somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius)- The Golden Ass(ধারাবাহিক) অনুবাদ

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় অংশ

মি্লোর কথা

শহরে ঢুকেই প্রথম বাড়ীর দরজায় শব্দ করে কড়া নাড়তেই-এক বুড়ো মহিলা বের হয়ে প্রশ্ন করলো-‘কি চাই।
এটা কি-হাঁপাতা?প্রশ্ন করলাম,আমি লুসিয়াস।

উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়া দিয়ে সম্মত্তি জানালো,মহিলা।

আপনার জানা আছে-মিলোর বাসা কোনটা?

‘শহর ছাড়িয়ে গেলে একটা জেলখানা আছে,ঠিক তার,পেছনের বাড়িটা, মনে হয়।শুনেছি ওখানে ঐ নামের একজন লোক থাকে খুব একটা চেনা নেই-কয়েক বার দেখেছি তাকে,
নামটা মনে হয় ও ধরনের কিছু একটা’।

আচ্ছে,কি ধরণের মানুষ মিলো?

‘ঠিক জানা নেই,ঐ যে দূরে বাড়ীটা দেখা যাচ্ছে-বেশ বড়সড় জায়গা নিয়ে।বেশ বড়সড় বাড়ী,বুঝতেই পারছো-আমিও শুনেছি বেশ ধনী।তবে অসম্ভব কঞ্জুষ লোকটা-আর কড়া সুদখোর হিসাবে একটা বদনামও আছে।চড়া সুদে টাকা ধার দেওয়া ওর ব্যাবসা।বাড়ীতে হতভাগিনী এক বৌ আর কাজের মেয়ে আছে একটা।নোংরা একটা জামা পরে থাকে সবসময়,দেখে মনে হয় ধোঁয়াও হয়নি বেশ কিছুদিন- খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি মুখে,একজনই আছে ও রকম চেহারার’।

ঘোড়ায় চড়ে চলে যেতে যেতে মনে মনে বলছিলাম-‘বন্ধু-দেমিত্রিস,এ কি ধরণের এক পরিচিত লোকের কাছে পাঠালো?দেখা যাক কি হয়’?

মিনিট দশেকের পথ-তবে পাহাড়ি রাস্তা আর আমার ঘোড়াটাও ছিল বেশ ক্লান্ত,তাই হিসেবের চেয়ে বেশী সময়ই লাগলো।দরজায় নাড়া দিতেই এক মেয়ে দরজা খুলে বাইরে আসলো,মনে হয় কাজের মেয়ে, ‘কাকে চাই আর ও ভাবে দরজায় কেউ ধাক্কা দেয়,একটুঁ ভদ্রভাবে দরজা নাড়া দিতে জানেন না।আর জানেন তো গহনা বা সোনা ছাড়া কোন টাকা ধার দেয়া হয়না।আর এ বাড়িতে কোন ভিক্ষা দেয়া হয় না,এখন বলেন কি বলার আছে’?

কিছুটা না হেসে উপায় ছিল না -বাড়ীতে কেউ এলে এ ধরনের প্রশ্ন করাটা কি মানায়?
বাড়ির মালিক মিলো,বাসায় আছে নাকি?

‘আছে,তবে নির্ভর করে কে জানতে চাচ্ছে?আর আপনার দরকারটা কি,সেটা বলতে হবে’?

আমি-করিথিয়ানের লুসিয়াস,দেম্রিতিসের বন্ধু,তোমার মালিক মিলোর খুব কাছের মানুষ,তার সুপারিশে এখানে এসেছি।

‘ঠিক আছে আপনি এখানে দাঁড়ান-আমি বলছি ওনাকে’।

দরজা লাগিয়ে ভেতরে চলে গেল-মেয়েটা।খুব একটা সময় কাটেনি ফিরে বললো,‘ভেতরে আসেন,সাহেব বললো আপনাকে এই ঘরে বসার জন্যে,উনি আসছেন’।

মিলো এসেই বেশ আন্তরিকতার সাথেই বললো-‘আস,ভেতরে আস,তোমার খুব প্রশংসা শুনেছি দেম্রিতিসের কাছে,বেশ কাজের লোক।তোমার চেহারা দেখেই মনে হয়,নিশ্চয় তুমি খুব ভাল বংশের ছেলে।আমাদের তো ছোটখাট একটা বাড়ী,নিজের বাড়ী মনে করো,দুপুরের খাবার খেতে বসেছিলাম,যদি ও তেমন কিছু একটা নেই খাবারের,তবুও চলে আস।চোরের ভঁয়ে চেয়ার টেবিলও খুব একটা কেনা হয়নি।এই মেঝেতে বসেই কাজ চালিয়ে নেই,অসুবিধাও হয় না,তেমন একটা’।

চোখে পড়লো খাবারের পরিমান ছিল না খুব একটা-কোনরকমে দুই জন এর খাবার হবে, তার বেশী না,মিলোর কথা শুনে তার বউ উঠে গেল।বেশ একটুঁ বেমানান মনে হলো ব্যাপারটা-আমি অনিচ্ছা সত্বেও বললাম-ছি ছি কি করছেন আপনি।এমনিতেই খেয়ে এসেছি আমি,আজ আর খাব না।

এবার মিলো বেশ জোরে হাঁক দিল-‘ফটিস,একটা তোয়ালে নিয়ে যা পাশের আলমারী থেকে,নতুন সাবান দেয়া আছে তো বাথরুমে?কি নাম যেন তোমার,ও লুসিয়াস,যাও হাত মুখ ধুয়ে নাও।আজ বেশ গরম ছিল।ও পাশের ঘরটা তোমার জন্যে-যদি ও তেমন একটা কিছু না।তোমার বাবার নাম দেখলাম-থিসাস,বেশ নাম করা এক লোক-আমার পরিচিতদের একজন’।

বললাম-ব্যাস্ত হওয়ার কোন কারন নেই,তোয়ালে সাবান এ গুলো তো আমার সাথেই আছে,তা ছাড়া ফটিসকে বলে আমি নিজেই দেখে নিব,গোসলখানা।শুধু ফটিসকে যদি একটু বলে দেন আমার ঘোড়ার খাবার দরকারের কথা,আর অযথা আপনার ব্যাস্ত হওয়ার দরকার নেই।

দেখলাম ফটিস এর মাঝেই কিছু ঘাস আর খিচুড়ি সাজিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে-ক্লান্ত ঘোড়াটাকে।
আর আমার জিনিষপত্রগুলোও সাজিয়ে রেখেছে বাইরের ঘরটায়-সবকিছুর মাঝে তার অভাবনীয় আন্তরিকতার ছোঁয়া।

গোসল সেরে নিয়ে ভাবলাম-বাজারে একটু ঘুরে আসি।মাছের বাজারে ঢুকে ছোট এক বাক্স মাছ কিনে নিলাম-দাম শুরু হলো,২০০ ড্রামাকে,দরদাম করে নামলো ৩০ ড্রামাকে,আর যাই হউক মজাই হবে রাতের খাবারটা।

ফেরার সময় হঠাৎ দেখা পিথিয়াসের সাথে-পিসিয়াস আমার সাথে একসাথে স্কুলে পড়তো, এথেন্সে।প্রথমে ঠিক তেমন একটা না চেনা না গেলেও-খুব যে একটা কষ্ট হয়েছে তাও নয়,আর সময়ের ছাপে এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

‘লুসিয়াস-কতদিন পর দেখা হলো,সেই স্কুল,তারপর আজকে-কতদিন হবে,বছর কুড়ি তো নিশ্চয়ই।তা হঠাৎ কি ভেবে আমাদের এ দেশে’?

এই এলাম কিছু কাজে,যদিও কাজটা হলো না।শোন,আজকে যাই,কাল বেশ সময় করে কথা বলা যাবে,আজ তো এলাম মাত্র।পোষাক দেখে মনে হচ্ছে-তুমি পুলিশে কাজ কর?

‘না না পুলিশ ঠিক না,এটা শুল্ক(কাষ্টম) অফিসারের পোষাক।এই বাজারটা আমারই এলাকা।
কোন সাহায্য লাগবে নাকি’?বলে ফেল।

না না পিথিয়াস-এই তো বাজার সেরে নিলাম।কিনলাম,এক বাক্স ছোট মাছ‌,রাতের খাবারের জন্য।

‘তা,কত দিয়ে কিনলে?কি বললে ৩০ ড্রামাক?এত দাম,একেবারে ঠকিয়ে দিল তোমাকে-কার কাছে কিনলে,দেখাও দেখি’।আমি দূরে এক কোনে বসে থাকা মাছুড়েকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম।

বসে থাকা বুড়ো মাছুড়েকে বেশ আদালতি সুরে অভিযোগ করলো-পিথিয়াস।

‘কি ব্যাপার দাদু-এ কটা মাছ,৩০ ড্রামাক-একেবারে দিনে দুপুরে ডাকাতি।হেপাতা যদিও বড় শহর,তবে এটা তো রীতিমত পুকুরচুরি।এ ভাবে চললে তো বাইরের লোকজন আসাই বন্ধ করে দিবে,তোমাদের চড়া দাম আর ঠকানোর ব্যাবসায়,তখন তো ক্ষতি হবে সকলের’।

এরপরে যা ঘটলো সত্যিই সত্যিই অবিশ্বাস্য-পিথিয়াস বুড়োর সামনে আমার মাছগুলো মাটিতে ফেলে পা দিয়ে কছলে তছনছ করে হাসতে হাসতে বললো-‘এটা হলো তোমার শিক্ষা-আমার এলাকায় চলবে না,এ সব বেআইনি কাজ’।

বলতে পারলাম না,হায়রে বন্ধু, পিথিয়াস-তোমার বিচারে আমার যে ছাল গেল ছালা ও গেল,রাতে খাবারের কিছু থাকলো না আর।

মিলোর বাড়ীতে ফিরতে ফিরতে বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে-সোজা কাপড়চোপড় ছেড়ে গেলাম বিছানায়।কিছুক্ষন পরে দেখি ফটিস ঘরের দরজায় শব্দ করে বলছে-‘খেতে ডাকছেন সাহেব’।

ফটিস-একটু বলে দাও না ওনাকে,আজ আর কিছু খাবনা।

দেখি মিলো নিজে উঠে এসে ডাক দেওয়া আরম্ভ করেছে-‘আরে চল,চল,দুপুরে খাওনি,এখনও খাবে না,তা হয় নাকি’?

শেষমেষ খাওয়ার টেবিলে যেতেই হলো,আর আরম্ভ হলো মিলোর নানান গল্পগুজব আর প্রশ্ন।

‘তা বল দেখি, আমার বন্ধু দিম্রিতিস কেমন আছে?ওর সাথে দেখা হয়নি- প্রায় মাস ছয়।ওর বৌ আর ছোট্ট মেয়েটা,ওরা কেমন আছে?চাকর বাকরের সমস্যা আছে ওদের এখনও?
আচ্ছা,তোমাদের শহরে-মেয়েদের স্কুলটা ছাড়িয়ে বাম দিকে যে একটা লাল বাড়ী ছিল,আছে এখনও?আচ্ছা,তুমি কিন্ত বলনি, কি কাজে আসা তোমার,কিছু সাহায্য যদি করতে পারি?
এক এক করে খবরগুলো একটু সাজিয়ে বল,দেখি’।

দিম্রিতিস সমন্ধে যা জানা ছিল আমার-সবকিছুই বললাম,তারপর থিসালীর খবর।যদিও ঘুমে চোখ বুজে আসছিল-তবুও বলে গেলাম সবকিছুই হয়তো আধোঘুমে।

ক্লান্তি আর কিছু না হউক সাজিয়ে দেয় শান্ত ঘুমের সাজ-রাতের ঘুমে আমি তখন এক অজানা এক রাজ্যে।

সকালটা এলো,নতুন এক সকাল,কদিনের একঘেয়ে ঘুমোট সকালটা না-ঝকঝকে মিষ্টি সুরের নতুন এক সকাল।আমার কাজ নিয়ে চলে গেলাম শহরের দিকে।এই তো এরিষ্টোমেনেসের সেই গল্পের সেই শহরটা, ছাড়া যাদুটোনা নিয়ে এই শহরের বেশ একটা সুনাম বা বদনাম যাই বলা যাক, বেশ আছে।

হাটতে হাটতে এলোমেলো ছড়ানো কটা পাথরের নুড়ি তুলে তুলে ছূড়ে ফেলছিলাম-এমনও তো হতে পারে ওরা কোন এক সময় হয়তো মানুষ ছিল,যাদুর মায়ায় এখন সবাই পাথরের নুড়ি।হতে পারে ঐ গাছের পাখীগুলোও বদলানো যাদুর জালে।শোনা কথা সবসময় গুজবী ব্যাপার না-ওর ফাঁকে ফাঁকে অনেক সময় লুকোনো থাকে একগাদা সত্যি গল্প।হেঁটে হেঁটে গেলাম দেব দেবতাদের মন্দিরে,শুনেছি এখানকার মন্দির আর পূজোর গল্পকথা,বড় জাগ্রত দেবতারা,তাদের কথা ছড়ানো সারা এথেন্স জুড়ে।

দোকানপাটের এলাকায় এসে ঘোরাঘুরি করছি-কেনাকাটা ছাড়াই শুধু বাজার ঘুরে বেড়ানো।
ভালই কাটছিল সময়টা, হঠাৎ জড়িয়ে ধরলো একজন-‘লুসিয়াস না-তা হেপাতায় কি কাজে?
দেখ চিনতে পার নাকি’?

আমাদের থিসালীর পড়শী নিরো-আমাকে টেনে নিয়ে গেল পাশের বিরাট দোকানটায়।একপাশে কাচের দেয়ালের অফিস ঘর-বেশ সাজানো ।

‘সম্পর্কে তোমার খালা হয়-কথা বলো তোমরা,দেখা হবে পরে’।

‘আমাকে তোমার তেমন একটা চেনার কথা না,তোমাকে দেখেছি কতই বা বয়স তখন তোমার,বছর তিন কি চার।তোমার মায়ের নানার দাদা,আর আমার মায়ের দাদার নানা,নাম শুনেছ নিশ্চয় প্লুর্টাক।ছোট বেলায় অনেক খেলাধুলা করেছি তোমার মায়ের সাথে-তার পর তো বদলে গেল জীবনের গল্প।কোলে বসে অনেক খেলা করেছ-তুমি।আমার বিয়ের কথা,হয়তো শুনেছ মায়ের কাছে-আমার বিয়ে হলো ব্যাবসায়ীর সাথে।তোমার বাবা ছিলেন নামকরা আমলা-সে তো তোমার জানাই।আমার নাম বারহায়েনা-নামটা শুনেছ কি না জানি না।শোন,আমার বাড়ীতে চলে আসবে আজকেই,অন্য কোথাও থাকা চলবে না,
তোমার’।

কিছুটা সংশয়ের সাথেই বললাম-যদিও ইচ্ছে হচ্ছে আমার এখানে চলে আসতে,তবে মিলোর বাসা ছেড়ে এ মুহুর্তে আসাটা ঠিক সম্ভব হবে না।খুবই বেখাপ্পা হবে আর অপমানজনক হবে সেটা।তবে আমি এদিকে আসলে আপনার সাথে অবশ্যই দেখা করে যাব।

‘আচ্ছা,অন্ততঃআমার বাড়ীটা না হয় দেখে যাও-আর খেয়ে যাবে আজ রাতের খাবারটাও।
বেশি দূরে না-এই ক পাখীর ছুটে যাওয়া রাস্তা’।

পৌছালাম বাড়ীটাতে,একটা প্রাসাদের মত-অদ্ভুত সুন্দর সাজানো একটা বাগান ছাড়িয়ে বাড়ীটা।কটা সাদা মার্বেল পাথরের মূর্তি,সাজানো-পাশে ছোট্ট একটা ফোয়ারা।ফোয়ারাটায় সাজানো কটা ডানা কাটা পরীর।একটু আধটু শেওলাও জমে আছে,সাদা নুড়ি পাথরের ছড়ানো সুন্দর রাস্তা,গোটা তিনেক ইউক্যালিপটাসের গাছ-মাঝে মাঝে এলোমেলো পাখীর ডাক,পড়ে আছে কটা সঙ্গী হারানো শুকনো পাতা,চমৎকার একটা অদ্ভুত স্বর্গীয় অনুভূতি ছড়ানো পরিবেশ।বাড়ীর গেট ছাড়িয়ে সদর দরজার সিঁড়ি পর্যন্ত দু পাশে ঝাউ গাছের সারি।সদর দরজার সামনে বসে আছে দুটো কুকুর-একেবারে পাথরের মূর্তির মত বসে আছে,কোন নড়া চড়া নেই।অজানা মুখ দেখে কিছুটা নড়াচড়া করে উঠলো-তবে বাড়ীর মালিক দেখেই আবার সেই অস্থিরতা ভুলে গিয়ে চুপ হয়ে বসে থাকলো।

অবাক হওয়ার পালা শেষ হয় নি তখনও-বারহায়েনা খালা বললো,‘আমার এই বাড়ী ঘর-সবকিছু তোমারই হবে শেষে,তুমিই তো আমার একমাত্র উত্তরাধিকার-ছেলে মেয়ে তো নেই,সংসারে তোমার মা ছাড়া আর কোন আত্মীয় স্বজন বলতেও কেউ নেই।তোমাকে নিয়ে আমার কিছুটা চিন্তাও হচ্ছে-হেপাতার বদনাম সমন্ধে কতটুকু তোমার জানা আছে,জানি না,আর তোমার বাড়ীর মালিকের গিন্নী সমন্ধে তোমার কতটুকু জানো তুমি।মিলোর গিন্নী পামফিলকে নিয়ে সমন্ধে কটা কথা বলে নেই-মিলোর বৌ বেশীর ভাগ সময় যাদুটোনা নিয়েই ব্যাস্ত থাকে।শোন,যাদুর বলে ঐ ডাইনী তার ইচ্ছেমত পুরুষদের বশ করে-বিশেষ করে জোয়ান ছেলেদের,আর এভাবেই তাদের সাথে চলছে তার যত ধরণের অপকর্ম।এটাও শোনা যায় তার কথা না শুনলে-মানে যারা তার কথা মেনে নেয় না,তাদের কে বিভিন্ন ধরনের জন্তু জানোয়ার করে রেখে দিতে কোন দ্বিধা নেই তার।তুমি তো দেখতে সুন্দর,বয়সটাও তার পচ্ছন্দের,তুমি হবে একেবারেই ওর মনের মত পুরুষ,তাই সর্তক থেক’।

আমি,লুসিয়াস কথাগুলো শুনে আরও বেশ একটু কৌতূহলী হয়ে গেলাম–কথাগুলো আমার অহেতুক কৌতুহলকে,নতুন একটা উৎসাহের আঙিনায় নিয়ে গেল।মনে হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিলোর বাসার দিকে ফিরে যাই।তা ছাড়া ফটিস মেয়েটা নিঃসন্দেহে বেশ সুন্দরী-আবার ভঁরা যৌবনা,কথাবার্তায় ও আছে অদ্ভুত নমনীয়তা আর চমৎকারিত্ব।ভাব ভঙ্গীতেও মনে হচ্ছিল একটা সম্পর্ক তৈঁরী করার জন্যে বেশ আগ্রহী।এতসব কিছু আজগুবী কথা মনে করে ও ধরণের এক সুন্দরীকে সরিয়ে রাখার কোন কারণ নেই।যৌবন তো ক্ষনিকের-শুধু শুধু অযথার আলোয় চিন্তাধারায় শেষ হওয়ার জন্য না।আর যে বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছি,তার গিন্নীর সাথে প্রেম-শারীরিক সম্পর্ক সেটার প্রশ্নই আসে না।

ধীরে ধীরে মিলোর বাড়ীর দিকে ফিরে গেলাম-ঢুকে দেখি আশেপাশে কেউ নেই,রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে দেখি-ফটিস তখন কাবাব বানাতে ব্যাস্ত।এলোচুল,ভেজা শাড়িটা কোমরে জড়ানো,
খাবারের গন্ধ ছাপিয়ে ভেজা চুলের গন্ধের নেশাটা সাজানো ছাপিয়ে আসছিল,আমার নাকে।
মেয়েদের চুলের একটা আকর্ষন আছে-অজানা একটা টানায় নিয়ে যায় আমাকে অন্য জগতে।
ফটিসের মিষ্টি হাসির ফাঁকে আমার চোখ দুটো আটকে ছিল ভেজা চুলের আকাশে।একটা স্বাদ-একটা আনন্দ,অদ্ভুত নাড়ানো এক দখিনা বাতাস।

ফটিস মিষ্টি হেসে বললো-‘এখান থেকে সরে যাও,চূলার আগুন কিন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে,আমি কিন্ত দায়ী হবো না সে জন্যে।যত ভাল রাঁধুনি হই না কেন আগুনের ওপর আমার ও হাত নেই কোন’।

আমি তখন অন্য আরেক জগতে-অবাক চোখে দেখি যাচ্ছি সৌন্দর্যের দেবীকে,মনের আয়নায় সাজিয়ে নিচ্ছি ফটিসকে।নগ্ন এক যৌবন উচ্ছাসের সুন্দরী,জন্মদিনের পোষাকের ফটিস-অদ্ভুত আলো ছড়ানো চোখ,পাখীর পালকের মসৃনতায় জুড়ানো শরীর।যেন বিধাতার নিজের সাধে তৈরী করা মুখ-সুডৌল ভরাট বুক,ঝকঝকে সাদা মার্বেল পাথরের উরু,আমার অজানা স্বপ্নে আমিই মাতাল।আমি তখন প্রেমের দেবতা কিউপিড-আর ফটিস আমার মর্তের সাইকি।
মাতাল ভাললাগায় কোন নিয়ম নেই-সেখানে শুধু ভাললাগার আকাশে ভাললাগার গল্প।

চমক ছড়ানো ফটিসের চোখে মুখেও,যেন আমার মনের কথাগুলো তুলে ধরা তার চোখের খাতায়-কথা বলা চোখ দুটো বলছে,‘জানি,আমি জানি তোমার মনের কথা।ভাবছো তুমি-ভালবাসায় তোমার পাগল আমিও।স্বপ্ন দেখা ভাল-তবে স্বপ্নের পাগলামি ভাল না।
তুমি,তোমার মনের চোখে তছনছ ভালবাসায় আমার শরীরকে।এটা শুধু তোমার অলিক স্বপ্ন এক’।

আমার অজান্তেই, হঠাৎ আলতো করে ফটিসের হাত ধরে কো-আলতো করে একটা চুমু দিলাম, বাধা দিল না যদিও সেটা আমার স্বভাবের সম্পূর্ন বিপরীত।চুপচাপ,কথা ছিল না কোন
কোন ফটিসের,শুধু হাল্কা গলায় বললো-‘চলে যাচ্ছি না কোথাও,আমি তো তোমারই।আমিও তোমাকে চাই তোমার মত করে,একটু ধৈর্য ধর-জান তো সবুরে মেওয়া ফলে’।

হতাশ হয়ে বের হয়ে গেলাম,কিছুটা সময় কাটানো দরকার।ফিরে এসে দেখি আমার দুই কর্মচারী অপেক্ষা করছে আমার জন্যে,ওদের আসার কথা ছিলও দিন দুই পরে।

কথায় কথায় মিলোর গিন্নীর বলালো-‘আগামীকাল,বৃষ্টি হবে প্রচন্ড।যদি প্রশ্ন করো আমি জানি কেমন করে,আমার ঘরের বাতিটা দেখেছ-ওটা আমাকে বলে দেয় আগামীর গল্প।বাতির আলোর একটা ভাষা আছে আগামীর-দেখার চোখ থাকলে দেখা যায় নতুন সব,হারানো পুরোনো জেনে লাভ আছে কোন’।

মিলো আবার গিন্নীর কথায় সায় দিয়ে মুচকি একটা হেসে বললো-‘প্রতি সকালে আমার বৌ ঐ বাতিটার আলোয় দেখতে পায় সূর্যের শক্তি’।

আমি কথার সাথে আরও কিছু কথা যোগ দিলাম আরও-থিসালির বিখ্যাত ডাউফেনাসের কথা,তার মতে সূর্যই সৃষ্টির মহাশক্তি-সব শক্তি,সব জানার উৎস।আর আলো তো সেই মহাশক্তিরই এক অঙ্গ, আলোর মাধম্যে দেখা যায়,বর্তমান,ভবিষৎ।শুনেছি আপনাদের হেপাতাতেও ছিল ডাউফেনাসের বেশ নাম,ডাক।আমাদের অজানায় আছে অনেক কিছু-আর ওর ফাকে লুকানো একগাদা রহস্য।ডাউফেনাসের কাছ থাকে অনেকেই জেনে নিত যাত্রার ভাল দিনটা-ব্যাবসায়ীরা জেনে নিত নতুন ব্যাবসা খোলার দিন।ডাউফেনাসের নামডাক ছিল বেশ-আপনি শুনেছেন নিশ্চয়।

ডাউফেনাস বাজারের একপাশে বসে তার ভবিষৎ বানী করতো।এক দিন এক সুন্দর চেহারার যুবক-ডাউফেনাসকে দেখে অবাক ‘ডাইফেনাস,কখন ছাড়লে তুমি উবা শহর’।

ডাউফেনাসও বেশ কিছুটা অবাক ক্রিষ্টোতাসকে দেখে।ডাউফেনাস আর ক্রিষ্টোতাস দুজনেরই উবা শহরের।উবা থিসালী ছাড়িয়ে বেশ কটা কাঁকের উড়ে যাওয়ার পথ।

‘ক্রিষ্টোতাস-সে এক লম্বা গল্প।আমার চরম শত্রুও যেন এ রকম যন্ত্রনার সমুক্ষীন না হয়-ওডিসাসের ট্রোজান যুদ্ধের বছর দশের ইতিহাসও,তার কাছে কিছু না।জানি না কোথা থেকে শুরু করা যায়।নৌকায় বাড়ী ফিরছিলাম আমরা, সেই নৌকা পড়লো জলদস্যুদের হাতে,
সেখান থেকে জীবন নিয়ে কোনরকমে রক্ষা পেলেও আমরা রক্ষা পাই নি প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার হাত থেকে।বাতাসের প্রচন্ড্র ধাক্কায় আমাদের নৌকাটা ভেঙ্গেচুরে শেষ।আমরা কজন কোনরকমে ভাগ্যের জোরেই হয়তো বা থিসালীর সমুদ্র ধারে কষ্টে পৌছালাম।আমার ছোট ভাই এরিষ্টোগাস-কিন্ত রক্ষা পেলো না সে যাত্রায়’।

ডাউফেনাস এর গল্পের মাঝেই মিলোর নাকের গর্জন শুরু হয়ে গেছে,কিছুটা ক্লান্তি,কিছুটা হয়তো গল্পের একঘেয়েমি।

আমি মনে মনে বললাম-লুসিয়াস,তুমি এতই বোকা,এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে ফটিসের কথা, তোমার ভালবাসার দেবীর কথা,তোমার অপেক্ষায় কামনার প্রদীপ নিয়ে সে বসে আছে অপেক্ষায় রাতের অন্ধকারে।কিছুটা ঘুমের কাতরতা দেখিয়ে আমি ধীরে ধীরে ফিরে গেলাম শোয়ার ঘরটার দিকে।

এর মধ্যেই চালাক ফটিস,আমার শোয়ার ঘরের বাইরের কর্মচারীদের সরিয়ে অন্য কোথাও শোয়ার জায়গা করে দিয়েছে।শরীরের চাওয়ায় অদ্ভুত এক প্রচন্ডতা আছে,সেই প্রচন্ডতায় ভেসে যাওয়ার আনন্দ কারই বা নেই।একটা মাতাল করা শরীরের গন্ধ-ঠোঁটের আলোয় ঠোঁট খোঁজার আনন্দে,একটা নতুন সুরে খুঁজে নেয়া একটা নতুন জীবনের সকাল।

বিছানায় ফটিসের কথা ভেবে ভেবে অজান্তেই এক সময় আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাঙ্গলো আমার ঠোঁটে আলতো আরেক ঠোঁটের ছোয়াচে।ফটিস-মাথায় সাজিয়ে নেওয়া ফুলে,গলায় ফুলের মালায়,টিকোলো দুই স্তনের মাঝে,আলতো করে বসানো-ফুলের এক কড়ি।কথা হারিয়ে গেছে আমার,চোখ দুটো আমার পাথরের চোখ যেন।এর মাঝে ফটিস তার খোপার মালার পাপড়ি ছড়িয়ে দিল বিছানায়।
হাতের বোতলের মহুয়ার রস-মেশানো লেবু,ছোট্ট এক গেলাসের এক চুমুক আর আমার ঠোঁটের তুলে ধরা।এক না জানা নেশায় হারানো-আমি।নেশায় মাতাল সারা শরীর-উত্তেজনায় আমি টাল মাতাল।

চোখে চোখে বললাম ফটিসকে-আমি যে তাকে তছনছ করতে চাই শরীরের ভাষায়।
আমি যেন ধনুক সাজানো একটা তীর-শুধু বসে আছি শরীরের গানে ছুটে যাওয়ার আশায়।
কথা ছিল না ফটিসের কথায়ও-আমি শুধু অবাক হয়ে দেখছিলাম,এক এক করে ফটিসের পোষাক খোলার পর্ব।এক সময় ধবধবে সাদা মসৃন পাথরের এক শরীর,আর কিছু নেই এক দেবীর মূর্তি-ঝকঝকে মুখে সাজানো মুচকি হাসি।শিল্পির ছোঁয়াচের ডাক চোখে মুখে-যেন বলে যাচ্ছে,‘আমি যে স্বপ্নে লূকানো,জাগিয়ে দাও আমায় তোমার শরীরের ডাকে।আমি তো সৌন্দর্যের দেবী ভেনাস-এ মাত্র উঠে এলাম সমুদ্র সৈকতে’।

আলতো করে জড়িয়ে ফটিস বললো,‘আর কিসের অপেক্ষায়, বসে আছ?আমার মাঝে আমি খুঁজে নিতে চাই,তোমাকে।ঝড়ের গতিতে কেড়ে নাও,মেরে ফেল আমাকে ভালবাসার যন্ত্রনায়’।

আর বলার ছিল না কিছু,অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়লো ফটিস।ভালবাসার এক উরু আমার উরুতে-চুমুতে,চুমুতে কেড়ে নেয়া ঝড়,রাতের পোষাক ছেড়ে নগ্ন,আমিও।ফটিসের তনু আর উরুর নাচনে লজ্জা পেয়ে রাতের অন্ধকার যেন আরও অন্ধকারে লুকিয়ে গেল।মাঝে মাঝে আনন্দের সীৎকাঁর,কোন ভাষায় ভাষা নেই,তার।

এ এক অদ্ভুত যুদ্ধ-রক্তের বন্যা নেই,শুধু ক্লান্তি,একগাদা ক্লান্তি।কান্না আছে তবে দুঃখ নেই কোন কান্নায়-শুধু পাওয়ার আনন্দ,যেন স্বর্গ খুঁজে পাওয়া জীবনের আলোয়।কিছুটা ক্লান্তি,চোখ বুজে আসা কিছুটা,মহুয়ার রস মেশানো পানি,নতুন জীবন,নতুন দুজন আমরা।নতুন যুদ্ধে-নতুন আক্রমন,শরীরের বন্ধু-কামনার বন্ধু আমরা,তবু টেনে নেওয়া,চুমুতে,কামড়ে এলোমেলো করে দেওয়া আরেকজনকে।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:২৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×