somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ সিনেমার শহীদের জন্মদিন

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সিনেমার শহীদ জহির রায়হানের জন্মদিন। জহির রায়হান চলে আসে, ঘুরে ফিরেই চলে আসে। গল্পে, উপন্যাসে, সিনেমায়, আড্ডায় ঘুরে ফিরেই চলে আসে জহির রায়হান ।

কেন জহির রায়হান? কি কারণ? এত কথা কিসের জন্য?
সিনেমার যে পাওয়ার, সিনেমার যে ব্যাপ্তি, সিনেমার যে দূরদর্শীতা তাতে জহির রায়হান এক অদ্বিতীয় চালকের আসনে। জহির রায়হান কালোত্তীর্ণ করে সমকালীন হয়ে গেছেন।
জহির রায়হানের কথা আসলেই স্টপ জেনোসাইডের কথা চলে আসে, পাকিস্তানি দোসরদের নৃসংশতা বিশ্বব্যাপী পৌছেদেন স্টপ জেনোসাইড চলচ্চিত্রের মধ্যদিয়ে। বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে স্টপ জেনোসাইড। আজও মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল খুঁজতে গেলেই স্টপ জেনোসাইড চলে আসে। স্টপ জেনোসাইডের একটা দৃশ্যের কথা বারবার মাথায় চলে আসে, একশো পেরোনো এক বৃদ্ধা যার জীবন মৃত্যু সন্ধিক্ষণে, তাকেও ভাবায়, তাকেও পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। অচল, চলতে পারেনা, সেও কয়েকশো মাইল পাড়ি দিয়ে ভারতে যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। বৃদ্ধার সামনে মৃত্যু অপেক্ষা করছে, পিছনে মৃত্যু ধাওয়া করছে। সিনেমার এই জায়গাতেই জহির রায়হান সবাইকে মানবিক হতে বাধ্য করে। আমরা বৃদ্ধার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য উদগ্রীব হই, ভাবিয়ে তোলে। একটা নৃসংশতা কতটা ভয়াবহ হলে এমন মৃত্যু পথযাত্রীও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নিরুদ্দেশের দিকে যাত্রা করে।
রিফিউজি ক্যাম্পে একজন ষোল পেরোনো তরুণী,ভাবলেশহীন, এলোমেলো চুল। নিরুদ্দেশের দিকে তাকিয়ে। তাকে জহির রায়হান প্রশ্ন ছুড়ে দেয় কোথা থেকে আসছো তুমি, কি নাম তোমার? তরুণী কোন উত্তর দেয়না।একবার ঠোট নেড়ে উঠে, কি যেনো বলতে গিয়েও থেমে যায়। এখানেই জহির রায়হান দূরদর্শী করতে বাধ্য করে। পাকিস্তানি দোসরদের যে নির্যাতন, তা বর্ণনার গভীরে না গিয়েও পুরো ঘটনা চোখের সামনে তুলে আনে, পরিষ্কার করে দেয়, বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে দেয়।
এটাই জহির রায়হান, এক স্টপ জেনোসাইড দিয়েই এক জহির রায়হানকে বিভন্ন দিকে, বিভন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতা যখন খুবই সন্নিকটে ঠিক তার আগেই জহির রায়হান নির্মাণ করলেন "জীবন থেকে নেয়া" চলচ্চিত্র। স্বাধীন হওয়ার, স্বাধীনতার প্রাণশক্তি চলে আসে চলচ্চিত্রের মধ্যদিয়ে। চেতনার যে উদগ্রীব, দ্রোহিতা, সঞ্চারণ এখানেই জহির রায়হানের পাওয়ার, সিনেমার পাওয়ার। পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদের চোখে আংগুল দিয়ে সিনেমার পাওয়ার দেখিয়ে দিলেন। একটা জটিল ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য তখন দেশ, জহির রায়হান কৌশলী হয়ে স্বাধীনতার পক্ষের কথা,স্বাধীনতার কথা, মানুষ মুক্তির কথা বলে গেলেন।
দুইটা সমান্তরাল কাহিনি একসাথে দেখালেন। ঘরের বাইরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর ঘরের ভিতরেপরিবারের সদস্যদের উপর গৃহকর্ত্রীর অত্যাচার।
তাঁর এমন শাসন কেউই মানতে চায় না।একসময় ঘরের দরজা ও দেয়ালে পোস্টার সাঁটা হয়। তাঁর শাসন থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের অন্য সদস্যরা আন্দোলনও করে। একসময় তিনি নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন। এই যে রূপক হিশেবে ঘটনা আনলেন। তৎকালীন পাকিস্তানের রাস্ট্রপতি
আইয়ুব খান এর রাজনৈতিক
একনায়কতন্তের রূপক অর্থে এনে পথ দেখালেন। এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে, খাঁচা তিনি ভাঙিয়ে দেখালেন। এখানেই জহির রায়হানের মুন্সিয়ানা।
এই যে আভাস দিলেন। কিসের আভাস দিলেন, আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি।
জীবন থেকে নেয়া সিনেমায় ব্যবহৃত আমার সোনার বাংলা গানটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। একজন শিল্পীর, শিল্পের যে দূরদৃষ্টিতা তা এটাই।
কতটা দূরদর্শী হলে একজন দূরদর্শী একটা জাতির জাতীয় সংগীত আগে থেকেই বলে দিতে পারেন, নির্ধারণ করে দিতে পারেন।
কি জন্য, কাদের, কি ক্ষেত্রে জহির রায়হান?
স্বাধীনতার পরেও আমরা পরাধীন। আমাদের মৌলিক চাহিদার জন্য যুদ্ধ করা লাগে, ঘর থেকে বেরোনোর পর ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা দিতে পারিনা। রাস্তায়, পানিতে, পাড়ায় মহল্লায় সর্বত্ত লাশ হয়ে যাবার ভয়। আমরা কুন্ঠিত। আমাদের বলার অধিকার নেই।
স্বল্প ক্রয় ক্ষমতার বিপরীতে লাগামহীন চাহিদার মাঝে আমরা, আমরা হতাশায় ভুগি, বিকারগ্রস্থ হয়ে যাই। আমাদের স্বল্প ক্রয় ক্ষমতার মাঝে লাগামহীন চাহিদা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।
চারদিকে এত এত এডাপ্টেশন। এডাপ্টেশনের ভীড়ে আমরা স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছি। কি ঘর, কি রাস্তা, কি দেশ, সর্বত্ত বৈদেশিক এডাপ্টেশন। এই স্বল্প আয়ের, স্বল্প ক্রয় ক্ষমতার মাঝে আমরা এডাপ্টেশন দ্বারা লাগামহীন চাহিদা খুঁজি।
আমরা প্রথম বিশ্বের রুচি, অভ্যাস ধারণ করার চেষ্টা করি, আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিকতা, ভৌগলিক পরিবেশ দেখিনা, যার ফলে আমরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমরা পরাধীন।
কি শিল্পী সংস্কৃতি, কি অভ্যাস রুচি! চারদিক দিয়ে এডাপ্টেশনের মাঝে বন্দী।
চারদিকে এক অশুভ শক্তির আনাগোনা, যারা বিকল হয়ে যাইনি তারাও বিকল হতে বাধ্য।আমরা বলার ভাষা পাইনা,আমাদের প্রতিবাদ বলার আগেই থেমে যায়।
এই সময়ে জহির রায়হানকে খুবই দরকার। জহির রায়হান আমাদের লোক।
প্রতিবাদের ভাষার জন্য, দূরদর্শীতার জন্য জহির রায়হানকে খোজা খুবই জরুরি। জহির রায়হানকে খুবই দরকার।
আর এই কারণেই জহির রায়হান সমকালীন হয়ে উঠে। জহির রায়হানের সিনেমা সমকালীন হয়ে উঠে। জীবন থেকে নেয়া সমকালীন হয়ে উঠে। প্রতিবাদের ভাষা তৈরি করে। দূরদৃষ্টিতা,কৌশল, সাহসিকতা, প্রতিবাদের ভাষার জন্য জহির রায়হান পাঠ খুবই দরকার।

এসব গেলো পর্দার জহির রায়হান, সিনেমার জহির রায়হান। সাংবাদিক জহির রায়হান, গল্পকার জহির রায়হান, উপন্যাসিক জহির রায়হান, মিছিলের জহির রায়হান, সমাবেশের জহির রায়হান বাকিই থেকে যাচ্ছে...
সবকিছু ছাপিয়ে সিনেমার জহির রায়হান বারবার ঘুরে ফিরেই চলেই আসে। শুভ জন্মদিন জহির রায়হান।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×