somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এটাকে আমি কি করে দুর্ঘটনা বলবো?? এটাকে আমি রাষ্ট্রীয় অবহেলাজনিত হত্যাকান্ড বলবো।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐতিহাসিক পিটি ৬, রাস্তায় যেমন ভটভটি নসিমন আকাশে তেমন পিটি-৬। শিশুদের খেলনা বিমানো এর থেকে আধুনিক

আমাদের বিমান বাহিনীর বিমানগুলো যেন এক একটি মৃত্যু ফাঁদ। একের পর এক বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষন বিমান দুর্ঘটনা হচ্ছেইতো হচ্ছে, কারো কোন বিকার লক্ষ্য করছিনা। কি সরকার কি বিমান বাহিনী কারো থেকে কোন কার্যকরী উদ্যেগ লক্ষ্য করছিনা। আজকে আমার এক আত্নীয় সাবেক বিমান বাহিনী কর্মকর্তার সাথে এ ব্যাপারে ডিটেইলস আলোচনা হলো। এক কথায় যা বুঝা গেল তাতে এটা বলা যায় এর জন্য সরকার, বিমানবাহিনী এবং রাষ্ট্রীয় ব্যার্থতাই দায়ী।

গত ১৬ই ডিসেম্বরেও জঙ্গী বিমান নিয়ে বিজয় দিবস ডিসপ্লেতে অংশ নেয়া বিমান বাহিনীর চৌকষ স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফ ইবনে আহমেদ ও সম্প্রতি প্রশিক্ষক হওয়ার কোর্স সম্পুর্ন করা স্কোয়াড্রন লিডার মো. মাহমুদুল হক গত ২০ ডিসেম্বর সোমবার বরিশাল শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বিমানবন্দরের অদূরে বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে বিমান দুর্ঘটনায় প্রান হারান। যারা এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন, তারা কেউই ক্যাডেট নন, দুইজনই সিনিয়র অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক। প্রাণ হারানো দুই পাইলটের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফ ইবনে আহমেদ সুপারসনিক যুদ্ধবিমান এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সবচেয়ে আধুনিক মিগ-২৯-এর পাইলট ছিলেন। এর মধ্য স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফ ইবনে আহমেদ মাত্র ১১ মাসের একটি ছেলে সন্তান ও অপর স্কোয়াড্রন লিডার মো. মাহমুদুল হক নববিবাহিতা স্ত্রী রেখে গিয়েছেন।

আমাদের কি এতই করুন দশা যে এই হতভাগ্য বৈমানিক এর দেহটা কলা পাতা দিয়ে ঢেকে নিতে হলো ? একটা চাদরও কি ছিলনা তার নিথর দেহটি ঢাকার জন্যে!! এই কি আমার আমার সোনার বাংলাদেশ ?

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পড়ে। এতে এক পাইলট নিহত হন। তারো আগে গত ২০ ডিসেম্বর বগুড়ায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিমানবাহিনীর দুজন পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার এ এ এম এম শামছুজ্জাহান ও স্কোয়াড্রন লিডার জামিল উদ্দিন আহম্মেদ গুরতর আহত হন। তারো আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আহমেদ সানজিদ (২৬) প্যারাসুটের সাহায্যে লাফ দিয়ে প্রানে বাঁচেন তবে পায়ে গুরতর আঘাত পেয়ে তিনি এখনো চিকিৎসাধিন আছেন। চীনে তৈরি এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমানটি জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে প্রায় এক ঘণ্টা আকাশে ওড়ে। অবতরণের মাত্র ২০ সেকেন্ড আগে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বিমান বাহিনীর অত্যন্ত চৌকষ এই পাইলট দ্রুততার সাথে বিমান থেকে প্যারাসুট নিয়ে নদীতে লাফ দেন। এরকম আরো অনেক দুর্ঘটনা নিকট অতিতে আরো ঘটেছে। আমি শুধু সাম্প্রতিকগুলো তুলে ধরলাম।

সাধারণত আমাদের বিমানবাহিনী প্রশিক্ষণ কাজে চীনে তৈরী খুবই পুরোনো মডেলের প্রশিক্ষণ বমান পিটি-৬ ব্যবহার করা হয়। সেই লক্কড় ঝক্কড় পিটি-৬ বিমানই আবারো দুই মেধাবী এবং চৌকষ বৈমানিকের প্রান কেড়ে নিল সম্প্রতি এই দুর্ঘটনায় । মুলত এ প্রশিক্ষন বিমানের ককপিটে ভয়েস রেকর্ডার ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার থাকেনা যে কারনে কখনো দুর্ঘটনার আসল কারন জানা যায়না। এই বিমান টি পুরোপুরি একটি মেনুয়্যাল প্রশিক্ষন বিমান। আধুনিক ব্যবহৃত বিমানের প্রযুক্তির ছিঁটে ফোঁটাও নেই এই বিমানে। পিটি ৬ এত পুরনো মডেলের প্রশিক্ষন বিমান যে, এই মডেল সম্পর্কে জানার জন্য Google ও মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়, মানে সহজে এই বিমান সম্পর্কে তথ্যও পাওয়া যায়না। পিটি ৬ বিমানগুলো পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশে পাইলট ট্রেইনার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত বিমান বাহিনীর যত পাইলট বিমান ক্র্যাশ করে মারা গেছে তার ৯০% হল পিটি ৬ বিমান। এর জন্য বিমানগুলো পুরাতন হয়ে যাওয়া একমাত্র দোষ সেটাও কিনতু না। প্রতিবছর বিমান ওভারহোলিং বাবদ প্রচুর টাকা খরচ দেখানো হলেও আদতে ভালমানের কোন ওভারহোলিং করা হয়না। সাধারণত সঠিক এবং উন্নত ওভারহোলিং করা হলে বিমান পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠে এবং এটাও বলা বাহুল্য যে একবারে নতুন বিমানও যে দুর্ঘটনার শিকার হবে না, সেটার গ্যারান্টিও কেউ দিতে পারবেনা। তবে একটা মজার ব্যাপার হলো র‌্যাবের ক্রসফায়ার নাটকের মত আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর), সবসময় একই অজুহাত হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে বিমান দুর্ঘটনার হয়েছে বলে জানিয়ে তাদের তদন্ত কাজ শেষ করে এবং কখনো পাইলটের ভুলে দুর্ঘটনা হয়েছে বলতে শুনিনি।

বছরের পর বছর এই পিটি ৬ বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে আর ঝরে যায় অমূল্য আর তিলে তিলে গড়ে তোলা কিছু স্বপ্নময় প্রান। তারপর__ তারপর বিমান বাহিনী প্রধান, রাজনীতিক হোমড়া-চোমড়ারা ছুটে যান, উদ্ধার অভিযান দেখেন, নতুন বিমান কেনার মিথ্যা বুলিও আওড়ান, গঠিত হয় নামকাওয়াস্তে তদন্ত কমিটি, এরপর?....... এরপর আবারও ঘটে আরও একটি দুর্ঘটনা। এইভাবে একটা চক্রে বাঁধা পড়ে গেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এর পাইলট ট্রেইনার ৬ (পিটি ৬) বিমানগুলো। জীবনের যেন কোন মূল্যই নাই সরকার এবং বিমান বাহিনীর কাছে! একে একে এসব মেধাবি পাইলট, যারা দেশের অমূল্য সম্পদ তাদেরকে আমরা হারিয়ে ফেলছি, অথচ সেই ভাংগা পিটি ৬ বিমান আজো আমি উড়তে দেখি।

বাল্যকালের এক বন্ধুকে আজ ফোন করলাম লেখাটা প্রস্তুতের জন্য। বিমানবাহিনীতে আছে। সে যা বললো সেটা কি আমাদের জন্য লজ্জার নাকি অসহায়ত্বের সেটা আপনারাই বিচার করুন। তার ভাষায়, "হায়াত-মউত আল্লাপাকের হাতে এই কথা মাথায় নিয়ে বিমানে উঠি আর আমরা এটাও বিশ্বাস করে বিমানে উঠি, যে বিমানে আমরা প্রশিক্ষন নিচ্ছি সেটা আল্লাহপাকের উচিলায় এখনো আকাশে উড়ে, আমাদের হাত সেখানে নগন্য"

অথচ আমরাতো সেই জাতি যারা ২৫ হাজার টাকা টিকেটে সাহরুখকে দেখতে যায়, আমরাতো সে জাতি যার সামান্য মন্ত্রী-এমপি-ব্যাবসায়ীরা কোটি টাকার দুই তিনটা গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করে, আমরা সে জাতি যাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি মামলা সকাল বিকালে করি, আমরা সেই জাতি যারা কোটি কোটি সরকারী টাকায় জাতিসংঘের অধিবেষনে যোগ দেয়ার নামে শত মানুষের বহর নিয়ে প্রমোদ ভ্রমন করি, আমরা সেই জাতির সন্তান যার প্রধানমন্ত্রী-বিরোধী দলীয় প্রধানদের ছেলেরা আমাদর কোটি টাকায় বিদেশি আয়েশি জীবন-যাপন কারে, আমরা সেই জাতি...........

তাহলে কেন আমরা দেশ মাতৃকার নিরাপত্তা ধানকারী এই সাহসী সন্তানদেরকে ভালমানের প্রশিক্ষন বিমান কিনে দিতে পারিনা? কেন আমরা এখনো পাকিস্তান আমলের অভিশাপযুক্ত পিটি ৬ নিয়ে আকাশে উড়ি? কেন আমরা প্রতিবাদ করছিনা এমন হত্যার? কেন আমরা মামলা করছিনা এই হত্যাকান্ডের?

এভাবে রাষ্ট্রীয় অবহেলায় আর কত পাইলটকে অকারণে প্রাণ দিতে হবে ? আর কত নির্মম মৃত্যু আমরা দেখে শুধু চোখের পানি ফেলে শেষ করবো? এসবের জবাবিদিহিতা আমরা কোথায় পাব ??

শেষে এসে বরাবরের মত দাবী জানাই অবিলম্বে এই বিমানগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে পাইলটদেরকে আধুনিক এবং উন্নতমানের প্রশিক্ষন বিমান দেয়া হোক। মানুষের জীবন অমুল্য সম্পদ, এ নিয়ে আর চিনিমিনি না খেলে এ বিষয়ে সরকারের সু্দৃষ্টি কামনা করছি এবং সাথে সাথে আমাদের পাইলটদের বলছি আপনারাও প্রতিবাদি হোন।

সবিশেষে এযাবৎ প্রান হারানো সকল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জন্য দোয়া করি যেন মহান আল্লাহ তাদের জান্নাতবাসী করেন , যদিও এমন মৃত্যু কিছুতেই কাম্য নয়.........


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৩৭
১২৫টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×