
একজন সাধারণ মানুষ যদি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকটি মুরগি পোষে এবং সেখান থেকে পাওয়া ডিম বানিজ্যিকভাবে বাজারে বিক্রি না-ও করে, তবুও এই কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP)-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিষয়টি বোঝার জন্য ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করা যাক
১. স্ব-উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবারের ভোগ মেটানো:
GDP পরিমাপে কেবল বাজারে বিক্রিত পণ্যের মূল্যই ধরা হয় না—অনেক ক্ষেত্রে **স্ব-উৎপাদিত ও স্ব-ভোগ্য পণ্যও** এর অন্তর্ভুক্ত হয়। যদি কেউ নিজের ঘরের জন্য ডিম উৎপাদন করে এবং তা পরিবারে খায়, তাহলে বাইরের বাজার থেকে ডিম না কিনে সে পরিবারের একটি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এর ফলে পরিবারটি টাকা বাঁচাচ্ছে, যা এক প্রকার **অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম** হিসেবে ধরা যায়।
২. কৃষি খাতের একটি অংশ:
বাংলাদেশে কৃষি খাতের মধ্যে **পোলট্রি** বা মুরগি পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপখাত। ছোট পরিসরে হলেও গ্রামীণ পর্যায়ে লাখ লাখ পরিবার ডিম ও মুরগি উৎপাদনে জড়িত। এই সব ক্ষুদ্র উৎপাদকদের সম্মিলিত অবদানই দেশের **পোলট্রি উৎপাদনের বড় অংশ** গঠন করে। ফলে একজন মানুষের মুরগি পালনও এই জাতীয় উৎপাদনের অংশ হয়ে যায়।
৩. আমদানির উপর নির্ভরতা কমানো ও স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার:
যদি মানুষ নিজে ডিম উৎপাদন করে, তাহলে বাজার থেকে ডিম কেনার প্রয়োজন কমে যায়। এর মানে স্থানীয় চাহিদা স্থানীয় উৎপাদন দিয়েই পূরণ হচ্ছে। এতে করে **আমদানি ব্যয় কমে**, অর্থের অভ্যন্তরীণ প্রবাহ বজায় থাকে এবং **জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়**—যা পরোক্ষভাবে GDP বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৪. গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাকরি ও আয়ের পরিপূরক উৎস:
যদিও তিনি ডিম বিক্রি করছেন না, তবুও মুরগি পালনে সময়, শ্রম ও সম্পদ ব্যয় হচ্ছে। পরিবারে কেউ হয়তো এর যত্ন নিচ্ছে, খাবার দিচ্ছে, ঘর বানাচ্ছে ইত্যাদি। এই শ্রম ও সম্পদ **অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের** আওতায় পড়ে। অনেক সময় উদ্বৃত্ত ডিম প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের মধ্যে বিনিময়ও হয়, যা **অর্থনৈতিক বিনিময়ের একটি সামাজিক রূপ**।
৫. জাতীয় পরিসংখ্যানে ক্ষুদ্র উৎপাদকদের সম্মিলিত অবদান:
বাংলাদেশে লাখো পরিবার এভাবে মুরগি ও ডিম উৎপাদনে যুক্ত। যদি একেকটি পরিবারকে তুচ্ছ ধরা হয়, তবুও সবাইকে একসাথে ধরলে এটি একটি **বৃহৎ জাতীয় উৎপাদনের** অংশ হয়ে দাঁড়ায়। পরিসংখ্যান ব্যুরো এসব ছোটখাটো উৎপাদনকে কৃষি খাতের উপখাত হিসেবে ধরে জাতীয় হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করে।
উপসংহার
একজন লোকের মুরগি পালন এবং ডিম উৎপাদন হয়তো ছোট পরিসরের কাজ, কিন্তু **জাতীয় অর্থনীতির দৃষ্টিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র ইউনিট**, যা সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের **কৃষি উৎপাদন, আত্মনির্ভরতা ও অভ্যন্তরীণ বাজারের স্থিতিশীলতায়** ভূমিকা রাখে। এই ধরনের উৎপাদন দেশের GDP বৃদ্ধিতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ—দুইভাবেই অবদান রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


