
নীল আকাশের নিচে হাঁটছিলাম, জায়গাটা যেন প্রকৃতির কবিতা। পাখিদের কিচিরমিচির, নরম রোদ, আর বাতাসের মৃদু স্পর্শ যেন কোনো অজানা সুখের বার্তা নিয়ে এসেছে। মুগ্ধ হয়ে কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করলাম। এরপর স্ক্রল করতে করতে এক আঙ্কেলের ছবি দেখলাম। লাইক দিলাম। কিন্তু ফেসবুক থেকে মন যেন সরে গেলো অন্য কোথাও—গাইবান্ধা।
গাইবান্ধা জেলার কথা মনে হতেই বুকটা ভারী হয়ে উঠল। ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আব্বু সেখানে চাকরি করেছেন। সে সময়ের অনেক স্মৃতি এখনো হৃদয়ের কোণে লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেই জেলার কথা মনে পড়া মানেই আরেকটি গভীর বেদনাকে জাগিয়ে তোলা। কারণ গাইবান্ধা মানে শুধু স্মৃতি নয়, সেখানে রয়ে গেছে আমার জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়—একজন মানুষ। সে যে কতটা স্পেশাল, তা বোঝানোর ভাষা যেন নেই। তবে তার কাছে আমি হয়তো ততটাই তুচ্ছ, যতটা গোধূলির আলো রাতের অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায়।
প্রিন্সেস ডায়না একবার বলেছিলেন, "আমাকে সবাই ভালোবেসেছে। কিন্তু আমি যাকে ভালোবেসেছি, সে আমাকে ভালোবাসেনি।" তাঁর কথার মাঝে যেন আমার মনের কান্না মিলে যায়। সেই মানুষটি আমাকে ভুল বুঝে দূরে চলে গেছে। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টাও করতে পারিনি।

শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারের গানের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে—
“নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম
বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম।”
তার মোবাইল নম্বর হৃদয়ের গভীরে সেইভ করা আছে। চিঠি পাঠানোর জন্য ডাকঘর প্রস্তুত। টেলিগ্রামের ডিজিটাল বাটনও অপেক্ষায় আছে। কিন্তু আমি তাকে জানাতে পারছি না। আমার হৃদয় ছটফট করছে। মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত একজন পানির জন্য যেমন আকুল হয়, আমার কান তার কণ্ঠ শোনার জন্য তেমনই উন্মুখ। তাকে একবার দেখতে চাই।
তবে আমি জানি, যদি তাকে ফোন করি, তার মা হয়তো মনে করবেন আমি ইভটিজিং করছি। আমাদের সমাজের আইনও এমন যে, অভিযোগ এলেই আমাকে অপরাধী বানাবে। আইন তো আমার বুকের জমে থাকা কষ্ট দেখবে না। দেখবে না আমার হৃদয়ের দহন।
অসহায়ত্বের এই অনুভূতিগুলো কোথাও গিয়ে জমা দিতে চাই। হয়তো এই লেখাটুকুই আমার ব্যথার আশ্রয়। আইন তো অন্ধ। আইন তো এটা দেখবে না যে আমার হৃদয় জ্বলে পুরে আঙ্গার হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



