somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Metamorphosis by Franz Kafka Review In Bengali | মেটামরফোসিস বাংলা রিভিউ | AudioBook Link Added

২৮ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Metamorphosis Review In Bengali | মেটামরফোসিস বাংলা রিভিউ



ফ্রান্স কাফকা একজন জগত বিখ্যাত লেখক, উনি মূলত অনেক রচনা লিখলেও কেবলমাত্র একটা নভেলার জন্য কাফকা অনেক বেশি বিখ্যাত। আমরা আজকে কাফকার যে গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করব, সেটা হচ্ছে 'মেটামরফোসিস'। মেটামরফোসিস শব্দের অর্থ রূপান্তর। একটু বলে রাখি, কোনও লেখার শব্দ সংখ্যা যদি ২০,০০০ থেকে ৪৯,৯৯৯ এর মধ্যে থাকে তাহলে সেটাকে ছোট আকারে বলা হয় নভেলা আর ৫০ হাজার এর বেশি শব্দের লিটারেচারকে বলা হয়ে থাকে নভেল।

বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে জানাশোনা আছে কিন্তু ফ্রাঞ্জ কাফকার নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্বনন্দিত এই সাহিত্যিক খুব বেশি দিন বাঁচতে পারেননি। তার সাহিত্যকর্মের ঝুলিও খুব বেশি বড় নয়। কিন্তু তার লেখাগুলো অসাধারণত্ব অর্জন করেছে, বিশেষ করে তার ছোটগল্পগুলো। 'মেটামরফোসিস' তার ঠিক সেরকমই একটি ছোটগল্প। অবশ্য একে উপন্যাসিকা বললেও ভুল হবে না।

এই বইটি কাফকা যখন লিখেন তখন কাফকার বয়স ৩২/৩৩ বছর, এবং একটা ঋণগ্রস্ত জীবনের সাথে জড়িত। কাফকার এই মেটামরফোসিস বইটিতে একজন মধ্য-বয়সী যুবক ও একটা পরিবারের ট্রান্সফরমেশন বা রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কাফকার এই বইটিতে এত ডায়নামিক লেয়ার আর এত ভালো ভাবে সবগুলো স্তরের বর্ণনা করেছেন যে কেউ একবার পড়তে বসলে সেটা শেষ না করে উঠতে পারবেন না। এমনিতেই বইটি খুব ছোট ১২০ পৃষ্ঠার মতন এবং প্রত্যেকটা স্তরের বর্ণনাই এতটা সাবলীল যা পাঠককে আঁকড়ে ধরবে।

মেটামরফোসিস, বইয়ের শুরুটা হয় এভাবে-

গ্রেগর স্যামসা নামের একজন যুবক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেলেন যে তার দেহ মানুকের আকৃতি থেকে পরিবর্তিত হয়ে একটা বিশাল বড় কীট বা পতঙ্গের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে অর্থাৎ মেটামরফোজড হয়ে গেছে। এখন একজন সাধারণত মানুষ যদি এরকম অবস্থায় পড়ে, তবে তার মাথায় আগে সবার আগেই আসবে এটা যে, - আমি কীভাবে মানুষ থেকে কীট বা পতঙ্গের আকৃতিতে চলে এলাম?

অথচ কাফকা এই বইতে চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন যে, গ্রেগর এসব কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না। তার চিন্তা ছিল কেবল এটাই যে, সে তার অফিসে যেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে, তার বস থাকে বকা দেবে অথবা সে চাকরি হারাবে।

এইখানে কাফকা খুব নিপুণভাবে দেখেছিয়েন আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক কীভাবে মানুষ থেকে রূপান্তরিত হয়ে কেমন একটা যন্ত্র বা মেশিন হয়ে গেছে। যার নিজের দেহ কীট/ পতঙ্গের মত হয়ে গেছে কিন্তু সে ভাবছে তার চাকরি নিয়ে! আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য আসলে কি জীবনের জন্য চাকরি নাকি চাকিরিই জীবন এটা কাফকা খুব সুন্দর করে দেখিয়েছেন এই বইতে।

গ্রেগর সামসা পতঙ্গে রূপান্তরিত হওয়ার পর সবকিছুতেই প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হচ্ছিল। তাকে সাহায্য করার মতো মানুষের ভূমিকা পালন করছিলো শুধু তার বোন, আর কেউ নয়। তার বোন তার রুমে ঢুকত, খাবার দিতো। তবে সেও পুরোপুরি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো, এমনটা নয়। চুপচাপ খাবার দিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যেতো। বিপদের সময় গুটিকয়েক মানুষকেই পাশে পাওয়া যায়, সবাইকে নয়।

এরকম আরও অনেকগুলো প্রেক্ষাপট ও আখ্যান নিয়ে এই বইটি কেবলমাত্র একজন মানুষের দৈহিক রূপান্তরকেই বুঝায় না। দৈহিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিক ও সামাজিক রূপান্তরকেও দেখানো হয়েছে খুব চমৎকার করে।

মেটামরফোসিস এই বইটিতে একটা পর্যায়ে এসে গ্রেগর স্যামসা নিজের রুমের দরজা খুলে বাইরে আসে। তখন গ্রেগরের এই বিকট, বিচ্ছিরি, আর অদ্ভুতভাবে মানুষ থেকে কীট পতঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়া থেকে তার বাবা মা ও বোন সবাই খুব বাজে-ভাবে ব্যবহার করে গ্রেগরের সাথে। বলে রাখা ভালো, এই বইতে কাফকা কখনো নির্দিষ্ট করে বলেন নি যে কেন গ্রেগর এইভাবে মানুষ থেকে কীটে রূপান্তরিত হলো। এটা নির্দিষ্ট করে না দিয়ে অবশ্য ভালোই করেছেন, কেননা এই বইটা যে'ই পড়তে যাবেন তিনি নিজেই একটা কারণ নিজের মস্তিষ্কের মধ্যে অটোম্যাটিক তৈরি করে নিবেন। আমার কাছে এই ছোট্ট খেলাটা ভালোই লাগে।



গল্পের শেষটা হয় আরও নির্মমভাবে। গ্রেগর সামসা মারা যায়। তার মৃত্যুতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে তার পরিবার। কারণ সামসা'র জন্য তাদের আর বিড়ম্বনা পোহাতে হবে না। প্রতিবেশীরা যেন না দেখে সেই ভয়ে থাকতে হবে না। বাসায় কোনো ঝঞ্ঝাট ছাড়াই থাকতে পারবে তারা।

পুঁজিবাদী সমাজ কতটা নির্মম হয়ে ওঠে একজন অক্ষম শ্রমিকের জন্য, তার একটি সার্বিক চিত্র ফুটে উঠেছে মেটামরফোসিস গল্পে। কেউই পক্ষে থাকে না সেই অভাগা শ্রমিকের। সমাজ, পরিবার, অফিস– কেউ না। সেই সমাজ শুধু টাকা চেনে, মুনাফা চেনে। শ্রমিকের অসহায়ত্ব চেনে না। শ্রমিকের সামাজিক পরিস্থিতি বোঝে না।

গল্পের শুরুটা যেই অদ্ভুত রূপান্তরের মাধ্যমে, তার পরবর্তী ঘটনা যেন তারই ফলাফল। গল্পের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পূর্ণ সামসা'র বিড়ম্বনাকে ঘিরে। আর এসব বিড়ম্বনার আড়ালে কাফকা তুলে এনেছেন পুঁজিবাদী সমাজের নির্মম বাস্তবতাকে।

Audio Book URL:

https://soundcloud.com/loretta-cosgrove-1/sets/metamorphosis


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৩৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কতভাগ ব্লগার মহা-ডাকাত তারেককে সরকারে দেখতে চায়?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১২



জিয়া মিথ্যা হ্যাঁ/না ভোটে সামরিক এডমিনিষ্ট্রেটর থেকে আইয়ুবের নতো দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলো, ৫% ভোটকে মিথ্যুকেরা ৯৮% বলেছিলো ; আওয়ামী লীগ বাধা দিতে পারেনি। জিয়ার মৃত্যুর পর, বেগম জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৯

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক
দায়হীন সরকারের শাসনে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে?


দিপু চন্দ্র দাস মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন—
“আমি নবীকে নিয়ে কিছু বলিনি, আমাকে মারবেন না।”
রাষ্ট্র তখন কোথায় ছিল?

আগুনে পুড়তে পুড়তে ছোট্ট আয়েশা চিৎকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×