে গল্পে পার হওয়া যাবে পাশের গ্রামটা।

দ্বিতীয় বন্ধু হেসে বললো বন্ধুকে-‘যাও,যাও,চালিয়ে যাও দৈত্য পরীর গল্প,হয়তো তোমার রুপকথার যাদুকর বদলাতে পারে নদীর স্রোতের গতি,হয়তো থামাতে পারে সূর্যের আসা যাওয়ার ধরণ,নিয়ে নিয়ে যেতে পারে আমাদের না জানা অজানায়।আমার কোন ইচ্ছা নাই তোমার আজগুবি কথাগুলো শোনার-আমি চললাম বাড়ীর দিকে।তা ছাড়া এই তো,পেয়ে গেলে তুমি নতুন অলৌকিক গল্পের সাথী’।

কিছুটা হতাশ হয়েই প্রথম বন্ধু বললো-‘না থাক,এত বিরক্তি যখন তোমার,চল আমি ও ফিরে যাব’।

কিছুটা মিনতির সুরেই বললাম-শোনান না আপনার গল্পটা,জীবনের অনেক জানাই তো আমাদের না জানা।অবশ্য আপনার যদি আপত্তি না থাকে।আর সব কিছুই আজগুবী বলে গুলগপ্পো বলে উড়িয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে?এই তো গতকাল রাতে পনির খাওয়ার এক প্রতিযোগীতায় এক চাকতি খেতে যেয়েই একজন প্রায় শ্বাসবন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম,
অথচ তার ক ঘন্টা আগেই তার গলায় সে বিরাট একটা চাকু গলায় ঢুকিয়ে নিল,আমরা তো অবাক চোখে না ভয়ে ভয়ে দেখে যাচ্ছি আর প্রার্থনার হাতে,তাহলে ভেবেই দেখুন জানাটাও তো অজানা নয় কি?আপনি আপনার অভিজ্ঞতার কথাগুলো বলে যান-শুধু শুনে যাওয়া না আজকের রাতের খাওয়াটার দায়িত্ব আজকে আমার।

অন্য বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললাম-মনটা খোলা রেখে বিচার করা উচিত-আর শুরুতেই যদি মনটা বন্ধ করে বিচার করি আমরা,তবে শুধু শোনার আনন্দটা হারায় না-বিশ্বাসের মাত্রাটাও হারিয়ে যায়।

০০০০০০০০০০


প্রথম বন্ধু এরিষ্টোনেসের উত্তর দিল-‘না না খাওয়া দাওয়া নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই,আর তা ছাড়া তাতে আমিও নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলবো।নিজেরই মনে হবে এই খাওয়ার জন্যে বানানো আমার গল্প,জীবনের অভিঙ্গতার ছবি না।সন্ধ্যার আলোয় আমরা যদি হেপাতায় পৌছাতে পারি,তখন আপনার মনে আর সন্দেহ থাকবে না আমার কথাগুলোর সততা নিয়ে।

আমার নিজের সমন্ধে প্রথমে দু একটা কথা বলে নেই,আমি এথেন্সের ব্যাবসায়ী,পাইকারী মধু,পনির আর মশলার ব্যাবসা আমার।ব্যাবসার সুবাদে সূদূর ইস্তাম্বুল থেকে সাইপ্রাস ঘুরেছি বেশ কবার।আমার নাম এরিষ্টোনেস,কদিন আগে খবর পেয়ে এখানে আসা বেশ কিছু পনির বিক্রির পেয়ে,তা এসে দেখি-এখানকার এক ব্যাবসায়ী আগেই সব পনিরটাই কিনে ফেলেছে,আসাটা একেবারেই ব্যার্থ হলো।রাতে এখানকার এক সরাইখানায় যাওয়ার পথে হঠাৎ দেখা সক্রেটিসের,আমার ছোটবেলার বন্ধু-অস্বাভাবিক এক রুপ ছেঁড়া নোংরা কাপড়, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি মুখে।বেশ ভয় ভয় ভাব চোখে মুখে,কেউ যেন ধাওয়া করছে তাকে,ভালমত খাওয়াটাও হয়নি যেন বেশ কটা দিন।

বেশ অবাক হলাম,এই সেই আমার ছোট বেলার বন্ধু-সক্রেটিস,আমার অনেক স্মৃতির একজন।একসাথে স্কুলে গিয়েছি আমরা-খেলার মাঠ,বাগানের ফল চুরির সেই পুরোনো মুখটা যেন অচেনা অন্য এক মুখ।

না বলে পারিনি-কিরে কি ব্যাপার?তোর এ অবস্থা কেন, সক্রেটিস?আমরা ভেবেছি তুই তো আর এ পৃথিবীতে নেই,ছেড়ে গিয়েছিস এই পৃথিবীর মোহ।তোর বৌ বেচারী কান্নায় কান্নায় প্রায় অন্ধ-ছেলে মেয়েরা পাড়াপড়শীর সাহায্য নিয়ে টিকে আছে কোন রকমে।ওরা বয়সে এত ছোট,ওদের এই বয়সে এখনও কাজ কম্ম করার কথাতো ওঠেই না।

পাথরের মূর্তির মত বসে ছিল সক্রেটিস-তারপর বললো ‘দেখ, এরোষ্টোনেস,অদ্ভুত দুর্ভাগ্য আমার।এ যেন আমার শত্রুরও না হয়।মানুষকে নিয়ে বিধাতার অদ্ভুত কি খেলা এটা’।

আর থাকতে পারেনি সক্রেটিস-জামাটায় মুখ ঢেকে হাউমাউ করে কান্না আরম্ভ করলো,সব হারানোর মন ভাঙ্গা কান্নার সুর।

জড়িয়ে নিয়ে গেলাম সক্রেটিসকে আমার সরাইখানায়,বললাম-গোসল করে একটু পরিষ্কার পরিছন্ন হও।আপাতত আমার সার্ট দিয়ে চালিয়ে নে,পরে দেখি কি করা যায়।তোর খাবার বন্দোবস্ত করছি।এর পর না হয় সুযোগমত বলিস তোর কথাগুলো।

গোসলের ফাঁকে ফাঁকে সক্রেটিস বলছিল-‘জানি না,কোন দূর্ভাগ্যে গিয়েছিলাম লারিসায় কুস্তি দেখতে।মাস দশেক হবে-ফিরছিলাম বাড়ীর দিকে,সাথে বেশ কিছু পয়সা।কুস্তি খেলা শেষ হওয়ার পর,সন্ধ্যার দিকে ফেরার পথে-একগাদা গুণ্ডার হাতে পড়লাম,মারধরও খেলাম,সব টাকা পয়সা ও কেড়ে নিয়ে গেল ।

জানিস,এমন কি আমার গায়ের জামাটাও ছেড়ে দেয়নি।এক সরাইখানায় সামনে বসে মাথায় হাত দিয়ে দুঃখে,কান্নায় নিজের দূর্ভাগ্যের কথা ভাবছিলাম।

সরাইখানার মহিলা মালিকঁ,তার-নাম মিরা।যৌবনের উচ্ছ্বাসটা নেই তখন আর,ছেড়ে গেছে যৌবন-তবে সৌন্দর্য ছেড়ে যায়নি, তাকে,অদ্ভুত এক চমক ছড়ানো চোখেমুখে। আমার দূর্ভাগের কথা হাহুতাশ করে শোনালাম তাকে।মনে হলো আমার দুঃখে মিরা বেশ বিচলিত হলো-রাতের খাবার পেলাম,পেলাম পুরোনো কিছু কাপড় চোপড়।অবশ্য সরাইখানার রাতের ঝাড়পোঁচের কাজের বদলে,ওটা ছিল যেন একটা অলৌকিক যোগাযোগ,আমার জন্যে।

বেশ যুতসই ছিল রাতের খাবার-সাথে ছিল লারিসার নামকরা আঙ্গুরের রস।খাবারের পর নেশার প্রভাবে—বেশ দুর্বল ও হয়ে গেল শরীরটা,এটুকুই মনে পড়ে,আর কিছু মনে নেই তারপর।তারপর ঘুম বা নেশার আমেজ যাই বলো,ভাঙ্গলোমিরার ঠোঁটের কামড়ে-শুধু শারীরিক শক্তি না,মানসিক শক্তি ও কোন ফাঁকে ছেড়ে গেছে আমাকে’।

এরিষ্টোনেস বেশ রেগেই বললো-‘ওটাই তোর জন্যে ঠিক।বাড়ী ঘর বৌ ছেলে মেয়ে ছেড়ে অন্য আরেক জন্যের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াচ্ছিলই-পারলিই বা কেমন করে?তোর বৌ এর কথা ভেবে,ইচ্ছা করছে তোকে ধরে মারতে’।

সক্রেটিস বললো-‘বন্ধু এত সহজেই বিচার করিস না আমাকে।মিরার ক্ষমতা সমন্ধে তোর ধারণাই নেই-কোন কিছুই অসম্ভব ছিল না তার পক্ষে।চাইলেই পাহাড়ের মাথায় নিয়ে আসতে পারতো বিশাল এক নদী।
ক্ষমতা ছিল মিরার,মরাকে ফিরিয়ে নেয়া জীবনের গানে-বিধাতার দেশ থেকে নিয়ে আসার ক্ষমতা ছিল তার এই পাপের পৃথিবীতে।

মিরা ছিল যেন প্রেমের দেবী-তার একটু চাহনি,হারাতে দ্বিধা ছিল না কারও।হউক না মিসরের-সমুদ্র ছাড়ানো আলেকজান্ডারের গ্রীস,পারস্য না আফগানের।ভালবাসার এ মায়াজাল ছাড়িয়ে নিজেকে উদ্ধার করার উপায় ছিল না কারও।শুনেছিলাম যারা মিরাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতো,তাদের শাস্তি-একটা কুকুরের জীবন’।

তবে কুকুর কেন?

‘এটাতো সবারই জানা,কুকুরের সঙ্গমে কোন শালীনতা নাই-ভালবাসার কোন ছোঁয়া নেই,সুবাস হারানো,একটা নোংরা চেহারা।অবশ্য পাশের বাড়ীর বুড়োটাকে মিরা নাকি ব্যাঙ করে ছেড়ে দিয়েছিল-ও পাশের ডোবাটায়।এখন শুধু এলোমেলো ভাবে শুধু ডেকে যাচ্ছে সে।এটাও শুনেছি মিরার বিরুদ্ধে পাশের বাড়ীর যে উকিল মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছিল-তার কপালে ছিল ছাগল হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি।যেখানে সেখানে শিং এর যুদ্ধ করে যাচ্ছে-আর সামনে যাই আসুক না কেন,খাবারের অরুচি নেই কোন কিছুতে।এটা হয়তো মজার এক ঘটনা,মিরা তার এক প্রেমিকের গর্ভবতী বৌকে কটা মন্ত্রের অভিশাপে, মহিলার বাচ্চা আজ ও মায়ের পেটে-তা প্রায় বছর আটেক হবে’।

এত আজগুবী গল্প-তা কবে জানতি পারলি,এ সব কথা?

‘যাকগে সব জানাজানি হওয়ার পর,জনসমক্ষে তার বিচার হলো,বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো,আর পাথর ছুঁড়ে এই চরম শাস্তি দেওয়া হবে ডাইনী মিরার।কিন্ত মিরার শক্তির প্রচন্ডতা সমন্ধে ধারণা ছিল না কারও-বাড়ীর সামনে একটা গর্ত খুঁড়ে,শুকনো পাতায় আগুন জ্বালিয়ে আর ইড়বিড় করে বেশ কিছু মন্ত্র পড়ে গেল মিরা।

এর পর যা ঘটলো-হাইপাতা শহরের সব বাড়ীর দরজাগুলো বন্ধ হয়ে গেল।কেউ খুলতে পারেনি ঘরের দরজা প্রায় দুটো দিন,ঘরের বাইরে কেউ যেতে পারেনি ওই দুই দিন।শেষমেষ বাড়ীর জানালা খুলে সারা শহরের কান্না,প্রতিঙ্গা করলো মিরা তার অবিচারের হবে বিচার,আর মিথ্যা ঘটনা সাজানো মানুষদের হবে যথাযথ শাস্তি।

মিরা সাজানো ঘটনার বিচারক কে শাস্তি দিল-তার বাড়ীটা উড়িয়ে নিয়ে গেল,পাহাড়ের মাথায়।সেখানে কোন পানি নেই-পানি আনতে হয় প্রায় ঘন্টা খানেকের রাস্তা।এমন জায়গা যে একটু ভুল হলেই সোজা পাহাড়ি গর্তে-একেবারে হাজার পাঁচেক ফুট,যাকে বলে শাস্তি’।

সক্রেটিস-গল্প হউক সত্যি হউক।শিহরন জাগছে শুনেই আমার।বেশ রাত,আর এমনও হতে পারে তোর এই সবকিছু বলা হয়তো জেনে ফেলেছে,মিরা।চল,শুয়ে পড়া যাক এখন, সকাল সকাল রওনা দিতে হবে আবার বাড়ির দিকে,শোনা যাবে তখন তোর কথাগুলো।

দেখি যে আমার কথার মাঝেই ঘুমে নাক ডাকছে,আমার বন্ধু।পেট পুরে খাবার আর নরম বিছানার আশ্রয়,কষ্ট যন্ত্রনার সক্রেটিস কত সহজেই ঘুমিয়ে পড়লো।সরাই খানার ঘরের দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে আমি ও ঘুমোনোর চেষ্টা করছিলাম,কিন্ত ঘুম আসছিল না কোন ভাবেই।তবে ক্লান্তি আর সক্রেটিসের অদ্ভুত অভিঙ্গতার এলোমেলো কথা ভাবতে ভাবতে-এক সময় আমিও পৌছালাম ঘুমের দেশে।

হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল-দরজা ভাঙ্গার শব্দে,কজন অচেনা লোক দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়লো ঘরটায়।চীৎকার করার শক্তি ছিল না আমার,কচ্ছপের মত মাথাটা লুকিয়ে নিলাম,সবই যেন১ সক্রেটিসের মিরার যাদুতে।দরজার নিচে শুনতে পেলাম,দুজন মহিলার আলাপ।একজন যার নাম মিরা সক্রেটিসকে দেখিয়ে বলছে, ‘জানিস তান্তা এর জন্য আমি কোন কিছু দ্বিধা করিনি করতে,কার্পন্য করিনি সবকিছু বিলিয়ে দিতে,কিন্ত বিনিময়ে কি পেলাম,শুধু বিশ্বাসঘাতকতা।আমি তো একজন দেবী আর ও তো শুধু রাস্তার সাধারণ একজন লোক,বোকাটা নিজেকে ভাবলো ভালবাসার দেবতা।আর এই যে মাথা লুকোনো জানোয়ারটা-এরিষ্টোমেনেস,বোকা সক্রেটিসের বুদ্ধিদাতা।ওকেও শাস্তি দেব ওর এই অপকর্মের জন্য,সক্রেটিসকে ভুল বুদ্ধি দেয়ার জন্যে’।

আমি,এরিষ্টোমেনেস-তখন ভঁয়ে ভঁয়ে প্রতি মূহূর্তটা গুনছি-বেচে থাকার আশায়,ভাবছি জীবনটা গেল বোধহয় শেষমেষ।আমার দাঁতগুলো পর্যন্ত ভঁয়ে নড়বড় করছিল।

তান্তার কথাগুলোও আমার কানে আসলো-‘ওকে টুকরো টুকরো করে কুকুরের খাবার বানিয়ে দাও।না না তার চেয়ে এটা ভাল হবে,বরং ওকে বেঁধে-কেটে ফেলা যাক ওর পুরষাঙ্গ’।

‘না না তেমন কিছু না-কাল তো আমার পুরোনো প্রেমিক সক্রেটিসের জন্য গর্ত খুঁড়তে লাগবেই,কাউকে’।

এরপর মিরা হাতের ছোরাটা সোজা ঢুকিয়ে দিল সক্রেটিসের গলায়-আর রক্ত সব চুইয়ে পড়ছিল মিরার হাতে ধরা একটা বোতলে।সক্রেটিসের গলা দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছিল না, শুধু বেরচ্ছিল একটা ঘড়ঘড় শব্দ।তার শরীরটা যন্ত্রণায় কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ করলো,
তারপর শব্দ হারিয়ে গেল চিরন্তন নিস্তব্দতায়।

এর পর যা ঘটল,তা বোধ করি ছিল মিরার যাদুটোনার একটা পর্ব।মিরার হাত সক্রেটিসের কাটা গলায় ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে বের করে নিয়ে এলো হার্টটা।
তান্তা হাতের কাপড়ের টুকরা দিয়ে সক্রেটিসের কাটা গলা বেধে দিয়ে বিড় বিড় করে বললো-

‘বাধন বাধন নদী থেকে সাগর,
বন্ধ করে দাও এ ক্ষতের নগর,
মুছে দাও এ কাটা ছেঁড়ার্র সাজ’।

দুই বান্ধবি ভাঙ্গা দরজাটা একপাশে রেখে-আমার মুখে কিছু পানি ছিটিয়ে বিড়বিড় করে অবোধ্য কটা কথা বললো,হয়তো একটা মন্ত্র।চলে গেল দুই বান্ধবী-দরজাও যেন অলৌকিক ভাবে ফিরে গেল নিজের জায়গায়-আর আমি পড়ে ছিলাম নিজের প্রাতকর্মের মাঝখানে।নতুন আমি তখন,যেন নতুন এক জন্ম আমার,পড়ে ছিলাম জন্ম দিনের পোষাকে।আমার সব কিছু ফেলে আসা পুরোনোয়-কিছু নেই সামনে আমার যদিও আমি নতুন একজন।

নিজের কাছে প্রশ্ন করলাম,এরিষ্টোমেনেস-শেষমেষ এই হলো তোমার পরিনতি?প্রশ্ন করবে সবাই-এত কিছু ঘটে গেল তোমার চোখের সামনে,একটা চীৎকারও করনি,দিনের শেষে হিসেবের শেষে দোষী,দোষী,দোষী আমি।যদি আমার দেখার কথাগুলো সাজিয়েও বলি, প্রশ্ন করবে সবাই-এত কিছু ঘটলো চারপাশে,কেন কিছু হয় নি তোমার,তোমাকে খুন করে নি কেন?আমার নিজেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় এখান থেকে সরে যাওয়া।সক্রেটিসের শরীরটাও এখান থেকে সরাতে হবে।

সক্রেটিসের শরীরটা-কিছু জিনিষপত্র গোছানোর পর দরজা খুলতে গিয়ে বেশ ঝামেলা,দরজাটা আর যেন খোলাই যাচ্ছে না,জোরজার করে,চাবিটা এ পাশ ওপাশ কোনরকমে খোলা গেল দরজা।

রাস্তায় একটা গাড়ী ডেকে আনতে গেলাম-কিন্ত ভোরের এই সময়টায় কেউ রাজী হচ্ছিল না যেতে।গাড়ীর ড্রাইভার মন্তব্য করছিল-‘চোর ডাকাতের সময়,এটাকি কোথাও যাওয়ার সময়?ড্রাইভারকে বেশী কিছু টাকার কথা বলে শেষ পর্যন্ত রাজী করালাম।

ড্রাইভার বলেই ফেললো-‘খুন করে লাশ ফেলানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন নাকি’?

জিনিষপত্রগুলো গাড়ীতে তোলার বন্দোবস্ত-ভঁয়ে আমার সারা শরিরে শিহরন।হঠাৎ সক্রেটিস গলার শব্দ পেলাম-‘এরিষ্টোমেনেস,কোথায় যাচ্ছি আমরা’?আনন্দে আমি সক্রেটিসকে জড়িয়ে ধরে অভিভুত তখন,কথা বলার শক্তিটাও হারিয়ে গেছে।সক্রেটিসের সারা শরীর অদ্ভুত এক গন্ধে ভঁরা।তবুও আনন্দে আমার অজানা ছিল সব-বেচে আছে সক্রেটিস,এর চেয়ে বেশি আর কিছু চাওয়ার ছিল না আমার সেই মূহূর্তে।

মনে হলো ড্রাইভার যেন কোন এক প্রেরিত এক মহাপুরুষ –হয়তো তার সুবাদেই সক্রেটিসের পূর্নজন্ম।

শহর মাইল দুয়েক দুরে-ড্রাইভার নামিয়ে দিল,আমাদের।ভয়-কৌতুহলে আমি অস্থির,
ভাবছিলাম,সক্রেটিস নিজের কাটা গলা দেখলে হয়তো করবে একগাদা প্রশ্ন।কিন্ত অবাক হওয়ার পালা ছিল আমার-কাটার দাগই ছিল না কোন,যা দেখলাম সব এক আজগুবী স্বপ্ন।বোধহয় বেশী হয়ে গেছিল রাতের নেশাটা-তাই মন বানানো এক গাদা আষাঢ়ে গল্প ছিল মনের খাতায়।ডাক্তারদের বলা বেশী নেশা করায় মনে চলে আসে এক গাদা আজগুবী গল্প কথা।

সক্রেটিসকে বলেই ফেললাম,মনে হচ্ছিল আমরা সারা রাতটা কাটালাম রক্তের বন্যায়।

‘এরিষ্টোমেনেস-সেটা তোমার মনে হওয়ারই কথা,সারা বিছানা তোমার ভেজা,জানি না
রাতের বেলা,ওই বিছানায় তুমি পেশাব করেছ,হ্যতো’তবে রাতে মনে হচ্ছিলা-কে যেন আমার গলাটা কেটে আমার হার্টটা বের করে,নিয়ে গেল।সারা শরিরে আমার রক্তে ভেসে যাওয়া,কোন একটা দুঃস্বপ্ন ছিল হয়তো’।

সক্রেটিস শোন,কিছু রুটি আর পনীর আছে,চল ওই বট গাছটার ছায়ায় বসে বসে খাই যাক।পানিও আছে একটু-হয়ে যাবে দুজনার।
সক্রেটিসের চেহারা তখন অদ্ভুত এ সময়-রক্ত হারানো ফ্যাকাসে বেশ ভিন্ন একটা চেহারা।রুটিতে কামড় দিয়ে গিলতে গিয়ে বাচবে কি, সক্রেটিস?রাস্তায় বেশ কিছু লোকজন তখন-এখন যদি সক্রেটিস মারা যায়,প্রশ্ন হবে একগাদা।নানান চিন্তায় অযথার অস্থিরতায় আমার সারা শরীর যেন অচল।

রুটি,পনির খাওয়ার পর-সক্রেটিস বটগাছের ছোট্ট পুকুরটায় চুমুক দিয়ে পানি খাওয়ায় ব্যাস্ত,এর পর যা ঘটলো তা আমাকে নিয়ে গেল রাতের দুস্বপ্নে।সক্রেটিসের কাটা গলার ক্ষতটা দেখা গেল আবার,আর রক্ত পড়ছিল চুইয়ে চুইয়ে।কাপড়ের গজ ছিটকে এলো বাইরে-সক্রেটিস শেষমেষ চলেই গেল,না ফিরে আসার দেশে।শেষকৃত্যের পর-সক্রেটিস শুধু একটা নাম এখন।
এখানেই এরিষ্টোমেনেসের সক্রেটিসের কাহিনী পর্ব শেষ।

এরিষ্টোমেনেসের বন্ধু হেসে বললো-‘এই আষাঢ়ে গল্প কি শোনার মত,অবিশ্বাসের চরম।শুধু শুধু অযথার সময় নষ্ট-গল্পের মত গল্প হলেও একটা কথা ছিল,চলি দেখা হবে আবার,খোলা হবে তখন তোমার আজগুবী গল্পের ভাণ্ডার’।


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×