somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাহিদুল হক শোভন
এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

গল্প: অনিকেত প্রান্তর

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক
.
জাহেদ এর হাতটা এখনো কাপছে। শরীরে মুহুর্তের মধ্যে ঘাম দিয়েছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। ফেনের নিচে বসে আছে তারপরও ওর শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে। খাট থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে মুখটাতে কয়েকবার পানি ছিটকিয়ে দিল। তারপর সোজা হয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে চুপ করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। যেন একদম সহজ সরল একটা মানুষ। আয়নার দিকে তাকানো অবস্হায় হা হা হা করে হাসি দেয়। ওর হাসিটা কেমন জানি। গালের নিচে রক্ত। শার্টে হাতে রক্ত লেগে আছে। পানি দিয়ে মুখটা আবার ধুয়ে আয়নার দিকে তাকায়। আয়নার দিকে তাকিয়ে আবার একটা হাসি দেয় হা হা হা করে।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে রুমে যায়। আস্তে আস্তে হেটে জেনিয়ার সামনে দাড়াঁয়। জেনিয়া মেঝের ফ্লোরে পড়ে আছে। চুপ করে কিছুক্ষন তাকিঁয়ে থাকে জেনিয়ার দিকে। চুল গুলা এলো মেলো হয়ে আছে জেনিয়ার। মেঝেতে কত গুলা চুল ফেনের বাতাসে উড়ে উড়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে। অনেক গুলা চুল ছিড়ে গেছে জেনিয়ার মাথা থেকে। প্রচন্ড দস্তা দস্তি হয় জেনিয়ার সাথে জাহেদের। গলা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ছুরি দিয়ে চারটা পোছ দেয় গলায়। গলায় পোছ দেয়ার আগে চুলের মুঠোয় ধরে কয়েকটা কষে থাপ্পড় দেয়। মেয়েটাও কিনা সংগ্রাম করেছিল নিজেকে রক্ষার জন্য। মেয়েদের শক্তি থাকে চুলে। আর চুলে যখন ধরা হয় তখন ওরা অনেকটা দূর্বল হয়ে যায়। তারপরও জাহেদের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু সব কিছু নিয়ন্ত্রনে আনার আগেই জাহেদ ধাড়ালো ছুরিটা দিয়ে হাতের কবজির মধ্যে সজরে একটা টান দেয়। বেচারি চিত্‍কার দিতে গিয়ে ও দিতে পারেনি। ব্যাথায় কুকড়াতে থাকে। কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠে জেনিয়ার। জেনিয়াকে মারার আগেই জাহেদ ওর হাতটা বাধে। তারপর মুখে ট্যাপ লাগায়। সারাদিন কাজ করার পর ঘুমোতে গিয়েছিল। হাত যখন বাধে জেনিয়া কিছু টের পায় নি। কিন্তু মুখে ট্যাপ লাগালে ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারপর হাত গুলা শক্ত করে নাড়া চড়া করাতে রশির বাদনটা ছিড়ে যায়। খুব একটা শক্ত করে বাধেনি জাহেদ। জাহেদ হয়ত জানে না এসব কাজে খুব পাকা পক্ত হয়ে কাজ করতে হয়। একটুও ভুল হলে চলবে না। হাতের বাধন খুলে গেলে জেনিয়ার সাথে জাহেদের দস্তা দস্তি শুরু হয় একপর্যায়ে জাহেদ ওর চুলে ধরে তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই ছুরি দিয়ে পোছ দেয় ওর বাম হাতের কবজিতে। তারপর ডান হাতের কবজিতে। সমস্ত শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে জেনিয়ার।

জেনিয়া হাতের বাধনটা ছুটাতে পারলেও মুখের ট্যাপটা মুখ থেকে সরাতে পারে নি। ছুরির আগাত পেয়ে চোখ গুলা বড় বড় করে গোংড়ানো ভাবে আওয়াজ করতে থাকে। তারপর মেঝেতে শুয়ে পড়লে জাহেদ আর একটু ও দেরি করেনি। চুল গুলা টান করে ধরে গলায় চারটা টান দেয় ছুরি দিয়ে। আর ফুস করে রক্ত গলা থেকে ঝড়ঝড়িয়ে পড়তে থাকে। হাত গুলা অবশের মত হয়ে গেছে। হাতের রগ কেটে গেছে। চোখ গুলা বড় করে শুধু ছটফট করছে জেনিয়া। তারপর কিছুক্ষনের মধ্যে একেবারে শেষ হয়ে যায় জেনিয়া। মুহুর্তের মধ্যে একটা তাজা প্রান শেষ হয়ে যায়।

জাহেদ দাড়িঁয়ে থেকে ওর মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে মেঝেতে জেনিয়ার পাশে বসে। সিগারেট ধরিয়ে খুব জোরে জোরে কয়েকটা টান দিয়ে একটা হাসি দেয় তারপর একটু চুপ করে থেকে সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে একটু কান্না করে। তারপর বলে...

"এই কষ্ট হচ্ছে তোমার? এই কি হয়েছে তোমার? তোমার শরীরে এত রক্ত কেন? আমি তোমায় মেরেছি তাই না পাগলি?

জেনিয়ার বড় বড় চোখ দুটো জাহেদের দিকে তাক করে আছে। মুখে ট্যাপ লাগানো এখনো। জাহেদ সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে শরীর চুলকিয়ে আবার বলে...

"আমার ভয় লাগছে তো। প্লিজ এমন করে তাকিঁয়ে থেকো না। কথা বলো।

এরপর কয়েকটা কাশি দেয়ে জাহেদ। কাশি দিয়ে জেনিয়ার মুখ থেকে ট্যাপ টা খুলে ফেলে। গলা দিয়ে এখনো রক্ত পড়ছে। জাহেদ আবার বলল..

"আমি একটা পাগল। তুমি কিভাবে কথা বলবে? আমি যে তোমার মুখে ট্যাপ লাগিয়ে রেখেছিলাম। এখন কথা বলো প্লিজ এইভাবে তাকিয়ে থেকো না। আমার ভয় লাগছে তো।

এইটা বলেই জাহেদ বসা অবস্হায় একটু পিছনে সরে যায়। সিগারেট শেষ হয়ে গেলে কাপা কাপা হাতে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। জেনিয়ার চোখ দুটো এখনো জাহেদের দিকে তাক করে আছে। আর জাহেদ ও বসে আছে জেনিয়ার চোখ বরবার যেদিকে চোখ গুলা তাক করে আছে। জাহেদ ছটফট করে মাথার চুল চুলকায়। মনে হচ্ছে কি করবে বুঝতে পারছে না। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা ছুরিটা দেখে। ঝট করে ছুরিটা হাতে নিয়ে জেনিয়ার চোখ দুটোতে ইচ্ছে মত গুতাতে থাকে আর বলতে থাকে...

"তোরে বলছি না এইভাবে আমার দিকে না তাকাইতে। বলছি না আমার ভয় লাগতেছে। আর তাকাঁবি এইভাবে বল? তাকাঁবি?

ছুরির আগাতে চোখ দুটো কেমন করে যেন বেরিয়ে আসে। কি ভয়ানক দৃশ্য। ছুরিটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে চুপ করে জেনিয়ার মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে..

"কেন এমন করলে? কি করেছিল ও? তোমাকে নিষেধ করেছিলাম না এই কাজটা না করতে? কেন করেছো?

এইটুকু বলেই থামে। চোখ দুটো বেরিয়ে আসার কারনে জেনিয়ার মুখের দিকেই তাকাতে আরো ভয় পাচ্ছে জাহেদ। কি করবে বুঝতে পারছে না। একটুপর চোখ দুটো হাতের আঙ্গুল দিয়ে চোখের গর্তের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঝেতে পিট লাগিয়ে শুয়ে পড়ে। ফেনটা চলছে। জাহেদ চলন্ত ফেনের দিকে তাকিয়ে থেকে কান্না করতে থাকে...

দুই

দরজার কলিং বেল চাপ দিতেই জেনিয়া দরজাটা খুলে দেয় তারপর জাহেদের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলে...

"আজকে এত লেইট করলা কেন?

জাহেদ দরজার ভিতরে ঢুকে পায়ের জুতোটা খুলে সোফায় গিয়ে বসে। জেনিয়া দরজা লাগিয়ে দেয়। সোফায় বসতে বসতে জাহেদ বলে..

"অফিসে কাজ ছিল একটু। ওটা শেষ করে ফিরতে হয়েছে। তাছাড়া রাস্তায় একটু জ্যাম ছিল। কি গরমটাই না পড়ছে।
"কাজ ছিল এটা ফোনে একবার বলা যায় না? আমি তোমাকে কতবার ফোন করেছি তুমি দেখো নি?
"তুমি ফোন করছো?

এইটা বলেই পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে সাতটা মিসকল।

"সত্যি আমি দেখি নি। অফিসে মিটিং এর সময় সাইলেন্ট করেছিলাম এখনো সাইলেন্ট অবস্হায় আছে। সত্যি আমার খেয়াল নেই।

অফিসের ব্যাগটা টেবিলে রেখে শাড়ির আচল দিয়ে মুখটা মুছে জেনিয়া বলে..

"তোমার সাথে কোন কথা নেই। তুমি জানো আমার কি রকম লাগছিল।

জাহেদ সোফা থেকে উঠে জেনিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

"পাগলিটার কি ভয় লাগছিল?
"ভয় লাগবে কেন আমি কি শিশু নাকি? ছাড়ো আমায় এত মায়া দেখাতে হবে না। আমার বুঝি টেনশন হয় না? ঘর থেকে বাহির হলেই তো আমাকে ভুলে যাও। আমার কথা তোমার খেয়াল থাকে নাকি?

জাহেদ জেনিয়াকে আরো শক্ত করে ধরে তারপর চুল গুলা সরিয়ে ঘাড়ে একট চুমু দেয়। জেনিয়া জাহেদের ছোয়া পেয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। কেমন একটা অদ্ভুত ভালো লাগা অনুভূতি তৈরি হয় জেনিয়ার। একটু পর জেনিয়া জাহেদের হাতটা সরিয়ে বলে..

"এই ছাড়ো আমায়। ফাযিল একটা। এইটা বলেই জেনিয়া জাহেদের কাছ থেকে ছুটে একটা দৌড় দেয়। জাহেদ একটা নিশ্বাস ফেলে আবার সোফায় হেলান দিয়ে বসে। কয়েক মিনিট পর গ্লাসে ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর শরবত বানিয়ে জাহেদ কে দেয়। জাহেদ হেলানো অবস্হায় থেকে সোজা হয়ে বসে।তারপর বললো

"কি? শরবত?
"হুম নাও।
"খাইয়ে দাও না।
"পারব না। তোমার হাত নেই বুঝি?
"টায়ার্ড তো আমি। অফিস থেকে আসছি তো। খাইয়ে দিলে কি হয়?

জেনিয়া একটু জাহেদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবে কেমন পাগল লোক একটা। প্রচন্ড ভালোবাসে জাহেদ জেনিয়াকে। জেনিয়ার চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। এত ভালোবাসা ওর কপালে ছিল ও ভাবতেও পারছে না। জেনিয়ার খুব ভয় হয়। ভালোবাসার মানুষ গুলা নাকি খুব তাড়াতাড়িই হারিয়ে যায়।

"আমি পারব না খাইয়ে দিতে। তুমি খেলে খাও, না খেলে নেই।

জাহেদ একটু অবাক হয়। জেনিয়ার মুখটা হঠাত্‍ করেই কেমন যেন হয়ে গেল। শরবতের গ্লাসটা টেবিলে রেখে জেনিয়া ভিতরের রুমে চলে যায়।

"এই হঠাত্‍ তোমার কি হলো?

জেনিয়া কিছুই বললো না। ভিতরের রুমে গিয়েই খাটের কোনায় বসে থাকে। একটু পর জেনিয়া আবার জাহেদের কাছে গিয়ে দেখে গ্লাসটা এখনো টেবিলে একই অবস্হায় পড়ে আছে। আর জাহেদ হেলান দিয়ে সোফায় বসে আছে। জেনিয়া শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে...

"এই এখনো খাও নি কেন?

জাহেদ চুপ করে থাকে। তারপর জেনিয়া জাহেদের শার্ট এর বুকে টেনে ধরে বলে..

"এই নাও খাইয়ে দিচ্ছি। এত ভালোবাসো কেন আমায়? আমার খুব ভয় হয়।

চুপচাপ জাহেদ শরবতটা খেয়ে জেনিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বুকে জড়িয়ে নেয়। জেনিয়া জাহেদের বুকে মাথা রেখে রাখে।

তিন

ফেনের দিকে এখনো জাহেদ তাকিয়ে থেকে কান্না করছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মেঝে থেকে উঠে বসে। চারপাশে রক্ত ছড়িয়ে আছে। জেনিয়ার এলোমেলো চুল গুলা ফেনের বাতাসে উড়ছে। জাহেদ কান্না করতে করতে বলে..

"তোমাকে ছাড়া আমার একটা মুহুর্ত ভালো কাটবে না। প্লিজ উঠো।

জেনিয়ার দেহটাকে কয়েকবার নাড়া দেয় জাহেদ। তারপর দাড়িঁয়ে হেটে হেটে ফ্রিজের সামনে যায়। ফ্রিজ খুলে পানির বোতলটা নিয়ে ঢগঢগ করে পানি খেতে থাকে। পানি খেয়ে আবার জেনিয়ার দেহটার দিকে যায়। তারপর আবার আস্তে করে মাথার পাশে বসে। জেনিয়ার মাথাটা ধরে জাহেদের কোলে তুলে নিয়ে বলে...

"কেন করেছো এমন? কেন মারলে ওকে? তোমাকে আমি বুঝিয়েছিলাম না আমার সন্তানকে না মারার জন্য। কেন মারলে? তুমি জানো ও কতটা কষ্ট পেয়েছে। কেন মারলে ওকে?

এইটা বলেই জেনিয়ার গালে থাপ্পড় দিতে থাকে। একটু পর ওকে ওর মাথাটা ধরে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে। আর কান্না করতে থাকে। মাথাটা নাড়াচড়াতে করাতেই জেনিয়ার বাম চোখটা খুলে পড়ে। চোখ দিয়েও কেমন রক্ত বের হচ্ছে। জাহেদ চোখটা নিয়ে আবার চোখের গর্তে লাগিয়ে দিয়ে হা হা হা করে ভয়ানক একটা হাসি দিয়ে আবার বলে...

"পৃথিবীর মুখ না দেখিয়ে আমার সন্তানকে খুন করলে? আমি তোমাকে বারন করেছি না এবরশন করতে? তারপর কেন করলে? আমার কথার দাম নেই?

নিশ্চুপ হয়ে যায় জাহেদ একদম। মাথার চুল চুলকাতে থাকে। কি করবে বুঝতে পারছে না। আবার ভয়ানক একটা হাসি দেয়...

চার

শরবত টুকু খাইয়ে দিয়েই জেনিয়া জাহেদের বুকে মাথা রাখে কিছুক্ষন। একটুপর জাহেদের বুক থেকে মাথা তুলে বলে..

"শোন আমার জন্য আচার আনিও তো।
"কেন হঠাত্‍ আচার কেন?
"এমনি খেতে ইচ্ছে করছে।

জাহেদ একটু চুপ করে জেনিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে..

"কিছু লুকাচ্ছো আমার কাছে? তোমার চোখ দুটো কিন্তু আমাকে অন্য কথা বলছে।

জেনিয়া একটা হি হি হি করে একটা হাসি দিয়ে উঠে দাড়ায়। জাহেদ জেনিয়ার শাড়ির আচলে ধরে ফেলে।

"এই না বলে কই যাও?
"ধুর ছাড়ো তো। বারে আমার বুঝি খেতে ইচ্ছে করে না?

জাহেদ উঠে দাড়াঁয়। তারপর একটা টান দিয়ে জেনিয়াকে বুকে টেনে নেয়। জেনিয়া লজ্জায় মুখে দু হাত দিয়ে লুকিয়ে জাহেদের বুকে মুখ গুঁজে রাখে। জাহেদ আলতো করে হাত দিয়ে ওর মুখটা তুলে বলে...

"কি আমার লজ্জাকুমারী এত লজ্জা কিসের?

জেনিয়া আরো একটু লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জায় ওর নাকটা লাল হয়ে যায়। তারপর বলে..

"আমার দুষ্টু কুমার ছাড়ো আমায়।
"না বললে তো ছাড়ছি না।

জেনিয়া একটু জাহেদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর কানে কানে ফিস ফিস করে বলে..

"আমার দুষ্টু কুমারটা বাবা হতে যাচ্ছে।

এইটা বলে মুখ লুকিয়ে আবার বুকে মাথা গুঁজে। জাহেদ কথাটা শুনেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জেনিয়াকে। জাহেদের মনটা মুহুর্তের মধ্যেই খুশিতে ভরে উঠে। জেনিয়া জাহেদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটা দৌড় দিয়ে হাসি দিয়ে ভিতরে চলে যায়। জাহেদ একটা চিত্‍কার দিয়ে বলে.. আমি পৃথিবীর সেরা বাবা হবো দেখে নিও.. ভিতর থেকে জেনিয়া ও বললো.. আমি জানি তো আমার দুষ্টুটা পৃথিবীর সেরা বাবা হবে...

তারপর থেকেই জাহেদ জেনিয়ার খুব কেয়ার করতে থাকে। ভালোবাসাটা যেন আরো বেড়ে যায় জেনিয়ার প্রতি। অনেক দিন ঠিকঠাক মত কেটে যায় জাহেদ অনেক আশা দেখতে থাকে। একদিন রাতে ঘুমানোর সময় জেনিয়া কে বলে..

"আমার বাবু কি করে এখন পেটে?
"ধুর কি সব কথা বলো তুমি? ফাযিল।
"বাবু কি ঘুমায়?
"জানি না। আশ্চর্য আমি কি করে জানব?
"আচ্ছা বাবু কত বড় হয়েছে এখন?

জেনিয়া একটু হাসে। কি বলবে বুঝতে পারে না। তারপর একটু ইতস্তত করে বলে..

"তোমার বাবুকে তুমি জিজ্ঞেস করো। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো? ঘুমোও তো।

জাহেদ চুপ হয়ে যায়। জাহেদের চুপ হয়ে থাকা দেখে জেনিয়া বলে..
.
"আচ্ছা বাচ্চা এখন না নিলে হয় না? আমি চাচ্ছি বাচ্চা এবরশন করব। আরো কয়েকবছর পর বাচ্চা নিব।

জাহেদ অবাক হয়ে যায়। বিছানা থেকে উঠে বসে।

"মানে কি বলছো তুমি? তোমার মাথা ঠিক আছে? খবর দার ভুলে ও এই কথাটা মুখে আনবা না। জেনে শুনে এবরশন করা মানে বুঝো? একটা মানুষকে খুন করা। আমি ভাবতে ও পারছি না তোমার মুখে এই কথাটা আসল কিভাবে? খুব খারাপ করে ফেলব ফের যদি এই শব্দটা আমার সামনে ব্যবহার করো।

জেনিয়াও বিছানা থেকে উঠে বসে। তারপর চুল গুলা একটু ঠিক করে বলে..

"কি করবে শুনি?

জাহেদ অবাক হয়ে যায়। আর ভাবে জেনিয়া আমার সাথে এই রকম আচরণ করছে কেন? জাহেদ জেনিয়ার দুই কাধে হাত রেখে বলে..

"এই রকম করে বলো না প্লিজ। তুমি যখন তোমার মায়ের গর্ভে ছিলা তখন যদি তোমার মা এই কাজটা করত আজকে তুমি এইখানে থাকতে না। তুমি আমাকে পেতে না, আমি তোমাকে পেতাম না। তখন তোমাকে খুন করা হতো।

জাহেদের চোখে পানি জমতে শুরু করে। জাহেদ আবার বলতে লাগল...

"আমার সন্তানকে নিয়ে তুমি এই খুনের খেলাটা খেলতে পারো না। এটা আমি মেনে নিব না। তুমি বাচ্চা পরে নিতে চাইলে সেটা এখন কেন ভাবছো? এর আগে তোমার চিন্তা শক্তি কোথায় ছিল?

জেনিয়া জাহেদের কথা শুনে হাসতে থাকে। জাহেদ একটু অবাক হয়ে যায়। ঠিক তখনি জেনিয়া জাহেদকে জড়িয়ে ধরে আর বলে...

"পাগল আমি মজা করছিলাম। তুমি এটা বিশ্বাস করে ফেললা? আমার বুঝি তোমার সন্তানের মা হতে ইচ্ছে করে না? গাধা একটা।

জাহেদ আর কিছু না বলে জেনিয়াকে জড়িয়ে ধরে। জেনিয়া জাহেদের চোখের কোনে জমানো জল টুকু মুছে দেয়...

পরিশিষ্ট

জেনিয়ার গলা দিয়ে এখনো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রক্তে জাহেদের সাদা শার্টটা লাল হয়ে গেছে। জাহেদের প্রচন্ড রাগ উঠে। জেনিয়ার মৃত দেহটার দিকে তাকিয়ে থেকে জেনিয়ার চুল গুলা মুঠোয় ধরে বলে...

"এত কিছু বলার পর কেন করছিস কাজটা? কেন খুন করছিস আমার রাজকন্যাকে? তুই বলেছিস আমার সাথে মজা করেছিলি? ধোকা দিছিস আমায় ধোকা।

এইটা বলেই একটু থামে। জেনিয়াকে আল্ট্রাশনোতে চেকাপ করলে গর্ভে মেয়ে দেখতে পায়। মেঝেতে পড়ে থাকা ছুরিটা আবার নেয়। নিয়েই ছুরিটা দিয়ে একটা কোপ দিয়ে গলা থেকে মাথা দু ভাগ করে ফেলে। ডান হাতে ছুরি আর বাম হাতে জেনিয়ার মাথাটা। বাম হাত দিয়ে চুলের মুঠোয় ধরে রেখেছিল। কোপ দেওয়ার সাথে সাথেই জেনিয়ার মন্ডুটা বাম হাতে চলে আসে। জাহেদ ভয়ানক একটা হাসি দিয়ে কাদঁতে কাদঁতে বলে..

"এই জেনিয়া জানো আমার রাজকন্যা ঘুমের মধ্যে আমার কাছে এসে আমাকে বলে.. বাবা বাবা, আম্মু আমাকে কেন আসতে দেয় নি পৃথিবীতে? আমি খুব পচা তাই বলে? জানো বাবা আমার না খুব কষ্ট হয়েছে। ওরা আমাকে এমন করল কেন? আমার হাত পা টুকরো টুকরো করে ফেলল। আমি তোমাকে কত ডেকেছি বাবা আমাকে বাচাঁও... আমি আমার রাজকন্যাকে কিচ্ছু বলতে পারিনি। আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার রাজকন্যাকে খুন করার যন্ত্রনটা আমি তোমায় দিব...

"এই কি হলো সেই কখন থেকে ডাকতেছি শুনতেছো না? এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছো তুমি?

জাহেদ টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে আছে। জেনিয়ার ডাক শুনতে পাচ্ছে না। জেনিয়া জাহেদের পাশে এসে ওকে নাড়া দিয়ে আবার বলে..

"আশ্চর্য ডাকতেছি শুনতেছো না?

জেনিয়ার স্পর্শ পেয়ে জাহেদ চমকে উঠে। এতক্ষন ধ্যান মগ্ন হয়ে টিভি দেখছিল। জাহেদ জেনিয়াকে দেখে অবাক হয়ে যায়। তারপর আস্তে আস্তে উঠে দাড়াঁয়। জেনিয়াকে ছুয়ে বলে...

"তুমি ঠিক আছো? তোমার কিছু হয় নি?

জেনিয়া জাহেদের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না? জাহেদ অস্হির হয়ে জেনিয়ার পেটে হাত রেখে বলে...
.
"আমার রাজকন্যা ঠিক আছে? ওর কিছু হয় নি তো?
"কি হয়েছে তোমার? বসো তো এইখানে।

এইটা বলে জেনিয়া এক গ্লাস পানি এনে দেয়। জাহেদ পানি টুকু গড়গড় খেয়ে নেয়। আসলে জাহেদ টেলিভিশন দেখছিল। কয়েকদিন আগে এবরশনের কথা জেনিয়া মজা করে বলেছিল এই ভেবে যে জাহেদের মনের অবস্হা দেখতে। আর এই এবরশনের কথাটা জাহেদ এর মাথা থেকে এখনো সরে যায় নি। টেলিভিশনে একটা থ্রিলার নাটক দেখছিল। নাটকের চরিত্রে লোকটা তার স্ত্রীকে এইভাবেই খুন করে। আর জাহেদ টেলিভিশন দেখতে দেখতে কখন যে টেলিভিশনের লোকটির চরিত্রে ডুবে গিয়েছে টেরই পায় নি। টিভিতে এখনো নাটক চলতেছে। নাটকের নাম "অনিকেত প্রান্তর" (কাল্পনিক) নাটক থেকে গান শুনা যাচ্ছে....

তোমাকে কড়া নাড়ে স্মৃতিরা ভাঙ্গা স্বপ্ন ঘুমের মত নেশা ময় কত....
কত শিশু কত আলোর মশাল নিভে গেছে, নিভে গেছে কত অচেনা ভয়।
তোমাকে এখন অপরিনত এক অচেনা স্মৃতি মনে হয়...
তোমার জানালার বাইরে শূন্যে দুরের স্বপ্নঘর
ঝুলে আছি নির্জনতায় মৃত্যু কি অনিকেত প্রান্তর....

জাহেদের চেহারাটায় বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যায়। জেনিয়া শাড়ির আচল দিয়ে জাহেদের মুখের ঘামটা মুছে বলে..

"আমার রাজকন্যার বাবার কি হয়েছে?

জাহেদ চুপ করে জেনিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। জাহেদের চুপ থাকা দেখে জেনিয়া আবার বলে...

" কি হয়েছে তোমার? হঠাত্‍ এই রকম করে কথা বলছো কেন? বলো না কি হয়েছে?

জাহেদের চোখে পানি জমতে শুরু করে। জেনিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে কাদঁতে বলে...

"আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। আমার রাজকন্যার কিছু হতে দিও না প্লিজ।

জেনিয়া কিছুটা আচ করতে পারে। জেনিয়া ভাবে হয়ত ভয় পেয়ে গেছে জাহেদ। জেনিয়া কিছু না বলে হাত দিয়ে জাহেদের চুল গুলা বুলাতে থাকে। আর মনে মনে বলে... আল্লাহ সহায় হলে আমি আমার ভালোবাসাটাকে রাজকন্যা দিবই। আমার ভালোবাসাটা যে পৃথিবীর সেরা বাবা হতে চায়...

(অনেক পুরানো লিখা ২০১৬ এর। ভাবলাম ব্লগেও সংরক্ষন করে রাখি।)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×