somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম, সমাজ আর আমাদের নিজস্ব সৌন্দর্যতত্ত্ব

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালি, বাঙালির ঐতিহ্য, কাব্য, সংস্কৃতিকে ছোট করে দেখার কোন কারণ নেই। এই পোস্টে কবি-সাহিত্যিক বা কোন ধর্মকেও নিচু করার চেষ্টা করা হয় নি। ত্রুটিসমূহের জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পাঠকের বিচক্ষনতা কাম্য।

জাতি হিশেবে বাঙালিকে খুব সৌখিন বলেই জানি আমরা, অন্তত ছোটবেলা থেকে তাই শিখি। আমাদের গদ্যে, প্রবন্ধে আর কবিতায় বাঙালি সৌখিনতার কথা কোন অংশে কম করে লেখা হয় নি। আমাদের কবিদের এক আদিম মানসিকতা হল, কলম যখন হাতে নিয়েছি তখন লেখার বিষয় বস্তুকে একদম আকাশে না তুলে ছাড়বো না। আবার যদি কারো নিন্দার প্রসঙ্গ আসে, আমাদের কবিরা তাকে পদতলে নিষ্পেশন করেও ক্ষান্ত হন না, তার চরিত্রের সাথে মিল রেখে নতুন নতুন শব্দও তৈরী করেন। তেমনি বাঙালির সৌখিনতা নিয়ে তারা যখন ইতিবাচক কিছু লিখতে বসেছিলেন, তাতে চক্ষুলজ্জার দরুণ আত্মপ্রশংসার আস্ফালন কিছুমাত্র কমে নি । কিন্তু আমাদের সৌন্দর্য সচেতনতা, সৌন্দর্য বোধ আর সৌখিনতা শুধু পশ্চিমের ঘটি দের তুলনায় কিছুমাত্র বেশি হতে পারে, এছাড়া নয়।
আমাদের গ্রামের রাস্তা গুলো শুধু সরুই নয়, কখনো যেন তা চেপে ধরে দুইদিক থেকে। আমরা তাকে মেঠোপথ বলে ডাকি। অথচ দুই ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দিলে গ্রামের বিশাল গৃহস্থের কোন রূপ ক্ষতি হয়ে যায় না। গ্রামের মাটির, ছনের ঘর পর্যন্ত ঠিক আছে, তবে টিনের ঘরের কদাকার রূপ টা কারো চোখে পরে এমন লোক মেলা ভার। শুধু বাহ্যিক ভাবেই না, আমাদের পরস্পরবিরোধী মানসিকতাও খুব কদাকার। আমরা শুনে অভ্যস্ত, দাদী নানি রা নাকি রাতে কুপি জ্বেলে গল্প বলেন। তবে ব্যবহারিক গ্রামীণ সমাজে এমন দৃষ্টান্ত কমই দেখা যায়। আমরা বিশ্বাস করি শূকর খেলে ধর্মের ক্ষতি হয়, সিগারেট খেলে নয়। আমরা যৌতুক চাইতে লজ্জা পাই না, কিন্ত তাকে যৌতুক না বলে বিভিন্ন প্রতিশব্দ ব্যবহার করে, বেয়াই কে ত্যাড়া কথা বলে যৌতুক আদায় করি। আবার মেহমান দের বলি,"ভাবী, আর বইলেন না, আমরা তো কিছুইই চাই নি। কোন চাওয়া পাওয়া হয় নি, এক কাপড়ে মেয়ে আনতে রাজী ছিলাম, আমাদের একটা মাত্র ছেলে বলে কথা"। সভা সেমিনারে আবার নিজেরাই যৌতুক বিরোধী ভাষণ দিয়ে নিজেকে মহান ভেবে আত্মতৃপ্তি পাই। কোন মেয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে তার প্রিয়জনকে চুমু খেলে তা আমরা সবাই দেখি, আর সেই মেয়েটাই ধর্ষিত হলে আমরা পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যাই। কোন মেয়ে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তাকে বলি চরিত্রহীন,"দোস্ত, আর বলিস না, মেয়েটা তো একটা ইয়ে"
আমাদের শহরের রাস্তা গুলো দৃষ্টিকটু। সেই রাস্তা গুলো শহরবাসীকে আকাশ দেখার যেটুকু সুযোগও দেয়, সেই সুযোগে লেগে থাকে তারের জঞ্জাল। আমাদের রাস্তায় পরে থাকে চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের প্যাকেট, বোতল সহ নানান হাবিজাবি। রাতের বেলা জানালা দিয়ে ব্যবহৃত কনডম রাস্তায় ছুড়ে ফেলতেও আমরা দ্বিধা করি না। আমাদের নগর সংস্কারকরাই, তাদের রঙ চং এর পোস্টারে শহরকে দূষিত করে ফেলেন। আমাদের কখনো মনে হয় না, যেখানে সেখানে "যৌন, চর্ম, পাইলস" অথবা "মিলনে অক্ষমতা, দ্রুত বীর্যপাত" টাইপ পোস্টার লাগানো আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমাদেরই হাসির পাত্র করে তোলে। রিক্সায় মাইক লাগিয়ে ওয়াজ, চোখের হাসপাতাল বা স্কুলের প্রচার করা যে খুবই অমার্জিত আর শব্দের দুষণীয় এক কাজ তাও একটিবার কারো মনে হয় না। আমরা ২১শে ফেব্রুয়ারি পালনের ক্ষেত্রে হিন্দি গান শুনে এবং নিজেদের "ডিজে" বলে আরাম পাই। আমাদের শহরের রাস্তাগুলো প্রতি ৫ বছরে একবার করে উচু করা হয়, তাতেও হাটুজল হতে মুক্তি মেলে না কোন বছর। এসব ক্ষেত্রে অনেকে দারিদ্রের অযুহাত দিবেন, তাদের মনে করিয়ে দেবো ফিলিপাইন, মালদ্বীপ, গ্রীস, মেক্সিকোর জনগণের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আমাদের মতই। পার্থক্য দৃষ্টিভঙ্গিতে।
প্রাগৈতিহাসিক কালেও আমাদের অবস্থা এর চাইতে খুব ভালো ছিল না। মোঘল, ব্রিটিশরা এদেশে আসার আগে খুব বেশি উন্নতি হয় নি স্থাপত্য নিদর্শনে। বাকি যেটুকু স্থাপত্য আছে তার কৃতিত্ব তূর্কী আর আফগান দের। দেশীয় স্থাপত্য হিসেবে ২-৪ টা নিদর্শন ছাড়া কিছু চোখে পরে না, তাও সেই পালদের আমলের। গ্রামের কিছু জমিদার বাড়ি অবশ্য আছে, তবে তা হিন্দুরাই করে গেছে। বাঙালি মুসলিম, সৌন্দর্য বিষয়ে বড়ই উদাসীন। হিন্দুত্ব ত্যাগের অযুহাতে শেষ যেটুকু সৌন্দর্যবোধ ছিল তা তো গেছেই, তার বদলে ইসলামি স্থাপত্যকলা আকড়ে ধরার কোন প্রয়াস তারা করেনি।

বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা সৌখিন হচ্ছি, তা যে শখ থেকে করছি এমন টা নয়। আমাদের হাতে টাকা আছে, সেটা খরচ করার জায়গা পাচ্ছি না বলে নিজেদের ঘড়দোর সুন্দর করছি। দ্বিতীয়ত, লোকে যেন জানতে পারে আমার টাকা আছে সেইজন্য সুন্দর করছি। এই সৌন্দর্যবোধও খুব আত্মকেন্দ্রিক। চারপাশের কদাকার আবর্জনার স্তূপের মাঝে প্রায়ই প্রাসাদসম দালান দাঁড়িয়ে যায়, দালানের মালিক তার আশেপাশের আবর্জনা সরিয়ে ফেলে না কারণ গরজ টা তো তার না। বাড়ির সামনের রাস্তা ভাঙা, একটু বৃষ্টি পড়লে হাটুপানি। কিন্তু এসব তার দেখার বিষয় না, কারণ গরজ টা তার না।

আমাদের অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত পাতি বুর্জোয়ারা সমাজ সংস্কারের জন্য বৃক্ষরোপণ করেন না, এলাকায় একটা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন না বা এনজিও তৈরী করেন না। তারা সারাজীবনের কামাই দিয়ে একটা পাচতলা বিশিষ্ট দালান করেন, যেটুকু সমাজকল্যাণ করেন তাও মসজিদ কেন্দ্রিক। তবে তাদের মসজিদ কেন্দ্রিক সমাজকল্যাণ ইসলামী মসজিদ কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা বা নবী(স) এর দানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে না। মসজিদের গেটে কয়জন না খেয়ে হাত পেতেছে তা না দেখলেও চলবে, তবে মসজিদের সিড়ি মারবেলের, মেঝে টাইলসের আর ফ্যানের বদলে এসি চাই। যত দামী মসজিদে নামাজ পড়া যায়, নেকী তত বেশি, এই ভাবনাতেই ব্যাকুল তারা। দানের ক্ষেত্রে তারা কাওকে ১০০ টাকা দেন না, বরং ৫০ জন কে ২ টাকার নোট দেন। এতে ৫০ টা সালাম পাওয়া যায়। এই তাদের সৌন্দর্যবোধ।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:৩৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×