দেশের প্রতিটি ছোট শহর আজ এক ভয়াবহ সমস্যায় আক্রান্ত, যার নাম অটো-রিকশা ও মিশুকের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল। প্রতিটি রাস্তা এখন কার্যত এদের দখলে। প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি এই যানবাহন রাস্তার বৃহত্তম অংশ জুড়ে থাকে। যেখানে প্রয়োজন ২০টি মিশুক, সেখানে চলছে ২০০টিরও বেশি, যার ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অনভিজ্ঞ চালকরা নিয়ম ভেঙে যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখছেন, যার ফলশ্রুতিতে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাচ্ছে।
ফুটপাথও রক্ষা পাচ্ছে না। হকার ও অস্থায়ী দোকানপাট ফুটপাথ দখল করে রাখায় পথচারীদের হেঁটে চলার উপায় নেই। ন্যাশনাল হাইওয়েতে সিএনজি ও অটো-রিকশার কারণে প্রায়ই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ এই সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধানে কারও মনোযোগ নেই।
প্রথমদিকে বলা হয়েছিল অটো-রিকশা ও মিশুক পরিবেশবান্ধব। কিন্তু বাস্তবে এই ব্যাটারি চালিত যানবাহনগুলো বিপুল পরিমাণ ব্যাটারি বর্জ্য তৈরি করছে, যা মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কারণ। ব্যাটারিগুলোতে সীসা (Pb), ক্যাডমিয়াম (Cd), পারদ (Hg), কোবাল্ট (Co) এবং ম্যাঙ্গানিজ (Mn) এর মতো ভারী ধাতু থাকে, যা মাটিতে মিশে গিয়ে জলাশয় ও খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে। ফলে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ব্যাটারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগের অভাব প্রকট। বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ভারী ধাতুগুলো মাটিতে এবং পানিতে মিশে খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে। মাছ ও উদ্ভিদের মাধ্যমে এই বিষাক্ত উপাদান মানবদেহে প্রবেশ করে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
সরকার যদি এই গুলোন নিয়ে কিছু পদক্ষেপ নিতো যেমন -
> সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অটো-রিকশা ও মিশুক সীমিত করতে হবে। এই যানগুলো শুধুমাত্র প্রবীণ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে।
> নিবন্ধন ও লাইসেন্স: প্রতিটি যানবাহন নিবন্ধিত ও লাইসেন্সধারী চালকদের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে।
> ব্যাটারি রিসাইক্লিং: ব্যাটারি বর্জ্য সংগ্রহ ও সঠিকভাবে রিসাইক্লিং করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
> প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান: তরুণদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলা উচিত, যেন তারা উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত হতে পারে।
> পাবলিক ট্রান্সপোর্ট: ছোট শহরগুলোতে সুসংগঠিত ও কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা যানজট কমাতে সহায়তা করবে।
আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। সরকারের উচিত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসা। একইসাথে নাগরিকদেরও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ব্যাটারি বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি।
সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের শহরগুলোকে যানজট ও দূষণমুক্ত করতে পারি। এখন সময়, সচেতন হওয়ার এবং পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখার।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




