
আজ আমি এমন একটি সপ্ন দেখেছিলাম। সেই সপ্নকে গল্পে রুপ দান করিয়ে ব্লগ পোস্ট করলাম। ইহার ভিডিও রুপ ইউটুবে দেওয়া হলো। এই যে ভিডিও এর লিংক
মঙ্গলের পরবাস: এক স্বপ্নযাত্রার গল্প

আমার চোখ খুলতেই বুঝতে পারলাম, আমি আর পৃথিবীতে নেই। চারপাশে ধূসর লাল মাটির বিস্তীর্ণ প্রান্তর, ঝকঝকে আকাশে দুই সূর্যের ছায়া, আর দূরে দূরে স্থাপিত অদ্ভুত আকৃতির গম্বুজের মতো ঘরবাড়ি। আমি মঙ্গল গ্রহে। মানুষ পৃথিবী ছেড়ে মঙ্গল গ্রহে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম, এই যাত্রা ততটা সহজ ছিল না।
মঙ্গলের সংগ্রাম
মঙ্গলের কম মাধ্যাকর্ষণের কারণে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছিল। তাদের লম্বা হওয়ার প্রক্রিয়াটা যেন থেমে গেছে। বড়দের শরীরেও মঙ্গলের হালকা বায়ুমণ্ডল ও বিকিরণের কারণে নানা রোগ দেখা দিচ্ছিল। প্রতিদিনই কেউ না কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। অথচ পৃথিবীতে মানুষ ছিল এক শক্তিশালী জীব। পৃথিবীর আর্দ্র বাতাস, সবুজ প্রকৃতি আর জীবনের নানা বৈচিত্র্য যেন আমাদের জন্যই তৈরি। মঙ্গলে এমন কোনো অনুভূতি ছিল না। আমার মনেও প্রশ্ন জেগেছিল, “মানুষ কেন পৃথিবী ছেড়ে এখানে এলো?”

পৃথিবীতে ফেরা
একসময়, আমি মঙ্গলের কঠিন জীবন ছেড়ে পৃথিবীতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। রকেটের গর্জন শেষে যখন আমি পৃথিবীতে পা রাখলাম, তখন সেখানে এক যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর চিত্র দেখলাম। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মানুষের বেঁচে থাকার চেষ্টা স্পষ্ট ছিল। এ সময় আমি আসমা নামের এক মেয়ের সাথে দেখা করি। আসমা শুনলো আমার মঙ্গল গ্রহের অভিজ্ঞতার কথা। হাসিমুখে সে বললো, “পৃথিবীর মত জায়গা আর কোথাও নেই। মানুষ কেন তা বুঝতে পারে না?”
তার কথা শুনে মনে হলো, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, জঙ্গল, নদী, পাহাড়—সবই যেন মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পৃথিবীই মানুষকে জন্ম দিয়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষ অন্য কোথাও জীবন খুঁজতে ছুটে যায়।

টাইম ট্রাভেল এবং মঙ্গলের ভবিষ্যৎ
একদিন, আবার মঙ্গলে যাওয়ার প্রোগ্রাম শুরু হলো। কিন্তু এবার আমি আরেকটি সিদ্ধান্ত নিলাম—টাইম ট্রাভেল। আমি দেখতে চাইলাম, এক কোটি বছর পর মঙ্গল গ্রহ কেমন হবে। টাইম মেশিন চালু হতেই আমি ভবিষ্যতের মঙ্গলে পৌঁছলাম।

আমি দেখলাম, মঙ্গলের লাল মাটির উপর সবুজ গাছপালা জন্মেছে। ছোট ছোট নদী বয়ে চলেছে, আকাশে মেঘ ভাসছে। আর মানুষ? তারা যেন পৃথিবীর প্রস্তর যুগের মানুষের মত। তারা প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে বেঁচে আছে। আধুনিক প্রযুক্তি হারিয়ে গেছে। তাদের চোখে আদিম বন্যতা, কিন্তু তারা মুক্ত।

আর তখনই বুঝতে পারলাম, কোটি বছরের বিবর্তনে মানুষের ডিএনএ মঙ্গল গ্রহের পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর জন্য নিজেকে বদলে নিয়েছে। যেন প্রকৃতি নিজের নিয়মে মঙ্গলের জন্য নতুন এক মানব জাতি তৈরি করে ফেলেছে।
এক অমীমাংসিত প্রশ্ন
ভবিষ্যৎ থেকে ফিরে এসে আমি আবার ভাবনায় ডুবে গেলাম। মানুষ কি পৃথিবীর বাইরেও টিকে থাকতে পারবে? নাকি প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে সবকিছু ঠিক করে নেবে?
আসমার কথা মনে পড়ল। "পৃথিবীই ভালো ছিলো, তাই না?" তার কথার উত্তর যেন ভবিষ্যতের মঙ্গলই দিয়ে গেল। হয়তো একদিন মানুষ নতুন পৃথিবী গড়ে তুলবে। কিন্তু আদতে, পৃথিবী ছিল আমাদের প্রথম এবং প্রকৃত বাড়ি।


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



