somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আফসানা'রা

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা আফসানাকে চিনি। রোজ ছাতা মাথায় দিয়ে মেইন রোডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের চেয়ে তার এই কম ব্যসার্ধের ছাতার আয়তনটাই অনেক বেশী নিরাপদ, নিশ্চিন্তে রোদে, বৃষ্টিতে মাথা গুঁজতে পারে।

-আপা রিকশা লাগবে? মেইন রোডের পাশে পান দোকানদার বলল। আপা ডাকটা নিশ্চিন্তের, প্রতিনিয়ত পুরুষ দেখা আফসানার চোখ একটু হলেও মানুষ দেখে।
-না লাগবে না, আফসানা উত্তর দেয়।
-কেমন আছেন আপা?
-ভালো। আপনি?
-জে ভালো।
দোকানদারটি রোজ রোজ একই প্রশ্ন গুলো করে। অন্যদেরকে কেনো সে করেনা? নাকি সে মেয়ে বলে আলাপ জমানোর চেষ্টা! আফসানা এসবের কিছুই ভাবতে চায়না। কেউ একজন তার প্রতিদিন খোঁজ নিচ্ছে এটা সে বিশ্বাস করতে চায়।

আমরা আফসানাকে বাসে দেখি,মহিলাদের সংরক্ষিত আসনে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। পুরুষদের আসনে বসে শহরটা দেখার ইচ্ছে তার খুব, শাসকের চোখে শহরটাকে দেখবে। খুব ইচ্ছে তার কারোও চোখে চোখ রেখে আদরের শাসনে বলবে, এত দেরী করে আসলে কেনো? আফসানা এখন জানে তার দিকে কতগুলো চোখ তাকিয়ে আছে। হয়তো জানে ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের সকল পুরুষ চোখই তাকিয়ে আছে এই মুহূর্তে। আফসানা বিশ্বাস করতে চায় এত সবের ভীড়েও কেউ একদিন তার চোখে চোখ রেখে কাজল দাওনি কেনো জিজ্ঞেস করবে। বাস হেলপার ভাড়া চায়।
-আপা ভাড়াটা দ্যান।আফসানা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে। টাকা নেওয়ার অজুহাতে বাস হেলপার হাত ধরে। আফসানা বোঝেনা প্রতিদিন ওয়াশিং পাউডার দিয়ে কাপড় কাঁচা নিছক চামড়ার এই হাত দুটো ধরতে কেনো পুরুষরা উদগ্রীব। কই! কেউ তো কোনদিন হাত দুটো ধরে বলল না, আফসানা তোমার এই হাত দুটো ধরে একসাথে অনেক বছর পূর্ণিমা দেখবো।

আমরা আফসানাদের অনেক গুলো কলিগ দেখি। যারা অনেক কেয়ার নেয় আফসানার শাড়ীর,আফসানার চুলের,আফসানার শরীরের রঙের।
-শাড়ীটাতে বেশ লাগছে। এক কলিগ জিজ্ঞেস করে, যে পাশের ডেক্সে বসে আছে।
মুখের হাসি ফুটিয়ে উত্তর দেয় ধন্যবাদ। হাসতেই হবে এটাই নিয়ম। আফসানা জানেনা কেনো তাকে হাসতে হবে? তার হাসার কোনো সুযোগ নেই। ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইল জুড়ে এত আততায়ীর তীঘ্ন দৃষ্টির মাঝে ভয় ছাড়া হাসার কোনো সুযোগ কখনো থাকেনা। আফসানা জানে তাকে লক্ষ্য করা হচ্ছে তার চুল থেকে নখ পর্যন্ত। তার মনটাকে কেউ কখনো লক্ষ্য করেতে চায়নি।

আফসানার রাত সন্ধ্যায় হয়, ছাতাটা ব্যাগে গুছিয়ে মেইন রোডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। সারাদিন বোঝা হয়ে থাকা শরীরটাকে বাসায় ফিরে সঁপে দিতে হবে আরেক শাসকের কাছে। আফসানা তাকে ভালোবাসে, ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের এত শাসকের চোখ থেকে শরীরটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে শুধু তার জন্য। আফসানার মনটা বেঁচে নেই। আমরা আফসানাদের চিনি, কয়েকহাত পোশাকের মাঝে বন্দী লাখ লাখ আফসানারা।...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×