somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঃ লীগ vs বিএনপির রাজনীতি : ভাগ্য খারাপ সাধারণ জনগণের

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আওয়ামী লীগঃ এই রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয় ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এই সংগঠনটির নামাকরণ করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
তারপর থেকে তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একসময় তাদের হাত ধরেই মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়ে সফলতার সাথে দেশ স্বাধীনও হয়। বিভিন্ন সময় আঃ লীগ দেশের জন্য অনেক কিছু বয়ে এনেছিলো। যা অনেক প্রাপ্তির। সম্মানেরও বটে। তারপর সেই আঃ লীগ মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করতে থাকে। সরকারের পক্ষে বলবে এরকম ৪টি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। কেড়ে নেয়া হয় রাজনৈতিক অধিকার। গঠিত হয় বাকশাল। সেই থেকে শুরু হয় আঃ লীগের বিশ্বাসঘাতকতা। হোচট খেতে থাকে রাষ্ট্রিয় নিয়মশৃঙ্খলা। দেখা দেয় দুর্ভিক্ষসহ নানাবিধ সমস্যা। পরিস্থিতি চলে যায় জনগণের হাতের বাইরে।
তারপর ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে।

বিএনপিঃ তারপর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি শুরু করেন। জেনারেল জিয়া যখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি রাষ্ট্রপতির পদের জন্য নির্বাচন করবেন তখন তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। আর এভাবেই চলতে থাকে আঃ লীগ- বিএনপির পালাক্রমে দেশ শাসন। এর মাঝে অল্প সময়ের জন্য দু একটা সামরিক সরকারও ক্ষমতা লাভ করে। তার মধ্যে জিয়াঊর রহমান উল্লেখযোগ্য। এই জিয়াউর রহমান ই বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সামরিক অভ্যুত্থানে মারা যাওয়ার পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন। তখন বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে লেঃ জেঃ হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন। এতে আবারো সামরিক সরকারের কবলে দেশটি।
আওয়ামীলীগ শূন্য মাঠে বিএনপি ছিলো বড় দল। আর এরশাদ এসে বিএনপিকেও ক্ষমতার বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। এতে আওয়ামীলীগ আর জাতীয়তাবাদী বিএনপি উভয়েই ক্ষমতা বলয়ের বাইরে চলে যায়। সর্বময় ক্ষমতার কর্তা হয়ে উঠেন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।
এরপর প্রায় ৯ বছর আওয়ামীলীগ- বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দল মিলে আন্দোলন করে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতা লাভ করে।
মূলত ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ আর বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। বলা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা তখন থেকেই আরম্ভ হয়। কেউ কাউকে বিশ্বাস করেনা। প্রায় ১৫ বছর প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে সেনা শাসনের পর প্রথন সংসদও প্রথম ৩ বছরেই অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকারী দল আর বিরোধীদল উভয়েই অযোগ্যতার পরিচয় দেয়। কথায় কথায় হরতাল অবরোধ দিতে শুরু করে দেয়। সেসময়ের বিরোধীদলের আহবানে ১৯৯৪ সালেই ১৪ টি হরতাল, ৪টি অবরোধ ও ৩টি ঘেরাও হয়েছিলো।
এরপর ১৯৯৪ সালের ২৭ জুন 'আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টি- জামায়াতে ইসলামী' তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করে। দাবী উপেক্ষিত হওয়ায় পরদিন ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন সবাই একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিরোধীদের লাগাতার আন্দোলনে বিএনপি সরকার 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার' বিধান অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান সংশোধন করে। ৩০ মার্চ ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন। আর সে আমলে ১৯৯১- ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিরোধীরা ৪১৬ দিন হরতাল অবরোধ দেন।
এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন বিচারপতি হাবিবুর রহমান। ৯০ দিন এর মধ্যে ২২ জুন ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংসদ নির্বাচন। এতে আওয়ামীলীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। আর খালেদা জিয়া ফলাফল না মেনে নিয়ে 'পুকুর চুরি' আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেন।
আর বিএনপি সরকার এরপর আওয়ামীলীগ সরকারের প্রথম ৩ বছরে (১৯৯৬-১৯৯৯) হরতাল দেন ২৪৪ দিন। এর পর ১৯৯৯-২০০০ সাল পর্যন্ত গড়ে ১০০ দিনের বেশি হরতাল দিয়েছিলো।
তারপর আবারো বিএনপি ক্ষমতা লাভ করে। আর শেখ হাসিনা সে নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিয়ে অভিযোগ করেন, 'সূক্ষ্ম নয়, স্থূল কারচুপি করে ফলাফল বদলে দেয়া হয়েছে।' তারপর সরকার দায়িত্ব পেয়েই বিরোধীদের উপর আগের চেয়ে অধিক হারে অত্যাচার শুরু করে দেয়। তারপর আবারো ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা লাভ করে। এরপর আওয়ামীলীগই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাদ দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে। যে আওয়ামীলীগ লাগাতার অবরোধ দিয়েছিলো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য, সে আওয়ামীলীগই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি আরেকধাপ এগিয়ে নেয়। এখানেই শেষ নয়, এরপর ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে সিলেকশন এর মাধ্যমে আবার ক্ষমতা দখল করে এখনও ক্ষমতায় বসে আছে।
আর এভাবেই এখনও চলছে আওয়ামীলীগ আর বিএনপির দেশ ধ্বংসের রাজনীতি।

আওয়ামীলীগ আর বিএনপির এরকম প্রতিহিংসার রাজনীতিতে দেশে প্রতিবছর কয়েকজাহার কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে তা এই দু দলের মূর্খ রাজনীতিবিদরা একেবারেই অবগত নন। কবে বুঝে আসবে এ জাতির!
আর এই 'আঃ লীগ vs বিএনপির রাজনীতি : ভাগ্য খারাপ সাধারণ জনগণের' বলতেই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×