somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা ভাইরাস ( কোভিড-১৯ ) সমাচার

৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চীনের দিকে আঙুল দেবার আগে পড়বেন ! না পড়লে রিএ্যাক্ট দেবার দরকার নেই । আর না পড়েও যদি চীন নিয়ে কথা বলেন তাহলে আপনি এখনো নাবালক/নাবালিকা।
প্রথমে বলা হলো আমেরিকা করোনাভাইরাস তৈরী করে চায়নাতে ছেড়ে দিয়েছে, তারপর বলা হলো এটা আল্লাহর অভিশাপ চাইনিজদের উপর। তারপর বলা হলো চাইনিজরা নাকি বাদুর খায়, কুকুর খায়, সাপ খায় তাই এসব হচ্ছে। এরপর বলা হলো চায়না উরুমচীতে মুসলিমদের নির্যাতন করছে- সেজন্য এটা গজব এসেছে। আবার বলা হচ্ছে সাদ্দাম হোসেন মন্ত্রিসভায় করোনারি কথা উল্লেখ করেছেন।

এখানেও শেষ নেই। এরপর যখন চায়না তার নিজ দেশে ভাইরাসটি নির্মুল করলো তখন তারা একটু বিরতী নিয়ে করোনা ভাইরাসের সূত্র আবিস্কার করতে কোরানের সহায়তা নিলো; আবিস্কার করে ফেলল 1.q7+6=13 এবং গো-মুত্রসহযোগ গো করোনা, করোনা গো তত্বটিও। সেই সংগে ফু-ফা তো চলছেই।

ওই 'গো করোনা, করোনা গো' বা ফুঁ-ফা আর 1.q7+6=13 সূত্র যে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ সেটা এসবের আবিস্কারকর্তারা স্বীকার করে না।

চায়নাতে নির্মূল হলো, কিভাবে হলো একটু পরে বলছি। ইরান শিয়া তাই এবার হামলা চললো ইরানে। এরপর ইটালীর কোন এক গির্জায় মোহাম্মাদের ব্যঙ্গচিত্র রাখার কারণে ইটালীতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরলো। সেখান থেকে স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানী, বৃটেন। তারপর হামলা হলো খোদ আমেরিকায়।

এবার পাশার দান একটু উল্টে গেল। প্রথমে বলা হলো আমেরিকা তৈরী করে চায়নায় পাঠিয়েছে, এবার বলা হলো চায়না তৈরী করে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে।

এই হলো মোটামুটি বাংলাদেশীদের চিন্তা-চেতনা-বুদ্ধি-জেহাদী-মুসলিমদের 'বিজ্ঞান-চর্চা' ও ধর্ম-চর্চার যৌথ অবদান।

এই গ্রুপটির আরোও কিছু চিন্তা চেতনা রয়েছে। এরা বিশ্বাসই করে না যে মানুষ আজ থেকে ৫০ বছর আগে চাঁদে গেছে। এরা তখন চিন্তা করে আবিস্কার করেছিল (প্রথমে) মানুষ চাঁদে যায়নি, ওটা ধাপ্পাবাজী; টেক্সাসে এরিয়া ফিফটি ওয়ান এ শুটিং করে আমেরিকা বিশ্বকে ধাপ্পাবাজী দেখিয়েছে। আবার (দ্বিতীয়) বলা হলো, চাঁদে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেখানে গিয়ে ফাটল দেখেছে, আজান শুনেছে, নিল আর্মষ্ট্রং মুসলিম হয়ে গিয়েছে। ইত্যাদি।

আরও মজার বিষয় হলো সেই চাঁদে যাওয়া নিয়ে (আমেরিকার মুল প্রতিদ্বন্দি রাশিয়া কিন্তু কিছু বলে না) যাবতীয় বিভ্রান্তির চর্চা হয় বাংলাদেশে; এই করোনা ভাইরাসটি চায়না তৈরী করেছে না কি আমেরিকা তৈরী করেছে বা এটা আল্লাহ গজব এসবও চর্চা চলে বাংলাদেশেই। অন্য দেশে যে এসব ভাবার সময় নেই- সো, কি আর করা! বাঙালী রয়েছে কি জন্য?

যাই-ই হোক, চায়না মোটামুটি ২ মাসের মধ্যেই ভাইরাসটির আক্রমন প্রতিহত করতে পেরেছে। সেখানে বলা হলো, চায়না মিথ্যা বলছে। তথ্য গোপন করেছে, কোটি কোটি চাইনিজ মারা গেছে, এখনও কোটি কোটি চাইনিজ আক্রান্ত- তারা বিশ্বকে জানতে দিচ্ছে না। এসবও বাঙালীদেরই আবিস্কার।

বাঙালী ঘরে বসে, ফেসবুকে বা চায়ের দোকানে ভালই মাতাতে পারে। সত্য জানতে তাদের বড়ই অনীহা। সত্যকে এরা ভীষন ভয় পায়। মিথ্যায় পায় আনন্দ। মিথ্যার চর্চায় এরা বিশ্বসেরা।

যে বাঙালীটি এসব গবেষনা নিয়ে ব্যস্ত; তাকে যাষ্ট একটা প্রশ্ন করবেন- জীবনে কোন কালে কি একবারও সে চায়নার মেইল্যান্ডে পা দিয়েছে? উত্তরে দেখবেন তার মুখটি শুকিয়ে 'বাঙলা নাম্বার ৫' এর মতো হয়ে গেছে। যে লোক জীবনে কোনদিন চায়নাতেই যায়নি- সে যখন চায়না সম্পর্কে লেকচার দেয়- তখন তাকে কোন উত্তর দেয়াটাই বোকামী। কথা বলা মানে বাচলামী করা। সুতরাং বাদ দিন। আর চায়নাতেই যে যায়নি, সে তো আমেরিকার ভিজিট ভিসাই পায়নি; আমেরিকার প্রসংগে তুললামই না।

এবার আসল কথায় আসি। চায়না একটি একদলীয় শাসনাধীন সরকার ব্যবস্থায় পরিচালিত দেশ। অর্থাৎ ডিক্টেটরশীপ চলছে ওখানে। চাইনিজরা বৌদ্ধ নয়; তারা কোন ধর্মই মানে না মানে নাস্তিক। তাদের ডিকশনারীতে 'রিলিজিয়ন' শব্দটিই নেই। ধর্ম কি জিনিস সেটাই তারা জানে না। জানানো হয় না। তারা শুধু বুঝে 'টাকা' বা 'রিনমিমবি' (আরএমবি/ ইউয়ান)। ওখানে জনমত প্রকাশ করা নিষেধ। প্রকাশ্যে রাজনীতি নিয়ে কোন আলোচনা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ। দেয়ালে কোন পোষ্টার সাটকানো বা লিখন রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ। চায়নাতে 'উচ্চস্বরে কথা বলা' বা 'সাউট' করাও একটা ফৌজদারী অপরাধ। রাষ্ট্রে যে-কোন নির্দেশনা বিনাবাক্যবায়ে পালন করা 'ফরজ'। চাইনিজরা রাষ্ট্রের নির্দেশের বাইরে কোন কিছু বলা বা করার কথা চিন্তাও করতে পারে না। সেদেশে আইন ও তার বাস্তবায়ন হয় অক্ষরে অক্ষরে।

সেই দেশে যখন করোনাভাইরাসটি মহামারীরুপে ছড়িয়ে পরলো, এবং সরকারও বুজতে পারলো এটা বড় মহামারী; সংগে সংগে সরকার কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহন করলো। কি কি ব্যবস্থা নিলো, শুনেন:
১) ১৫০ কোটি মানুষ এবং বিদেশীরাও যে-যেখানে যেস্থানে যে অবস্থায় রয়েছে সেখান থেকে কেউ মুভ করতে পারবে না। মুল ভবন থেকেই বাইরে বের হতে পারবে না। প্রয়োজনে মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হলো।

২) ঘোষনা দেয়া হলো এবং বাস্তবায়নও করা হলো, কার বাসায় কি কি খাবার প্রয়োজন তার লিষ্ট দিতে এবং প্রতিটি বাড়ীতে যার যা দরকার তা সরকারীভাবে পৌছে দেয়া শুরু হলো। অর্থাৎ জনগনের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান নিরাপদ করা হলো; বিদেশীদেরও। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ নির্ধারিত স্থানে 'অবরুদ্ধ' হয়ে গেল। ইতিমধ্যে লাখ লাখ ফ্যাক্টরী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবকিছুই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

৩) অসংখ্য অস্থায়ী হসপিটাল তৈরী হয়ে গেল সপ্তাহান্তে। বাড়তি ডাক্তার, নার্স নিয়োগ দেয়া হলো। পুলিশের সংগে সেনা বাহিনী নামানো হলো। আর চাইনিজরা যেহেতু সরকারি নির্দেশের বাইরে যায় না এবং সরকার জনগনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই করছে; সেহেতু মানুষও সরকারকে সহায়তা করলো সর্বাত্মকভাবে।

৪) অসুস্থ্যদের হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে এবং বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হলো। মৃতদের পুড়িয়ে দেয়া হলো। ওদেশে পুড়িয়ে দেয়ায় বা কবর দেয়ায় কিছুই যায় আসে না- ধর্মহীন মানুষের আবেগ কম থাকে।

করোনা ভাইরাসকে নির্মুল করতে- এই কাজগুলিই করতে হয় যা চায়না প্রথম মাসেই করে ফেলেছে। কাজেই আক্রান্তের সংখ্যাটি কমতে শুরু করলো। ৮২ হাজারের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা সীমিত হয়ে গেল। ৩ হাজারের বেশী লোক মারা গেল এবং বাকীরা সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরতে লাগলো। যখন নতুন করে আর আক্রান্ত হবার সুযোগ থাকলো না- তখন তারা নিশ্চিত করলো যে বিদেশ থেকে কেউ চায়নাতে ঢুকলে তাকে এয়ারপোর্টেই প্রথমে করোনা টেষ্ট করা হবে।

ক) যদি টেষ্টে পজেটিভ হয় তাহলে সংগে সংগে ওখান থেকেই হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হবে।
খ) যদি নেগেটিভ হয়; তাহলে তাকে হয় সরকারী ব্যবস্থাপনায় অথবা ব্যক্তিগত উপায় থাকলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১৪-দিনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে আবদ্ধ থাকতে হবে; তার ঘরে তালা মেরে দেয়া হলো- যেন সে বাইরে যেতে না পারে এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের ব্যবস্থা করা হলো সরকারী পর্যায় থেকে।

চায়না করোনা ভাইরাস নিমুর্ল করলো।

আমেরিকা কেন পারলো না?
উত্তরটি সহজ। আমেরিকায় গণতন্ত্র, পূর্ণ নাগরিক অধিকার এবং মানবাধিকার অত্যন্ত বেশী মাত্রায় ভোগ করা যায়। সরকার চাইলেই জনগনের উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। সরকারী নির্দেশ কেউ অমান্য করলে তাকে 'জরিমানা' করা হয়; কিন্তু গ্রেফতার করা যায় না, গায়ে হাত তোলার কোন নিয়ম নেই- এতে পুলিশেরই চাকুরী যাবে।

২) ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে 'টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না' বিধায় সে আমেরিকাকে 'অচল' করতে চায় না; সে সিদ্ধান্তহীনতা অথবা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে ভাইরাসটি স্প্রেড হবার সুযোগ করে দিয়েছে।

৩) যখন ওয়াশিংটন ষ্টেট বা ওরগেন ষ্টেটে করোনা ভাইরাসটির প্রকোপ দেখা দিল, মানুষ আক্রান্ত ও মরতে শুরু করলো- তখনও ট্রাম্প নিরব। জনবহুল নিউ ইয়র্ক সিটিতে যখন আক্রমন শুরু হলো; তখনই গভর্ণর কুমোর ঠেলায় সে বাধ্য হলো প্রথমে একটা হসপিটাল শীপ পাঠাতে; এরপর অত্যন্ত আস্তে আস্তে সে বিভিন্ন কাজকর্ম করা শুরু করলো।

৪) যে করোনা ভাইরাসটি এতটা মহামারী রুপ নিতে পারে সেটাকে নিয়ে গবেষনা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ টিকা আবিস্কারের জন্য সে কংগ্রেসের কাছে চাইলো মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার; কিন্তু কংগ্রেস মুহুর্তেই তার হাতে তুলে দিলো ৮.৬ বিলিয়ন ডলার; তারপরই গবেষনা শুরু হলো। সবকিছুতেই তার দেরী, ভাড়ামী।

শেষ প্রশ্নের উত্তরটি দেয়া হয়নি; করোনাভাইরাস কি মানুষের পক্ষে তৈরী করা সম্ভব?

না। সম্ভব না; কোন ভাবেই না। এটা অসম্ভব কাজ, এখনও অবধি অসম্ভব চিন্তা। করোনা ভাইরাস অনেক আগে থেকেই আছে। এটা একটা ফ্যামেলী ভাইরাস গোষ্ঠী; অর্থাৎ করোনা নামে অনেকগুলি ভাইরাস রয়েছে।

বিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা করার চেস্টা করি। কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) আসলে তেমন অচেনা নয়। এটা একটা বড় ভাইরাস দলের সদস্য, যার নাম করোনা। ২০০৩ সালে এর প্রথম প্রাদুর্ভাব সেই চায়নাতেই ঘটে। তখন তাকে আমরা জেনেছি সার্স ভাইরাস নামে। তাই চায়না যখন প্রথম এর কথা হু-কে জানায়, তখন এর নাম রাখে সার্স-কভ-২। বিজ্ঞান জগতে এখনও সেই নাম চলে।

এবার সন্দেহ উঁকি দেয় যে, তাহলে সেই মারণ ভাইরাস কি কেউ আবার ইচ্ছে করে তৈরি করছিল, জৈব অস্ত্র বানাবে বলে?

সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় এই সন্দেহ একেবারে উড়িয়ে দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রোটিনের যে আঁকশি দিয়ে কোভিড-১৯ মানুষের দেহকোষের গ্রাহক স্থানে (রিসেপ্টর এসিই-২) অতি সুচারুভাবে নিজেকে আবদ্ধ করে, সেই প্রোটিন আঁকশি গবেষণাগারে চটজলদি তৈরি করা সম্ভব নয়। একমাত্র প্রাকৃতিক নির্বাচনেই এই সূক্ষ্ম বিবর্তন সম্ভব। তা ছাড়া, কোভিড-১৯’এর মৌলিক জিনটি করোনা সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও তার বিন্যাস অন্যান্য মানব করোনাভাইরাসের বদলে বাদুড়ের করোনাভাইরাসের সঙ্গে বেশি মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গবেষণাগারে কেউ মারণ অস্ত্র বানাতে চাইলে সে বাদুড়ের এই নিরীহ মৌলিক জিনটিকেই বা বেছে নেবেন কেন?

এ বার তা হলে আরও একটা বিষয় সামনে আসে। বাদুড়ের সঙ্গে মানব সংস্পর্শ তো অত্যন্ত কম, তা হলে এটা কোন প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষের দেহে লাফিয়ে এল, এবং বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় এমন ভয়ঙ্কর রূপ নিল? চিনের নাঙ্কাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুয়ান জোশু এবং তার সহ-গবেষকরা কোভিদ-১৯’এর ক্ষেত্রে একটা সাংঘাতিক বিষয় লক্ষ করেন। মিউটেশনে রূপান্তরিত ভাইরাসটির প্রায় ৮০ শতাংশ সার্স ভাইরাসের সঙ্গে মেলে, কিন্তু এই ভাইরাসের আর একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে। এটা রিসেপ্টার এসিই২ ছাড়াও ফিউরান নামে মানব কোষের আর একটি প্রোটিনকে পরিবর্তিত করে সংক্রমণ জারি রাখতে পারে। এই বদগুণটি নাকি এইডস ভাইরাসেরও আছে, এবং এতেই এদের মারণশক্তি আরও হাজার গুণ বেড়ে যায়। এই জন্যই ওষুধ তৈরি নিয়ে যত সমস্যা। ওষুধ বা প্রতিষেধক যা-ই হোক না কেন, তাকে এই দু’টো আক্রমণ পদ্ধতিই নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এখানেই প্রশ্ন থেকে যায় যে তা হলে কি বাদুড় আর মানুষের মধ্যে আর একটা না-মানুষ আছে, যে এই রূপান্তর ঘটিয়েছে, এবং সে এখনও অন্ধকারে? না কি আছে বিজ্ঞানের আর এক অন্ধকার অধ্যায় বা একটা গবেষণাগার দুর্ঘটনা? সে কথা এখনও আমাদের অজানা।

করোনাভাইরাসের প্রাণভোমরা হচ্ছে একটা জিন বা আরএনএ, যা তার বংশগতি রক্ষা করে বা বংশবৃদ্ধির জন্য দায়ী। এই জিনে জৈব রাসায়নিক ভাষায় ভাইরাসের চরিত্র লেখা থাকে মাত্র চারটি অক্ষর ব্যবহার করে, এবং এই জিনটার দৈর্ঘ্য ৩০,০০০ শব্দের।

বংশগতি-বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী, যদি এই অক্ষর এবং শব্দাবলি (জেনেটিক কোড) কোনও ক্রমে বদলে যায়, তা হলে ভাইরাসের চরিত্রও পাল্টে যাবে। ভাইরাসের মারণশক্তি নির্ভর করে তার প্রাণভোমরার ওপর। সেটাই ভাইরাসের অবয়বের প্রোটিন বর্ম এবং যা মানব কোষের গায়ে তাকে আটকে রাখার আঁকশি তৈরি করে দেয়, যাকে বলা হয় আরবিডি প্রোটিন।

ভাইরাস আসলে একটা নির্জীব রাসায়নিক বস্তু, কিন্তু জীব কোষে থাকাকালীন সে কোষের বিপাক প্রক্রিয়া বা মেটাবলিজ়ম ধার নিয়ে দ্রুত প্রজনন করার ক্ষমতা রাখে। এই দ্রুত প্রজননের সময় সে তার ৩০,০০০ শব্দের লেখাটাকে টুকতে গিয়ে প্রচুর বানান ভুল করে বসে, কেননা সজীব প্রাণীর মতো তার সেই লেখার কোনও প্রুফ রিডিং হয় না। এই ভুল বানানের ফলে নিয়ত তার চরিত্র পাল্টায়। একেই আমরা বিজ্ঞানের ভাষায় পরিব্যক্তি বা মিউটেশন হিসাবে চিনি বা জানি।

এইতো কিছুদিন আগেই সুইজ়ারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানী অধ্যাপক রিচার্ড নেহের ‘দ্য সায়েন্টিস্ট’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে জানান, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি বিগত চার মাসে প্রায় আট বার নিজেকে পাল্টেছে। সে যদি ১৫ দিনেরও কম সময় এ ভাবে নিজেকে পাল্টায়, তা হলে এই অসুখ মহামারির রূপ নেবেই।

আজ আমরা সেই আতঙ্কেরই দোরগোড়ায়। কিন্তু এই নিয়ত পরিবর্তনশীল ভাইরাসটির প্রাণভোমরা যে প্রতিটা পরিবর্তনেই আরও ভয়াবহ বা প্রাণঘাতী-ই হয়ে উঠবে, সে কথা কিন্তু বিজ্ঞান বলছে না।

বুদ্ধি দিয়ে ভাবলে বোঝা যাবে, সে বরং খারাপ না হয়ে উল্টো আরও ভালমানুষও হয়ে উঠতে পারে এবং সেই সম্ভাবনার হারও বলা যেতে পারে ৫০ শতাংশ। কাজেই, ভয় পেয়ে লাভ নেই। এ কথাও অবশ্য সত্যি যে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউনিটি যদি এই পরিবর্তিত ভাইরাসটা চিনতে না পারে, তা হলেও আর এক বিপদ আছে। ভাইরাসটা তখন নতুন করে উৎপাত আরম্ভ করে দেবে আবার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-এর মতে, প্রতিটি সংক্রমণ ৫-৬ দিনের মাথায় আরও ২.৬ জন লোককে সংক্রমিত করে এবং এই সূত্র ধরে চললে দশটা সংক্রমণ চক্রে, অর্থাৎ ৫০ দিনের মাথায় প্রায় ৩,৫০০ জন ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা যদি একটু চেষ্টা করে এই সংক্রমণ চক্রটিকেই ভেঙে দিতে পারি, তা হলেই বিজয় কিন্তু আমাদেরই মুঠোয়। বিজ্ঞানীরা সেভাবেও চেষ্টা চালাচ্ছে বইকি।

এবার শেষ কথা বলি। অ্যান্টনি ফাউচি যিনি বর্তমানে খুবই পরিচিত মুখ আমেরিকায় ও বিশ্ববাসীর কাছে। তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউ অব এলার্জী এন্ড ইনফেকষনস ডিজিসেস এর ডিরেক্টর এবং হোয়াইট হাউজ করোনাভাইরাস টাস্কফোর্স এর একজন মেম্বার। তার ভাষায়, "গবেষণায় উঠে এসেছে মূলত শীতের সময়েই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা যেটা দেখছি আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলিতে শীতের সময়েই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। শীতের মৌসুমেই ছড়াচ্ছে, এটার ভিত্তি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে আগামী শীতের মরশুমের আগে আমাদের প্রস্তুত থাকতেই হবে। এই মৌসুমে আমরা একটা ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছি। দ্রুত পরীক্ষা করে সেটাকে যাতে আগামী শীতের মৌসুমের আগেই চূড়ান্ত করে ফেলা যায়, তার চেষ্টা চালাচ্ছি। বর্তমানে দু’টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে— একটি আমেরিকায় এবং একটি চিনে। কিন্তু সেটা চূড়ান্ত হতে এক থেকে দেড় বছর লাগবে। চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের তোড়জোড়ও চলছে। অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ড্রাগ ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের সাফল্যও নজরে রয়েছে। আমি জানি, আমরা এখন এই সংক্রমণ (করোনাভাইরাস) কমাতে সফল হবই। কিন্তু আগামী বছরের এই সময়ের জন্যও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।"

ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতেই হবে।
আর নইলে মাঝে মধ্যে সময়ের প্রয়োজনে চায়নার মতো একটিভ হতে হবে; স্বৈরতন্ত্র চালাতে হবে দুই সপ্তাহের জন্য হলেও।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×