somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার গোপন কালো অধ্যায়

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইচ এস সি শেষ করে ঢাকায় আসছি “উদ্ভাস” কোচিং সেন্টার এ পড়তে। মনে বড় আশা ভাল একটা ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে বাবা মায়ের কষ্ট দূর করার পথে এক ধাপ
আমার বাড়ি পদ্মার পাড়ের একটি ছোট্ট গ্রামে। বাবা বর্গা চাষি। বড় ভাই গঞ্জের চায়ের দোকানে কাজ করে। মা চাটাই বুনে বিক্রি করে। নিম্নবিত্ত বলতে যা বুঝায় আমি তাই। বাবার অনেক ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। কিন্তু অভাবের কারনে হয়ে উঠেনি। আমার বড় ভাই ও একই কারনে পড়া চালিয়ে যেতে পারেনি। স্রোতের বিপরীতে আমি হেঁটেছিলাম। ৫ মাইল খালি পায়ে হেঁটে পাশের গ্রামে পড়তে জেতাম। লেখা পড়ার প্রতি একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল পরিবারের অভাব দূর করার চিন্তা। প্রতিটি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যের পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্যই পেটের অন্য যোগানের জন্য একটি ভাল চাকরি। ভাই এর আয় থেকে অল্প অল্প করে জমিয়ে আমার বই খাতার খরচ দেওয়া হত। আর এভাবেই আমি অতি কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে এইচ এস সি ও পাস করে ফেললাম। গ্রামের মোবারক চাচা একদিন বাবাকে বলেছিল আমাকে পড়ালেখা না করিয়ে খেতের কাজে নামিয়ে দিতে। পড়ালেখা করে নাকি আমার কিছু হবে না। কথাটা শুনে বাবার জেদ চেপে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরে আমাকে বলেছিলেন তোকে যেকরেই হোক মানুষ হতে হবে। (আমাদের মতো গরীবের কাছে বড়লোক হতে পারা মানেই মানুষ হতে পারা)
সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যই ঢাকা আসা। আমি মানা করেছিলাম এত টাকা দিয়ে কোচিং করতে। কিন্তু আমার বাবা কোন কথাই শুনলেন না। তিনি আমাদের গরু টা বেচে দিলেন। ১০০০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হলাম আর হাতে থাকল ৫০০০ টাকা। আমার কোন ধারনাই ছিল না ঢাকা সম্পর্কে। ৫০০০ টাকা হাতে পেয়ে ভেবেছিলাম বেশ ভালভাবেই কেটে যাবে ৩ মাস। কিন্তু ১ সপ্তাহ যাওয়ার পর টের পেলাম এই শহরে ৫০০০ কোন টাকাই না। ১ সপ্তাহ শেষে যখন দেখলাম কোনভাবেই আমি ৫০০০ দিয়ে ৩ মাস চালাতে পারব না তখন লাগাতার রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু ৪ দিন রোজা রাখার পর দুর্বল হয়ে পড়লাম। ঠিক মতো পড়তেও পারছিলাম না। রোজা রেখে শুধু চিনির পানিতে মুড়ি ভিজিয়ে খেলে তো আর সবল থাকা যায় না। উপায় না দেখে বাবাকে ফোন দিলাম। কিন্তু বাবার কাছে যা শুনলাম তাতে আর টাকা চাইতে পারলাম না। খরায় এবার ফসল ভাল হয় নি। বাড়িতে সবাই নিশ্চিত দুবেলা না খেয়ে থাকবে।
আশাহত আমি একবার ভাবলাম কি হবে পড়ে? বাবা মাকে কষ্টে রেখে এত কষ্ট করে পড়তে ইচ্ছা করল না আর।
ঠিক তখনি বাবার মুখ টা চোখের সামনে ভেসে উঠল। আর নিজেকে আর প্রত্যয়ী করে তুল্লাম। গ্রামের ছেলে আমি। কাজ করতে করতে গায়ের জোর ভালই ছিল। পরদিন ঘুম থেকে উঠেই কাজের সন্ধানে নেমে পড়লাম। একটা রিকশার গ্যারেজে গেলাম প্রথমে কিন্তু কেউ রিকশা ভাড়া দিল না। অপরিচিত আমি। নেই কোন লাইসেন্স। কে দিবে রিকশা? সব জায়গায় ঘুরলাম, কোন লাভ হল না। শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত আমি বসে পড়লাম। চোখ থেকে ২ ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। হতাশ ছিলাম সন্দেহ নেই কিন্তু হেরে যাই নি। টি এস সি তে বসে দেখলাম সবাই কত কত ব্যাবসা করছে আর আমি এত শক্তি থাকার পর ও কিছু করতে পারছি না!!! উঠে দাঁড়ালাম। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি প্রেমিক প্রেমিকা রা জুটি বেঁধে বসে আছে। সবার চোখে খুশির ঝিলিক। সবার প্রতি ঘৃণা জন্মাল। সবাইকে শত্রু মনে হল। মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না। হেঁটেই ফার্মগেট রওনা দিলাম। রাত বাজে ১১ টা। পানি ছাড়া সারাদিন কিছুই খাই নি। কিন্ত ক্ষুধা অনুভূত হচ্ছে না। সামনে পুরা রাস্তা ফাঁকা। রাজারবাগের গলি দিয়ে হাঁটছি। সামনে একজন বৃদ্ধ লোক ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে আমার দিকে আসছেন। আমার হটাত করে কি যে হল। লোকটার পথ আটকালাম। যা আছে সব বের করে দিতে বললাম!!!! বৃদ্ধ লোক আমার পায়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। আমি তখন পশু হয়ে গেছি। পুরা পৃথিবী আমার শত্রু মনে করছি। আমার চাই টাকা। শুধুই টাকা। কান্নায় আমার মন গলল না। থাপ্পর দিয়ে লোকটাকে দাঁড় করালাম। পকেট হাতিয়ে দেখি একটি মোটা টাকার বান্ডিল। এত টাকা একসাথে আমি কোনদিন হাতে নেই নাই।
লোকটা এইদিকে কেঁদেই যাচ্ছে। তার মেয়ের জামাই যৌতুকের জন্য মেয়ের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। বহু কষ্টে জমি বিক্রি করে এই টাকা সে যোগাড় করেছে। টাকা পেয়ে এক মুহূর্ত দেরি না করে রওনা দিয়েছে। রাতের ট্রেন নেমেছে।
লোকটার কান্না, অন অনুনয় কিছুই গ্রাহ্য করলাম না। নিজের বাবার মুখে হাসি ফুটাতে আমি সব করতে পারি। লোকটাকে ছাড়াতে না পেরে একটা লাথি দিয়ে ফেলে দিলাম। তারপর দৌড়ে নিজের মেসে উঠলাম। ব্যাগ গুছিয়ে তখনি মেস ছেড়ে দিলাম। সেইরাত ধানমন্ডি লেকে কাটিয়ে পরের দিন সকালে ভোরে উঠে একটা বোর্ডিং এ উঠলাম। টাকার বান্ডিল তা বের করে দেখি ত্রিশ হাজারের মতো আছে। ১ সপ্তাহ বোর্ডিং এ থেকে পরে আবার মেসে উঠলাম। এবার আমার টাকার কোন চিন্তা ছিল না। নিশ্চিন্ত মনে পড়ালেখা করতে থাকলাম। সারাদিন রাত মন দিয়ে পড়তাম।
একসময় ভর্তি পরীক্ষা চলে এল। রুয়েট এ চান্স পেলাম। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে লাগলাম। অতিকষ্টে পড়াশুনা শেষ করা আমি অবশেষে এখন প্রতিষ্ঠিত একজন মানুষ। বেক্সিমকো কোম্পানি তে একটি উঁচু পোস্টে আছি। মাসিক বেতন ৬ অঙ্কের। কিন্তু প্রতি মাসে আমি ৩০০০০ টাকা আলাদা করে রাখি। আর ভিড়ের মধ্যে একটি বৃদ্ধ লোকের মুখ খুঁজি। যেদিন পাব সেদিন হয়ত আমি শান্তি করে কয়টা ভাত খেতে পারব।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জঙ্গি শক্তির ছায়া, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×