কুযুক্তি-১ ও তার জবাবঃ
অভি দা তার বইয়ে পূর্ববর্তী সভ্যতার মানুষদের সমকামিতার উদাহরন টেনে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।
এখন অভি দা কে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, দাদা ধর্ষণ আর অন্যায় ভাবে হত্যা তো প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।তাই আপনার জীবন সঙ্গিনীকে যদি কেউ ধর্ষণ করে হত্যা করে তবে ওই অপরাধীর বিরুদ্ধে আপনি মামলা করবেন কি????? নাকি বলবেন যে , মানব সমাজের আদিকাল থেকে যেহেতু চলে আসছে তাই এটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা, একে আমাদের স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে হবে!!!!!!
আপনার রুচির উপর যদিও আমি আস্থা রাখতে পারছি না তবুও মনে হচ্ছে আপনি ওই হত্যাকাণ্ডকে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি বলে চালিয়ে দিবেন না।
তাই আদিকালের কোনও অন্যায় কাজের উদাহরন দিয়ে তাকে বৈধ বলা কিন্তু কোনও বুদ্ধিমান মানুষের কাজ হতে পারে না। চুরি, দাকাতি,অন্যায় ভাবে হত্যা,সমকামিতা এসবই মানুষের আচরণগত বিকৃতি।
কুযুক্তি- ২ ও তার জবাবঃ
তিনি INTERSEX বা হিজড়াদের মাঝে যে একই সঙ্গে পুরুষ ও স্ত্রী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান তাকে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দিতে চান। আমি নিজে ডাক্তার হওয়ার কারণে তার এই প্রচেষ্টা আমার কাছে হাস্যকরই ঠেকেছে।
তিনি আদিকাল থেকে যে মানব সমাজে হিজড়া জন্ম নিচ্ছে তার উদাহরণ দিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন যে , হিজড়াদের যৌন অঙ্গের বিন্যাস স্বাভাবিক। আমি তাকে পালটা প্রশ্ন করতে চাই যে, আদিকাল থেকেই তো মানব সমাজে জন্মান্ধ , বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। তাই বলে কি, অন্ধ চোখ কে আপনি স্বাভাবিক বলবেন?!!! হাত- পা না থাকাটাকে স্বাভাবিক বলবেন?!!!!
তিনি ভাব গম্ভীরতার সাহায্যে কয়েকটি CONDITION এর উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন, KLINEFELTER”S SYNDROME, TURNER”S SYNDROME. এই সব উদাহরণ দেখে আমি কেবলই হেসেছি। সবাই GOOGLE এ CHROMOSOMAL ABNORMALITY বা CHROMOSOMAL DISEASE লিখে সার্চ দিন। দেখবেন এই রোগ-গুলোর নামই ভেসে আসছে। অভি দা যেকোনো নাস্তিক চিকিৎসক বা মেডিক্যাল শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে এগুলো রোগ নাকি স্বাভাবিক??? নিশ্চিতভাবেই তারা জানাবে যে, মেডিকেলের বিশ্ব স্বীকৃত সকল বই অনুসারেই এগুলো কিছু ক্রোমোসমাল রোগ যেখানে স্বাভাবিক নারী পুরুষের সাধারণ বিন্যাস( XX ও XY) পরিবর্তে বিন্যাস হয় XO , XXY মত অস্বাভাবিক বিন্যাস। তাই এই রোগ গুলোতে কোনও আচরণ গত সমস্যা দেখা দিলে তাকে রোগের উপসর্গ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে এবং তার চিকিৎসা করাতে হবে।
কিন্তু দুঃখের সাথেই বলতে এই রোগ গুলোকে স্বাভাবিক বলার অপচেষ্টা যেমন অভিজিৎ রায় করেছেন ঠিক তেমনি ভাবে এগুলোর রোগের উপসর্গকে স্বাভাবিক বলে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। RABIES VIRUS এর সংক্রমণে কুকুরের মধ্যে পাগলামি দেখা দেয় কিন্তু এই পাগলামিকে যেমন স্বাভাবিক কুকুরের আচরণ বলা যায় না ঠিক তেমনি ভাবে জেণেটিক রোগে আক্রান্তদের দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যকেও স্বাভাবিক বলে ঘোষণা করার কোনও সুযোগ মুক্তমনা আর সচলায়তন ব্লগে থাকলেও মেডিকেল সাইন্সে অন্তত নেই।
কুযুক্তি- ৩ ও তার জবাবঃ
অভিজিৎ রায় তার বই এ বেশীড়ভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন প্রাণীর উদাহরন দিয়েছেন তা হচ্ছে Parthenogenesis এর উদাহরন। কিন্তু এটা কিভাবে সমকামিতার উদাহরন হতে পারে। জ্ঞান পাপী অভি দা কিভাবে সুকৌশলে আমাদের ধোঁকা দিয়েছেন তা নিচের আলোচনা থেকেই বুঝবেন।
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক Parthenogenesis আসলে কি? এটা হচ্ছে অযৌন বংশ বিস্তার যেখানে মাতৃ জনন কোষ কে শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত করার দরকার হয় না বরং অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকেই স্বতঃপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন শিশুর জন্ম হয়। wikipedia একে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে যে, “Parthenogenesis /ˌpɑrθənoʊˈdʒɛnəsɨs/ is a form of asexual reproduction in which growth and development of embryos occur without fertilization. In animals, parthenogenesis means development of an embryo from an unfertilized egg cell”
এবার সবাই ভেবে দেখুন, উক্ত প্রক্রিয়ার সাথে কি সমকামিতার নুন্যতম সম্পর্ক আছে???
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য কি দুটি ভিন্ন নারীর ডিম্বাণু মিলিত হতে হয়????- নিশ্চয়ই নয়। এখানে তো যৌন মিলনের কোনও প্রয়োজনই হয় না। একটি মায়ের দেহে নিজে নিজেই কোনও প্রকার যৌন মিলন ছাড়া যখন ডিম বা বাচ্চা উৎপন্ন হয় তখনই তো তাকে Parthenogenesis বলা হয়।
মুলতঃ পারথেনোজেনেসিস এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বংশ বিস্তারের জন্য নারী/পুরুষ কারো সঙ্গেই কোনও যৌন মিলনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে বংশ বিস্তার হয় সম্পূর্ণ অযৌন পদ্ধতিতে। সুতরাং নিসচিতভাবেই এই প্রক্রিয়ার সাথে সমকামিতার দূরঃতম কোনও সম্পর্কও নেই।
কুযুক্তি-৪ ও তার জবাবঃ
উভলিঙ্গ প্রাণী ও উদ্ভিদের উপস্থিতি এবং রূপান্তর নাকি সমকামিতার উদাহরণ!!!!!
অথচ এই উভলিঙ্গ প্রাণী যাদের একই দেহে স্বাভাবিক ভাবেই পুং ও স্ত্রী লিঙ্গ থাকে তাদের সম্পর্কে WIKIPEDIA”র বক্তব্যঃ Bidirectional Sex Changers: where an organism has both female and male gonads, but act as either female or male during different stages in life.
এখাণে লক্ষ্য করুণ, কথাটি কি বলা আছে, “but act as either female or male during different stages in life.”
অর্থাৎ জীবন চক্রের একেক পর্যায়ে প্রকৃতিগত ভাবেই তাদের SEX পরিবর্তন হয়। যেমন হতে পারে প্রাকৃতিক ভাবে জীবন চক্র অনুযায়ী জীবনের এক পর্যায়ে তারা স্ত্রী জাতীয় থাকতে পারে আবার জীবন কালের আরেক পর্যায়ে মহান আল্লাহ”র নিয়ম অনুযায়ী তারা পুরুষে পরিণত হয় বংশ বিস্তারের সুবিধার্থে। এখাণে মূল লক্ষণীয় বিষয় হল, যখন সেই প্রাণীটি শরীর বৃত্তীয় ভাবে পুরুষ থাকে তখন সে SEX করে নারী সঙ্গীর সাথেই, কোনও পুরুষ সঙ্গীর সাথে নয়। আবার যখন এই কোনও প্রাণী শরীরবৃত্তীয় ভাবে নারী থাকে তখন সে পুরুষের সাথেই মীলিত হয়, কোনও নারীর সাথে নয়। অর্থাৎ, এখাণে কোনও সমকামিতা ঘটেনা বরং নারী-পুরুষেরই মিলন ঘটে।
কুযুক্তি ৫ ও তার জবাবঃ
হুইপটেল গিরগিটির ডিম পাড়ার সময় আরেকটি গিরগিটি তাকে চাপ দেয় আর এতে ডিম সহজে দ্রুত বের হতে পারে। কিন্তু অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী অভিজিৎ দা এর সাথে সমকামিতাকে জুড়ে দিয়েছেন!!!!!! আসলে মেডিক্যাল সাইন্স এর "bearing down effort" এই টার্মটার সাথে তার কোনও পরিচয় আছে বলে মনে হয় না! শুধু প্রাণীদের মাঝে নয়, মানুষের বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময়ও বাচ্চা যাতে সহজে বের হতে পারে সেজন্য মাকে যেমন নিজে নিজে ক্যোঁৎ দিতে বলা হয় ঠিক তেমনি ডাক্তার নার্সরা পেটে চাপ দিয়ে থাকেন প্রয়োজন মত। এক্ষেত্রে এটাকে সমকামিতা তো পাগলেও বলবে না। কিন্তু হুইপটেল গিরগিটির ডিম পাড়ার সময় আরেকটি গিরগিটি যে তাকে চাপ দিয়ে ডিম পারায় সহায়তা করে তাকেই কিনা সমকামিতা বলে অভিজিৎ রায়ের সে কি তৃপ্তির ঢেঁকুর!!!! আবার তোরা মানুষ হ।
চলবে...........
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



