আজ মা দিবস।
দিবসটি নিয়ে আমার কোন ভিন্ন মতামত নাই। আর সবার মত আমিও চাই এই দিনটিতে মাকে স্মরণ করতে। কিন্তু এই দিবসটি পালন করতে গিয়ে এই দিবসটি আমার মনে কিছু প্রশ্ন জাগ্রত করেছে। সেগুলো হলো আমরা কেন ঘটা করে শুধুমাত্র এই একদিন মাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত থাকব? অন্যান্য দিনগুলোতে কেন নয়? অন্যদিনগুলোতে কি মায়েরা তাহলে উপেক্ষিতই থেকে যাবেন?
আমার জানা ভূলও হতে পারে, তবে যত দূর ধারণা মা দিবসটি এসেছে পশ্চিমা ধ্যাণ ধারণা হতে। যেখানে সাধারণত যৌথ পরিবার ধারণাটি অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। যেটুক অবশিষ্ট আছে তা হচ্ছে বাবা-মা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বতন্ত্রভাবে সংসার করা। যেখানে বাবা-মা’র সঙ্গে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সময় দিতে না পারা, তাদের প্রত্যক্ষভাবে দেখভাল করতে না পারা। এমন আর নানাবিধ বিষয় যা সচারাচর আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। আর সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের এই মা দিবসটির আবিষ্কার। যে দিনটি তারা ঘটা করে পালন করবে, মায়ের জন্য ঘটা করে কেক কাটা হবে, তাকে নিয়ে আনন্দ উচ্ছাস করা হবে আর দিন শেষে তার আশ্রয় হবে বৃদ্ধাশ্রমে!
অনেকেই হয়তবা আমার সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করে থাকবেন, আমি তাদের দোষারোপ করব না। একমাত্র আমাদের দেশেই ছিল মা-বাবার সঙ্গে একত্রে বসবাস করার আনন্দময় উদাহরণ, উচ্ছল পরিবেশ, যা সময়ের আবর্তে দিন দিন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। আমরা আজ সেই সংস্কৃতি হতে বেড়িয়ে এসেছি। আমরাও আজ পশ্চিমাধাচে আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম দেখতে পাচ্ছি। আমরা আজ অনায়াশে আমাদের বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছি। অথচ তাঁরা কি এই পরিণতির কথা ভাবে দিন রাত আমাদের সকল অন্যায় আবদার মেনে নিয়ে আমাদের বড় করে তুলেছেন? এই কি তাঁদের কি বিশ্বাসের মূল্যায়ন? এই কি তাঁদের স্বপ্নের বিস্তৃতি?
আজ বিপুল উৎসাহ নিয়ে মা দিবস পালন করছি। মা দিবস উপলক্ষে ঘটা করে বিভিন্ন অনুষ্টান করছি। এফ. এম. রেডিও’র জকিরা প্রবল উৎসাহ নিয়ে মাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন ধরণের গান শোনাচ্ছে, টিভির রঙ্গীন পর্দায় ভেসে উঠসে বিভিন্ন ধরনের চটকজলদি বিজ্ঞাপন। অথচ দিন শেষে আবার সেই পুরণো চিত্র। বাবা-মার আশ্রয় হয়তো বা বৃদ্ধাশ্রম নয়তো সন্তানদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা!
আমরা কত না অনায়াশে পশ্চিমা রীতিনীতিকে কাছে টেনে নিয়ে আমাদের ধ্যান ধারণাকে কবর দিয়ে দিচ্ছি!
জয়তু মা দিবস!!!!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



