বাংলাদেশ এখন এমন সময় পার করছে যা 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি'অবস্থা। এ সময়টা চারিদিকে থমথমে পরিস্থিতির বিষয় নির্দেশ করছে। যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার অবতারনা ঘটাতে পারে, পরিস্থিতিটা এরকম। যদিও নির্বাচন নিয়ে এরকম সমস্যা এটাই প্রথম নয়। অতীতে আরো এরকম অবস্থার সাক্ষী বাংলার বিভিন্ন ইতিহাস বই!
সেই বইগুলোর ভাঁজে ভাঁজে হাতালে এরকম অনেক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ের অবস্থাটা হলো, টিউব থেকে টুথপেস্ট বের করার পর ঢুকানো যেমন অসম্ভব একটা ব্যাপার, ঠিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যাটা সেরকম একটা অসম্ভব সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দেয়ার মতো মানসিকতায় নেই। এক কথায় দা কুমড়ার সম্পর্ক। এক ঘরে দুই সতীনের মাঝেও এতোটা ঝগড়া নেই, যতটা ঝগড়া এ দেশের রাজনীতিবিদদের নিজেদের নিজেদের মধ্যে । আর এজন্যই মরণ কামড় দিতে মরিয়া সব রাজনৈতিক দল। একে অন্যকে ছাড় দেয়ার চিন্তাও করতে পারছেনা। বর্তমানে বাঘে-কুমিরে এক ঘাটে জলকেলী খেললেও খেলতে পারে,কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা নয়। বিলকুল না মুমকিন।
এসব বিষয়কে নিছক রাজনীতি বলা যায় তখনই, যখন সেখানে সুন্দরভাবে রাজনীতি চর্চা করা হয়। এখন ভুলে এমনটা হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে কখনো সঠিক রাজনীতি চর্চা হয়েছে কিনা তা বলা মুশকিল।
এ পর্যন্ত যা দেখেছি তা হলো,একে অন্যের প্রতি কিভাবে ব্যাপকভাবে হিংসা চর্চা করতে পারে সেটার প্রতিযোগিতা। সুস্থ রাজনীতি কখনো চর্চা হয়েছে কিনা তা আমার জন্মের পর হতে এ পর্যন্ত দেখিনি। তার আগে থাকলেও থাকতে পারে। তবে বঙবন্ধুর সময়ের রাজনীতির বিষয়টা ভিন্ন ব্যাপার।
বঙবন্ধুরা যেমন সব সময় আসেনা, তেমনি এরকম বঙবন্ধুদের শান্তির রাজনীতিও সবসময় থাকেনা। সেগুলো আলাদা বিষয়। কিন্তু অবাক হয়ে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থাটা তখনই ঘটে, যখন দেখি এ অপরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদরাই বঙবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির কথা বলে রীতিমতো মাইক ফাটিয়ে ফেলে। দেশকে এ নিয়ে দু ভাগ করে ফেলে।
দুর্ভাগ্য এ জাতির জন্য! যারা বঙবন্ধুর মতো মানুষ পেয়েছে,বঙবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছে, কিন্তু বঙবন্ধুর আদর্শ ধরে রাখতে পারেনি, পারেনি লালন করতে।
কিন্তু তারা লালন করছে অপরাজনীতি। ধ্বংসের রাজনীতি। নোংরা রাজনীতি। যার ছোবল থেকে রক্ষা পায়না দুধের শিশু থেকে শুরু করে পশু পাখিও। দেশের অর্থনীতি শেষ করে দেউলিয়া করতে বাকি রাখছেনা। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন! তারা সবাই তিনটি ধারা নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসে। আর তা হলো দুর্নীতি,দুর্নীতি এবং দুর্নীতি। আরেকটি ধারাও আছে। তা হলো হিংস্রতা। দুর্নীতি আর হিংস্রতার বাইরে তাদের আর কোনো এজেণ্ডা থাকেনা। ধরা যাক,তারা সবাই একটা রসুনের মতো। রসুনের প্রতিটি কোয়া আলাদা, কিন্তু গোড়া সব এক জায়গায়। তারা হচ্ছে সেরকম। দল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সবার দুর্নীতি আর রাজনীতির হিংস্রতার মানসিকতা একই রকম। খাই খাই স্বভাবের। শুধু খাই খাই হলেও হতো, একেবারে ছেটেপুটে খাই স্বভাবের।
বাংলাদেশ আয়তনের দিক থেকে অনেক ছোট্ট একটা রাষ্ট্র। কিন্তু সে হিসেবে অনেক পরিশ্রমী। অনেক সম্ভাবনাময় একটা দেশ। রয়েছে বিপুল খনিজ সম্পদ সহ প্রচুর মানব সম্পদ।
চাইলে দক্ষ হাতে দেশটাকে স্বর্গ বানিয়ে রাখা যায়। শুধু প্রয়োজন একটু সদিচ্ছা আর আন্তরিকতা। অথচ, নিম্নশ্রেণির রাজনীতির জন্যই আজ দেশের করুণ অবস্থা।
এ বাংলাদেশ আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ নয়,
এ বাংলাদেশ বঙবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ নয়,
এ বাংলাদেশ নয় যেন কোনো শান্তির প্রতীক।
এ বাংলাদেশ নয় জসীমউদ্দিনের সেই বিখ্যাত নকশী কাঁথার মাঠ,
প্রিয় বাংলার উপর পড়েছে অশিক্ষিত রাজনীতিবিদদের ভয়াল ধারালো লোমশ কালো হাত।