somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূষণছড়া গণহত্যা- পাহাড়ে ঘটে যাওয়া বাঙালি গণহত্যার ভুলে যাওয়া কথা

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



[ভূষণছড়া বাজারে রাতের দৃশ্য]


মিডিয়া প্রোপ্যাগান্ডা যে কত ভয়ঙ্কর তা আমরা কমবেশি সবাই জানি। এই মিডিয়া চাইলে দিনকে রাত রাত কে দিনে পরিণত করতে পারে। গতকালই এক লেখায় গাজার বাসিন্দাদের কথা বলেছি যে কীভাবে তারা গণহত্যার ও স্বীকার হল আবার মিডিয়ার কল্যাণে সন্ত্রাসী তকমা ও পেলো। তেমন এক নজির আমাদের দেশেও আছে।

আমরা যারা সমতলে থাকি মিডিয়ার মিথ্যা প্রোপ্যাগান্ডা দেখে পাহাড়িদের জন্য মায়া কান্না করি। ভাবি আহা বাঙালিরা কত খারাপ। ব্লাডি সেটলারস! কিন্তু বাস্তবে কেউ পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙালিদের সাথে না মিশলে বুঝতেই পারবে না, পাহাড়ি সন্ত্রাসী শান্তি বাহিনী কি নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে। তেমন এক নির্মম গণহত্যার ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালে।

সেদিন ছিল ১৯৮৪ সালের ৩০শে মে। হিজরী ১৪০৪ সালের ১লা রমজান। রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার বাঙালি মুসলিমরা সেহরি শেষ করেছেন। ফজর সালাত কেউ আদায় করেছেন, কেউ বা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন সময় গোলাগুলির অভ্রভেদী শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সমগ্র এলাকা।
.
আনুমানিক ৪টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা ৩০মিনিট পর্যন্ত চলতে থাকে নিরস্ত্র আদম সন্তানদের উপর বীভৎস গণহত্যা। চার ঘণ্টার মধ্যে নৃশংসভাবে নিহত হন নারী-শিশুসহ ৪১৭ জন মুসলিম। সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনী মণিভূষণ দেওয়ান এর নেতৃত্বে এই কাজ সংঘটিত হয়।
.
লোকদের হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে, বেয়নেট ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র দিয়ে খোঁচানোসহ নানা পদ্ধতিতে হত্যা করা হয়। মেয়ে শিশু, কিশোরী ও তরুণীদের ওপর চালানো হয় গণধর্ষণ। গর্ভবতী নারীদের পেট কেটে অনাগত সন্তানদের বের করে দেওয়া হয়। প্রতিটি লাশকে বিভিন্ন উপায়ে বিকৃত করা হয়।
.
শতাধিক পরিবারের একটি জনপদ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সেখানে একজন ব্যক্তিও জীবীত ছিলেন না। সকল বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গবাদি পশা-পাখিগুলোকে নির্মমভাবে শিকার করা হয়। পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো হতে আরও ১৬০০ লোক প্রাণভয়ে পালিয়ে যান। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা অজানাই রয়ে গেছে।
.
এই গণহত্যার কোনো তদন্ত বা বিচার হয়নি। পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকেরা মামলা করতে বরকল থানায় গিয়েছিল, কিন্তু পুলিশ মামলা না নিয়ে জিডি নিয়েছিল। আর, গণহত্যার পর শান্তিবাহিনীর সদস্যরা যারা বন্ধুদেশে পালিয়ে গিয়েছিল, সরকার তাদের ফিরিয়ে এনে জমি, রেশন, ঘরবাড়ি, চাকরি ও ব্যাংক ঋণের সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসন করেছে।
.
ভূষণছড়া হচ্ছে রাঙামাটি জেলা থেকে প্রায় ৫৫.৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এক দুর্গম জনপদ। জেলাসদর থেকে নৌকায় ৭৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ছোট হরিণা যেতে হয়। সেখান থেকে আরও ৫ কিমি ভেতরে অবস্থিত ভূষণছড়া। এলাকাটি বন্ধুদেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় সন্ত্রাসীরা সেদেশে পালিয়ে যেতে পারত।
.
সত্তরের দশকের শেষদিকে জনসংখ্যার সুষম বণ্টন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দরিদ্র ও ভূমিহীন মানুষদের চট্টগ্রামের সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন করে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (ও তার সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী) এটা মেনে নেয়নি।

কিছুদিন আগে এই ভূষণছড়াতে এক সপ্তাহ ছিলাম। নিজ চোখে দেখেছি বাঙালিরা কীভাবে আতংক নিয়ে বসবাস করে। এরপরও পাহাড়িরা নিরীহ আর বাঙালিরা সন্ত্রাসী!

[এই লেখার লেখার উপাদান এক বড় ভাইয়ের থেকে কিছুটা ধার করা।]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×