আমাদের দেশ বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হয় ১৯৭১সালে স্পষ্টভাবে বলতে গেলে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বর।
স্বাধীনতার ৪১বছর পরে কেমন আছে এই দেশটি? কেমন আছে এই দেশের রীতিনীতি,সভ্যতা ও সংস্কৃতি আর কেমনই বা আছে এই দেশের জনগণ? আর একটা কথা যেটি বলতে হয় সেটি হল কেমন আছে এই দেশের রাজনীতি? একটি দেশের উন্নয়ন সম্পূর্ণটা নির্ভর করে রাজনীতির উপর ভিত্তি করে।
বিশেষ করে বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটি জন্মের পর আজ পর্যন- রাজনীতি থেকে কতটুকু উপকৃত হচ্ছে। রাজনীতির সাথে রাষ্ট্র সম্পর্কিত রীতিনীতি,আইন-কানুন ও আদর্শের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই রাজনীতির সাথে আমাদের জীবনের সার্বিক দিক ও বিভাগের সম্পর্ক অত্যন- গভীর।
রাজনীতি নিয়ে আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা, রাজনৈতিক দল ও দলসূমহের জোটগুলি চরমভাবে ব্যাতিব্যস্ত। এ রাজনীতি দেশের সামগ্রিক অবস'ার সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ,তার দ্বারা আমাদের জাতীয় জীবনের প্রকৃত সমস্যার সত্যিই কোন সমাধান হওয়া সম্ভব কিনা এবং আমরাই বা এ রাজনীতির ক্ষেত্রে অনুপসি'ত কেন?তার যৌক্তিকতা বিস্তরিতভাবে তার বিশ্লেষণ করা একেবারে আবশ্যক বলা যায়। অতপর এখন এই সম্পর্কে আমি আমার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে কিছু মতামত লিখিত আকারে পেশ করতে চাই।
বর্তমানে আমাদের দেশে যে রাজনীতি চলছে বলতে গেলে তা গোলামীর প্রতীকস্বরুপ। আমাদের দেশ যে অতীতে পরাধীন ছিল স্বাধীনতার পরেও এখনও স্বাধীনতার বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারেনি। আমার কথাটির একটি বাস-ব প্রমাণ হচ্ছে বর্তমানে আমাদের দেশের প্রচলিত রাজনীতি। এই রাজনীতি হবহু এখনো সেই পথেই চলছে যখন এই দেশে ইংরেজ বিধাতারা থাকাকালীন সময়ে প্রচলিত ছিল,অধীন দেশের জনগণকে গোলাম রেখে শাসন করার জন্য গোলাম উপযোগী রাজনীতি হিসেবে।
আমরা সকলেই অবগত যে উপমহাদেশে যখন বৃটিশবিরোধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছিল ,দুষ্টচক্র ইংরেজরা মনে করেছিল,এদেশে এমন এক ধরণের রাজনীতি প্রচলন করতে হবে যেটি প্রাপ্ত হয়ে এদেশের জনগণ নিজেদের স্বাধীন মনে করবে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা হবে পরাধীন।
তাই তৎকালীন শাসক মুখোশধারী লুটেরা ইংরেজরা চিন-া করল এমন এক রাজনৈতিক প্যাচে এদেশের মানুষকে জড়িয়ে ফেলতে হবে,যার মায়াবীবেড়াজালে বন্দী থেকেও মানুষ মনে করবে যে আমরা স্বাধীনতা পেয়ে গেছি আমরা আমাদের নেতা নির্বাচন করে তাদের দ্বারা শাষিত এবং তাদের দ্বারা বৈষয়িক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার উপায় পাচ্ছি।
সবদিক পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এমন এক রাজনীতি যার মধ্যে লিপ্ত থেকে জনগণ নিজেদের প্রকৃত আস'াভাজন,প্রকৃত কল্যাণ সাধনে ইচ্ছুক,সত্যের প্রতি অবিচল ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তিরা নির্বাচিত হতে,জনগণকে নেতৃত্ব দিতে এবং তাদের জাতীয় আর্দশ বাস-বায়নে কখনো সফলতা অর্জন করতে পারবেনা।
এই কুরুচিপূর্ণ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার ১৯৩৫সালের ভারত শাসন আইন জারি করে। সৃষ্ট এই আইনের ফলে কেবলমাত্র প্রাদেশিক পরিষদে নির্দিষ্টসংখ্যক সদস্য নির্বাচনে বিশেষ পরিমাণের করদাতাদের ভোট দেওয়ার অধিকার করে দেওয়া হয় বরং তা সাধারণ জনগণের জন্য নয়। আর তৎকালীন সময়ে দেশের সার্বভৌমত্ব কুক্ষিগত করে রেখেছিল বৃটিশসরকার এবং সমগ্র উপমহাদেশের উপর বৃটিশসরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বড়লাটের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কার্যকর ছিল এবং উপমহাদেশ কেন্দ্রিক কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠিত হওয়ার সুযোগ বিন্দুমাত্র ছিলনা।
আর এই জন্য ইংরেজ সরকার ১৯৩৫সনের যে ভারত শাসন আইন জারি করেছিল তারই সুবাদে ১৯৩৬সালেই সর্বপ্রথম প্রদেশ ভিত্তিক পরিষদ গঠনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে ভোটদানের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বিশেষ কয়েকজন করদাতাদা ব্যাক্তিদের তা ব্যতীত সাধারন জনগণ এতে অংশগ্রহন করতে পারেনি।
এতে বিভিন্ন দল টিকিট দিয়ে নিজেদের দলীয় ব্যাক্তিদেরকে প্রার্থী হিসেবে দাড়করিয়ে ছিল এবং তাদের নির্বাচনে জয়ী করানোর জন্য বিশাল মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করেছিল এবং দলীয় কর্মী এবং সেচ্ছাসেবকদের দ্বারা প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক ক্যানভাস করানো হয়েছিল।বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠন,নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ,ভলেন্টিয়ার পাঠিয়ে ক্যানভাস করানো টাকা দিয়ে ভোট ক্রয় এই সার কথা। এই দৃষ্টিতে প্রচলিত বর্তমান রাজনীতি অবস্থা বিবেচনা করলে এই দুইয়ের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গী ও বাস-ব কাজের দিক দিয়ে কোন মৌলিক পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হবেনা।
তখন প্রার্থী ভোটদাতাদের বাড়ী গিয়ে গিয়ে ভোট চাইত এখনও তাই হয়।এখন যেমন জনগণকে প্রার্থীরা আকাশের চাঁদ তুলে দেওয়ার ওয়াদা করে,সেই সময় একই ওয়াদা করত। তৎকালীন সময় দলের টিকিট নিয়ে প্রার্থী দাড়াত,এখনও দাড়ায়।বর্তমানে এখন যেমন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দলের পক্ষ থেকে অর্থ ব্যয় করে আবার অনেক প্রার্থীর নিজ থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে তখনও সেইভাবে অর্থ ব্যয় করা হত। বর্তমানে দলীয়কর্মী ও সেচ্ছাসেবক প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী করানোর জন্য যেভাবে কাজ করতে থাকে পূর্বে তাই হত। তখনও নগদ টাকা ছড়াছড়ি ছিল এখনো তাই হয়।
জাল ভোটের প্র্রচলন ছিল এখনো আছে এবং বাক্স ছিনতাই প্রচলনও ছিল এখন বর্তমানে তা একটু বেশি পরিমানে হয় যাকে আমরা এককথায় বলতে পারি ব্যালট ডাকাতি এখন তার ধরণ যাই হোক।তখনও নির্বাচিত হওয়ার পর প্রার্থী জনগণের কল্যাণে কিছুই করতে পারতনা,এখনো সেটার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। প্রিয় পাঠকবৃন্দ এ থেকে কি বোঝা যায়না যে পরাধীনতার আমলের রাজনীতি ও স্বাধীনতার আমলের রাজনীতি একেবারেই পার্থক্যকহীন ও অভিন্ন।
তাই এটা উপলব্ধিযোগ্য যে বর্তমান প্রচলিত রাজনীতি পরাধীনতার প্রতীকটিকে শুধু বহন করছেনা বরং পরাধীনতার চরিত্রকে এখনও দৃঢ় ও স্থায়ীত্বের রুপ দিয়েছে। আর এজন্যই দেশের বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা এখনও রাজনীতির বিচরনক্ষেত্রে অনুপসি'ত। দেশের কিছু সংখ্যক জনগোষ্ঠী প্রকৃত বিষয়টি উপলব্ধি করতে না পারলেও অনেক বুদ্ধিসম্পন্ন জনগণ মনে করে প্রকৃত তা স্বাধীনতার পক্ষে থাকা উচিত এবং পরাধীনতাকে চিরতরে মুছে ফেলাই এখন ঈমানের ঐকান্তিক দাবী।
বর্তমানে আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন রাজনীতি যেই চাকা চলছে সেটি ধর্মনিরপেক্ষতা ভিত্তিক রাজনীতি। ইংরেজী Socalism যার বাংলা পরিভাষাটি ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদটি ইউরোপীয় খৃষ্টানধর্মলম্বীদের একটি সৃষ্ট মতবাদ। এই মতবাদটি বস্তুবাদী ধ্যানধারণার একটি ফসল।মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নাই। জন্তু জানোয়ারদের ন্যায় অন্যায় বিচার করার ক্ষমতা,নৈতিকতা,ভালমন্দ, হালাল কোনটি হারাম কোনটি এরা তা বিবেচনা করতে পারেনা। এই মতবাদ অনুযায়ী মানুষের ও তা থাকবেনা। যদিও ধর্ম পালনের সুযোগ আছে কিন্তু তা শুধু ব্যাক্তিজীবনে।
সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নয়। এই মতবাদে একজন মানুষকে সব ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়। অন্যান্য ধর্মের কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু একজন মুসলমান হয়ে কিভাবে সব ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রাখা সম্ভব।
বিশেষ করে একজন মুসলমান কোন দিন নিরপেক্ষ হতে পারেনা কারণ একজন মুসলমান আজীবন আল্লাহর পক্ষ অবলম্বন করে যাবে। সুতরাং একজন মুসলিম হয়ে ধর্মনিরপেক্ষবাদের অনুসারী হওয়া একেবারেই কাম্য নয়।
তারপরও যদি মানুষ ধর্মনিরপেক্ষবাদের অনুসারী হয়ে থাকে তাহলেতো বলা যায় ধর্মহীন জীবন পশুর ন্যায়। ধর্মনিরপেক্ষবাদের অনুসারী একজন মুসলমান যখন নামাযের জন্য মসজিদে গমন করে তখন সে আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকেনা সে তো ধর্মের পক্ষে হয়ে যায়।ঠিক সেইভাবে ধর্মনিরপেক্ষবাদের অনুসারী একজন হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান যখন যথাক্রমে মন্দির,প্যাগোডা,গীর্জায় যায় তখন কি সে আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকে তখন সে ধর্মের পক্ষে হয়ে যায়। তাই আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি এই ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদটি সর্ম্পূণ অসত্য,ভিত্তিহীন,অবৈজ্ঞানিক এর কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারেনা।
তাই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে মানুষকে খুজে পাওয়া যাবেনা সেখানে মানুষতো দুরের কথা একজন মানুষের অসি-ত্ব বিলীন হয়ে যায়। এখন এই ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের মুখোশ ধারণ করে আছে এবং ভবিষ্যতে এর ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস'া করা হবে।জনগণকে বোঝানো হবে দেশের জনগণই হচ্ছে দেশের ভাগ্যের পরিবর্তক কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয় তা হবে বিশাল মাপের প্রতারণা মাত্র। দেশে বর্তমানে যে রাজনীতিতে যেসব দল ও জোট অত্যন- সক্রিয় তাদের রাজনৈতিক তৎপরতাকে বলা হচ্ছে রাজনীতি। রাষ্ট্রের জাতীয় জীবনে কোন আর্দশিক পরিবর্তন তারা আনবেনা বরং নিজেদের ও নিজেদের আদর্শিক গুরুকে নিয়ে ব্যস-। এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কখনো মনে হয় কারো পৈতৃক আবার কখনো কারো স্বামীর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। তারাই তাদের ভোগ দখল করবে জনগণ কিছুই নয়।
আর বর্তমানে সরকারী দল ও বিরোধী দলের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব থেকে থাকলেও তা হচ্ছে ক্ষমতা লাভের দ্বন্দ কোন আদর্শিক দ্বন্দ নয়। পরিশেষে বলতে চাই বর্তমান প্রচলিত রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতা লাভের দ্বন্দের রাজনীতি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের এই দ্বন্দ জাতিকে এক চরম দুর্দশার মধ্যে নিক্ষেপ করে ফেলছে।
তাই এখনো দেশের অনেক সংখ্যক জনগণ রাজনীতিতে অনুপস্থিত তা আসলেই যুক্তিসংগত। তাই আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই ক্ষমতা লাভের এই দ্বন্দ পরিহার করে জনগণের জন্য রাজনীতি করার প্রচলন শুরু করুন এবং সেটি হবে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতি। আর যখন এই প্রচলন আমাদের দেশে চালু হবে তাহলেই কেবল দেশের জনগণ যখন রাজনীতিকে প্রশ্ন করবে রাজনীতি কেমন আছ? তখনই রাজনীতি গর্বের সহিত বলে উঠবে আমি ভাল আছি।
ভুল হলে মাফ করবেন আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১২ রাত ২:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



