মন বিষিয়ে উঠলেও চলমান এইসব অসুস্থ কার্যকলাপে এখন দুঃখবোধ বা ক্ষোভ এড়িয়ে সম্ভবত অন্যভাবে বাঁচতে শিখেছে মানুষ। অথবা দিনের পর দিন এমন অসংলগ্ন এবং অসুস্থ ঘটনায় মাথা নীচু হতে হতে অভ্যস্ত আমরা সবাই নির্বিকার, ব্যক্তিত্বহীন হয়ে উঠেছি। তা না হলে রাজাকরের তালিকা তৈরী করতে গিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যে 'খেলা' চলছে খোদ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে, কই তা নিয়ে দেশ জুড়ে কারোর কোন চেতনায় কিংবা অনুভূতিতে আঘাত হচ্ছে না, বিক্ষোভ হচ্ছে না! এ নিয়ে সুস্থ এবং সুস্ঠু কোন তদন্ত হবেনা নিশ্চিত। বিবেচনাই যেখানে অনুপস্থিত বিচারতো সেখানে দূরের কথা।
বিগত কয়েকটি বছরে বিশেষ করে ২০১৩ সাল থেকে ট্যাগিং এবং অপপ্রচারের এক বিধ্বংসী সময়ের প্রচলন হয়েছে। আর এই কুকর্মটি চালিয়ে যাচ্ছে দল-মত-গোষ্ঠী নির্বিশেষে স্বার্থান্ধ এবং ক্ষমতা লিপ্সু এক বিশেষ শ্রেনী। এই নোংরামীতে কেউ কারোর চেয়ে পিছিয়ে নেই। দ্বিমত হলেই হলো। নিজেদের স্বার্থ এবং সুবিধা মত যাকে-তাকে 'জামাত-শিবির', 'রাজাকার', 'নাস্তিক' কিংবা 'ধর্মীয় উগ্রপন্থী' ইত্যাদি বলে যে 'ট্যাগিং' এবং অপপ্রচারের সর্বনাশা খেলা চলে আসছে তার বিরূদ্ধে কই আমরা তো সম্মিলিত হইনি! সোচ্চার হইনি। নিজেদের স্বার্থ এবং সুবিধা মত নিজের সাধারণ বিবেক-বিবেচনার দুয়ার বন্ধ করে অন্ধের মত অপপ্রচার কে বিশ্বাস করে হয় এক ধরণের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছি নয়তো মুখ বুঁজে সয়ে যেতে যেতে আত্নমর্যাদাটুকু তলানীতে নামিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের যে সততা এবং শক্তি আমাদের অন্ধকার থেকে মুক্ত করেছে তাকে অনায়াসেই ভুলে গিয়ে দেশের জন্যে মানুষের জন্যে আমরা ক্রমশঃ অকৃতজ্ঞ হয়ে উঠেছি। কোন মিথ্যেয়, কোন অপকর্মে আমাদের আর দায়বদ্ধতার বোধ নেই। আমরা আর যূথবদ্ধ হইনা, কোন মঙ্গলেও আমাদের সমস্বর নেই।
ফলাফলটা সবার জানা। অকারণে এমন কি আরোপিত মিথ্যে অপবাদের কারণে অকালে, বেঘোরে প্রাণ গেছে অনেকের, মাতৃভূমির কোল ছেড়ে বাধ্যগত ঠাঁই হয়েছে বিভুঁইয়ে! কই আমরা তো সবাই মিলে কিছু বলিনি, কিছুই করিনি! 'অপশক্তি', 'চেতনা' আর 'অনুভূতি' তো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে আমাদের চোখে সামনেই। মুক্তিযোদ্ধার আর মূল্য কি! সেতো ৪৮ বছরের অতীত মাত্র! তাই একজন মুক্তিযোদ্ধাকে 'রাজাকার' তালিকাভুক্ত করে চুড়ান্ত অসম্মান করা এবং ন্যায্য প্রতিবাদ করায় সেই তালিকা থেকে নাম কাটানোর নোটিশ জারি করে আরেক দফা অসম্মান করা আর এমন কি অপরাধ! এবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সর্বজনবিদীত কোন কুখ্যাত রাজাকার এর সংযুক্তিটা দেখার সর্বশেষ অপমানটা শুধু বাকী রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:৫৬